পদসোপান নীতির সমস্যা সমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো পদসোপান নীতির সমস্যাসমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের পদসোপান নীতির সমস্যাসমূহ আলোচনা কর।
পদসোপান নীতির সমস্যা সমূহ আলোচনা কর |
পদসোপান নীতির সমস্যা সমূহ আলোচনা কর
- অথবা, পদসোপান নীতির অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর ।
- অথবা, পদসোপান নীতির অসুবিধাবলি বর্ণনা কর ।
উত্তর ভূমিকা : বর্তমান আধুনিক যুগের প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো পদসোপান নীতি। অনেক ব্যক্তির সমন্বয়ে কোনো কর্ম প্রচেষ্টাকে কার্যকর করে তোলার জন্য প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা এ নীতির ধারণা প্রবর্তন করেন ।
এটি এমন একটি নীতি যেখানে কোনো একটি কাজের আদেশ ও নির্দেশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হতে অধস্তন কর্মকর্তার নিকট পৌছায়।
কাজের এ আদেশ ও নির্দেশের প্রবাহটি একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সংঘটিত হয়। আবার কোনো কাজের আদেশ ও নির্দেশ অধস্তন কর্মকর্তারা সঠিকভাবে পালন করে না বা এড়িয়ে যায়। ফলে পদসোপান নীতিটি অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হয়।
পদসোপান নীতির সমস্যাসমূহ : পদসোপান নীতির যেমন অনেক সুবিধা রয়েছে তেমনি অনেক সমস্যাও রয়েছে।
পদসোপান নীতির কারণে অনেক সময় প্রশাসনিক কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হয়। প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে বিভক্তি দেখা দেয় । এছাড়াও অনেক অসুবিধা রয়েছে।
নিম্নে পদসোপান নীতির সমস্যাসমূহ আলোচিত হলো :
১. লাল ফিতার দৌরাত্ম্য : আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বলে। পদসোপান নীতির সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো পদসোপান নীতির ফলে অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বেড়ে যায়।
পদসোপান নীতির সংগঠনের কাজের জন্য একটি যথাযথ মাধ্যম তৈরি করে দেয়। তাই একটি কার্যসম্পাদনের সময় এ Proper Channel রক্ষা করা এবং অনুসরণ করা অনেক সময় খুব জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
তাছাড়া একটি কাজ এ পুরো Channel টি ঘুরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে অধস্তন কর্মকর্তাদের বা অধস্তন কর্মকর্তা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে যায়।
তাই একজন ব্যক্তির দায়িত্বে অবহেলা বা অসহযোগিতার ফলে পুরো কাজটিই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে প্রশাসনের কাজের ক্ষেত্রে যেমন দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয় তেমনি অনেক অর্থ ও সময়ের অপচয় হয় ।
2. অনুষ্ঠান সর্বস্ব : পদসোপান নীতি অনেক সময় কেবল অনুষ্ঠান সর্বস্ব হয়ে দাঁড়ায়। একটি কাজ হয়তো কেন্দ্রীয়ভাবে করা, সম্ভব ছিল কিন্তু পদসোপান নীতির কারণে ঐ কাজটিকে পদসোপান নীতির নিয়ম অনুযায়ী সব পর্যায়ে ভাগ করতে হবে। এক্ষেত্রে পদসোপান নীতিটি একটি আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া কিছুই না।
৩. কর্তৃত্বের বহুধাবিভক্তি : পদসোপান নীতিতে সংগঠনের কর্তৃত্ব সুশৃঙ্খলভাবে সরাসরি ঊর্ধ্বান্তর থেকে নিচুস্তরে পৌঁছে না ? অনেকগুলো স্তর বা ধাপ পেরিয়ে নিচুস্তরে পৌছায়।
এভাবে একটি কাজের কর্তৃত্ব বিভিন্ন স্তরে বহুধাবিভক্ত হয়ে যায়। প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তারা এ কর্তৃত্বের ওপর নিজ নিজ প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
কেউ কেউ অহেতুক ঝামেলা সৃষ্টি করেন বা নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চান। এসব সমস্যার কারণে সংগঠনের কাজে বিঘ্ন ঘটে।
8. দায়িত্বজ্ঞান লোপ : পদসোপান নীতির কারণে কর্মকর্তা কর্মচারীদের দায়িত্বজ্ঞান লোপ পায়। তারা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব পালন করতে অনীহা প্রকাশ করে।
এ অজুহাতে তারা পদসোপান নীতির নিয়মাবলির কথা বলে। অনেক সময় তারা অন্যান্য অজুহাতে নিজ দায়িত্বকেও এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
