ডায়াবেটিস রোগীরা কি কি ফল খেতে পারবে | ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে না
ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে না ও ডায়াবেটিস রোগীরা কি কি ফল খেতে পারবে - আমরা সবাই জানি ডায়াবেটিস (diabetes) আক্রান্ত রোগীদের জীবনটাই একটা ধরাবাঁধা নিয়মে বাঁধা। ডায়াবেটিস (diabetes) পরবর্তী তাদের সারা জীবন শর্করা জাতীয় খাবার পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত ভাবে খেতে হয়।
আমাদের দেশে সারা বছর বিভিন্ন ফলমূল পাওয়া যায়। অনেকেই মনে করেন, ডায়াবেটিস (diabetes) হলে মিষ্টি জাতীয় ফল খাওয়া যাবে না।
আবার এমনও অনেক আছেন, যারা শর্করা বাড়লে প্রয়োজনে ইনসুলিন (insulin) বা ট্যাবলেট বাড়িয়ে দেন।
এগুলো সব ভুল ধারণা। নিয়মতান্ত্রিকভাবে খাবার খেলে রক্তে শর্করা বাড়বে না, ইনসুলিন (insulin) বা ট্যাবলেটের মাত্রাও বাড়াতে হবে না।
তাই সুস্থ থাকার জন্য ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে বা ডায়াবেটিস রোগীরা কি কি ফল খেতে পারবে বা ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে না আসুন তা জেনে নিই।
ডায়াবেটিস রোগী কি কি ফল খেতে পারে - ডায়াবেটিসে কি কি ফল খাওয়া যাবে না |
ডায়াবেটিস (diabetes) কী
ডায়াবেটিস (diabetes) রোগী কোন ফল খেতে পারবেন, তা জানার আগে আমাদের জানা উচিত ডায়াবেটিস (diabetes) রোগটা আসলে কী?
ডায়াবেটিস (diabetes) হলো একটি বিপাকজনিত রোগ। আমরা যখন কোনো খাবার খাই, তখন তা থেকে গ্লুকোজ (glucose) উৎপন্ন হয়।
এই গ্লুকোজ (glucose) যখন মানুষের দেহের কোষে কোষে পৌঁছায়, তখন সেখান থেকে শক্তি উৎপাদন হয়।
খাদ্য থেকে উৎপন্ন গ্লুকোজ (glucose) বা শর্করাকে শরীরের বিভিন্ন কোষে কোষে পৌঁছানোর দায়িত্ব হচ্ছে ইনসুলিন (insulin) নামক একটি হরমোনের।
এই ইনসুলিন (insulin) হরমোনই খাদ্য থেকে উৎপন্ন গ্লুকোজ (glucose) কে কোষে কোষে পৌঁছে দিয়ে মানুষের দেহের শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
যখন মানুষ ডায়াবেটিসে (diabetes) আক্রান্ত হয় তখন তার ইনসুলিন (insulin) নামক হরমোনটির নিঃসরণ কমে যায়। ফলে সে গ্লুকোজ (glucose) কে কোষে পৌঁছাতে পারে না।
যারফলে শরীরে গ্লুকোজ (glucose) বেড়ে যায় কিন্তু শক্তি উৎপাদন কমে যায়। এই বাড়তি গ্লুকোজ (glucose) শরীর থেকে বের করার একমাত্র উপায় হলো, প্রস্রাবের মাধ্যমে তা বের করে দেওয়া।
যে কারণে ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীর ঘনঘন প্রস্রাব হয় এবং সবসময় তৃষ্ণার্ত থাকে। একদিকে রোগীর শরীরে শক্তি কমে যায়, অন্যদিকে অতিরিক্ত প্রস্রাবের সাথে প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ (glucose) বের হওয়ার কারণে রোগী প্রচুর দূর্বল হয়ে পড়ে।
এভাবে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস (diabetes) এর কারণে রক্তনালি, স্নায়ু, কিডনি, চোখ ও হৃদযন্ত্রের নানান সমস্যাসহ বিভিন্ন শারিরীক জটিলতা সৃষ্টি হয়।
আর এটাকেই বলে ডায়াবেটিস (diabetes) রোগ। তাই আমাদের ডায়াবেটিস (diabetes) নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এবং এর থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই ফলমূল দেখে এবং পরিমাণমতো খেতে হবে।
ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে | ডায়াবেটিস রোগীরা কি কি ফল খেতে পারবে
নিচে বিভিন্ন ফল যা ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা খেতে পারবে এবং কতটুকু খাওয়া উচিত তার বর্ণনা দেওয়া হলো।
কাঁঠাল -
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষেরই প্রিয় ফল এটি। তাই যাদের ডায়াবেটিস (diabetes) আছে তাদের ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় তারা কাঁঠাল খেতে চান না।
কিন্তু সত্য কথা হলো ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরাও চাইলে কাঁঠাল খেতে পারেন। তবে তা এক দিনে কাঁঠালের তিন–চারটি কোষের বেশী নয়।
তবে সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে, ঐ দিন আর অন্য কোনো মিষ্টি ফল যেমন আম, কলা, তরমুজ, পাকা পেঁপে বা খেজুর ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
আম
