গরুর কোন রোগের কি ঔষধ | গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি

গরুর রোগ সমূহ | গরুর রোগের লক্ষণ - আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই এখন ডেইরী ফার্মে নিয়োজিত। একটা সময় ছিলো যখন শুধু গ্রামের মানুষেরাই গরু লালন পালন করতো। 

কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে। গত ১০/১২ কয়েক বছর ধরে প্রচুর শিক্ষিত ছেলে এবং প্রবাসীসহ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরাও ডেইরী ফার্মে নিয়োজিত। 

এর কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশে প্রচুর মাংসের চাহিদা। বিশেষ করে পবিত্র কুরবানি ঈদে আমাদের দেশেই কয়েক লক্ষ গবাদি পশুর প্রয়োজন হয়। 

গরুর কোন রোগের কি ঔষধ
গরুর কোন রোগের কি ঔষধ

যা সুদূর অতীতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানি করা হলেও, বর্তমানে দেশী গরু দিয়েই চাহিদা পূরণ হয়। যেকারণে গবাদি পশুর মাংসেরও প্রচুর চাহিদা ও দাম রয়েছে।

সুচীপত্রঃ গরুর কোন রোগের কি ঔষধ | গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি

বর্তমানে শিক্ষিত লোকেরাই ডেইরী ফার্মে জড়িত বলে গরুর বিভিন্ন সমাস্যা বিশেষ করে গরুর বিভিন্ন রোগ বালাইসহ গরুর কোন রোগের কি ঔষধ প্রয়োজন তা জানা জরুরী হয়ে গেছে। 

তাই আজ আমরা এই আর্টিকেল থেকে জানার চেষ্টা করব গরুর কোন রোগের কি ঔষধ বা গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি দিতে হয় বা দেওয়া উচিত। 

একইসাথে আমরা কীভাবে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে গবাদিপশুকে রক্ষা করতে  কী পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত।  আসুন আমরা গরুর রোগ এবং প্রতিকার ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

গলাফুলা রোগ

গলাফুলা একটি খুবই মারাত্মক এবং তীব্র প্রকৃতির রোগ। এই রোগে গরু এবং মহিষ বেশী আক্রান্ত হয়। এটি মূলত ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি রোগ, যা Pasteurella multocida দ্বারা সংঘটিত হয়। 

এই  রোগে গবাদিপশুর মৃত্যুর হার খুবই বেশি। গলাফুলা বা (hemorrhagic septicemia) রোগটি এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপের বেশ কিছু দেশ এবং  মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান। তবে আমাদের  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রোগটি বেশি পরিলক্ষিত হয়।  

স্বাভাবিকভাবেই প্রায় প্রতিটি পশুর শরীরে  এ রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকে। যদি কোনো কারণে গরুর ঠাণ্ডা, অধিক গরম কিংবা ভ্রমণজনিত দুর্বলতা ইত্যাদির  সম্মুখীন হয়, তখনই এই জীবাণু গরুর শরীরকে দুর্বল করে ফেলে। 

আর ঠান্ডা থেকেই এই রোগ বেশি দেখা দেয়। গলাফুলা রোগটি আমাদের দেশে  ব্যাংগা, ঘটু, গলগটু, গলবেরা নামে পরিচিত।

গলাফুলা গরুর রোগের লক্ষণ

এ রোগ তীব্র বা অতি তীব্র দুইভাবেই হতে পারে। তবে গরুর যদি অতি তীব্র প্রদাহ দেখা দেয় তাহলে গরুর হঠাৎ জ্বর এসে মুখ ও নাক দিয়ে পানি বের হতে থাকে। 

এর ফলে গরু অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যারফলে গরু  খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। যে কারণে  ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গরুর মৃত্যুও হতে পারে। 

আর যদি স্বাভাবিক মাত্রায় এই রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে গরু ২৪ ঘন্টারও  অধিক সময় বেঁচে থাকে। এ সময় গরুর শরীরে এডিমা দেখা দেয়। 

যা শুরুতে গরুর গলার নিচে, পরে চোয়ালে, তলপেটে এবং নাকে,  মুখে, কানে ও  মাথায় বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

গলা স্ফীত হলে গরুর গলার ভেতর ঘড় ঘড় জাতীয় শব্দ হয়, যার শব্দ এতো বেশী যে তা  অনেক সময় দূর থেকেও শোনা যায়। প্রদাহযুক্ত ফোলা স্থানে প্রচুর ব্যথা থাকে যা  হাত দিয়ে স্পর্শ করলে গরম ও শক্ত অনুভূত হয়। 

এমনকি সুচ দিয়ে ছিদ্র করলে সেখান থেকে হলুদ রংয়ের পানি বের হয়ে আসে। অনেক সময় খুসখুস কাশি এবং চোখে পিচুটি দেখা যায়। নাক দিয়ে ঘন জাতীয়  সাদা শ্লেষ্মা ঝরতে দেখা যায়। সাধারণত এই সব  লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আক্রান্ত গরু মারা যায়।

