২১টি আমার পথ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর - Amar Poth Question Answer
আমার পথ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর |
১ নম্বর প্রশ্ন
আবদুল মালেক সারাটি জীবন শিক্ষকতা করেছেন, গড়েছেন আলোকিত মানুষ। অবসর গ্রহণের পর তিনি গড়ে তুলেছেন 'তারুণ্য' নামে সেবা সংগঠন। বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি পথশিশুদের শিক্ষাদান, দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ—বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করেন তিনি। অনেকে তাঁর কাজের প্রশংসা করেন, আবার নিন্দা ও কটূক্তি করতেও ছাড়েন না কেউ কেউ। তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন—
মনেরে আজ কহ যে
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
ক. কাজী নজরুল ইসলামের মতে কোনটি আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়?
খ. কবি নিজেকে 'অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে আবদুল মালেকের মাধ্যমে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের যে বাণী উচ্চারিত হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. ‘উদ্দীপকের কবিতাংশের বক্তব্য চেতনায় ধারণ করে আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।' প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো ।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতে, পরাবলম্বন আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
খ. সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন বলেই কবি নিজেকে 'অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন । কবি পুরাতন-জীর্ণ সমাজকে ঢেলে সাজাতে চান। কিন্তু সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়। কবি এ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি তাদের অন্যায়কে অভিশাপ হয়ে ধ্বংস করতে চান। তাই তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন।
গ. উদ্দীপকে আবদুল মালেকের মাধ্যমে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের লেখকের স্বনির্ধারিত জীবন-সংকল্পের দিকটি উচ্চারিত হয়েছে।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক এমন এক 'আমি'র উদ্ভাসন প্রত্যাশা করেছেন, যার পথ নিরেট সত্য পথ; সত্য প্রকাশে যিনি নির্ভীক । সত্যের পথে অটল থাকলেই প্রকৃত 'আমি' সত্তাকে চেনা যায়। আর এতে পরনির্ভরতার গ্লানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
উদ্দীপকে শিক্ষক আবদুল মালেক জীবনে অনেক আলোকিত মানুষ গড়েছেন, সেবামূলক কাজও তিনি অনেক করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে তিনি মানুষকে সচেতন করে তুলতেও সচেষ্ট।
নিন্দা বা প্রশংসার আবর্ত থেকে বেরিয়ে ভালো-মন্দের ঊর্ধ্বে তিনি সত্যকে অবলম্বন করেছেন এবং তরুণদেরও তা অনুসরণের উদ্দীপ্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলামও প্রতিটি মানুষকে পূর্ণ এক ‘আমি'র সীমায় ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন, যেখানে সত্যের উপলব্ধি কবির প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু। সমালোচনার ঊর্ধ্বে সত্যের আলোয় কবির নিজেকে চিনে নেওয়ার এ 'জীবন-সংকল্পই আবদুল মালেকের আহ্বানে উঠে এসেছে।
ঘ. ‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক সত্য পথের কর্ণধার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন— এদিক থেকে প্রশ্নোক্ত কথাটি প্রাসঙ্গিক ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে কবি কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে পূর্ণ এক ‘আমি’র সীমায় ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন, যেখানে সত্যের উপলব্ধিই কবির প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু।
উদ্দীপকের সত্যান্বেষী শিক্ষক আবদুল মালেক কবিতাংশে সত্যকে অবলম্বন করতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ভালো-মন্দ সকল সমালোচনাকে উপেক্ষা করে মনকে সত্যে অধিষ্ঠিত করতে বলেছেন । কেননা সত্যেই সকল কল্যাণ নিহিত ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক সকলকে আপন সত্তায় বিশ্বাসী হতে বলেছেন, যার পথ হবে নিরেট সত্য পথ। সমালোচনা ও লোকভয়কে তুচ্ছ করে আপন সত্য দ্বারা মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটাতে পারলেই সকল বিরোধ ও অসাম্যের ইতি ঘটবে।
আলোচ্য উদ্দীপকের কবিতাংশেও একই কথা অনুরণিত হয়েছে। সেখানেও কবির প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু সত্যের উপলব্ধির কথাই বলা হয়েছে, যার মাধ্যমে পৃথিবীতে কল্যাণ সাধিত হতে - পারে । এ ক্ষেত্রে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ ।
২ নম্বর প্রশ্ন
দিনাজপুর বোর্ড ২০১৭ স্বপ্নচূড়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান মি. রহমান রাশভারী মানুষ। কর্মচারীরা আনুগত্যের ভাব প্রকাশে তাঁর সব কথাতেই হ্যাঁ স্যার, জি স্যার করেন। কেবল মতিন সাহেব তা করেন না। যেটি ঠিক সেখানে হ্যাঁ, যেটি ঠিক নয় সেখানে না বলেন। সহকর্মীরা মতিন সাহেবকে গোঁয়ার ও বেয়াদব ভাবেন। চেয়ারম্যান সাহেবও মাঝেমধ্যে মতিন সাহেবের গোঁয়ার্তুমিতে বিরক্ত হন। হঠাৎ কোষাধ্যক্ষের মৃত্যুতে পদটি শূন্য হলে লোভনীয় এ পদে পদায়ন পেতে সহকর্মীরা চেয়ারম্যানকে তোয়াজ করতে থাকেন। অবশেষে চেয়ারম্যান যেদিন উক্ত পদের নিয়োগপত্র ইস্যু করেন তা দেখে সবার চোখ ছানাবড়া। কারণ সেই পদের নিয়োগপত্র পান মতিন সাহেব।
ক. কাজী নজরুল ইসলাম কত বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন?
খ. মানুষ-ধর্মকে সবচেয়ে বড়ো ধর্ম বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে 'আমার পথ' প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. মতিন সাহেবের আমিত্ব তাঁকে উক্ত পদের সম্মানে ভূষিত করে'— উদ্দীপক ও প্রবন্ধের আলোকে আমিত্বের স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. কাজী নজরুল ইসলাম তেতাল্লিশ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন।
খ. মানুষ ধর্ম তথা মনুষ্যত্ববোধই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম। কেননা এটি জাগ্রত হলেই মানুষে মানুষে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে
মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটাতে হলে তাদের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে হবে। এ ব্যবধান ঘোচাতে হলে মানুষের 'মানুষ' পরিচয়টিকে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এর মাধ্যমে মিটে যাবে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের বিরোধও। মনুষ্যত্ববোধের জাগরণই ধর্মের প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে পারে। তাই মানুষ ধর্মকেই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম বলা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে 'আমার পথ' প্রবন্ধে উল্লিখিত মিথ্যা বিনয় ও সত্যের শক্তির দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক সত্য পথের জয়গান করেছেন। যে মানুষটির মূল শক্তি সত্য, সে কখনো ভুল পথে যেতে পারে না। সত্যের দ্বারা চালিত ব্যক্তির মনে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস থাকে। আর মিথ্যাকে পুঁজি করে চলা ব্যক্তিরা সদাই ভীত ও দুর্বল হয়ে থাকে।
উদ্দীপকের মতিন সাহেব সত্য পথের পথিক। তাই তিনি লাভের আশায় তাঁর কর্মক্ষেত্রের মালিকের প্রতি মিথ্যা বিনয় দেখান না। মালিকের সঠিক কথায় সমর্থন ও ভুল কথায় দ্বিমত জানানোর সাহস রাখেন তিনি ।
কিন্তু অন্য সকল কর্মচারী সর্বদাই মিথ্যা বিনয় দেখাতে ব্যস্ত। মতিন সাহেব সত্য পথে থেকেই তাঁর প্রাপ্য স্থান অর্জন করেছিলেন। ‘আমার পথ' প্রবন্ধেও সত্যের পথ ধরে এগোতেই আহ্বান জানিয়েছেন লেখক। কেননা মিথ্যা বিনয়ের ভন্ডামি কখনোই সুফল বয়ে আনে না ।
ঘ. সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত নিজের অন্তরের রূপটিই ‘আমিত্ব' আর এই ‘আমিত্বই' মানুষকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়— এটিই মতিন সাহেবের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে।
'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক এমন এক 'আমি'র জাগরণ প্রত্যাশা করেছেন, যে সত্য প্রকাশে নির্ভীক ও অসংকোচ । এই 'আমি' সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নিতে সাহায্য করে।
উদ্দীপকের মতিন সাহেব সত্যের অনুসারী। তাই তাঁর সাহস আছে ভুলকে ভুল ও সঠিককে সঠিক বলার। তাঁর এই স্পষ্টভাষী স্বভাব অনেকের কাছে দম্ভ মনে হলেও তিনি তা নিয়ে চিন্তিত নন। একপর্যায়ে তিনি তাঁর এই চরিত্রের জন্যই পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন।
'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক মানুষকে যেমন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, মতিন সাহেব তেমনই একজন মানুষ। তিনি নিজের আমিত্বে বিশ্বাসী ও মিথ্যা বিনয়ের সমর্থনকারী নন ।
লেখক প্রতিটি মানুষকে পূর্ণ এক ‘আমি'র সীমায় ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন। মানুষ যদি সত্যকে ধারণ করতে পারে, তবে নিজেই হতে পারে নিজের কর্ণধার। রুদ্র তেজে মিথ্যার ভয়কে জয় করে সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত করে এই 'আমি' সত্তা।
এই আমিত্ব অবিনয়কে মেনে নিতে পারে, কিন্তু অন্যায়কে সহ্য করতে পারে না। এই আমিত্ব ভুল করতে রাজি, কিন্তু ভন্ডামি করতে প্রস্তুত নয়। ভুল জেনেও তাকে ঠিক বলে চালিয়ে দেওয়ার কপটতা এই ‘আমি’র দৃষ্টিতে ভন্ডামি।
উদ্দীপকের মতিন সাহেব এই আমিত্বের আলোয় উদ্ভাসিত। তাই তো তিনি মিথ্যা বিনয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকেন। ভুলকে তোষামোদের আবরণে সঠিক করতে যান না। প্রবন্ধে উল্লিখিত সত্যের কর্ণধার যেমন মাথা উঁচু করে বাঁচেন, মতিন সাহেবও তেমনি নিজের আমিত্বকে আগলে মাথা উঁচু করে বাঁচেন ।
৩ নম্বর প্রশ্ন
কলম তুমি শুধু বারংবার
আনত করে ক্লান্ত ঘাড়
গিয়েছ লিখে স্বপ্ন আর পুরোনো কত কথা,
সাহিত্যের দাসত্বের ক্ষুধিত বশ্যতা ।
ভগ্ন নিব, রুগ্ণ দেহ, জলের মতো কালি,
কলম, তুমি নিরপরাধ তবুও গালাগালি
খেয়েছ আর সয়েছ, কত লেখকদের ঘৃণা,
কলম, তুমি চেষ্টা করো দাঁড়াতে পারো কিনা ।
ক. সবচেয়ে বড়ো ধৰ্ম কী?
