পদসোপান নীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো পদসোপান নীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের পদসোপান নীতির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
পদসোপান নীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর |
পদসোপান নীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
- অথবা, পদসোপান নীতির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
- অথবা, পদসোপান নীতির বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ।
উত্তর ভূমিকা : আধুনিককালে পদসোপান যেকোনো সংগঠন বা প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বর্তমানে পদসোপান নীতির মাধ্যমেই সব প্রশাসনিক কার্যাবলি সম্পাদিত হয়।
এর ফলে সব প্রতিষ্ঠানেই গতিশীলতা তৈরি হয়। পদসোপান ব্যতীত কোনো সুষ্ঠু ও কার্যকর সংগঠন চিন্তা করা যায় না। আধুনিককালে অনেক বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হচ্ছে।
এখন সব প্রতিষ্ঠানকেই বিবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করতে হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পদসোপান নীতির প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে গেছে। পদসোপান নীতির কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে।
পদসোপান নীতির বৈশিষ্ট্য : পদসোপান নীতির মাধ্যমে সংগঠনের সব কর্মীর দায়িত্ব ভাগ করা থাকে। এরকম অনেক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে পদসোপান নীতিতে। নিম্নে এসব বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. স্বকীয়তা : পদসোপান নীতির সব ক্ষেত্রেই স্বকীয় নিয়মনীতি রয়েছে। সব নিয়ম নীতির ক্ষেত্রে পদসোপান নীতি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন। পদসোপান নীতি কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়।
Professor Mooney তিনটি প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেন। যথা : ক. নেতৃত্ব (Leadership), খ. কর্তৃত্ব অর্পণ (Delegation of Authority) ও গ. কর্ম নির্দিষ্টকরণ (Fixation of Functions )।
২. আদেশ : পদসোপান নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে সব আদেশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হতে অধস্তন কর্মকর্তাদের নিকট প্রবাহিত হয়।
অধস্তন কর্মকর্তা কখনও তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আদেশ প্রদান করতে পারে না। অধস্তন কর্মকর্তা কেবল আদেশ পালন করবে।
৩. প্রোপার চ্যানেল : পদসোপান নীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো প্রোপার চ্যানেল (Proper channel) এর উপস্থিতি। এ প্রোপার চ্যানেল অনুযায়ী সব কর্মকর্তা কর্মচারী একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে।
কোনো অধস্তন কর্মকর্তা যদি সর্বোচ্চ পর্যায়ের সাথে যোগাযোগ করতে চায় তবে তার ঠিক উপরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমেই করতে হবে।
আবার কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি নিম্ন স্তরের কারো সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায় তবে এক্ষেত্রে তার ঠিক নিচের অধস্তন কর্মকর্তার মাধ্যমেই করতে হবে। এক বা একাধিক স্তর ডিঙিয়ে অন্য কোনো পর্যায়ে যোগাযোগ স্থাপনের কোনো সুযোগ পদসোপান নীতিতে নেই।
৪. বিভক্ত করা : প্রশাসনিক কার্যাবলিকে বিভিন্ন ইউনিট বা সাব ইউনিটে ভাগ করে কাজ করা পদসোপান নীতির একটি বৈশিষ্ট্য ।
এসব ইউনিট বা সাব ইউনিটদের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। পদসোপান নীতিতে এভাবে বিভক্ত ইউনিটের বাইরে কোনো কাজ করা হয় না।
৫. পিরামিড সদৃশ : পদসোপান নীতিতে বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্তৃত্ব, দায়িত্ব, কর্তব্য, বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ভিত্তিতে সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের পিরামিড আকৃতিতে বিন্যস্ত করা হয়।
এ পিরামিডের সর্বোচ্চ স্তরে যে থাকে তার কাছেই ঐ প্রশাসনের সব নিয়ন্ত্রণ থাকে। তিনি স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বেশি ভোগ করে।
নিম্নে চিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করা হলো : উপরের চিত্রে ক সংগঠনের প্রশাসনিক প্রধান। কচ বাহুতে খ গ, ঘ, ঙ ও চ ক এর অধীন। আবার ক বাহুতে a, b, c, d ও ক এর অধীন। এখানে ক যদি প এর সাথে যোগাযোগ করতে চায় তবে খ এর মাধ্যমে করতে হবে।
আবার অপর দিকে চ যদি ঘ এর সাথে যোগাযোগ করতে চায় তবে ও এর মাধ্যমে করতে হবে। পিরামিডের সর্বোচ্চ বিন্দু সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব নির্দেশ করে। সর্বোচ্চ বিন্দু হতে নিচের দিকে এ কর্তৃত্ব ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে।
৬. ক্ষমতা হস্তান্তর : পদসোপান নীতিতে ক্ষমতা কখনও একটি উৎসে আটকে থাকে না। এটি প্রশাসনের পিরামিডের মাধ্যমে সর্বদা উচ্চস্তর থেকে নিম্ন স্তরে প্রবাহিত হয়।
তাছাড়া ক্ষমতা সরাসরি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে যেতে পারে না । পদসোপানের নীতি অনুযায়ী প্রত্যেকটি স্তর পার হয়েই সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তরে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়।
৭. পদের শিরোনাম : পদসোপান নীতিতে অনেকগুলো পদের সৃষ্টি হয়। এসব পদের সুস্পষ্ট শিরোনাম থাকে। এ শিরোনামের মাধ্যমে তাদের ওপর বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পিত হয় । এছাড়া এ শিরোনামের ক্ষমতা বলেই তারা তাদের কাজগুলো করে থাকে ।
৮. ঊর্ধ্বস্তরের অধীন : প্রশাসনের সব নিম্নস্তরের কর্মীরা তাদের ওপর অর্পিত কাজের জন্য তাদের ঠিক উপরের স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিকট দায়বদ্ধ থাকে ।
অধস্তন কর্মীরা যতটুকু ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় এবং যেরূপ নির্দেশনা পায় ঠিক সেভাবেই তারা কাজ করতে পারে। এর বাইরে যাওয়া কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীর পক্ষে সম্ভব নয়।
অধস্তন কর্মকর্তা কর্মচারীরা অনুমতিপ্রাপ্ত না হলে কখনোই তাদের ঊর্ধ্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোনো পরামর্শ বা উপদেশ দিতে পারে না।
৯. সুসমন্বিত নীতি : পদসোপান নীতির আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি সুসমন্বিত নীতি । পদসোপানের মাধ্যমে সবার কাজ সুষ্ঠুভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয় । এর ফলে সবাই সচেতনভাবে নিজ নিজ কাজ সম্পাদন করতে পারে। ফলে সব কাজের মধ্যে একটি সমন্বয় তৈরি হয় ।
১০. শ্রমবিভাজন : শ্রমবিভাজন নীতি অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী কর্ম লাভ করবে এবং সে অনুযায়ী পারিশ্রমিক প্রাপ্ত হবেন।
পদসোপান নীতিতে শ্রমবিভাজনের এ নীতি কঠোরভাবে মানা হয়। অধিক দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পদসোপানের শীর্ষে নিয়োগ দেওয়া হয়।
পদসোপানে সবাই নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী পদপ্রাপ্ত হয় বলে সবাই নিজ নিজ পদে খুশি থেকে সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন করে । এর ফলে সংগঠনের কাজে গতিশীলতা আসে
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পদসোপান নীতির অনেকগুলো সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এসব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণেই পৃথিবীর অধিকাংশ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে পদসোপান নীতির বাস্তবায়ন করে পদসোপানের সৃষ্টি করা হয় । পদসোপান নীতি সংগঠনের কাজকে সহজ ও সুশৃঙ্খল করে ।