গলাফুলা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার

এই রোগে আক্রান্ত গরুকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে না পারলে গরুকে সহজে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তাই যখনই এই রোগের উপসর্গ দেখা দেয় তখনই সাথে সাথে চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। 

এ রোগের চিকিৎসায় সাধারণ Ampicillin, Tetracycline, Erythromycin, Sulphonamide এই জাতীয় ইনজেকশন গভীর মাংসে দিলে খুব  ভালো ফল পাওয়া যায়।

এটা জেনে রাখা উচিত যে, এই রোগকে সহজে নির্মূল করা অসম্ভব। কারণ এ রোগের জীবাণু স্বাভাবিক অবস্থাতাতেই গরুর দেহে থাকে। তবে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা নিতে পারলে এই রোগ থেকে গরুর মৃত্যু প্রতিরোধ করা যায়।

যেকোনো পরিস্থিতিতে রোগাক্রান্ত গরুকে সুস্থ সবল গরু থেকে আলাদা করে রাখতে হবে। একইসাথে সর্বাবস্থায় সুস্থ পশুকে টিকা দেওয়ার  ব্যবস্থা করতে হবে।

যদি কোনো কারণে এই রোগের মড়ক দেখা দেয়। তখন নিজস্ব গরুদের যথাযথ নিরাপত্তা ও সতর্কতার সাথে গরুর স্থানান্তর করতে হবে। প্রয়োজনে গরু চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

যখনই পরিবেশ পরিস্থিতি খারাপ হবে। তখনই গরুর পরিচর্যার জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে গরু থাকার জায়গায় কোনো ভাবেই জীবাণু প্রবেশ করতে না পারে। এবং এই ক্ষেত্রে বাড়তি যত্নের  ব্যবস্থা করতে হবে। সবসময়ই টিকা দেওয়ার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ

লাম্পি স্কিন রোগটি গরুর জন্য একটি ভয়ংকর ভাইরাস জনিত রোাগ। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের সব জায়গায় গবাদি পশু এলএসডি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। 

এই রোগ খামারের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শুধু তাইনয় একটি খামার কে ধ্বংস করে দিতে  এফএমডি বা ক্ষুরা রোগের চেয়ে এই রোগ অনেক বেশি ভয়ংকর। 

প্রধাণত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে বা বসন্তের শুরুতে এই রোগ দেয়। এই সময় মশা মাছি অধিক বংশবিস্তার করে ফলে তার মাধ্যমে এই প্রাণঘাতী রোগটি ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের কারণ

এটি এক প্রকার ফক্স ভাইরাস বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণে গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়। একইসাথে মশা-মাছির মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণ

এই রোগে গরু আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে গরুর তাপমাত্রা হঠাৎ অনেক বেড়ে যায়। এমনকি তাপমাত্রা ১০৫ থেকে ১০৭ ডিগ্রী পারেনহাইট পর্যন্ত হয়। গরুর নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে। সেইসাথে মুখ দিয়ে পানি ঝরতে দেখা যায়। 

শুধু তাইনয় অনবরত গরু চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকার কারণে গরুর চোখ এক পর্যায়ে অন্ধ হয়ে যায়। গরুর সমস্ত শরীরে লাম্প বা মাংশের পিন্ডের মত আচিল দেখা যায়। 

কোনো কোনো সময় এই লক্ষণ শুধুমাত্র গরুর মাথা, ঘাড়, সামনের পা, ওলান অথবা জননাঙ্গেও দেখা যায়। এছাড়াও গরুর চামড়া বা ত্বকে অসংখ্য গোলাকার নডিউল দেখা যায়। 

যার ব্যাস প্রায় ৩ সেন্টিমিটার বিশিষ্ট হয়। যখন নডিউল গুলো পরিণত হয় তখন তা খসে পড়ে। একইসাথে চামড়ায় হেমরেজ বা ক্ষত দেখা যায়। নডিউলে অনেক সময় মায়াসিস দেখা যায়।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের চিকিৎসা

এই রোগের বিশেষ পদ্ধতির কোনো চিকিৎসা নেই। তবে উপযুক্তভাবে পরিচর্যা করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আক্রান্ত গরুর ২য় পর্যায়ের ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধে এন্টিবায়োটিক যেমন ট্রাইজেক্ট ভেট ইনজেকশন/ ট্রাইজন ভেট ইনজেকশন ইত্যাদি ঔষধ ব্যবহার করা হয়। 

গরুর জ্বর নিরাময় ও ব্যথা উপশমের জন্য ব্যথানাশক যেমন টাফনিল ভেট বোলাস বা  ইনজেকশন ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। 

একইসাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বায়োলাক্ট বোলাস/ টিএমটি ভেট বোলাস নিয়মিত খাওয়াতে হবে। একইসাথে  ডাইইউরেটিক্স হিসাবে লুমিক্স (Lumix Sol.) ঔষধ মুখ দিয়ে খাওয়ালে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের করণীয় 