খ. ‘এই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেললে'— লেখক কেন একথা বলেছেন?
গ. উদ্দীপকের ‘কলম' ও ‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রতিফলিত চেতনার মধ্যকার বৈসাদৃশ্য দেখাও ।
ঘ. “উদ্দীপকের কলমের মতো দাসত্ব, অধীনতা স্বীকার করতে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক রাজি নন”— মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো ।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষ ধর্মই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম ।
খ. পরাবলম্বতা মানুষের সঞ্জীবনী শক্তি ও আত্মশক্তি ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট করে ফেলে বলে লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন ।
নিজের সত্তাকে বিকিয়ে অন্যের গলগ্রহ হয়ে থাকলে মানুষ ধীরে ধীরে অলস ও কর্মবিমুখ হয়ে যায় । এতে তার নিজের ভেতরে যে একটা দুর্ভেদ্য
শক্তি আছে তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন মানুষ অন্যের দানে, দয়ায় ও দাক্ষিণ্যে বেঁচে থাকে। এভাবে পরাবলম্বন আমাদের দাসত্বের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে তোলে। এ বিষয়টি বোঝাতেই লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন ।
গ. সত্যের পথ থেকে বিচ্যুতি তুলে ধরায় উদ্দীপকের কলম ও ‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রতিফলিত চেতনার মধ্যকার বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে ব্যক্তিসত্তার চেতনার কথা বলা হয়েছে। সত্যকে আশ্রয় করে যে এগিয়ে যায় সে কখনো কারো দাসত্ব স্বীকার করে না। নিজেকেই সে নিজের কর্ণধার বলে মনে করে। সকল প্রকার ভয় লজ্জাকে উপেক্ষা করে সাহসের সাথে সে লক্ষ্যে স্থির থাকে ।
উদ্দীপকে কলমের দাসত্বকে তুলে ধরা হয়েছে। কলম স্বপ্ন ও অতীত কথা লিখতে গিয়ে অবনমিত ঘাড়ে সাহিত্যের দাসত্বকে স্বীকার করে নেয়।
নিরাপরাধ কলমকেও কখনো কখনো বহু লেখকের ঘৃণা ও তিরস্কার সহ্য করতে হয়। কিন্তু ‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক বলেছেন মানুষের ভেতরে যে ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে তা যদি সে উপলব্ধি করতে পারে তাহলে ওই ক্ষমতার বলে তার সামনে কোনো বাধা-বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতাকে কিছু মনে হবে না।
যে নিজের সত্যকে চিনেছে তাকে কখনো কারো দাসত্ব স্বীকার করতে হয় না। এই চেতনাই উদ্দীপকের সাথে প্রবন্ধের বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি করে ।
ঘ. “উদ্দীপকের কলমের মতো দাসত্ব, অধীনতা স্বীকার করতে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক রাজি নন”— প্রশ্নোক্ত এ মন্তব্যটি যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয় ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আত্মনির্ভরশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। নিজের সত্যকে নিজের কর্ণধার ভাবলেই আপন শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে। আত্মনির্ভরতা থেকেই আসে স্বাধীনতা— একথাই যেন প্রবন্ধের সারকথা ।
উদ্দীপকে কলম কীভাবে দাসত্ব স্বীকার করেছে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নিরপরাধ কলমের নিজস্ব চেতনা নেই বলেই সে অন্যের বশ্যতা স্বীকার করে, তাকে তিরস্কার শুনতে হয়। আত্মার নিজস্ব উপলব্ধির অভাবেই অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে নিশ্চল থাকতে হয়।
‘আমার পথ' প্রবন্ধের লেখক পরাবলম্বনকে বলেছেন মানুষের দাসত্ব ও নিষ্ক্রিয়তার কারণ। নিজস্ব শক্তি ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়েই অর্জন করা যায় সফলতা। হীনম্মন্যতাকে দূর করার জন্য আত্মবিশ্বাস অতি জরুরি গুণ।
অন্তরের দাসত্ব দূর করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে চাই সাহসী মনোবল । নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠাই দাসত্ব থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়।
কিন্তু উদ্দীপকে সেই চেতনার দেখা পাওয়া যায় না বরং দাসত্ব ও বশ্যতা স্বীকার করে নিতে দেখা যায়। তাই একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় উদ্দীপকের কলমের মতো দাসত্ব, অধীনতা স্বীকার করতে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক রাজি নন ।
৪ নম্বর প্রশ্ন
আমি জীবনে অনেক আত্মপ্রবঞ্চনা করে করে অন্তরে অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করেছি। কত রাত্রি অনুশোচনায় ঘুম হয়নি । এখন ভুল বুঝতে পেরেছি। এখন সোজা এই বুঝেছি যে, আমি যা ভালো বুঝি, যা সত্য বুঝি, শুধু সেটুকু প্রকাশ করব, বলে বেড়াব। তাতে লোকে যতই নিন্দা করুক, আমি আমার কাছে ছোটো হয়ে থাকব না, আত্মপ্রবঞ্চনা করে আর আত্মনির্যাতন ভোগ করব না ।
ক. কত সালে কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি পল্টনে যোগ দেন?
