লোক প্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশে লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর।
বাংলাদেশে লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ কর |
বাংলাদেশে লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ কর
- অথবা, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর।
- অথবা, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের গুরুত্ব আলোচনা কর ।
উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। লোকপ্রশাসনকে রাষ্ট্রের হৃৎপিণ্ড বললে অত্যুক্তি হবে না। বর্তমানে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপকতা লাভ করেছে বহুগুণে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী রাষ্ট্রে লোকপ্রশাসন শাস্ত্র পাঠের গুরুত্ব অত্যধিক। কেননা এদেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রশাসক লোকপ্রশাসনের তত্ত্বগত জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ।
আর তাই লোকপ্রশাসনের ওপর তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ লাভ করা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।
বাংলাদেশে লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা : নিম্নে বাংলাদেশে লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হলো :
১. জনকল্যাণ সাধন : জনকল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব ও প্রযোজনীয়তা ব্যাপক । কেননা লোক প্রশাসনের আসল উদ্দেশ্য হলো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তির পূর্ণ এবং যথাযথ ব্যবহার ও বণ্টন নিশ্চিত করে জনকল্যাণ সাধন করা।
এখন নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রসার ঘটছে। ফলে ব্যবস্থাপনার সমস্যাও বর্তমানে অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে। কর্মচারী, প্রশাসন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনাও মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন।
এসব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য একজন প্রশাসকের তত্ত্বগত জ্ঞানের সাথে সাথে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান থাকা অপরিহার্য । যা লোকপ্রশাসন পাঠের মাধ্যমে অর্জন করা যায়।
২. চেতনার বিকাশ : লোকপ্রশাসন শাস্ত্র পাঠের ফলে বাংলাদেশের যুব সমাজের মধ্যে নাগরিক চেতনার বিকাশ সাধিত হবে, একই সঙ্গে দেশের উন্নয়ন ও অন্যান্য কর্মসূচিতে যথার্থভাবে অংশগ্রহণ
করার কারণে প্রশাসকগণের পক্ষে প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা সহজ ও সুবিধাজনক হবে। এ শাস্ত্র অধ্যয়নের ফলে বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসকগণের জ্ঞান, প্রতিভা ও গুণাবলির উন্নয়ন ঘটবে।
৩. মূলনীতির ধারণা লাভ : বাংলাদেশের শিক্ষার্থীগণ লোকপ্রশাসন শাস্ত্র পাঠের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতির ওপর প্রতিষ্ঠিত কতকগুলো মূলনীতির ধারণা লাভ করে।
পরবর্তীতে তারা প্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ত হলে এসব মূলনীতি আধুনিক সরকারের প্রশাসনিক কার্যাদি পরিচালনা করা এবং কতকগুলো জটিল ও কঠিন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কার্যকরী করতে পারবে।
৪. প্রশাসনিক সমস্যা নিরসন : লোকপ্রশাসন পাঠ করে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীগণ আধুনিক সরকারের অনেক প্রশাসনিক সমস্যা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে
এবং এসব সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষণা করার মাধ্যমে সমস্যা থেকে উত্তরণ ও ত্রুটিবিচ্যুতি নিরসনের পদ্ধতি ও কলাকৌশল উদ্ঘাটন করা সম্ভব ও সহজ হবে।
৫. সহযোগিতা বৃদ্ধি : সরকারি প্রশাসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন সম্পর্কে অধ্যয়নরত বাংলাদেশিদের মধ্যে সহযোগিতাও বৃদ্ধি পাবে। ফলে উভয় পক্ষই উপকৃত হবে ব্যাপকভাবে।
এতে দেশের সমস্যাদির তত্ত্বগত ও বাস্তব দিকগুলো যথাযথভাবে অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে।
৬. প্রশাসনিক জ্ঞান অর্জন: সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বস্তরেই বাংলাদেশের মানুষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটি দেশের প্রশাসনিক সংগঠনের প্রকৃতি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংশ্লিষ্ট কার্যালয় ইত্যাদি সম্পর্কে লোকপ্রশাসন পাঠের মাধ্যমে অবগত হওয়া যায়।
পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিটি ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে অনুভূত হয়।
লোকপ্রশাসন পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ প্রশাসন সম্পর্কে সচেতন এবং প্রশাসনিক জ্ঞানের অধিকারী হবে। এ জ্ঞান জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে পারবে।
৭. রাষ্ট্রীয় সংগঠন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন : লোকপ্রশাসন পাঠের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সংগঠন সম্পর্কে বাংলাদেশিরা জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবে। রাষ্ট্রীয় সংগঠনের কাঠামো, কার্যাদি, স্বরূপ বা প্রকৃতি,
কাজের বিষয়বস্তু ও পরিধি, নিয়োগ ও পদোন্নতির নীতিমালা, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে তাদের সম্যক জ্ঞান লাভ করা সম্ভব ও সহজ হবে।
৮. অর্থ প্রশাসন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ : অর্থ প্রশাসন সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য লোকপ্রশাসন পাঠের বিকল্প নেই। অধ্যাপক ডিমোক এবং ডিমোক বলেন, “বায়ুর জন্য যেমন অক্সিজেন দরকার, তেমনি প্রশাসনের জন্য দরকার অর্থ।
” অর্থাৎ অর্থ লোকপ্রশাসনের একটি অংশ। অর্থ ব্যতীত সরকারের সকল কাজই অচল। সুতরাং অর্থ হচ্ছে প্রশাসনের আত্মা। এ অর্থ প্রশাসন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করার জন্য লোকপ্রশাসন পাঠ অতি জরুরি।
৯. আমলাতন্ত্র ; প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আমলাতন্ত্র । আমলা ও তাদের প্রকৃতি, কার্যাবলি, গুরুত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানলাভের জন্যে লোকপ্রশাসন পাঠ বাংলাদেশিদের জন্য অপরিহার্য।
১০. অধ্যয়নের বিষয়রূপে জ্ঞান : লোকপ্রশাসন সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান দেশের মানুষকে প্রশাসনিক বিষয়ে অভিজ্ঞতা দেয় এবং প্রশাসনিক কার্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। অতএব লোকপ্রশাসন পাঠ করা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অতীব প্রয়োজন।
১১. পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন : বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে দ্রুত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে লোকপ্রশাসন পাঠ অত্যাবশ্যক।
১২. নীতিনির্ধারণ : বাংলাদেশের সাংসদগণ জাতীয় সংসদে গুরুত্বপূর্ণ নীতিসমূহ নির্ধারণ করেন। অথচ তারা সর্ববিষয়ে দক্ষ নন। লোকপ্রশাসন পাঠের মাধ্যমে সুষ্ঠু নীতিনির্ধারণ সম্ভব হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশ একটি জনকল্যাণকামী দেশ। জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে লোকপ্রশাসন পাঠের বিকল্প নেই।
বর্তমানে জনগণ প্রশাসনের কাছ থেকে অধিকতর সেবা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রত্যাশা করে। লোকপ্রশাসন পাঠ ব্যতীত রাষ্ট্রীয় ও সরকার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয় ।
লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের মাধ্যমেই আজকের তরুণ সমাজ তত্ত্বগত জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হবে এবং বাস্তবভিত্তিক ও কল্যাণকর প্রশাসন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষ ও যোগা প্রশাসকরূপে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের গুরুত্ব আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশে লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।