এই রোগ থেকে গরুকে বাচাতে হলে গরুকে নিয়মিত এল এস ডি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। গরুর খামারের ভিতর এবং আসেপাশের এলাকার পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। 

যাতে করে মশা মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আক্রান্ত খামারে সকলের যাতায়ত বন্ধ করতে হবে এবং একইসাথে আক্রান্ত খামার বা সেড থেকে আনা কোন উপকরণ অথবা খাদ্য আর ব্যবহার  যাবে না। 

এলএসডি তে আক্রান্ত গরুকে শেড থেকে আলাদা করে রাখতে হবে। একইসাথে তাকে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে যাতে মশা মাছি কামড়াতে না পারে। শুধু তাইনয় এলএসডি তে আক্রান্ত গভীর দুধকে আর বাচুরকে খাওয়ানো যাবে না। 

শুধু তাইনয় এই দুধ  বাছুরকে খেতে না দিয়ে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে। কোন গরু এল এস ডি আক্রান্ত হলে,  দ্রুত রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারী ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।

ক্ষুরা রোগ

আমাদের দেশে খুবই পরিচিত একটি গরুর রোগ হলো ক্ষুরা রোগ। এটি একটি ভইরাসজনিত জনিত মারাত্মক সংক্রামক একটি ব্যাধি। দুইটি  ক্ষুর আছে এমন সব প্রাণীই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। 

তবে আমাদের দেশে সাধারণত প্রায় সকল গরুই এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। এটি একটি বায়ু বাহিত একটি রোগ। এই রোগের ভাইরাস বাতাসের সাহায্যে দূর দূরান্তে নিমিষেই বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ক্ষুরা রোগের লক্ষণ

যখন প্রথম দিকে গরুর এই রোগ দেখা দেয়, তখন প্রথম অবস্থায় গরুর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরফলে গরুর  মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে এবং লালা দেখতে ফেনার মতো হয়। গরু সহজে খেতে পারে না। 

আর না খেতে পারার ফলে ওজন দ্রুত অনেক কমে যায়। দুধ দেওয়ার গাভির দুধও হঠাৎ করেই অনেক কমে যায়। এমনকি গরুর বাছুরের ক্ষেত্রে  লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই গরুর বাছুর মারা যেতে পারে।

ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার

আক্রান্ত গরুর মুখ ও পায়ের ঘায়ের মধ্যে পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট মেশানো পানি অথবা খাওয়ার সোডা মেশানো পানি দিয়ে দিনে কমপক্ষে ৩-৪ বার ধুয়ে দিতে হবে। ওষুধ মেশানো পানি দিয়ে ঘা ধুয়ে ফেলার পর সালফা নিলামাইড বা এ জাতীয় পাউডার লাগাতে হবে। 

এছাড়া গরুর ঘায়ে প্রচুর মাছি বসে ঘাকে আরও বড় করে ফেলে। একইসাথে এই রোগ দূরদূরান্তে ছড়িয়ে দেয়। তাই চার ভাগ নারকেল তেলের সাথে ১ ভাগ তারপিন তেল মিশিয়ে একটি মিক্সার তৈরি করে ক্ষতস্থানে লাগাতে হবে। যাতে করে মাছি বসতে না পারে।

ফ্যাসিওলিয়াসিস রোগ

গরুর যকৃতে ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা ও ফ্যাসিওলা হেপাটিকা নামের পাতাকৃমি থেকে সৃষ্ট রোগকে ফ্যাসিওলিওসিস বলে। 

এই প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, রক্তস্বল্পতা, ম্যান্ডিবুলের নিচে পানি জমা যাওয়া, যা দেখতে অনেকটা বোতলের মতো, একইসাথে ডায়রিয়া এবং ধীরে ধীরে কৃশকায় অবস্থার দিকে ধাবিত হওয়া। আমাদের বাংলাদেশে প্রায় ২১ ভাগ গরুতে ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা পাতাকৃমিতে আক্রান্ত হয়।

ফ্যাসিওলিয়াসিস রোগের লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত গরুর যকৃতে অপ্রাপ্তবয়স্ক কৃমির মাইগ্রেশন হওয়ার ফলে যকৃত কলা ধ্বংস হয়।  এবং একইসাথে যকৃতে প্রোটিন সংশ্লেষণ হ্রাস পায়। এতে করে গরুর হাইপোপ্রিটিনিমিয়া তথা বটল জ্বর দেখা দেয়। 

সেইসাথে বদহজম ও ডায়রিয়াও দেখা দেয়। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে গরুর ক্ষুধামন্দা ও দুর্বলতা দেখা দেয়। এমনকি গরুর চোখের কনজাংটিভা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। তীব্র যকৃত প্রদাহের সাথে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে লক্ষণ প্রকাশের আগেই গরুর হঠাৎ মৃত্যু ঘটে।

ফ্যাসিওলিয়াসিস চিকিৎসা ও প্রতিকার

ট্রাইক্লেবেন্ডাজল বোলাস ঔষধটি প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম করে আক্রান্ত পশুকে খাওয়ালে ৯০ থেকে ১০০ ভাগ সুফল পাওয়া যায়। 

