বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা কর।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা কর |
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা কর
উত্তর ভূমিকা : যেকোনো প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ। আর সরকারিভাবে এ দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশেই একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান থাকে।
তেমনি বাংলাদেশেও একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নামে পরিচিত ।
বাংলাদেশে সরকারি কর্মকমিশনের গঠন : বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন সভাপতি ও আইনের দ্বারা যেরূপ নির্ধারিত হবে সেরূপ অন্যান্য সদস্যকে নিয়ে প্রত্যেক কমিশন গঠিত হবে।
রাষ্ট্রপতির ৫৭ আদেশ বলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সদস্যসংখ্যা সভাপতিসহ অন্তত ৬ জন বা তার ঊর্ধ্বে ১৫ জন নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের বিভিন্ন পদে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সংখ্যা হলো :
সভাপতি— ১ জন ।
সদস্য—১১ জন ।
সচিব— ১ জন ।
উপসচিব- ২ জন ।
পরিচালক- ৪ জন
উপ-পরিচালক— ৫ জন ।
সহকারী পরিচালক— ১০ জন ।
মনস্তত্ত্ববিদ— ১০ জন ।
গবেষণা কর্মকর্তা– ১ জন।
এছাড়াও বিভিন্ন পদে ২৭১ জন সহকারী কর্মকর্তা, করণিক ও অন্যান্য কর্মচারী রয়েছে।
বাংলাদেশে সরকারি কর্মকমিশনের কার্যাবলি : বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪০ ধারা অনুযায়ী কমিশনের কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে যাচাই ও পরীক্ষা পরিচালনা, রাষ্ট্রপতি কোনো পরামর্শ চাইলে পরামর্শ দেওয়া এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা। নিম্নে এ কমিশনের কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
প্রশাসনিক ক্ষমতা : সব সরকারি কর্মে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্মকমিশন যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষা পরিচালনা করে এবং এরূপ যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ বা নির্বাচন নীতি প্রণয়ন করে।
যেমন— প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিয়োগ, পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।উপদেষ্টামূলক কাজ : নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, চাকরির শর্ত বা শৃঙ্খলামূলক কার্যব্যবস্থা, অবসর ভাতা এবং কর্মচারী প্রশাসন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে এ কমিশনের উপদেষ্টামূলক দায়িত্ব রয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদের ২ দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের কাছে পরামর্শ চাইলে কমিশন রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিবে। রাষ্ট্রপতি নিম্নোক্ত বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
১. কর্মের যোগ্যতা ও তাতে নিয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কিত বিষয়,
২. নিয়োগ দান, পদোন্নতি, বদলি ও অনুরূপ ক্ষেত্রে অনুকরণীয় নীতি সম্পর্কিত বিষয়ে,
৩. কর্মের শর্তাবলি প্রভাবিত করে এমন বিষয়ে এবং
৪. প্রজাতন্ত্রের কর্মের শৃঙ্খলামূলক বিষয়ে ।
বার্ষিক রিপোর্ট পেশ : কমিশন প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম দিকে পরবর্তী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বছরের স্থায়ী কার্যাবলি সম্পর্কে রিপোর্ট প্রস্তুত করবে এবং তা রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করবে।
তাছাড়া এ রিপোর্টের সাথে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করবে । যেসব ক্ষেত্রে কমিশনে পরামর্শ গৃহীত হয়নি তার কারণ এবং যে ক্ষেত্রে কমিশনের সাথে পরামর্শ করা উচিত ছিল অথচ করা হয় নি তার কারণ স্মারকলিপিতে লিপিবদ্ধ করা হবে।
যেসব ক্ষেত্রে কমিশনের সাথে পরামর্শ করা উচিত ছিল অথচ করা হয় নি সেসব ক্ষেত্রে পরামর্শ না করার কারণ সম্পর্কে কমিশন যতদূর অবগত ততদূর লিপিবদ্ধ করবে।
যে বছর রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে সে বছর ৩১ মার্চের পর অনুষ্ঠিত সংসদের প্রথম বৈঠকে রাষ্ট্রপতি উক্ত রিপোর্ট ও স্মারকলিপি সংসদে পেশ করবেন।
● অন্যান্য দায়িত্ব ও কার্যাবলি : উপর্যুক্ত দায়িত্ব ছাড়াও সরকারি কর্মকমিশন অন্যান্য আরও যেসব দায়িত্ব পালন করে সেগুলো হলো :
১. নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ প্রদান : বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন সার্ভিস বা পদে নিয়োগের জন্য যোগ্যতা ও পদ্ধতি, পদোন্নতি এবং বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ প্রদান ।
২. নির্বাচনি পরীক্ষা পরিচালনা করা : ক্যাডার সার্ভিস বা কোনো পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বা নির্বাচনি পরীক্ষা পরিচালনা করা।
৩. মনস্তাত্ত্বিক, বুদ্ধিমত্তা এবং মৌখিক পরীক্ষা পরিচালনা করা : যেসব প্রার্থী বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের মনস্তাত্ত্বিক, বুদ্ধিমত্তা এবং মৌখিক পরীক্ষা পরিচালনা করা।
৪. সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকার নেওয়া : সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য লিখিত পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকার নেওয়া।
৫. অস্থায়ী কর্মকর্তাদের স্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রার্থী নির্বাচন করা : সরকারি অফিস বা সংস্থায় নিয়োগকৃত অস্থায়ী কর্মকর্তাদের স্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রার্থী নির্বাচন করা।
৬. জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের জন্য পরামর্শদান : বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কর্তৃক তাৎক্ষণিকভাবে নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের নিয়োগ কমিশন নির্বাচনি পরীক্ষা বা যাচাইয়ের মাধ্যমে অনুমোদন করে সিভিল লিস্ট প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের সদস্যদের মধ্যে পরস্পর চাকরির জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের জন্য পরামর্শদান ।
৭. নির্বাচনি পরীক্ষার সিলেবাস পরীক্ষা ও অনুমোদন করা : বিভিন্ন বিভাগের পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য নিয়মনীতি এবং নির্বাচনি পরীক্ষার সিলেবাস ও পরীক্ষা অনুমোদন করা ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দেশের সার্বিক শাসনব্যবস্থায় সরকারি কর্মকমিশন বা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশাসনের জন্য কর্মকর্তা বাছাই ও নিয়োগ দানের দায়িত্ব কর্মকমিশনের ওপর ন্যস্ত। তাই নিরপেক্ষ কমিশন গঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আর নিরপেক্ষ সিভিল সার্ভিস গঠন করতে হলে অবশ্যই একে যথাসম্ভব রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।