বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।

বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর
বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর

বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর

উত্তর ভূমিকা : সংবিধান একটি দেশের লিখিত দলিল, সমস্ত প্রকার আইনের প্রধান উৎস। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানই হলো মূল সংবিধান। এই সংবিধান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়। 

এটি কার্যকরী হয় ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের তারিখ থেকে। মাত্র নয় মাসের মধ্যে জাতি এ সংবিধান লাভ করে। এটা আমাদের জন্য একটি অহংকার ও গৌরবের বিষয়। এতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে ।

১৯৭২ সালের সংবিধান ও বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা : ১৯৭২ সালের সংবিধান ও বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. সংসদীয় সরকার : ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা ছিল মন্ত্রিপরিষদ বা সংসদীয় প্রকৃতির । ব্রিটেন ও ভারতের মতো এ সংবিধানে জাতীয় সংসদের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়। 

আর সংসদের প্রাধান্যের কারণে এ সরকার ব্যবস্থাকে 'সংসদীয় গণতন্ত্র' ও (Parliamentary Democracy) বলা হয়। এ সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছিল একটি মন্ত্রিপরিষদ। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মতো রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়োগ দান করেন। 

প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বাংলাদেশে তিন প্রকারের মন্ত্রী রয়েছে। যথা : মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, ও উপমন্ত্রী। এরা সবাই মন্ত্রিপরিষদের সদস্য। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে সমস্ত ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়। তারা ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে তাদের কার্য ও কার্যনীতির জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকেন ।

২. মন্ত্রিপরিষদের দায়িত্বশীলতা : মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ নিজ নিজ দফতরের কার্য পরিচালনা করতেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রীগণ অধিবেশনে মিলিত হতেন ও সাধারণ নীতি নির্ধারণ করতেন। মন্ত্রিপরিষদ ছিল যৌথভাবে জাতীয় সংসদের নিকট দায়ী। 

আইনসভার আস্থা-অনাস্থার ওপর প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার উত্থান-পতন নির্ভর করতো। মন্ত্রিসভা যতদিন আইনসভার আস্থাভাজন থাকতেন ততদিনই অর্থাৎ নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন থাকতে পারতেন।

৩. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও প্রাধান্য : বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পদবী সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, প্রভাবশালী ও সম্মানজনক। তিনিই ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের নেতা ও মধ্যমণি। 

মন্ত্রিসভার উত্থান-পতন, জীবন-মৃত্যু প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। তিনি যেকোনো মন্ত্রীকে অপসারণের অধিকার রাখতেন এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পরামর্শ দিতে পারতেন। 

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে মন্ত্রিপরিষদ ভেঙে যেত। তবে পরবর্তী মন্ত্রিপরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পুরাতন মন্ত্রীগণ স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করতেন।

৪. সার্বভৌম আইনসভা : ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের আইনসভা ছিল সার্বভৌম সংস্থা। আইনসভা যেকোনো আইন প্রণয়ন, সংশোধন, সংবিধানের যেকোনো ধারা বা উপধারা পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজনের ক্ষমতা পায়। 

এ আইন সভার নিকট প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ যৌথভাবে তাদের কাজের জন্য দায়ী ছিলেন। আইনসভা মেয়াদপূর্তির পূর্বেও মন্ত্রিসভাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতো ।

৫. প্রথম নির্বাচন ও সরকার গঠন : ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণীত রাষ্ট্রপতি আবু সাইদ চৌধুরি, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান নতুন সংবিধান অনুসারে শপথ গ্রহণ করেন ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন । 

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও নির্বাচনের পর ১৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়।

৬. রাষ্ট্রপতি প্রকৃত শাসক : ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত থাকায় রাষ্ট্রপতি ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক শাসক। তিনি জাতীয় সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হতেন। 

১৯৭৫ সালের সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনী আইন দ্বারা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠত হওয়ার পর তিনি প্রকৃত শাসক তথা সরকার প্রধান হন। 

১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। মন্ত্রিসভার সদস্যগণ তার নিকট জবাবদিহি করতেন। 

৭. সংসদীয় ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন : ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী গৃহীত হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রপতি এখন নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান। 

তিনি জাতীয় সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। কারণ ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের পুনরায় সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটে।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে আজ অবধি ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এসব সংশোধনীর ফলে সংবিধানের প্রস্তাবনা, রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ও সরকার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। 

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সময়ের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে চতুর্থ সংশোধনীর দ্বারা প্রবর্তন করা হয় মন্ত্রিপরিষদ শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা। 

পরবর্তীতে ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট জাতীয় সংসদে দ্বাদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে মন্ত্রিপরিষদ বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হয়েছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 05 November

    Many many thanks 😊

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