নাইট্রোক্সিলিন ইনজেকশন প্রতি ৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১.৫ মিলিলিটার হিসেবে গরু, মহিষ ও ছাগলের ত্বকের নিচে প্রয়োগ করে কার্যকরি ফল পাওয়া যায়। 

সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে দুর্বলতা ও রক্তস্বল্পতার জন্য ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ইনজেকশন দেয়া এবং মিনারেল মিকচার খাওয়ানো ভালো। পশুকে সন্দেহজনক স্থান যেমন নিচু জায়গা বা ড্রেনের পাশে ঘাস খাওয়ানো থেকে বিরত রাখতে হবে।

তড়কা রোগ

তড়কা রোগটি গরুর একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রামক রোগ। গরু  থেকে এই রোগ মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। 

কোনো খাদ্য এই রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হলে, সেই খাদ্য গরু খেলে গবাদিপশুর এই রোগ তথা তড়কা কিংবা অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়। 

এই রোগের জীবাণু নদী-নালার পানি ও জলাবদ্ধ জায়গার ঘাসে ছড়িয়ে পড়ে। যখন গরু ঐ ঘাস খায় তখন সে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়।

তড়কা রোগের লক্ষণ

এই রোগ হলে গরুর দেহের লোম খাড়া হয়ে যায়। একইসাথে গরুর দেহের তাপমাত্রা ১০৬-১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। 

গরুর নাক, মুখ ও মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণও দেখা দেয় অনেক সময়। একইসাথে পাতলা ও কালো পায়খানাও হতে পারে। লক্ষণ প্রকাশের ২-৩ দিনের মধ্যে গরু ঢলে পড়ে মারা যায়।

তড়কা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

এই রোগের চিকিৎসায় পেনিসিলিন, বাইপেন ভেট, জেনাসিন ভেট, এম্পিসিন ভেট ইত্যাদি ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। 

এ ছাড়াও স্ট্রেপটোমাইসিন বা এন্টিহিস্টাভেট ইনজেকশনও অনেক ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। অবশ্যই সবসময় সুস্থ সবল গরুকে আলাদা  রাখতে হবে। মরে যাওয়া গরুর মল, রক্ত ও গরুর  মৃতদেহ মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।

দুগ্ধ জ্বর বা মিল্ক ফিভার

এটি গাভীর সাথে সম্পর্কিত একটি রোগ। সাধারণতঃ অধিক দুধদেয় এময় গাভী প্রসবের পর পরই এ রোগে আক্রান্ত হয়।

দুগ্ধ জ্বর বা মিল্ক ফিভার লক্ষণ

এই রোগে গাভী আক্রান্ত হলে কিছু খেতে চায় না এবং মাথা স্থির রাখতে পারে না ফলে জিহ্বা বের হয়ে আসে। যেকারণে গাভী বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে। 

একইসাথে গাভী তার মাথা কাঁধের একপাশে ফেলে রাখে। এতে করে গাভী জ্ঞান ঠিকমতো থাকে না। ফলে একসময়  গরু মারা যায়।

দুগ্ধ জ্বর বা মিল্ক ফিভার চিকিৎসা

ক্যালসিয়ামই এই রোগের চিকিৎসা। তাই  ক্যালসিয়াম ইনজেকশন রোগের গরুর  তীব্রতা ও ওজন অনুযায়ী শিরায় প্রযোগ করতে হবে।

দুগ্ধ জ্বর বা মিল্ক ফিভার করণীয়

সবসময়ই গর্ভবতী গাভীর সুষম খাদ্যের দিকে নজর দিতে হবে। গাভীর প্রসবকালীন শেষ মাস থেকে গাভীর খাদ্যে পরিমিত অনুপাতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি এর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এর  চিকিৎসা করতে হবে।

ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশায়

এই রোগটি মূলত অল্প বয়স্ক গরুর প্রোটোজোয়া জনিত একটি রোগ

লক্ষণ

এই রোগ হলে গরু দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা করে। একইসাথে পায়খানায় রক্ত ও মিউকাস (আম) মেশানো থাকে। গরু যখন পায়খানা করে তখন ঘনঘন কোঁথ দেয়।

করণীয়

এই রোগ থেকে গরুকে বাঁচাতে হলে বাসস্থান, খাবার ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত গরুর দ্রুত উপযুক্ত চিকিৎসা করতে হবে।

চিকিৎসা

সালফানামাইড জাতীয় ঔষধের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয় ।

গরুর রক্ত প্রস্রাব বা ব্যাবেসিওসিস রোগ

গরুর রক্ত প্রস্রাব বা ব্যাবেসিওসিস এই রোগটি হচ্ছে আঠালী বাহিত একটি প্রোটোজোয়া জনিত রোগ। এই রোগের জীবাণুর নাম হচ্ছে (Babesia bovis and Babesia bigemina), এই রোগের আর একটি নাম হলো রেড ওয়াটার ফিভার। 