খ. ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড়ো ধৰ্ম’– বুঝিয়ে লেখো ।
গ. উদ্দীপকের ভাবার্থের সাথে ‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখকের মনের যে সাদৃশ্যপূর্ণ ভাবের পরিচয় পাওয়া যায়, তা আলোচনা করো ।
ঘ. “উদ্দীপকটিতে ‘আমার পথ' প্রবন্ধটির আংশিক দিক প্রতিফলিত হয়েছে”— উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো ।
৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯১৭ সালে কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি পল্টনে যোগ দেন ।
খ. মানুষ-ধর্ম তথা মনুষ্যত্ববোধই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম। কেননা এটি জাগ্রত হলেই মানুষে মানুষে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে।
মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটাতে হলে তাদের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে হবে। এ ব্যবধান ঘোচাতে হলে মানুষের 'মানুষ' পরিচয়টিকে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এর মাধ্যমে মিটে যাবে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের বিরোধও। মনুষ্যত্ববোধের জাগরণই ধর্মের প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে পারে । তাই মানুষ-ধর্মকেই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম বলা হয়েছে ।
গ. ‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক সত্য পথের কর্ণধার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন— এ বিষয়টিই উদ্দীপকের ভাবার্থের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক এমন এক ‘আমি' সত্তার আবাহন করেছেন, যিনি সত্য প্রকাশে নির্ভীক ও অসংকোেচ। সত্যের উপলব্ধি কবির প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু ।
মিথ্যার ভয়কে জয় করে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নিতে সাহায্য করে এই ‘আমি’ সত্তা। সমাজ ও সমকাল পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রাবন্ধিক দেখিয়েছেন, স্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না পারলে পরনির্ভরতা সৃষ্টি হয় ।
উদ্দীপকে নিজের প্রতি দ্বিধাগ্রস্ত না থেকে, সত্যকে প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে। লোকের নিন্দাকে তুচ্ছ করে নিজের সত্য প্রকাশ করা উচিত বলে লেখক মনে করেন ।
উদ্দীপকের লেখকও নিজেকে ভালো রাখার জন্য সত্য প্রকাশ করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। আত্মপ্রবঞ্চনার মাধ্যমে নির্যাতন ভোগ না করার দিকটিও উদ্দীপকে পরিলক্ষিত হয়। প্রবন্ধের লেখক সত্য প্রকাশে দাম্ভিক যারা তাদের পক্ষে অসাধ্য সাধন করা সম্ভব বলে মনে করেন, যা উদ্দীপকের ভাবার্থের সাথে সাদৃশ্য তৈরি করে ।
ঘ. ‘আমার পথ' প্রবন্ধে সত্য পথ অবলম্বন ছাড়া আরও বিষয়াদি থাকায় বলা যায় যে, উদ্দীপকটিতে 'আমার পথ' প্রবন্ধের আংশিক দিক প্রতিফলিত হয়েছে ।
প্রবন্ধের লেখক সত্য পথে চলার এবং সত্য কথা বলার ক্ষেত্রে নির্ভীকচিত্ত হতে বলেছেন । তিনি অবিনয়কে মানতে রাজি, কিন্তু অন্যায়কে সহ্য করতে রাজি নন । তিনি ভুল স্বীকার করতে রাজি, কিন্তু ভুল জেনেও তাকে সঠিক বলাটাকে ভন্ডামি বলে মনে করেন।
মানুষের মাঝে ক্ষুদ্র কারণে যেসব হিংসাত্মক কাজ সংঘটিত হয়, তিনি তার বিরোধিতা করেছেন। মানবধর্ম সকল ধর্মের সেরা বিবেচনার যে বোধ তা জাগ্রত হলেই মানুষের সকল দ্বন্দ্ব মিটে যাবে বলে প্রাবন্ধিক মনে করেন।
উদ্দীপকে নিজেকে বুঝে নিজের সত্যকে প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে। লেখক মনে করেন, সত্য প্রকাশে নিন্দা থাকলেও নিজের কাছে ছোটো হয়ে থাকতে হয় না।
কেননা নিজের কাছে ছোটো হয়ে থাকার অর্থই হলো আত্মনির্যাতন ভোগ করা। আত্মপ্রবঞ্চনা অর্থাৎ নিজের সাথে নিজে প্রতারণা করলে অন্তরে অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। এর থেকে মুক্তির পথ হিসেবে লেখক নিজে যা জানি সেই সত্যটাকে সবার কাছে, প্রকাশ করার কথা বলেছেন।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আমি সত্তার প্রকাশের মাধ্যমে সত্য পথের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমি সত্তার কারণেই মিথ্যাকে জয় করে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নেওয়া যায় বলে বলেছেন তিনি। আবার লেখক ভুল আর ভন্ডামির মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেছেন। তাঁর মতে, ভুলকে সঠিক বলে প্রচার করাটাই ভন্ডামি।
তিনি ধর্মের চেয়ে মনুষ্যত্ববোধকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ধর্মের বিরোধ মিটিয়ে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুললে উৎকৃষ্ট মানবসমাজ গঠিত হবে।
উদ্দীপকে শুধু মানুষের সত্য প্রকাশের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলে আত্মনির্যাতন থেকে দূরে থাকার কথা বলা হয়েছে। বিষয়বস্তুর বিচারে বলা যায়, “উদ্দীপকটিতে ‘আমার পথ' প্রবন্ধটির আংশিক দিক প্রতিফলিত হয়েছে”— উক্তিটি যথার্থ ।
৫ নম্বর প্রশ্ন
সাদেকুল ইসলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি দেশের সমাজকে নতুন করে গড়ে তুলতে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি এর জন্য প্রতিষ্ঠা করেন 'প্রয়াস' নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তিনি জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। পাশাপাশি সমাজের এবং এলাকার নেতাদের ভণ্ডামি দেখলে প্রতিবাদ করতে পিছপা হন না। মুক্তিযোদ্ধা তিনি, তাই মিথ্যাচার, ভণ্ডামি এসবের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতিবাদ করেন। ফলে সমাজে তার শত্রুর অভাব নেই। তবুও তিনি সত্য আর ন্যায়ের পথেই থাকেন, কারণ এই পথে সহজে জয় আসবে ।
ক. ‘কর্ণধার' শব্দটির অর্থ কী?
খ. ‘আমি সে-দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত'- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো ।
গ. উদ্দীপকটির সাদেকুল ইসলামের সাথে 'আমার পথ' প্রবন্ধের কোন দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে? নির্ণয় করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি 'আমার পথ' প্রবন্ধের সবটুকুর প্রতিফলন নয়।” ব্যাখ্যা করো।
৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক 'কর্ণধার' শব্দটির অর্থ নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তি।
খ. মিথ্যা বা ভণ্ডামিকে প্রশ্রয় করে, পরাবলম্বনের মতো দাসত্ব থেকে মুক্ত থাকা প্রসঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম আলোচ্য উক্তিটি করেছেন ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক পরাবলম্বনকে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব বলেছেন। নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেই দেশ উদ্ধার হয়ে যাবে না, নিজের বা জাতির মুক্তি আসবে না।
লেখকের মতে, যার অন্তরে গোলামির ভাব সে বাইরের গোলামি থেকে মুক্তি পায় না। লেখক ভুল করতে রাজি আছেন, কিন্তু ভণ্ডামি করতে প্রস্তুত নন। তিনি বলেছেন, তাঁর এমন কোনো গুরু নেই, যার খাতিরে তিনি কোনো সত্যের আগুন অস্বীকার করে মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেবেন । তিনি এ ধরনের দাসত্ব থেকে মুক্ত।
গ. উদ্দীপকটির সাদেকুল ইসলামের সাথে ‘আমার পথ' প্রবন্ধে বর্ণিত আপন সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে।
'আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক এমন এক 'আমি'র আহ্বান প্রত্যাশা করেছেন, যার পথ সত্যের পথ, সত্য প্রকাশে যিনি নির্ভীক ও অকুতোভয় । রুদ্র তেজে মিথ্যার ভয়কে জয় করে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নিতে সাহায্য করে নজরুলের প্রত্যাশিত এই 'আমি' সত্তা। 'আমি' সত্তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজেকে চিনলেই আপন সত্যের পথ উন্মোচিত হয়। আর এই পথই আসল পথ ।
উদ্দীপকের সাদেকুল ইসলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আপন সত্যের আলোয় আলোকিত একজন মানুষ। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি সমাজসেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এ লক্ষ্যে তিনি ‘প্ৰয়াস’ নামক একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
সেবামূলক কাজের পাশাপাশি অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধেও তিনি প্রতিরোধ গড়ে তোলেন । তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে সমাজে তার অনেক শত্রু সৃষ্টি হয়। কিন্তু সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি আপন সত্যের পথে অবিচল রয়েছেন।
‘আমার পথ' প্রবন্ধেও লেখক আপন সত্যের আলোয় আলোকিত হওয়ার কথা বলেছেন। এ প্রবন্ধে লেখক যে 'আমি' সত্তার কথা বলেছেন তা উদ্দীপকের সাদেকুল ইসলামের মাঝে মূর্ত হয়ে উঠেছে । তাই আপন সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার এ দিকটির সাথে উদ্দীপকের সাদেকুল ইসলামের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের আপন সত্য পথে চলার দিকটি তুলে ধরা হলেও তা 'আমার পথ' প্রবন্ধের সমগ্রভাবকে ধারণ করেনি।
সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে মিথ্যা ও নতজানুতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ ‘আমার পথ' প্রবন্ধের প্রধান দিক। প্রবন্ধে সত্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সত্যের পথে থাকার জন্য 'আমি' সত্তার আহ্বানে সাড়া দেওয়ার
কথা বলা হয়েছে প্রবন্ধে। কেননা, লেখকের মতে আপন সত্যের পথই আসল পথ। এই পথে থাকতে গিয়ে লেখক প্রয়োজনে অবিনয়ী হতেও দ্বিধা করবেন না । এছাড়া আলোচ্য প্রবন্ধের বিষয়বস্তুতে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও পরাবলম্বন থেকে মুক্ত থাকার বিষয় উঠে এসেছে।
উদ্দীপকের সাদেকুল ইসলাম সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত একজন মানুষ। তিনি সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথকে আঁকড়ে ধরেছেন। মুক্তিযোদ্ধা সাদেকুল ইসলাম দেশ স্বাধীনের পর জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন ।
সমাজে বিদ্যমান অপশক্তি জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধেও তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন। শত্রুদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নির্ভীকচিত্তে তিনি আপন সত্যের পথে অবিচল থেকেছেন ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম আপন সত্যের পথে চলতে আহ্বান করার পাশাপাশি ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল, সত্যের মিল, সেখানে ধর্মের বৈষম্য কোনো হিংসার ভাব আনে না।
যার নিজের ধর্মের বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মকে চিনেছে, সে অন্যের ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না। আবার পরাবলম্বন যে মানুষকে দাসে পরিণত করে, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন লেখক। এই ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়টি এবং পরাবলম্বন থেকে মুক্ত থাকার বিষয়টি উদ্দীপকে আলোচিত হয়নি। কাজেই আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকটি ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সবটুকুর প্রতিফলন নয়— মন্তব্যটি যথার্থ ।
৭ নম্বর প্রশ্ন
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়
সত্য যে কঠিন কঠিনেরে ভালোবাসিলাম
সে কখনো করে না বঞ্চনা ।
ক. কোনটি সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব?
খ. ‘যার মনে মিথ্যা, সেই মিথ্যাকে ভয় করে’– কেন?