৫. অনুপযোগী : পদসোপান নীতিটি সব ক্ষেত্রেই ব্যবহার উপযোগী না বা সব ক্ষেত্রেই সমান কার্যকর না। যেমন— অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা সামাজিক কল্যাণকর কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পদসোপান নীতিটি কার্যকর নয়।
এসব উন্নয়নমূলক বা সমাজকল্যাণমূলক কাজে বিঘ্ন বা জটিলতা দেখা যেতে পারে। তাছাড়া আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরোধী কোনো নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে পদসোপানের সাহায্য নেওয়া যায় না।
কেননা আমলারা সমসময় নিজ স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজ ছাড়া অন্য কাজ সহজে এবং দ্রুত করতে চায় না। তাই বলা যায় পদসোপান নীতিটি সব ক্ষেত্রেই উপযুক্ত নয়।
৬. প্রশাসনিক বিভক্তি সৃষ্টি : পদসোপান নীতির কারণে প্রশাসনে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। এখানে ব্যক্তিগত পদোন্নতি বা ব্যক্তি। স্বার্থ জড়িত থাকায় কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থ ও মানমর্যাদা বৃদ্ধির আশায় একে অন্যের সাথে বিভেদে জড়িয়ে পড়ে।
তারা অনেক সময় প্রশাসনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে নিজ লক্ষ্য উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। এতে প্রশাসনে বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয় ।
৭. সময়ের অপচয় : পদসোপান নীতিটি যথাযথভাবে পালন করতে গিয়ে একটি কাজের নির্দেশ প্রতিটি স্তরে গমন করে।
প্রতিটি স্তরেই নির্দেশটি অযাচিত বিলম্বের শিকার হয়। এভাবে প্রতিটা কাজের ক্ষেত্রেই অনেক সময়ের অপচয় ঘটে
৮. মানবিক দিক উপেক্ষিত : পদসোপান নীতিটি একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। সব কাজের কর্তৃত্ব- দায়িত্ব ইত্যাদি আইন দ্বারা নির্দিষ্ট। তাই সবাইকে এ নিয়মের ভিতরেই কাজ করতে হয়।
এ ডিম বা আইন ভেঙে কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। তাই অনেক সময় কর্মকর্তাদের মানবিক দিকটি উপেক্ষিত থেকে যায়। এছাড়া এর ফলে সকলের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি হয় না। সবাই যেন নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ।
৯. প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি : একটি কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত থাকে বলে একজন ব্যক্তিকে একটি কাজের একটি নির্দিষ্ট অংশ সম্পাদন করতে হয়।
ফলে প্রশাসনিক কাজে জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া প্রতিটি পর্যায়ে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাজ করা কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য জটিল কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
১০. সৃজনশীল দক্ষতা সৃষ্টির বাধা : পদসোপান নীতির কারণে একজন কর্মকর্তাকে সবসময় একই কাজ বা একই ধরনের কাজ করতে হয়।
ফলে কর্মকর্তাদের নতুন নতুন সৃধনশীল দক্ষতা সৃষ্টি হয় না। এর ফলে কর্মকর্তারাও একঘেয়েমিতে ভোগে। এটি সংগঠনের কর্মদক্ষতা হ্রাস করে।
উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পদসোপান নীতির বহুবিধ অসুবিধা রয়েছে। এগুলো, কোনোভাবেই উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
এসব অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও আধুনিক যুগে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পদসে পান নীতি দেখা যাচ্ছে। কেননা পদসোপান নীতির প্রয়োজন রয়েছে।
তাই পদসোপান নীতিকে আরও কার্যকর করতে উপযুক্ত অসুবিধাগুলো দূর করার চেষ্টা করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ, দুর্নীতি হ্রাস, প্রত্যেক স্তরে কাজের তদারকির মাধ্যমে উক্ত অসুবিধাগুলো দূর করা যেতে পারে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ পদসোপান নীতির অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম পদসোপান নীতির অসুবিধাবলি বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।