কারণ এই রোগ হলে গরুর রক্তের লোহিত কনিকা ভেঙ্গে যায়। যা পরবর্তীতে গরুর মূত্রের সঙ্গে বের হয়ে আসে এবং তা লাল রং দেখায়। এতে করে গরুর রক্ত শুন্যতা দেখা দেয়। সাধারণত ৯ মাস বয়স পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয় না বলে জানা গেছে। 

অধিকাংশ সময় প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা যায় না। ফলে দেরিতে রোগ নির্ণয় হওয়ার কারণে এই রোগের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়।

গরুর রক্ত প্রস্রাব বা ব্যাবেসিওসিস রোগের কারণ

ব্যাবেসিয়া বোভিস ও ব্যাবেসিয়া বাইজেমিনা (Babesia bovis and Babesia bigemina) নামের জীবাণু প্রোটেজোয়া যা আঠালীর মাধ্যমে গরুতে ছড়িয়ে পড়ে।

গরুর রক্ত প্রস্রাব বা ব্যাবেসিওসিস রোগের লক্ষণ

এই রোগ হলে গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে। প্রায় সময় ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা লক্ষ্য করা যায়। জ্বরের কারণে গরু খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেয়। ফলে গরু অধিকাংশ সময় ঝিমুতে থাকে। 

এমনকি  গরু হাটাচলাও কম করে। আক্রান্ত গরুর মূত্রের রং দেখতে দুধ ছাড়া চা বা কফির মত দেখায়। এই সময় গরুর রক্ত প্রস্রাব, পাতলা পায়খানা, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দেয়। 

গরুর রক্ত স্বল্পতা দেখা দেওয়ার ফলে গরু দেখতে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এতে করে গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দনও বেড়ে যায়। অনেক সময় আক্রান্ত গাভীর গর্ভপাতও হয়ে যায়।

গরুর রক্ত প্রস্রাব বা ব্যাবেসিওসিস রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

এই রোগের জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত ঔষধ হচ্ছে ইমিডোর্কাব ডাইপ্রোপিয়োনেট। যা চামড়ার নীচে একবার ইনজেক্ট করলেই যথেষ্ট। 

এছাড়া হিমাটিনিক মিক্সার যেমন- হিমাফিল সল্যুশনও খাওয়ানো উচিৎ। গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত টিএমবি ভেট বোলাস খাওয়ানো খুবই জরুরী। একইসাথে মাঝে মধ্যে অ্যালাম ও বোরিক এসিড একত্রে মিশিয়ে খাওয়ালেও খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে সবসময়ই গরুকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এবং গরুর শরীরের আঠালী নিয়ন্ত্রন করতে হবে। 

খেয়াল করে প্রতি বর্ষার শুরু ও শেষের দিকে গরুকে আঠালীনাশক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। এতে করে গরুর রক্ত প্রস্রাব বা ব্যাবেসিওসিস রোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।

গরুর বাদলা রোগ

গরুর বাদলা রোগ একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ। বলা হয়ে থাকে "ক্লস্ট্রিডিয়াম শোভিয়াই" নামক ব্যাকটিরিয়ার কারণে এই রোগ হয়। 

এটি একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রামক রোগ। মূলত বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির দিনে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় বলে একে বাদলা রোগ বলা হয়। 

এই রোগটি খুবই মারাত্মক একটি  রোগ। বৃষ্টির কারণে বন্যার পানির দ্বারা এ রোগ ছড়িয়ে পরে। বিশেষ করে বন্যার পানি যখন ঘাসে লাগে এবং সে ঘাস যখন গরু খায় তখন গরু বাদলা রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যায়।  

এছাড়াও অনেক সময়  বন্যার পানি ডোবা বা পুকুরের পানিতে প্রবেশ করে। তখন সেই পানিতে যদি বাদলা রোগের জীবাণু প্রবেশ এবং সেই জীবাণু যুক্ত পানি গরু পান করলে তখন গরুর বাদলা রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। 

এ রোগে সাধারণ জ্বরের মতো জ্বর হয়। জ্বর  তাছাড়াও ঘাড়, কাধ ও কোমড়ের মাংস ফুলে ফুলে ওঠে। ফোলা স্থান প্রথম দিকে শক্ত থাকে এবং সেখানে গরম অনুভুত হয়। এমনকি ফোলা স্থান চাপ দিলে পজ পজ শব্দ হয়। 

ফোলা স্থান কাটলে ফেনাযুক্ত রস বাহির হয় এবং টক টক গন্ধ পাওয়া যায়। গরুর প্রচন্ড ব্যথা থাকে এবং গরু প্রাথমিক পর্যায়ে খুড়িয়ে হাঁটে। 

পরবর্তিতে আক্রান্ত পশু হাটতে বা দাঁড়াতে পারেনা। একইসাথে পেট ফাঁপা থাকার কারণে খাবারের প্রতি অনিহাও দেখা দেয়।  উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে গরুর মৃত্যু হয়। 