আমাদের দেশে আমের দিনে নানান রকম আম পাওয়া যায়। যা দেখে যেকোনো কারোরই জিবে জল চলে আসে। আর ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের তো কথাই নেই।
তাই অনেকের মনে চাইলেও ডায়াবেটিস (diabetes) এর বিধিনিষেধের কারণে বছরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল না খেয়েই পার করে দেন।
কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস (diabetes) আছে তারাও চাইলে আম খেতে পারেন। তবে তা সারা দিনে মাঝারি আকারের আম হলে একটি অথবা বড় আকারের আম হলে অর্ধেক খাওয়া যেতে পারে।
তবে কখনোই এর বেশী নয়। কেননা আমেও চিনির পরিমাণ উচ্চ মাত্রায় থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে ১০০ গ্রাম আমে প্রায় ১৪ গ্রাম চিনি থাকে।
যা রক্তে শর্করার ভারসাম্যকে খারাপ করে দিতে যথেষ্ট। তাই পারলে ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের এই ফল এড়িয়ে চলাই ভালো। নতুবা উল্লিখিত পরিমাণে খাওয়াই উত্তম।
কামরাঙা
কামরাঙা একটি চমৎকার ফল। যা ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের জন্য খুবই ভাল। কামরাঙ্গার চাটনি বানিয়ে কাসুন্দি দিয়ে খেলে তার স্বাদ যেমন ভাল লাগে, তেমনই তা শরীরের জন্য খুবই উপকারি।
এছাড়াও কিউইর মতো ফলে রয়েছে নানান ধরনের উপকার। এতে ভিটামিন সি যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি, অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মতো উপকারী উপাদান থাকে। যা ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের জন্য খুবই ভাল।
বেদানা
বেদানা এমন একটি ফল যে ফলে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। একইসাথে এর ফ্রি র্যাডিক্যাল ডায়াবেটিস (diabetes) এর মোকাবিলায় সাহায্য করে। তাই যাদের ডায়াবেটিস (diabetes) আছে, তারা মোটামুটি বেদানা খেতে পারেন।
আঙুর
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে আঙুর। সুস্বাদু ফলটিতে ফাইবার (fiber), ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান থাকে।
কিছু বিশেজ্ঞদের মতে আঙুরে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল রেসভারেট্রল উপাদান রক্তে গ্লুকোজ (glucose) এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে এটাও সত্য যে এতে বেশ ভালো পরিমাণে শর্করার থাকে।
একটি হিসাবে দেখা যায়, ৮৫ গ্রাম আঙুরে প্রায় ১৫ গ্রাম পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট (carbohydrate) থাকে। যা অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের জন্য ভালো নয়। তবে কেউ চাইলে কয়েকটি আঙ্গুর খেতে পারে। যা ডায়াবেটিস (diabetes) এর তেমন ক্ষতি করবে না।
আনারস
আনারস একটি চমৎকার মৌসুমী ফল। যা সঠিকভাবে পাকলে স্বাদে যথেষ্ট মিষ্টি হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ এক কাপের মতো আনারস থেকে পাওয়া যায় ১৬ গ্রাম চিনি।
যা অতি দ্রুত খুব সহজেই রক্তে মিশে তার চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। আর এই বাড়তি চিনি ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীর জন্য বেশ ক্ষতিকর।
যাদের টাইপ-২ ডায়বেটিসের সমস্যা বেশি, তাদের মিষ্টি স্বাদের আনারস থেকে দূরে থাকাটাই হবে সবচেয়ে ভালো। তবে পরিমিত পরিমাণ অর্থাৎ কয়েক টুকরা খাওয়া যেতে পারে।
আপেল
আপেল আমাদের দেশে একপ্রকার জাতীয় ফলের মতোই! বছরের সবসময়ই আপেল পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না।
ডায়াবেটিস (diabetes) এর ঝুঁকি এড়াতে আপেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ডায়াবেটিক হলে অবশ্যই রোজ আপেল খাওয়া উচিত। বিশেষ করে টাইপ টু ডায়াবেটিস (diabetes) রুখতে আপেল দারুণ কাজ করে।
ব্লুবেরি
ব্লুবেরি আমাদের দেশীয় ফল না হলেও প্রায় সময় এই ফল পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের নানান নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এই ফল টি ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা চাইলে খেতে পারেন।
কেননা এতে রয়েছে অ্যান্থসায়ানিন নামক একটি উপাদান। যা ডায়াবেটিস (diabetes) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