গ. উদ্দীপকটিতে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের যে দিকটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপকের উক্ত বিষয়ই ‘আমার পথ' প্রবন্ধের ভিত্তি তৈরি করেছে।” মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই করো ।
৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. পরাবলম্বন হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব ।
খ. যে নিজের সত্যকে চিনতে পারে না তার ভেতরে ভয় কাজ করে বলে সে বাইরেও ভয় পায় ।
বাস্তব জীবনে মানুষকে প্রতিনিয়ত নানারকম সত্য মিথ্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু খুব অল্প মানুষই সত্য-মিথ্যার প্রকৃত রূপ চিনতে পারে। যে
সত্যকে সঠিকভাবে চিনতে পারে তার অন্তরে মিথ্যার অমূলক ভয় থাকে না। E আর যে ব্যক্তি সত্যের আসল রূপটি চিনতে ব্যর্থ হয় তার অন্তরেই মিথ্যার ভয় থাকে। যার মনে মিথ্যা সে-ই মিথ্যার ভয় করে, আর অন্তরে ভয় থাকলে সে ভয় বাইরেও প্রকাশ পায়। এজন্য প্রাবন্ধিক বলেছেন, যার ভেতরে ভয় সে-ই বাইরে ভয় পায় ।
গ. উদ্দীপকে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের আত্মোপলব্ধি ও আত্মবিশ্বাসের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
‘আমার পথ' প্রবন্ধের লেখক সত্যকে উপলব্ধি করে নিজের অবস্থা . বিবেচনা করার কথা বলেছেন। লেখক মনে করেন, যে সত্যকে জেনে এগিয়ে যায় তাকে অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে হয় না। তার বিশ্বাসের জোর তাকে সফলতার সন্ধান দেয় ।
উদ্দীপকের কবি কঠিন জেনেও সত্যকে গ্রহণ করেছেন। সত্যকে চিনতে হলে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। সত্য অনেক কঠিন কিন্তু এ কঠিনকে যে জয় করে এগিয়ে যেতে পারে সেই সফল হয়। কারণ সত্য কখনো মানুষকে পথভ্রষ্ট করে না। উদ্দীপকের এ বিষয়টিই ‘আমার পথ' প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে।
প্রবন্ধে লেখক সত্যকে উপলব্ধি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মনে করেন, মিথ্যাকে পরিহার করে যে সত্যকে ধারণ করে সেই জয়ী হয়। আলোচ্য প্রবন্ধের এ দিকটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
ঘ. উদ্দীপকের সত্যের প্রতি অবিচল থাকার বিষয়টি ‘আমার পথ' প্রবন্ধের ভিত্তি তৈরি করেছে।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে আত্মোপলিব্ধর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আর এর প্রথম শর্তটি হলো নিজের সত্যকে জানা এবং তা প্রকাশ করা। যথার্থরূপে নিজেকে না জানলে আর সত্যকে প্রকাশ করতে না পারলে পরনির্ভরশীলতা তৈরি হয়।
তাই লেখক প্রয়োজনে দাম্ভিক হতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন সত্যের দম্ভ যার মধ্যে আছে তার পক্ষেই কেবল অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।
উদ্দীপকেও সত্যের শক্তির ওপর ব্যক্তির নির্ভরতা উপস্থাপিত হয়েছে। যেখানে শত আঘাত-বেদনার মধ্য দিয়েও মানুষ নিজেকে জানে, নিজের সত্যকে আবিষ্কার করে। আর সেই সত্য যত কঠিনই হোক না কেন, তাতেই আত্মার নির্ভরতা।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায়, উদ্দীপক ও 'আমার পথ' প্রবন্ধ উভয়স্থানে সত্যকেই সঠিক পথ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একমাত্র সত্যই যে ব্যক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে সে বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
আপন সত্যের শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জন করা সম্ভব। আর এই আত্মনির্ভরতা অর্জনই উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধের সারকথা। তাই বলা যায়, আপন সত্যকে আবিষ্কার করে সেই সত্যের বলে বলীয়ান হওয়ার বিষয়টিই উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধের মূল বিষয় । সুতরাং প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।
৮ নম্বর প্রশ্ন
আফসার সাহেবকে অফিসের অনেকে অপছন্দ করে। কারণ তিনি সত্যি কথাটা মুখের ওপর বলে দেন। কিন্তু তাতে তিনি মোটেও তার নীতি থেকে পিছপা হন না। তিনি মনে করেন, নিজে সৎ থাকলে অন্যদের মনোভাবে কিছু যায় আসে না।
ক. কে বাইরে ভয় পায় ?
খ. কী মানুষকে ক্রমেই ছোটো করে ফেলে? কেন?
গ. উদ্দীপক ও ‘আমার পথ' রচনার সাদৃশ্যসূত্র চিহ্নিত করো।
ঘ. “উদ্দীপকের আফসার সাহেব 'আমার পথ' প্রবন্ধের লেখকের চিন্তাকে ধারণ করেন” – তোমার মতামত সহকারে আলোচনা করো।
৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. যার ভেতরে ভয়, সেই বাইরে ভয়, পায় ।
খ. অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে ক্রমেই ছোটো করে ফেলে।
বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অনেক সময় অস্বীকার করে ফেলা হয়। এতে মানুষ ক্রমেই ছোট হয়ে যায়। স্পষ্ট কথা বলার সময় তেমন বিনয় ভাব থাকে না। কারণ স্পষ্ট কথা বলার সময় দৃঢ়তা কাজ করে বলে অতিরিক্ত বিনয়ভাব থাকে না। তাই অতিরিক্ত বিনয় থাকলে তারা স্পষ্ট কথা বলতে পারে না এবং নিজের সত্যকে স্বীকার করতে পারে না। ফলে তাদের মাথা নিচু হয়ে যায় এবং তারা ক্রমেই নিজেদের ছোট করে ফেলে।
গ. ‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক সুস্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস ও সত্যকে প্রকাশ করার ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন আর এ বিষয়টিই উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক এমন এক ‘আমি' সত্তার আবাহন করেছেন যিনি সত্য প্রকাশে নির্ভীক ও অসংকোেচ। মিথ্যার ভয়কে জয় করে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নিতে সাহায্য করে এই সত্ত্বা। সমাজ ও সমকাল পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রাবন্ধিক দেখেছেন সুস্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না জানলে তৈরি হয় পরনির্ভরতা।
উদ্দীপকেও আফসার সাহেব সত্যি কথা বলতে কখনো দ্বিধাগ্রস্ত হন না। অসংকোচে তিনি সত্য প্রকাশ করেন। লোকে নিন্দা করে জেনেও তিনি নিজের সত্য প্রকাশ করেন। প্রাবন্ধিকও লোকের নিন্দাকে তুচ্ছ করে সত্য প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করেন। সত্য প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজনে দাম্ভিক হতে চান তিনি। আর এ বিষয়গুলো উদ্দীপকের সাথে প্রবন্ধের সাদৃশ্য তৈরি করে ।
ঘ. ‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক সত্য প্রকাশে নির্ভীক ও অসংকোচ হতে বলেছেন যা উদ্দীপকের আফসার সাহেব ধারণ করেন। তাই উক্ত = মন্তব্যটি যথার্থ ।
প্রবন্ধের লেখক সত্য পথে চলার এবং সত্য কথা বলার ক্ষেত্রে নির্ভীকচিত্ত হতে বলেছেন। তিনি অবিনয়কে মানতে রাজি কিন্তু অন্যায়কে সহ্য করতে রাজি নন। তিনি ভুল স্বীকার করতে রাজি কিন্তু ভুল জেনেও তাকে সঠিক বলাটাকে ভণ্ডামি বলে মনে করেন। তাঁর বিশ্বাস, সত্যের দম্ভ যাদের মধ্যে রয়েছে তাদের পক্ষেই কেবল অসাধ্য সাধন করা সম্ভব ।
উদ্দীপকের আফসার সাহেব নিঃসংকোচে সত্য প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন সত্য প্রকাশে নিন্দা থাকলেও তা প্রকাশ করা উচিত। মানুষ অপছন্দ করলেও তিনি তার নীতি থেকে পিছপা হন না। তাঁর মতে নিজের কাছে নিজে সৎ থাকলে অন্যদের মনোভাবে কিছু যায় আসে না। প্রাবন্ধিকও এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক 'আমি' সত্তার প্রকাশের মাধ্যমে সত্য পথের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। 'আমি' সত্তার কারণেই মিথ্যাকে জয় করে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নেওয়া যায়। উদ্দীপকের আফসার সাহেবও এ চিন্তাকে ধারণ করেন।
তিনি সত্যি বলতে কখনো পিছপা হন না। প্রাবন্ধিকের মতো তিনিও মনে করে সত্য প্রকাশ আমাদের নির্ভীক হতে হয়। সত্য না বলে ভুলকে সঠিক বলাটা হচ্ছে ভণ্ডামি। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এছাড়া নিজের সত্য প্রকাশ না করলে নিজের সাথেই অসততা করা হয় । সুতরাং দেখা যাচ্ছে উক্ত বক্তব্যটি যুক্তিযুক্ত।
৯ নম্বর প্রশ্ন
এ বয়স জানে রক্ত দানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়ার ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে ।’
ক. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
খ. ‘আগুনের ঝান্ডা’ বলতে কী বুঝায় ?
গ. তুমি কী মনে করো উদ্দীপকের ‘আমার পথ' প্রবন্ধটি বৈসাদৃশ্যপূর্ণ?
