লোকপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের পার্থক্য আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো লোকপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের পার্থক্য আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের লোকপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের পার্থক্য আলোচনা কর।
লোকপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের পার্থক্য আলোচনা কর |
লোকপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের পার্থক্য আলোচনা কর
উত্তর ভূমিকা : আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের কার্যাবলি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তব্য দিন দিন বেড়েই চলেছে ।
প্রশাসনিক কার্যক্রম চালনার জন্য একটি রাষ্ট্রের সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসন উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তবে এদের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে আমাদেরকে সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসন সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে হবে।
সরকারি প্রশাসন : সরকারি প্রশাসন বা লোকপ্রশাসন সরকারি নীতি, আদর্শ, কার্যাবলি প্রভৃতি বাস্তবায়ন করে থাকে। প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
এ সম্পর্কে মাদী ম্যাককুইন (Machi Macquine) বলেন, “লোকপ্রশাসন বলতে কেন্দ্রীয়ই হোক আর স্থানীয়ই হোক, সরকারের কার্যাবলির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকেই বুঝায়।”
সি. পি. ভারী (C. P. Bhambhri) বলেন, "রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে বলিয়ান রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপই হলো লোকপ্রশাসন"।
সুতরাং বলা যায়, জনগণের মঙ্গলসাধন ও সরকারি কার্যাবলির বাস্তবায়ন করার নামই লোকপ্রশাসন ।
বেসরকারি প্রশাসন : বেসরকারি প্রশাসন বলতে ব্যক্তিগত প্রশাসনকে বুঝায়। এ ধরনের প্রশাসন ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে থাকে ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
ফিফনার (Pfiffner) এর ভাষায়, “বেসরকারি প্রশাসন বলতে ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি, ক্লাব, কোম্পানি অথবা সমবায় কর্তৃক পরিচালিত কার্যাবলিকে বুঝায়।”
বিদ্যাভূষণ (Vidaya Bhushan) বলেন, "বেসরকারি প্রশাসন হলো একটি গ্রুপ প্রচেষ্টা যারা প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে, যেখানে প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে লভ্যাংশ অর্জন করা।”
মোটকথা, বেসরকারি প্রশাসন হলো বেসরকারি নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত প্রয়াস যার উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন ।
সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যকার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য : সনাতন প্রশাসনিক ব্যবস্থার আওতায় সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের কাঠামোতে অনেক পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
তবে রাষ্ট্রের প্রকৃতি, ব্যবস্থাপনাগত প্রভৃতি নিক পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে সাদৃশ্য : হেনরি ফেয়ল, মেরি পার্কার ফলেট, এল. আরউইক প্রভৃতি তাত্ত্বিকগণ সাদৃশ্যের পক্ষে মত দেন।
অপরপক্ষে, পল অ্যাপালেবি, হার্বার্ট এ সাইমন প্রমুখ তাত্ত্বিকগণ সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে বৈসাদৃশ্যের পক্ষে মত পোষণ করেন। নিম্নে উভয়ের মধ্যকার সাদৃশাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. সমাজবিজ্ঞানের শাখা : সমাজবিজ্ঞান এমন একটি আলোচ্য বিষয় যেখানে মানুষের সার্বিক বিষয়সমূহ নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়। যেহেতু লোকপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসন সমাজবিজ্ঞান হতেই আবির্ভূত হয়েছে সেহেতু এদের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান ।
২. কাজের ধরন ও প্রকৃতির সাদৃশ্য : সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের কার্যক্রম ও প্রকৃতিগত দিকটা প্রায় কাছাকাছি। কেননা উভয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো প্রশাসন ব্যবস্থা সচল রাখা।
৩. নীতিমালার সাদৃশ্য : প্রত্যেক সংগঠন পরিচালনার জন্য কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়। সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কমবেশি অনুসরণ করা হয়।
৪. পরিকল্পনাগত অভিজ্ঞতা : সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রশাসনই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সঠিক পরিকল্পনা, সংগঠন ও উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। পরিকল্পনা প্রণয়নের পদ্ধতিগত অনেক মিল আছে।
৫. পরিধির অভিন্নতা : সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের বিষয়বস্তু ও পরিধির মধ্যে অনেক সাদৃশ্য বিদ্যমান। কিছু কিছু কৌশল, পরিসংখ্যান, হিসাবনিকাশ, অফিস ব্যবস্থাপনা ও কার্যবিধি উভয় প্রশাসনে প্রায় একইভাবে বিদ্যমান।
৬. প্রশিক্ষণ : প্রশাসনের কর্মচারীদের দক্ষতা, যোগ্যতার মেধা, বুদ্ধিমত্তা প্রভৃতি বৃদ্ধি করে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপখাওয়ানোর লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
৭. নিয়ন্ত্রণের সাদৃশ্য : গণতান্ত্রিক ক্ষমতার ওপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ আরোপের নীতি লোকপ্রশাসনের ন্যায় বেসরকারি প্রশাসনেও একইভাবে বিদ্যমান ।
সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য : সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে কতিপয় সাদৃশ্য লক্ষ করা গেলেও উভয়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান।
এ পার্থক্য সম্পর্কে Mustafa Chowdhury বলেন, "Most often these are differences in degree rather then in kind." নিম্নে পার্থক্যগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। সরকারি প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্য হলো জনসেবা নিশ্চিত করে জনকল্যাণসাধন করা। অপরপক্ষে, বেসরকারি প্রশাসনের উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন করা।
২: কর্ম পরিধি : লোকপ্রশাসনের কর্ম পরিধি বেসরকারি প্রশাসনের চেয়ে ব্যাপক ও বিস্তৃত। পক্ষান্তরে, বেসরকারি প্রশাসনের কর্ম পরিধি খুবই সীমিত
৩. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা : লোকপ্রশাসন আমলানির্ভর। দুর্নীতি, উদাসীনতা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ও আনুষ্ঠানিকতার প্রভাব অনেক বেশি। অপরপক্ষে, বেসরকারি প্রশাসনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা প্রভাব কম তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়িত হয় ।
৪. আর্থিক লাভ-ক্ষতির হিসাব : সরকারি প্রশাসনে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেও উক্ত প্রকল্প স্থগিত রাখা যায় না। অন্যদিকে, আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে বেসরকারি প্রশাসন কোনো প্রকল্প স্থগিত করে দিতে পারে।
৫. কর্মীদের দক্ষতা : সরকারি প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মীদের দক্ষতা কম। সনাতন পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগের ফলে দক্ষতা নিরূপণ করা হয় না। অন্যদিকে, বেসরকারি প্রশাসনে যোগ্যতা নিরূপণ করে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় ।
৬. সামাজিক মর্যাদা : একজন সরকারি প্রশাসক নিঃসন্দেহে একজন বেসরকারি প্রশাসকের চেয়ে অধিকতর সামাজিক মর্যাদা ভোগ করে থাকেন । কারণ সরকারি চাকুরির মাধ্যমে জনসাধারণের সেবা করা যায় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মাধ্যমে মূলত দুটি আলাদা পরিবেশের কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এদের মধ্যে খুব কমই পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। মূল কথা হলো সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের কাজের ক্ষেত্র ভিন্ন ভিন্ন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ লোকপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের পার্থক্য আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম লোকপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের পার্থক্য আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।