স্ট্রবেরি (strawberry)
ব্লুবেরির মতো স্ট্রবেরি (strawberry) ও লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হওয়ার কারণে রক্তে গ্লুকোজ (glucose) এর মাত্রা কমাতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
যে কারণে স্ট্রবেরি (strawberry) খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হজম শক্তি বাড়ে, ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ডায়াবেটিস (diabetes) থাকলেও স্ট্রবেরি (strawberry) খাওয়া যায় নিশ্চিন্তে।
লিচু
লিচু একটি সুস্বাদু পুষ্টিকর ফল। যা সারাবছর। পাওয়া যায় না। তাই যারা ডায়াবেটিস (diabetes) রোগী তাদের হাজারো ইচ্ছা থাকলেও এই লিচু না জানার কারণে খান না।
কিন্তু চাইলেই যেকোনো ডায়াবেটিস (diabetes) রোগী এক দিনে পাঁচ ছয়টি লিচু খেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, ওই দিন আর অন্য কোনো মিষ্টিজাতীয় ফল তিনি খেতে পারবেন না।
খেলে তার ডায়াবেটিস (diabetes) বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। তাই নিরাপদ থাকার জন্য অন্যান্য ফল ঐ দিন খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
পেয়ারা
পেয়ারা একটি বারমাসী ফল। তাই ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা চাইলে পেয়ারা ফল খেতে পারেন। পেয়ারা থেকে যে ফাইবার (fiber) উৎপন্ন হয়, তা পেটকে অনেকক্ষণ ভর্তি রাখে। এতে যেমন ক্ষুধা কম লাগে সেইসাথে এতে রয়েছে ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ।
একইসাথে এই ফলের গ্লুকোজ (glucose) ইনডেক্স কম হয় বলে এটি ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের জন্য খুবই উপকারি। পেয়ারা ডায়াবেটিস (diabetes) নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখে এবং হজমে বেশ সহায়তা করে।
একইসাথে লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পাশাপাশি পেয়ারার মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণ ফাইবার (fiber) রয়েছে। যা টাইপ টু ডায়াবেটিস (diabetes) এর ঝুঁকি কমায়। তাই ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা চাইলে পেয়ারা খেতে পারেন।
জামরুল
জামরুল একটি খুবই পরিচিত ফল। যা ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা নিয়মিত খেতে পারেন। জামরুল রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণ করে।
এছাড়াও জামরুলে আছে অধিক পরিমাণে ফাইবার (fiber) যা ডায়াবেটিস (diabetes) রোগের জন্য উপকারী।
চেরি
ব্লুবেরির মতোই চেরিতেও আছে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্থসায়ানিন। যা রক্তে ইনসুলিন (insulin) এর মাত্রা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
ফলে ডায়াবেটিস (diabetes) রুখতে চেরি খুবই উপকারী। তাই ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা চাইলেই চেরি ফল খেতে পারেন।
পেঁপে
পেঁপে একটি পুষ্টিকর ফল। এর মধ্যে রয়েছে ন্যাচারাল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ডায়াবেটিস (diabetes) রুখতে খুবই সহায়তা করে। শুধু ডায়াবেটিস (diabetes) নয়, এই পেঁপে হার্ট ও নার্ভের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।
তরমুজ
তরমুজ খুবই মিষ্টি জাতীয় ফল তাই অনেক ডায়াবেটিস (diabetes) রোগী ভয়ে তরমুজ খেতে চান না। আবার অনেকেই ধারণা করেন, তরমুজে জলীয় অংশ বেশি, তাই এতে সুগার (sugar) বেশি বাড়বে না।
কিন্তু এই ধারণাও সঠিক নয়। এছাড়াও তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম। যা রক্তে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে।
ফলে ডায়াবেটিস (diabetes) এর কারণে কিডনির ক্ষতি হওয়া থেকে বাঁচাতে তরমুজ সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা লাইকোপেন নার্ভের সমস্যার সমাধানেও কাজ করে।
আমাদের জেনে রাখা উচিত তরমুজ সুগার (sugar) বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে ফাইবার (fiber) এবং ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে। আধা কাপ তরমুজে প্রায় পাঁচ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট (carbohydrate) থাকতে পারে।