ঘ. উদ্দীপকের তারুণ্যের যে প্রাণশক্তি প্রকাশিত হয়েছে তা ‘আমার পথ' প্রবন্ধ অনুসারে ব্যাখ্যা করো ।
৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘আমার পথ' প্রবন্ধটি ‘রুদ্র-মঙ্গল' প্রবন্ধ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ।
খ. ‘আগুনের ঝান্ডা' বলতে ‘আমার পথ' প্রবন্ধে সমাজের সকল অশুদ্ধি ও ক্লেদ দূর করার হাতিয়ারকে বোঝানো হয়েছে।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক যে সমাজের ভিত্তি পচে গেছে তাকে সমূলে উৎপাটিত করার পক্ষপাতী। তিনি পক্ষপাতী যা কিছু অশুভ, মিথ্যা, মেকি তা দূর করার। তাঁর মতে, এজন্য প্রয়োজন আগুনের। কেননা, আগুন সবরকম অশুদ্ধিকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। 'আগুনের ঝান্ডা' বলতে লেখক এ বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন ।
গ. আত্মনির্ভরতা ও সত্যের শপথে বলীয়ান হয়ে অসাধ্য সাধনের আকাঙ্ক্ষার দিক থেকে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য থাকায় উদ্দীপকটি আলোচ্য প্রবন্ধের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ নয় ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম মানুষের আত্মনির্ভরতার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, পরাবলম্বনই সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব । যেদিন মানুষ নিজ সত্যকে বুঝতে শিখবে সেদিন থেকে তার মাঝে কোনো ভয় থাকবে না। এমন ভয়হীন মানুষই পারে অসাধ্য সাধন করতে।
উদ্দীপকে শপথের কোলাহলে আত্মাকে সমর্পণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে। তারুণ্যের গতি যেন স্টিমারের মতো ক্ষিপ্ত। এ বয়সের উচ্ছ্বাস জানে রক্তদানের পুণ্য। প্রাণ দেওয়া বা নেওয়ার মতো কঠিন ও অসাধ্য কাজেও এ বয়স পিছপা হয় না। এ বয়সের মানুষগুলো এমন কাজ করতে পারে কারণ তারা সাহসী, আত্মনির্ভরশীল ও অসাধ্য সাধনে তৎপর। এদিক থেকে উদ্দীপক ও ‘আমার পথ' প্রবন্ধটি সাদৃশ্যপূর্ণ ।
ঘ. উদ্দীপকে তারুণ্যের যে প্রাণশক্তি প্রকাশিত হয়েছে তেমন সত্যনির্ভর, পরাবলম্বনহীন সাধনার কথা ‘আমার পথ' প্রবন্ধেরও মূল সুর ।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধে লেখক কাজী নজরুল ইসলাম সত্য ও কল্যাণকর পথ অনুসরণ করতে চেয়েছেন। এজন্য তিনি অন্তরের দাসত্ব এবং হৃদয়ের গোলামির ভাব দূর করে স্বাবলম্বনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ, যারা আত্মনির্ভর কেবল তারাই পারে শপথের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে অসাধ্য সাধন করতে।
উদ্দীপকের তরুণরা শপথের কোলাহলে আত্মাকে সঁপে দিতে কুণ্ঠিত নয় । তাদের প্রাণ দেওয়া-নেওয়ার ঝুলিটা পরিপূর্ণ থাকে। রক্তদানের পুণ্য তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে প্রতিনিয়ত। হৃদয়ে কোনো দাসত্ব ও গোলামির ভাব নেই বলেই এই তরুণেরা এমন সব দুঃসাহসী কাজ করতে পারে ।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধে লেখক সত্য সাধনায় ব্রতী হতে বলেছেন। কারণ তাতেই আত্মার মুক্তি আসে এবং সেই সত্যের সাধকেরাই পারে দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক কাজ করতে।
উদ্দীপকের তরুণরাও একই ভাবনা দ্বারা অনুপ্রাণিত। ফলে তারা দেশের জন্য যেমন প্রাণ দিতে পারে তেমনি আর্তমানবতার সেবায়ও অগ্রণী । সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ ।
১০ নম্বর প্রশ্ন
সুধাপুর গ্রামের মেধাবী, পরোপকারী সন্তান শ্যামল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পড়ালেখা শেষ করে গ্রামে ফিরে সে সাধারণ মানুষের জীবনমান পরিবর্তন, শিক্ষার বিস্তার ও বাল্যবিবাহ রোধে গড়ে তুলেছে ‘তরুণ সংঘ’- নামের ব্যতিক্রমী সেবামূলক সংগঠন। এলাকার অনেকেই তার কাজের প্রশংসা করলেও ‘পাগল' আখ্যা দিয়ে তার কাজের নিন্দা ও তাকে নিয়ে কটূক্তি করতে দ্বিধা করেনি। শ্যামল সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে তার কাজের প্রতি অটল থেকে সামনে এগিয়ে গেছে। তার প্রতি সকল আলোচনা ও সমালোচনাকে সে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে ।
ক. ‘সম্মার্জনা’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘মানুষ-ধৰ্মই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম— ব্যাখ্যা করো ।
গ. উদ্দীপকের শ্যামল চরিত্রের মানসিকতার সাথে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সংগতিপূর্ণ বিষয়ের যুক্তিপূর্ণ বিচার বিশ্লেষণ তুলে ধরো ।
ঘ. “উদ্দীপকের বিষয়বস্তুর তাৎপর্য 'আমার পথ' প্রবন্ধের মূলভাবনাকে ইঙ্গিত করে”— 'আমার পথ' প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় করো ।
১০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. সম্মার্জনা শব্দের অর্থ মেজে ঘষে পরিষ্কার করা।
খ. মানুষ-ধর্ম তথা মনুষ্যত্ববোধই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম। কেননা এটি জাগ্রত হলেই মানুষে মানুষে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে।
মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটাতে হলে তাদের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে হবে। এ ব্যবধান ঘোচাতে হলে মানুষের 'মানুষ' পরিচয়টিকে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এর মাধ্যমে মিটে যাবে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের বিরোধও। মনুষ্যত্ববোধের জাগরণই ধর্মের প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে পারে । তাই মানুষ-ধর্মকেই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম বলা হয়েছে।
গ. শ্যামলের সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে নিজের কর্মে অবিচল থাকার মানসিকতার সাথে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের আলোচনার সংগতি রয়েছে। ‘আমার পথ' প্রবন্ধে নজরুল এমন এক 'আমি'র আবাহন প্রত্যাশা করেছেন যার পথ সত্যের পথ।
রুদ্র তেজে মিথ্যার ভয়কে জয় করে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নিতে সাহায্য করে এই 'আমি' সত্তা। তার মতে, তিনি প্রয়োজনে দাম্ভিক হতে চান। কেননা তার বিশ্বাস, সত্যের দম্ভ যাদের মধ্যে রয়েছে, তাদের পক্ষেই কেবল অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।
উদ্দীপকের শ্যামল তার চলার পথে অবিচল। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ লেখাপড়া শেষ করে গ্রামে ফিরে আসে । তার গ্রামের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করা দেখে অনেকেই অনেক ইতিবাচক ও নেতিবাচক মন্তব্য করেছে। কিন্তু সে তার নিজের সম্পর্কে জানে। সে এটাও জানে, তার চলার পথ সঠিক প্রবন্ধে কাজী নজরুল মানবের এমন অবিচলতার দিকটিই প্রকাশ করেছেন ।
ঘ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তুর তাৎপর্য ‘আমার পথ' প্রবন্ধের মূলভাবনাকে ইঙ্গিত করে— উক্তিটি যথার্থ।
প্রবন্ধে নজরুল প্রতিটি মানুষকে পূর্ণ এক ‘আমি'র সীমার ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন। তিনি সত্যপথের পথিক। এই সত্যের উপলব্ধি কবির প্রাণ- প্রাচুর্যের উৎসবিন্দু। রুদ্রতেজে মিথ্যার ভয়কে জয় করে সত্যের আলোতে নিজেকে চিনে নিতে সাহায্য করে এই ‘আমি’ সত্তা। তিনি ভুল করতে রাজি আছেন তবে ভণ্ডামি না ।
উদ্দীপকে শ্যামল সর্বোচ্চ পড়ালেখা শেষ করে গ্রামে ফিরে আসে । গ্রামে তার উন্নয়নমূলক কাজকর্ম দেখে অনেকে অনেক মন্তব্য করে। শ্যামল তাতে বিচলিত হয় না। বরং সে সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তার কাজের প্রতি অটল থেকে সামনে এগিয়ে গেছে । সে তার চলার পথ সম্পর্কে জানে । তাই কোন বাধাই তাকে প্রভাবিত করতে পারে না।
উদ্দীপকে শ্যামলের কার্যকলাপ সত্য পথের পথিকের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রবন্ধে নজরুল যে 'আমি' সত্তার কথা বলেছেন, উদ্দীপকে শ্যামলের কর্মকাণ্ড তার আমি সত্তাকে প্রকাশ করে। নিজেকে সে জানে বলেই সত্যপথে এগিয়ে চলতে সে দ্বিধাবোধ করে না। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বিষয়বস্তুর তাৎপর্য ‘আমার পথ' প্রবন্ধের মূলভাবনাকে ইঙ্গিত করে উক্তিটি যথার্থ ।
১১ নম্বর প্রশ্ন
১১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
১২ নম্বর প্রশ্ন
বল, নাহি ভয়, নাহি ভয় ।
বল, মাভৈ, মাভৈ জয় সত্যের জয়।
বল, হউক গান্ধি বন্দি, মোদের সত্য বন্দি নয়৷
বল, মাভৈ মাভৈ, পুরুষোত্তম জয়
তুই, নির্ভর কর আপনার পর
আপন পতাকা কাঁধে তুলে ধর ।
ক. ‘আমার পথ' প্রবন্ধটির উৎস কী?