গরুর বাদলা চিকিৎসা ও প্রতিকার

অ্যান্টিব্লাকলেগ সিরাম ঔষধটি প্রতিটি আক্রান্ত গরুর শিরা কিংবা চামড়ার নিচে ১০০-২০০ মিলিলিটার ইনজেকশন দিতে হবে। 

একইসাথে  অ্যান্টিহিসটামিনিক জাতীয় ইনজেকশন যেমন, হিস্টাভেট, ডিলারজেন, ফ্লুগান ইত্যাদি দিনে ৬ সি.সি. করে ৩ দিন ধরে মাংসে ইনজেক্ট করতে  হবে। 

যদি বিশেষ  প্রয়োজন হয় তাহলে  আক্রান্ত স্থান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পরিষ্কার করে টিংচার আয়োডিন গজ দিতে হবে। 

আক্রান্ত গরুকে সুস্থ গরু থেকে আলাদা করে চিকিৎসা করতে হবে। কোনো গরু অসুস্থ হয়ে মারা গেলে তাকে মাটির নিচে কলিচুন দিয়ে পুঁতে ফেলতে হবে। 

মৃতদেহ কোন অবস্থাতেই খোলা মাঠে বা পানিতে ভাসিয়ে দেয়া যাবেনা।  জীবাণুনাশক দিয়ে গোয়ালঘর সম্পূর্ণ  পরিস্কার করতে হবে।

গরুর বাদলা প্রতিষেধক

প্রতিটি সুস্থ গরুকে ছয় মাস পর পর নিয়মিত টিকা দিতে হবে। বিশেষ করে ২ বছরের কম বয়সের গরুকে।

কৃমি (পরজীবি)

কৃমি এমন একটি পরজীবী, যে সকল পশুপাখিকে আক্রান্ত করে। গরু এই কৃমি দ্বারা অন্তঃ ও বহিঃ ভাবেই আক্রান্ত হয়। অন্তঃ পরজীবিকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়-

  • পাতা কৃমি।
  • ফিতা কৃমি।
  • গোল কৃমি।

বহিঃ পরজীবির মধ্যে উকুঁন, আঁটালী ও মাইট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

কৃমি (পরজীবি) লক্ষণ

এই কৃমি খুবই মারাত্মক। এই কৃমি গরুর খাদ্য পুষ্টিতে ভাগ বসানোর সাথে সাথে গরুর রক্তও শোষণ করে। এতে গরু দিনদিন শুকিয়ে দূর্বল ও হাড্ডিসার হয়ে পড়ে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। 

একইসাথে গরু পাতলা পায়খানা করে। এমনকি তার শরীরের লোম বা পশম উসকো খুসকো হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বাছুরের মৃত্যু ঘটে যায়। এবং বয়স্ক গরুর মাংস উৎপাদন কমে যায়।

কৃমি (পরজীবি) করণীয়

সবসময়ই গরুকে বছরে ৩-৪ বার করে নিয়মিত কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে। একইসাথে গরুর বাসস্থান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। 

কৃমি (পরজীবি) চিকিৎসা

পাতা কৃমি হলে। ট্রাইকেলা বেনডাজল / অক্সিবেনডাজল ইত্যাদি ঔষধের দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে। ফিতা কৃমি হলে,  নিকলোসামাইড জাতীয় ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে। 

গোল কৃমি হলে অলবেনডাজল বা ফেনবেনডাজল/মে বেনডাজল /লিভামেসল /পাইপেরাজিন / আইভারমেকটিন ইত্যাদি ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে । বহিঃ পরজীবির মধ্যে উকুঁন, আঁটালী ও মাইট ইত্যারদির জন্য  আইভারমেকটিন দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে ।

গরুর ফুড পয়জনিং রোগ 

ফুড পয়জনিং গরুর একটি মারাত্মক সমস্যা। যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা করতে না পারলে গরুর অনেক সময় মৃত্যুও হতে পারে। 

আমাদের দেশে সকল ঋতুতেই গরুর এ সমস্যা দেখা দেয়। এটি মূলত গরুর খাদ্য ও খাদ্যাভাস জনিত ত্রুটির কারনেই  হয়ে থাকে।

গরুর ফুড পয়জনিং রোগের  কারণ 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভয়ংকর অণুজীব আলফা টক্সিন, মোল্ড, ফাংগাস ও লিস্টেরিরার ইত্যাদির কারণে গরুর পাতলা পায়খানা ও ফুড পয়জনিং হয়ে থাকে। 

গরুর ফুড পয়জনিং রোগের  প্রতিরোধ 

গরুর যেসব দানাদার খাবার ও ভূসি ইত্যাদি খাদ্যে  দ্রুত পোকামাকড়, রোগ জীবানু বা ব্যকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যায়। 

তাই গরুর ফুড পয়জনিং রোগ প্রতিরোধে  দানাদার খাবার সর্বদা রোগ জীবাণুমুক্ত ও টাটকা হতে হবে। অধিকাংশ সময় তেলাপোকা আমশয় রোগের জীবাণু বহন করে থাকে। 