তাই তরমুজ ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের বেশি না খাওয়াই ভালো। তাই বলে যে একেবারেই খাওয়া যাবে না তা নয়। সঠিক তথ্য হচ্ছে, ডায়াবেটিস (diabetes) ের একজন রোগী দিনে মাত্র চিকন এক ফালি তরমুজ খেতে পারবেন। এর বেশী কখনোই নয়।
টক বড়ই
আমাদের দেশে মিষ্টি এবং টক উভয় প্রকারের বড়ই পাওয়া যায়। মিষ্টি যেহেতু ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের নিষেধ। সেহেতু টক বড়ই খাওয়া যেতে পারে। কেননা টক বড়ই এ প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। যা ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের জন্য উপকারী।
আমলকী
আমিলকীতে যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। যা শরীরের জন্য উপকারী। তাই ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা নিয়মিত ২/৩টি করে আমলকী খেলে রক্তের চিনির পরিমান যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কমলালেবু
কমলালেবু একটি সুস্বাদু ফল। যা ছোট বড় সবাই কমলালেবু পছন্দ করেন। ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা চাইলেই কমলালেবু খেতে পারেন।
কেননা কমলালেবু ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের পক্ষে খুবই ভাল। এর কারণ হচ্ছে, এতে রয়েছে ফ্লাভনলস ও ফেনোলিক অ্যাসিড নামক দুটি উপাদান।
যা রক্তে গ্লুকোজ (glucose) এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী। একইসাথে এই ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই ভাল হয়। তাই ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা কমলালেবু খেতে পারেন।
আমড়া
আমড়া খুবই পুষ্টিকর একটি টক ফল। যাতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি। যা ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদে জন্য খুবই উপকারী।
জাম
জাম একটি কষ জাতীয় ফল তবে মিষ্টিও রয়েছে। তবে ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের এটা একটা আশীর্বাদ যে, জাম রক্তের চিনি ও চর্বি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞের মতে, জাম ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের জন্য অসম্ভব ভাল। এতে ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা অনেক ধরনের উপকার পেয়ে থাকেন।
বিশেষ করে জাম এর হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব রক্তের শর্করা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। শুধু তাইনয় জামের বীজও ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের পক্ষে খুবই ভাল। তাই ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা চাইলেই নিশ্চিন্তে যত খুশি জাম খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে না | ডায়াবেটিসে কি কি ফল খাওয়া যাবে না
আমরা সকলেই জানি ডায়াবেটিসকে সাথে নিয়ে জীবনযাপন করার অর্থাৎ হচ্ছে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা। যারা ডায়াবেটিসে (diabetes) আক্রান্ত তাদের নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সঠিক সময়ে সঠিক খাওয়া দাওয়া সঠিক পরিমাণে করা।
আমরা সকলেই জানি ফল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে ডায়বেটিস রোগীদের জন্য সব সবসময় উপকারী নয় বরং তা জীবননাশেরও কারণ হতে পারে।
তাই এমন কিছু ফল রয়েছে যা ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের জন্য খুবই মারাত্মক। এই সব ফলের মধ্যে কিছু রয়েছে, যা একেবারেই খাওয়া যাবে না।
আর কিছু রয়েছে যা কম খাওয়াই উত্তম। কেননা এইসব ফল ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দেয়।
যা তাদেরকে ক্ষতির সম্মুখীন করে। তাই আসুন জেনে নিই ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে না বা ডায়াবেটিসে কি কি ফল খাওয়া যাবে না।
কলা
কলা ফলটি খুবই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। কলায় থাকা পটাসিয়াম উপাদানটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। একইসাথে এই কলা কিডনির সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতেও যথেষ্ট সহায়তা করে।