খ. রাজভয়-লোকভয় প্রাবন্ধিককে বিপথে নিতে পারবে না কেন?
গ. উদ্দীপকের কবির ভাবনার সঙ্গে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের ভাবনার তুলনামূলক আলোচনা করো ।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘আমার পথ' প্রবন্ধের সম্পূর্ণ ধারক না হলেও প্রবন্ধের আমি সত্তার প্রকাশক’– মন্তব্যটি যাচাই করো ।
১২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক ‘আমার পাথ’ প্রবন্ধটির উৎস রুদ্র-মঙ্গল প্রবন্ধগ্রন্থ।
খ. সত্যের আলোয় নিজেকে চিনেছেন বলে রাজভয়-লোকভয় প্রাবন্ধিককে বিপথে নিতে পারবে না ।
প্রাবন্ধিক সত্যি করে আপন সত্যকে চিনেছেন। তাঁর মতে এই সত্যই তাকে পথ দেখাবে। নিজেকে চিনছেন বলে তার অন্তরে মিথ্যার ভয় নেই । তাই রাজভয়, লোকভয় কোনোকিছুই তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। এজন্য তার বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কাও নেই ।
গ. উদ্দীপকের কবি ভাবনায় রয়েছে নিজের মধ্যে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জনের দিকটি, যা ‘আমার পথ' প্রবন্ধের ভাবনার সঙ্গে তুলনীয়।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম 'আমি' সত্তার যথার্থ জাগরণ প্রত্যাশা করেছেন । তাঁর এই ‘আমি’ ভাবনা বিন্দুতে সিন্ধুর উচ্ছ্বাস জাগায় । তাঁর মতে, প্রতিটি মানুষের সত্তা অমিত শক্তির অধিকারী।
তাই নিজেকে নিজের কর্ণধার মনে করে, নিজেকে যথাযথ মূল্যায়ন করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে । উদ্দীপকের কবিতাংশেও অনুরূপ ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে। উদ্দীপকে আলোচ্য প্রবন্ধের ভাবনার সাথেই তাল মেলাচ্ছে।
উদ্দীপকের কবি সত্যের জয়ে ভয়কে দূর করার কথা বলেছেন । তিনি পুরুষোত্তম জয়ের জয়গান গেয়েছেন। আর এই জয় নিজের মধ্যে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা ছাড়া সম্ভব নয়।
আপন সত্যকে অবলম্বন করেই কবি লাভ করতে চান আত্মনির্ভরতা। একই ভাবনা আলোচ্য গল্পের লেখকের ভাবনাতেও দেখতে পাই। অর্থাৎ আপন সত্যকে অবলম্বন করে অগ্রসর হওয়ার ভাবনার দিক থেকে উদ্দীপকের কবি ও আলোচ্য প্রবন্ধের প্রাবন্ধিকের ভাবনা ।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আমার পথ' প্রবন্ধের সম্পূর্ণ ধারক না হলেও প্রবন্ধের আমি সত্তার প্রকাশক”— মন্তব্যটি যথার্থ ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক প্রতিটি মানুষকে পূর্ণ এক ‘আমি’র সীমায় ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন। তাঁর প্রত্যাশিত আমি হলো সেই সত্তা যার পথ সত্যের পথ। তাছাড়া এ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক একই সঙ্গে সকল মানুষের অন্তরাত্মার মিলনে ‘আমরা’ হয়ে উঠতে চেয়েছেন ।
উদ্দীপকে ভয়কে জয় করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এই ভয়কে জয় করতে সত্যের পথেই অগ্রসর হতে হবে। তাহলেই দেখা মিলবে পুরুষোত্তম জয়ের। কেননা নিজের মধ্যে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই মানুষ আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে পারবে, যা ‘আমার পথ' প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় ।
উদ্দীপকে সত্যকে মানবমনে প্রতিষ্ঠিত করে মানুষের আত্মনির্ভরতার কথা বলা হয়েছে। সেখানে এমন এক ‘আমি’ সত্তা পরিচয় বিধৃত হয়েছে, যেমনটি আলোচ্য প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক আহ্বান করেছেন। কিন্তু ‘আমার পথ' প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক শুধু এই ‘আমি’ কে প্রতিষ্ঠিত করার ভাবনাতেই ক্ষান্ত থাকেনি।
এরকম অনেক ‘আমি’র সম্মিলনে সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে উৎকৃষ্ট মানবসমাজ গড়ে তোলার প্রত্যাশা আলোচ্য প্রবন্ধের অন্যতম উপজীব্য। তাই উদ্দীপক আলোচ্য প্রবন্ধের সম্পূর্ণ ভাবের ধারক নয় । এক্ষেত্রে মন্তব্যটি নিঃসন্দেহে যথার্থ ।
১৩ নম্বর প্রশ্ন
নিজেকে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সক্রেটিস বলেছেন, “নিজেকে জানো।' এ কথা সকলেই জানে যে, আত্মোপলব্ধির মধ্য দিয়ে নির্মিত হয় ব্যক্তিত্ববোধ। আর প্রবল ইচ্ছাশক্তিই পরাধীনতার জাল থেকে বের করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে । সুতরাং ইচ্ছাশক্তি ও সত্য পথকে ধারণ করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে ।
ক. ‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক কাকে সালাম জানিয়েছেন?
খ. “যার ভেতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়।” ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের কোন দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. উদ্দীপকের “নিজেকে জানো' এই কথাটি 'আমার পথ' প্রবন্ধের মূল বিষয়বস্তুকে নির্দেশ করে কি না, নিজের ভাষায় তুলে ধরো ।
১৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আপন সত্যকে সালাম জানিয়েছেন
খ. যে নিজের সত্যকে চিনতে পারে না, তার ভেতরে ভয় কাজ করে বলে সে বাইরেও ভয় পায় ।
বাস্তবজীবনে মানুষকে প্রতিনিয়ত নানারকম সত্য-মিথ্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু খুব অল্প মানুষই সত্য-মিথ্যার প্রকৃত রূপ চিনতে পারে। যে সত্যকে সঠিকভাবে চিনতে পারে, তার অন্তরে মিথ্যার অমূলক ভয় থাকে না। আর যে ব্যক্তি সত্যের আসল রূপটি চিনতে ব্যর্থ হয়, তার অন্তরেই মিথ্যার ভয় থাকে। যার মনে মিথ্যা সে মিথ্যার ভয় করে, আর অন্তরে ভয় থাকলে সে ভয় বাইরেও প্রকাশ পায়। এজন্য প্রাবন্ধিক বলেছেন, যার ভেতরে ভয় সে-ই বাইরে ভয় পায় ।
গ. নিজেকে চেনার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী হওয়া ও আত্মাকে উপলব্ধি করার দিকটিতে উদ্দীপকের সাথে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সাদৃশ্য পাওয়া যায় । মানুষ স্বভাবতই নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে ভালোবাসে। জাগতিক নানা চাহিদা মেটাতে গিয়ে সে অনেক সময় সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে। মিথ্যার সাথে আপস করে। ধীরে ধীরে সে নিজের শক্তি-সামর্থ্যকে মিথ্যার কাছে বিসর্জন দেয়। সত্যকে ধারণ করার মাধ্যমেই একজন মানুষ নিজেকে চিনতে সক্ষম হয়, অন্যায় ও মিথ্যার সাথে লড়াই করার শক্তি পায়। ‘আমার পথ' প্রবন্ধে এ বিষয়টিই অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
উদ্দীপকে মহান দার্শনিক সক্রেটিসের ‘নিজেকে জানো' তত্ত্বের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নিজেকে চেনার মাধ্যমেই মানুষ সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে পারে। একইভাবে ‘আমার পথ' প্রবন্ধেও সত্যের মহিমা প্রকাশিত হয়েছে।
সেখানে দেখানো হয়েছে কীভাবে একজন মানুষ সত্য চর্চার মাধ্যমে সাধারণ থেকে অসাধারণে পরিণত হতে পারে, সত্যকে চেনার মাধ্যমে নিজের শক্তি ও সামর্থ্যকে উদ্ঘাটন করতে পারে। তাই বলা যায়, নিজেকে জানা সত্যকে উপলব্ধির দিক দিয়ে উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধ সাদৃশ্যপূর্ণ ।
ঘ. ‘আমার পথ' প্রবন্ধে আত্মসত্য উপলব্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা উদ্দীপকের ‘নিজেকে জানো' কথাটির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধের মূল বিষয় হচ্ছে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করে গোটা মানবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা। আপাতদৃষ্টিতে এ অসাধ্যকে সাধন করার মূল উপাদান হচ্ছে আপন সত্যকে জানা, তথা প্রতিটি মানুষের মাঝে সঞ্চিত অপার সম্ভাবনাময় শক্তি ও সামর্থ্যকে জানা।
উদ্দীপকে মহান দার্শনিক সক্রেটিসের 'নিজেকে জানো' তত্ত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, নিজেকে জানা ও বোঝার মাধ্যমেই ব্যক্তিত্ববোধ তৈরি হয় । মিথ্যা থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হতে পারে। 'আমার পথ' প্রবন্ধেও এ বিষয়টির বিস্তারিত আলোচনা দেখতে পাওয়া যায়।
লেখক নিজের শক্তি-সামর্থ্য জানতে ও বুঝতে সত্যের নিবিড় সাধনার ব্যাপারটি সামনে নিয়ে এসেছেন। অবশ্য তাঁর মূল লক্ষ্য হচ্ছে সত্যাশ্রয়ী সকল মানুষের সমন্বয়ে বিভেদহীন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা I তিনি মনে করেন, সকলেই যখন নিজেকে চিনতে পারবে, তখন মানুষে মানুষে বিভেদের রেখা দূর হয়ে যাবে। সত্যের নিবিড় সাধনায় প্রতিটি মানুষ নিজেকে সঠিকভাবে জানতে ও বুঝতে পারবে। তখন কৃত্রিম ভেদাভেদ দূর হয়ে যাবে। কেননা নিজেকে জানা মানে অপরকেও জানা, যা প্রবন্ধের মূল বিষয়কে সমর্থন করে ।
১৪ নম্বর প্রশ্ন
সেঁজুতি বেশি পড়ালেখার সুযোগ পায়নি। তার বিয়ে হয়েছে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। সেঁজুতির স্বামী অনিমেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র। বিয়ের পরে সেঁজুতি দেখে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কপট আচরণ করে। অনিমেষ যৌতুকবিরোধী প্রবন্ধ লিখে পুরস্কার পায়, কিন্তু' ঘরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে খোঁটা দেয় । কিন্তু সেঁজুতি তার দৃঢ় ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে স্বামীর অন্যায়ের প্রতিবাদ করে।
ক. ‘যুগ-বাণী’ কোন ধরনের রচনা?
