আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের পার্থক্য আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের পার্থক্য আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আনুষ্ঠানিক সংগঠন ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের বৈসাদৃশ্য বর্ণনা কর।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের পার্থক্য আলোচনা কর |
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের পার্থক্য আলোচনা কর
উত্তর ভূমিকা : যেকোনো রাষ্ট্রের প্রশাসন ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সংগঠনের প্রয়োজন অপরিহার্য, যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একটা প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় তাকে সংগঠন বলে।
কালের বিবর্তনে প্রশাসনিক প্রয়োজনীয়তা ও পরিধির চাহিদা অনুযায়ী অসংখ্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে সুসংগঠিত সংগঠন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
যে সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামো যত বেশি ক্রিয়াকৌশলী সে সংগঠন তত বেশি কার্যকরভাবে টিকে থাকে।
আনুষ্ঠানিক সংগঠন ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে পার্থক্য : সংগঠনের কাজের ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে কতিপয় পার্থক্য বিদ্যমান । নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. সংজ্ঞাগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলতে এমন সংগঠনকে বুঝায় যেটি কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামো বা নীতিমালার ভিত্তিতে গঠিত হয়ে থাকে । এসব সংগঠনের পিছনে কোনো আইন প্রক্রিয়ার সমর্থন থাকে না।
অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠন বলতে এসব সাংগঠনিক কাঠামোকে বুঝায় যেখানে আনুষ্ঠানিক সংগঠনের দোষত্রুটি পরিহার করে প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনয়ন করতে চেষ্টা করা হয়।
২. কাঠামোগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি শক্তিশালী আইনগত কাঠামো দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ সংগঠন আইনি কাঠোমোর বাইরে গিয়ে কোনো কার্যক্রম সম্পাদন করে না।
আনুষ্ঠানিক সংগঠনের প্রতিটি ধাপেই সুনির্দিষ্ট কাঠামোর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। পক্ষান্তরে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠোমো নেই।
এ জাতীয় সংগঠন কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে বিধায় এর কোনো আইনগত ভিত্তিও নেই।
৩. উৎপত্তিগত : সাধারণত কোনো আইনগত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সংগঠন জন্ম লাভ করে। এ ধরনের সংগঠন কতিপয় সুপ্রতিষ্ঠিত বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হয়।
অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠন হঠাৎ করে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে জন্মলাভ করে । এটি অনেকাংশে মানুষের মনের কোনো আকস্মিক আবেগগত সম্পাদনের লক্ষ্যে উৎপত্তি লাভ করেছে।
৪. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পরিচালিত হয়। এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূর্বনির্ধারিত এবং মূলত মুনাফা অর্জন ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এ ধরনের সংগঠন গড়ে ওঠে।
অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকলেও তা হঠাৎ অর্জনের জন্য নয়, বরং সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই পরিচালিত হয়।
৫. কর্তৃত্বের বিচার : সাধারণত আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা সর্বদা পদসোপান নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উপর হতে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়।
ফলে এ জাতীয় সংগঠনে প্রতিটি কর্মী সুনির্দিষ্ট কর্তৃত্বের অধিকারী। পক্ষান্তরে অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সর্বদা মাঠ পর্যায় থেকে উপরের দিকে প্রবাহিত হয় বিধায় এখানে ব্যক্তি কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো কর্তৃত্ব লাভ করে না।
৬. কর্মীদের আচরণ : কর্মীদের আচরণগত দিক থেকেও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীরা সংগঠনের নিয়মনীতির আওতাধীন থেকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে বিধায় আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীদের আচরণ অনেকটা প্রশংসিত।
অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীদের আচরণ তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় তা দলীয় আচরণ হিসেবে পরিগণিত হয় ।
৭. ব্যবস্থাপনাগত : সাধারণত আনুষ্ঠানিক সংগঠন যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে কর্মী সংগঠনের জন্য কঠোর ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
কিন্তু অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়িত হয় বিধায় এখানে ব্যবস্থাপনা অতটা জোরালো হয় না।
৮. আইনগত ক্ষেত্রে ভিন্নতা : আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ আইনগত কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে সব কার্যক্রম আইনগতভাবে সম্পাদিত হয়।
অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই এবং তা প্রচলিত রীতিনীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
৯. সংগঠনের পূর্ণাঙ্গতায় : আনুষ্ঠানিক সংগঠনে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পূর্ণাঙ্গরূপে পরিচালিত হয় বিধায় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সংগঠন হিসেবে বিবেচিত।
এখানে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের কথা সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের কোনো সুনির্দিষ্ট বর্ণনা থাকে না বিধায় তা অপূর্ণাঙ্গ সংগঠন হিসেবে বিবেচিত।
১০. নিয়ন্ত্রণগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। কেউ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারে না ।
অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে আইনগত দিকের চেয়ে ২০১৩ সম্পর্কের ওপর জোর দেওয়া হয় বলে তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাংগঠনিক কাঠামো ক্ষমতা ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে বহুবিধ পার্থক্য বিদ্যমান।
কালের বিবর্তনে অনানুষ্ঠানিক সংগঠন প্রসার লাভ করলেও আনুষ্ঠানিক সংগঠনের উপযোগিতা এখনো বিদ্যমান। এতৎসত্ত্বেও এই দুই প্রকার সংগঠনের মধ্যে সাংগঠনিক কোনো উপাদান খুঁজে পাওয়া যায় না।
বিভিন্ন বিচারে কতিপয় পার্থক্য থাকলেও এই দুই ধরনের সংগঠন প্রশাসনিক কর্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আনুষ্ঠানিক সংগঠন ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের অমিলসমূহ তুলে ধর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের পার্থক্য আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।