তবে কলাতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট (carbohydrate) । যে কার্বোহাইড্রেট (carbohydrate) মানুষের শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই ফলটি কোনো ভাবেই উপকারী নয়। তবে মাঝেমধ্যে ছোট একটা কিংবা বড় কলার অর্ধেক খাওয়া যেতে পারে।
সফেদা
অসম্ভব মিষ্টিতে ভরপুর একটি ফল হচ্ছে সফেদা। এই সফেদা বাদামী রঙের ফল এবং দানাদার স্বাদ যুক্ত। প্রতি ১০০ গ্রাম সবেদায় রয়েছে প্রায় ৭ গ্রাম শর্করা।
একইসাথে এতে কার্বোহাইড্রেট (carbohydrate) এবং শর্করাও উচ্চ পরিমাণে থাকে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে ৫৫ ভ্যালু সমৃদ্ধ এই ফলটি ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের জন্য এটি খুবই ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের এই ফল এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
পাকা মিষ্টি আম
আমাদের দেশে মৌসুমী ফল হিসাবে আমের বেশ চাহিদা রয়েছে। চমৎকার সব সুন্দর সুন্দর মিষ্টি আম যেকোনো কারোরই জিবে জল আনে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীরা চাইলেই এই মিষ্টি আম সহজে খেতে পারবে না। কেননা প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে থাকে ১৪ গ্রাম পরিমাণ চিনি।
এই পরিমাণ চিনি সহজেই রক্তের সুগার (sugar) বাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। তাই ফলের রাজা আম যতই সুস্বাদু হোক না কেন ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের কখনোই অতিরিক্ত আম খাওয়া উচিত হবেনা। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি এই আম রোগীরা কতটুকু খেতে পারবেন।
আঙ্গুর
আমের মতো আঙ্গুর বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি ফল। আঙ্গুরে রয়েছে তার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
তবে আমের মতই আঙ্গুরেও রয়েছে উচ্চমাত্রার চিনি। মাত্র ৮৫ গ্রাম আঙ্গুর থেকে ১৫ গ্রাম চিনি পাওয়া যায়। যা ডায়াবেটিস (diabetes) রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই আঙ্গুর খেতে হলে খুবই অল্প পরিমাণ খাওয়া যাবে।
কিশমিশ
আমাদের সবারই সচারচর অভ্যাস হচ্ছে, হাতের কাছে কিশমিশ পেলে কয়েকটি খেয়ে ফেলি। অসম্ভব মিষ্টি স্বাদের শুকনো এই ফলটি হচ্ছে আঙ্গুরের আরেকটি রূপ।
মায়া ক্লিনিকের মতে এক কাপ কিশমিশে রয়েছে প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ চিনি ও ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট (carbohydrate) । যা ডায়াবেটিস (diabetes) এর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই কখনোই কিশমিশ খাওয়া উচিত হবে না।
জেনে রাখা জরুরী | ডায়াবেটিসে কি কি ফল খাওয়া যায়
আমরা যারা ডায়াবেটিস (diabetes) কে সাথে নিয়ে জীবন পার করছি, তাদের কিছু কিছু বিষয় জেনে রাখা উচিত।
বিশেষ করে কোনো ফলের জুস বা শরবত খাওয়ার চেয়ে আস্ত বা গোটা ফল খাওয়া অনেক ভালো। কারণ এতে ফাইবার (fiber) অটুট থাকে।
মূল খাবারের (হোক তা মধ্যাহ্নভোজ বা নৈশভোজ) সঙ্গে কখনোই ফল খাওয়া যাবে না। কেননা মূল খাবারে তো শর্করা এমনিতেই থাকে। ফলে সাথে যা ই খাওয়া হবে, তা হবে বাড়তি। তাই ফলকে স্ন্যাকস হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
যেমন সকাল কিংবা বিকেলে। আমাদের উচিত হবে কাউন্টিং পদ্ধতি ব্যবহার করে শর্করার হিসাব রাখা। যাতে যেদিন কার্বোহাইড্রেট (carbohydrate) মানে মিষ্টি ফল খাবেন সেদিন অন্য শর্করা কমিয়ে খাবেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ডায়াবেটিস রোগীরা কি কি ফল খেতে পারবে | ডায়াবেটিস হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে না
সর্বশেষ কথা হচ্ছে, এই রোগ একপ্রকার রাজকীয় রোগ। যাদের জীবনযাপন অভিজাত এবং বেহিসাবী তারাই বেশী এই রোগে আক্রান্ত হয় বেশী।
বিশেষ করে যাদের বংশগত রোগের কোনো ইতিহাস নেই। তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি শৃঙ্খলা আনা দরকার।
যাতে করে আমরা এই রোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারি। তাই ফল ফলাদি খাওয়া থেকে আমাদের সব সময়ই সচেতন থাকতে হবে।
কেননা সামান্য অসচেতনতা আমাদের জীবনে নিয়ে আসতে পারে চরম দুর্ভোগ। আসুন আমরা ডায়াবেটিস (diabetes) নিয়ে সচেতন হই।