খ. ‘আমার পথ দেখাবে আমার সত্য'-উক্তিটি বুঝিয়ে দাও।
গ. অনিমেষের মতো মানুষদের সম্পর্কে নজরুলের অভিমত কী? আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সেঁজুতি চরিত্রের ন্যায় ও সত্যনিষ্ঠা কাজী নজরুল ইসলাম ‘আমার পথ' প্রবন্ধে কীভাবে উপস্থাপন করেছে?- বিশ্লেষণ করে দেখাও।
১৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘যুগ-বাণী’ হলো প্রবন্ধগ্রন্থ।
খ. ‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিককে তাঁর আপন সত্য কর্ণধার হিসেবে পথ দেখাবে ।
কর্ণধার বলতে প্রাবন্ধিক মানুষের ভেতরকার ঐশ্বরিক শক্তি বা অলৌকিক ক্ষমতাকে বুঝিয়েছেন। মানুষের মগজ ও মন স্রষ্টার পরম শক্তি জ্ঞানশক্তি ও প্রেমশক্তিতে ভরপুর। প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস, সত্য সব অসৎ শক্তিকে পরাজিত করে মানুষকে পূর্ণতার পথে নিয়ে যায়। তাই প্রাবন্ধিকের সত্য বা ঐশী শক্তি বা সৎ শক্তি সকল প্রকার আলস্য, কর্মবিমুখতা, পঙ্গুত্ব, নৈরাজ্য, অবিশ্বাস ও জরাজীর্ণতাকে পশ্চাতে ফেলে তাকে ন্যায় ও সত্যের পথ দেখাবে।
গ. অনিমেষের মতো মানুষদের সম্পর্কে নজরুলের অভিমত হলো- দেশের যা কিছু মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি তা আগুনের সম্মার্জনা দ্বারা দূর করতে হবে।
'আমার পথ' প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন, কিন্তু ভণ্ডামি করতে প্রস্তুত নন । ভুল জেনেও তাকে ঠিক বলে চালিয়ে দেওয়ার কপটতা কিংবা জেদ তাঁর দৃষ্টিতে ভণ্ডামি। এই ভুল ব্যক্তির হতে পারে, সমাজের
হতে পারে কিংবা হতে পারে কোনো প্রকার বিশ্বাসের। তবে তা যারই হোক আর যেমনই হোক এর থেকে বেরিয়ে আসাই প্রাবন্ধিকের একমাত্র প্রত্যাশা। লেখক এসব মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি দূর করতে আগুনের সম্মার্জনা ব্যবহারের কথা বলেছেন।
উদ্দীপকে বর্ণিত অনিমেষ উচ্চশিক্ষিত হলেও তার ভেতরে রয়েছে ভণ্ডামি। বাইরে যৌতুকবিরোধী মানসিকতা দেখালেও ভেতরে সে যৌতুকলোভী। এ কারণে সে যৌতুকবিরোধী প্রবন্ধ লিখে পুরস্কার লাভ করলেও ঘরের স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য খোঁটা দেয়।
'আমার পথ' প্রবন্ধে এ ধরনের ভণ্ডামি দূর করতে আগুনের সম্মার্জনা ব্যবহারের পক্ষে প্রাবন্ধিক। উদ্দীপকের অনিমেষের মতো মানুষদের সম্পর্কে নজরুল এ ধরনের অভিমতই ব্যক্ত করেছেন।
ঘ. উদ্দীপকের সেঁজুতি চরিত্রের ন্যায় ও সত্যনিষ্ঠা কাজী নজরুল ইসলাম 'আমার পথ' প্রবন্ধে আত্মাকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন ।
'আমার পথ' প্রবন্ধে নজরুল এমন এক 'আমি'র আরোহণ প্রত্যাশা করেছেন যার পথ সত্যের পথ; সত্য প্রকাশে যিনি নির্ভীক ও অসংকোচ । তার এই পথনির্দেশক সত্য অবিনয়কে মেনে নিতে পারে, কিন্তু অন্যায়কে সহ্য করে না। মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে তিনি দাম্ভিক হতে চান। কেননা, তাঁর বিশ্বাস সত্যের দম্ভ যাদের মধ্যে রয়েছে তাদের পক্ষেই কেবল অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।
উদ্দীপকের সেঁজুতি বেশি লেখাপড়ার সুযোগ না পেলেও তার ভেতরে কোনো ভণ্ডামি ছিল না। ঘরে-বাইরে স্বামীর দ্বৈত আচরণে সে বিরক্ত। স্বামীর নৈতিকতাবিরোধী আচরণে সে দৃঢ় ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়ে স্বামীর অন্যায়ের প্রতিবাদ জানায়। সেঁজুতি তার 'আমি' সত্তাকে চিনতে পারার কারণেই প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পেরেছে।
উদ্দীপকের সেঁজুতির মাঝে রয়েছে সত্যের দম্ভ। আর এই দম্ভ মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অনেক ভালো। নিজেকে চিনলেই কেবল এরকম দম্ভ দেখানো সম্ভব । তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সেঁজুতি চরিত্রের ন্যায় ও সত্যনিষ্ঠা কাজী নজরুল ইসলাম ‘আমার পথ' প্রবন্ধে আত্মাকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন।
১৫ নম্বর প্রশ্ন
দিনাজপুর বোর্ড ২০১৯ যাকে অপদার্থ ও অকর্মণ্য বলে উপহাস করা হচ্ছে, তাকে যদি কেউ সাহস দেয়, এগিয়ে যাবার পরামর্শ এবং সহযোগিতার হাত বাড়ায়, তবে সেই মানুষটির মানসিক ও আত্মিক বিবর্তন ঘটবে। এতে অলস পরিশ্রমী হতে পারে, অপ্রতিভ সপ্রতিভ হবে, ভীরু সাহসী হবে, মূর্খ বিদ্বান হবে, দুর্বল বলবান হতে পারে। এর অন্যতম কারণ, সেই মানুষটির অন্তর্নিহিত সত্যের বিকাশ।
ক. 'আমার পথ' প্রবন্ধটি কোন প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
খ. কাজী নজরুল ইসলাম ‘আমার সত্য' বলতে কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের ভাবনা 'আমার পথ' প্রবন্ধের সঙ্গে কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
ঘ. “আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে।” উদ্দীপক ও 'আমার পথ' প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিচার করো।
১৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘আমার পথ' প্রবন্ধটি 'রুদ্র-মঙ্গল' প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
খ. কাজী নজরুল ইসলাম 'আমার সত্য' বলতে পরাধীনতা ও দাসত্ববৃত্তি পরিহার করে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এ দেশ একদিন ছিল শৌর্য-বীর্যের ও ঐশ্বর্যের লীলাভূমি, কিন্তু এ দেশের মানুষ তাদের আলস্য, কর্মবিমুখতা ও পৌরুষের অভাবে হয়ে পড়েছে পৃথিবীর অন্য সব দেশের চেয়ে হীন।
কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যদি আপন সত্যকে জানে তাহলে এখনো তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাবে। তাই নিজ সত্তাকে জাগিয়ে তুলতেই নিজের শক্তি ও নিজের সত্যর ওপর অটুট বিশ্বাস রাখতে হবে। আর পরাধীনতা ও দাসবৃত্তি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার উপায় হচ্ছে অন্তর্নিহিত সত্য।
গ. নিজের শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে জেনে আপন সত্যকে ধারণ করে এগিয়ে যাবার কথা ‘আমার পথ' প্রবন্ধের ন্যায় উদ্দীপকেও ফুটে উঠেছে। ‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আত্মনির্ভরশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। পরাবলম্বন আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে । তিনি মনে করেন, এ পরাবলম্বনই সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব।
অন্তরে যাদের গোলামির ভাব, বাইরের গোলামি থেকে তাদের মুক্তি নেই। আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আত্মনির্ভরশীলতা না থাকলে মানুষ নিজের উন্নতির জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করে। বস্তুত যেদিন মানুষের মনে আত্মনির্ভরশীলতা আসবে, সেদিনই মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতা পাবে।
উদ্দীপকে অন্তর্নিহিত সত্যের বিকাশের মাধ্যমে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হবার কথা বলা হয়েছে । অপদার্থ ও অকর্মণ্য ব্যক্তিও অনুপ্রেরণা পেলে সপ্রতিভ হয়ে ওঠে। আত্মিক বিবর্তনের মাধ্যমে সাহসী হয়ে ওঠে। 'আমার পথ' প্রবন্ধে নজরুল ইসলাম 'আমি' সত্তার জাগরণের কথা বলেছেন, যার প্রকাশ উদ্দীপকেও রয়েছে। নিজেকে চেনা, নিজের সত্যকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে মানুষ চিরকল্যাণের পথে অগ্রসর হতে পারে— আর এ ভাবনাটি প্রবন্ধ ও গল্পে প্রকাশিত হয়েছে ।