তাই গরুর দানাদার খাবার ও খড় রাখার জায়গা, পান পাত্র ও গুদাম ঘর ইত্যাদি পোকামাকড়, ইদুর ও তেলাপোকা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। সবসময়ই খাবারের পাত্র সহ পুরো খামারক জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। 

গরুর দানাদার জাতীয় সকল খাবারের সাথে লবন, খাবার সোডা বা সোডিয়াম বাই কার্বনেট, টক্সিন বাইন্ডার, মল্ড ইনহিবিটর, ডিসি পি পাউডার, ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত। এতে করে মিশ্রিত ভূসি ও দানাদার খাদ্য জীবাণুমুক্ত থাকবে। একইসাথে খাবারের গুণগত মানও ভালো থাকবে।

গরুর ফুড পয়জনিং রোগের  চিকিৎসা

গরুর ফুড পয়োজনিং রোগের প্রধান চিকিৎসা হলো  সোডিয়াম বাইকার্বোনেট ইনজেকশন (এসবিনেট)। 

যা শিরায় প্রয়োগ করতে হয়। একইসাথে গরু দূর্বল হয়ে গেলে পানির সাথে স্যালাইনও খাওয়াতে হবে। একইসাথে   প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক (বায়োগাট, এসিলাক প্লাস, বায়োলাক বোলাস) ইত্যাদি ঔষধ রুমেনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য দিতে হবে।

গরুর কলিজা কৃমির সংক্রমণ

গরুর কলিজা কৃমির সংক্রমণ আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একটি অতি মারাত্বক পরজীবীর ঘটিত রোগ। গরু এই রোগে আক্রান্ত হলে গলার নীচে ফুলে যায়।

গরুর কলিজা কৃমির সংক্রমণ রোগের কারণ

বাংলাদেশে ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা (Fasciola gigantica) নামক পাতা কৃমি দ্বারা গরু, এই রোগে আক্রান্ত হয়। গরুর এই কৃমি রোগ গরুর জন্য কখনো কখনো মারাত্বক হয়ে যায়। 

গরুর কলিজা কৃমি রোগের লক্ষন

এই রোগে গরু আক্রান্ত হলে গরু ক্রমশ শুকিয়ে যায় ও শরীরের লোম উস্কুখুস্কু হয়ে যায়। গরুর যকৃত বা কলিজায় কৃমির উপস্থিতির কারণে রক্তে প্রচুর পরিমাণ প্রটিনের অভাব দেখা দেয়। 

এতে করে গরুর চোয়ালের নীচে ও বুকের বেড় এলাকায় পানিপূর্ণ ফোলা অংশ দেখা যায়। আক্রান্ত গরুর রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। গরুর  বদ হজম ও ডায়রিয়া দেখা দেয়। 

এতে করে গরুর ক্ষুধামন্দ্য, বিমর্ষতা, দূর্বলতা ও পেটে ব্যথা ইত্যাদি বেড়ে যায়। এমনকি গরুর মলে দুর্গন্ধ থাকে এবং কৃমির ডিম দেখতে পাওয়া যায়।  যা সূর্যের আলোতে পরিস্কার চকচক করতে থাকে।

গরুর কলিজা কৃমির সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

এই রোগের জন্য ট্রাইক্লাবেনডাজল ও লিভামিসল ঔষধ অধিকাংশ সময় ব্যবহার করা হয়। ঔষধজি সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়াও ডাবলডেক্স ভেট বোলাস / এলটি ভেট বোলাস / ইত্যাদিও ভালো কাজ করে। 

প্রতিবার কৃমিনাশক খাওয়ানোর পরপরই হেপাটনিক ভেট সল্যুশন লিভার টনিক খাওয়াতে হবে। এছাড়াও গরুর কলিজা কৃমির সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সহায়ক চিকিৎসা হিসাবে বিভিন্ন ডিবি ভিটামিন যেমন- ক্যালফসটনিক ভেট পাওডার, রেনাভিট ডিবি, ডিবি ভিটামিন, ভিটামিক্স ডিবি সুপার ইত্যাদি ও সাথে জিংক (জিস ভেট)  ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে। 

একইসাথে গরুর কলিজা কৃমির ইনজেকশন ব্যবহার করা যেতে পারে যা  একটি কার্যকরি কৃমিনাশক পদ্ধতি। শুধুমাত্র কলিজা কৃমির জন্য নাইট্রক্সিনিল গ্রুপের ইনজেকশন অসম্ভব ভালো। 

এছাড়াও আইভারমেকটিন গ্রুপের ইনজেকশনও ভালো কাজ দেয়। প্রতি ২০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ২০ মিলি ঔষধ চামরার নিচে প্রয়োগ করতে হবে।

বাছুরের সাদা উদরাময় রোগ  

সাদা উদরাময় রোগটি মূলত গরুর বাছুরের রোগ। গরুর বাছুরের জন্মের প্রথম মাসেই এই উপসর্গটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। 

আমাদের দেশে প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক বাছুর অকালে মারা যায়। এই রোগটিকে বাছুরের সাদা পায়খানাও বলা হয়। 

বাছুরের সাদা উদরাময় রোগের কারণ

এই রোগের কারণ হলো ইসচিরিয়া কোলাই (Escherichia coli) নামক গ্রাম নেগেটিভ একটি ব্যাকটেরিয়া। এই জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হলে এই রোগ হয়। তাছাড়া ই-কলাই এর সাথে অন্যান্য ভাইরাস (যেমন- রোটাভাইরাস, করোনা ভাইরাস), প্রোটোজোয়া (যেমন- ক্রিপটোস্পোরিডিয়া, কক্সিডিয়া) ইত্যাদি সম্পৃক্ত থাকতে দেখা যায়। এই রোগ হওয়ার কারণ হচ্ছে,  বর্ষার সময় দূষিত খড়, পচা লতাপাতা, পচা পানি, পচা খাদ্য খাওয়া। 

বাছুরের সাদা উদরাময় রোগের লক্ষণ

এই রোগের ফলে বাছুর চাউল। ধোয়া পানির মত সাদা রঙের দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা করতে থাকে। বাছুর ঘন ঘন পায়খানা করার কারণে লেজে পায়খানা লেগে থাকে। 

পায়খানায়র মধ্যে প্রচুর বায়ু থাকায় পায়কানায় ফেনা হয়। এমনকি মলদ্বারের চারিদিকে পাতরা পায়খানা লেগে থাকে। অনেক সময় পায়খানার সাথে রক্তও দেখা দিতে পারে। 

এই রোগের শুরুতে জ্বর থাকে এবং কিছু সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে নেমে যায়। এই অবস্থা চলতে থাকলে  বাছুরের চোখ কোঠরে বসে যায় এবং পিঠ বাঁকা হয়ে যায়। এর ফলে বাছুর নিস্তেজ হয়ে মাটিতে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে। চিকিৎসা না পেলে এভাবেই বাছুর মারা যায়।

বাছুরের সাদা উদরাময় রোগের প্রতিকার

গাভী ও বাছুরের খাবারের সকল পাত্র, স্বাস্থ্যসম্মত ও সঠিক উপায়ে পরিস্কার করতে হবে। গাভীর খাদ্য তালিকায় সঠিক পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করতে হবে। 

বাছুর জন্মের ১ ঘন্টার মধ্যে ২ লিটার দুধ ও পরবর্তী ১২ ঘন্টার মধ্যে আরো ২ লিটার শাল দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হবে। 

বিশেষ করে প্রথম ১২ ঘন্টার মধ্যে ২ লিটার শাল দুধ অবশ্যই খাওয়ানো জরুরী।একইসাথে জন্মের পর পরই বাছুরের জন্য উষ্ণ, পরিচ্ছন্ন ও ঠিকমত প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল করে এমন বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ।

বাছুরের সাদা উদরাময় রোগের চিকিৎসা

বাছুরের জন্মের আধা ঘন্টা থেকে ৩ ঘন্টার মধ্যে শালদুধ খাওয়াতে হবে। এই সময় বাছুরকে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখতে হবে। একইসাথে পরিষ্কার টাটকা খাদ্য খাওয়াতে হবে। 

বাছুরের জন্মের পর পরই ২% আয়োডিন দিয়ে নাভি মুছে দিতে হবে। জন্মের পর ২ ঘন্টার মধ্যে কলস্ট্রাম সিরাপ খাওয়াতে হবে। সবসময় জীবাণুমুক্ত বিশুদ্ধ পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। 

বাছুর দূর্বল বেশি থাকলে ২৫% ডেক্সট্রোজ স্যালাইন ৫০-১০০ মি.লি. জগুলার শিরায় দিতে হবে। সাথে এমাইনো এসিড ইনজেকশন দিতে হবে। অনেক সময় চিকিৎসারা মারবো ভেট ইনজেকশন বা বোলাসও প্রয়োগ করে থাকেন। 

ব্যাথার জন্য ব্যাথানাশক হিসাবে টাফনিল ভেট বোলাস / ইনজেকশন অথবা প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ দেওয়া যেতে পারে।  

বাছুরকে সবসময় স্যালাইন পানি খেতে দিতে হবে। পাশাপাশি সহকারি চিকিৎসা হিসাবে জিংক সাসপেনসনও দেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় ডাক্তারা সালফার ড্রাগ ও মেট্রোনিডাজলও দিয়ে থাকেন। প্রয়োজনে নিকটতম পশু হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত।

আরটিকেলের শেষকথাঃ গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা | গরুর রোগ সমূহ, গরুর রোগের লক্ষণ

বন্ধুরা আমরা আজকে জেনে নিলাম গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা | গরুর রোগ সমূহ, গরুর রোগের লক্ষণ। আশা করি আমাদের আজকের এই আরটিকেল থেকে আপনাদের একটু হলেও উপকার হয়েছে। যদি আমাদের আজকের এই লেখাটি থেকে আপনার একটু উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার ফেসবুক বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