ঘ. নিজেকে চেনার মাধ্যমেই মানুষ সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে পারে, যা উদ্দীপক ও 'আমার পথ' প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে ।
আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরতার আহ্বান জানানো হয়েছে 'আমার পথ' প্রবন্ধে। সত্যের উপলব্ধি লেখকের প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু। লেখক সত্যের আলোতে মানুষের ব্যক্তিত্বের জাগরণ ও বিকাশ প্রত্যাশা করেছেন। পরনির্ভরতামুক্ত স্বাধীন ব্যক্তি আত্মবিশ্বাসী, এরা সত্য প্রকাশে নির্ভীক হয়ে থাকে। আত্মশক্তিকে অনুধাবন করতে পারলেই মানুষ আত্মনির্ভরশীল হতে পারে ।
আর আত্মনির্ভরশীল মানুষ সব কিছুকেই সম্ভব করে তুলতে পারে। উদ্দীপকে লেখক আত্মিক শক্তিকে জাগ্রত করার কথা বলেছেন। অপদার্থ, অকর্মণ্য, ভীরু, মূর্খ ও দুর্বল মানুষটিও আত্মশক্তি সম্পর্কে সচেতন হলে সাহসী ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে। নিজে নিষ্ক্রিয় না থেকে আত্মনির্ভরতা লাভের মাধ্যমেই আমাদের মুক্তি সম্ভব।
‘আমার পথ' প্রবন্ধ এবং উদ্দীপকের লেখক আত্মশক্তিকে প্রাণপ্রাচুর্যের উৎস হিসেবে উপলব্ধি করেছেন। নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে কখনোই সফলতা অর্জন সম্ভব নয় । তাই নিজের সত্য ও বিশ্বাসকে জেনে আত্মার অফুরান শক্তিকে জাগ্রত করতে পারলেই মানুষ পেতে পারে আত্মনির্ভরশীলতা । আর এ আত্মনির্ভরশীলতার গুণেই মানুষ পেতে পারে সাফল্য। তাই উদ্দীপক ও 'আমার পথ' প্রবন্ধের আলোকে বলাই যায়— 'আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে।'
১৬ নম্বর প্রশ্ন
আলম একজন সংগঠক। এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে তিনি 'কবি সুকান্ত পাঠাগার ও সংগীত বিদ্যালয়' নামে সংগঠন গড়ে তোলেন। তিনি মিথ্যাকে উড়িয়ে দিয়ে, সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সংগঠনের ‘রজতজয়ন্তী'র আয়োজন করেছেন। তিনি দমে যাওয়ার মানুষ নন। তাঁর সংগঠনের ছেলেমেয়েরা আজ গুণী শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, প্রশাসনের কর্মকর্তা, চিকিৎসাবিদ আরও কত সফল মানুষ। তিনি আলোকিত মানুষ হিসেবে সকলের মন আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছেন।
ক. 'আমার পথ' প্রবন্ধে 'আমার পথ' আমাকে কী দেখাবে?
খ. “আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে।” ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে আলমের নেতৃত্বের স্বরূপ ‘আমার পথ' প্রবন্ধে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? বিশ্লেষণ করো।
ঘ. “মনুষ্যত্ব মানুষকে আলোর পথ দেখাতে পারে।” উদ্দীপক ও 'আমার পথ' প্রবন্ধের আলোকে উক্তির যথার্থতা বিচার করো।
১৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক ‘আমার পথ' প্রবন্ধে ‘আমার পথ' আমাকে আমার সত্য দেখাবে।
খ ‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে আত্ম তথা নিজের ভেতরের সত্যকে জানতে বলেছেন।
‘আমার পথ' প্রবন্ধের লেখকের মতে, নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনিই একটা জোর আসে যে, সে আপন সত্য ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করে না। অর্থাৎ কেউই তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত করতে পারে না। মানুষের উচিত তার ভেতরের শক্তিকে উপলব্ধি করা এবং আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া। তবেই তার নিজের ওপর নিজের বিশ্বাস জন্মাবে। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে।
গ.. সত্য পথের কর্ণধার হয়ে মিথ্যা ও নতজানুর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকে আলমের নেতৃত্ব আমার পথ' প্রবন্ধে প্রতিফলিত হয়েছে।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক এমন এক 'আমি' সত্তার আহ্বান করেছেন, যিনি সত্য প্রকাশে নির্ভীক ও অসংকোেচ। সত্যের উপলব্ধি কবির প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু । মিথ্যার ভয়কে জয় করে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নিতে সাহায্য করে এই 'আমি' সত্তা। প্রতিটি মানুষ তার সত্তাকে উপলব্ধি করে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে উৎকৃষ্ট মানবসমাজ গড়ে তুলবে, লেখক এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
উদ্দীপকে মিথ্যাকে উড়িয়ে সত্যের কর্ণধার হয়ে ওঠা সংগঠক আলমের কথা এসেছে। আলম সাহেব দমে না গিয়ে তাঁর সংগঠনের 'রজতজয়ন্তী' পালন করেছেন । এ সংগঠনের প্রতিটি সদস্য সমাজকে আলোকিত করে চলেছে। আলোকিত মানুষ গড়ার সার্থক কারিগর হয়ে উঠেছেন আলম সাহেব। আর এভাবেই উদ্দীপকে আলমের নেতৃত্বের স্বরূপ ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ...‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক স্বনির্ভর হয়ে সত্যকে ধারণ করে, মনুষ্যত্ব অর্জনের মাধ্যমে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন, যার প্রতিফলন আম্রা উদ্দীপকেও দেখতে পাই ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে সমাজ ও সমকাল পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রাবন্ধিক দেখিয়েছেন যে, সুস্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না জানলে তৈরি হয় পরনির্ভরতা, আহত হয় আমাদের ব্যক্তিত্ব। পরাবলম্বন আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। আর প্রাবন্ধিক মনে করেন, এটিই সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব। অন্তরে যাদের গোলামির ভাব, বাইরের গোলামি থেকে তাদের মুক্তি নেই। লেখক মুক্তির উপায় হিসেবে সত্য ও ন্যায়কে ধারণ করে মনুষ্যত্ব অর্জনের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন ।
উদ্দীপকে সত্যকে ধারণ করে মনুষ্যত্ব অর্জনের দিকটি দেখাতে হয়েছে । আলম সাহেব আলোকিত মানুষ হয়ে অন্যদের মন আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছেন। মনুষ্যত্ব অর্জনের মাধ্যমে সংগঠনের প্রতিটি সদস্য সফল মানুষ হয়ে উঠেছে ।
প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক সকলকে আপন সত্তার প্রতি বিশ্বাসী হতে বলেছেন, যার পথ হবে নিরেট সত্য পথ। সমালোচনা ও লোকভয়কে তুচ্ছ করে আপন সত্য দ্বারা মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটাতে পারলেই সকল বিরোধ ও অসাম্যের ইতি ঘটবে। উদ্দীপক ও গল্পে প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু সত্যের উপলব্ধির কথাই বলা হয়েছে। আর এ সত্যের মাধ্যমে অর্জিত মনুষ্যত্ব মানুষকে আলোর পথ দেখাতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।
১৭ নম্বর প্রশ্ন
সুমন সুযোগ পেলেই নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেয়। ছাত্রজীবনের এ অভ্যাসটি আজ তার কর্মজীবনেও বহমান। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত বিনয় ও তোষামোদ। পরনির্ভরশীল এ মানুষটি অফিসের কোনো কাজই এখন আর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারেন না। এজন্য লোকজন তাকে পছন্দ করে না । অফিসে তার গ্রহণযোগ্যতা কমে আসছে। অন্যদিকে শফিক সাহেবের সততা, দৃঢ়তা এবং কর্মনিষ্ঠা তাকে সকলের নিকট প্রিয় করে তুলেছে । তিনি সকলের নিকট অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।
ক. কোন বোধে জাগ্রত হতে পারলেই ধর্মের সত্য উন্মোচিত হবে?
খ. ‘একমাত্র মিথ্যার জলই এই শিখাকে নিভাতে পারবে'— কথাটি বুঝিয়ে দাও ।
গ. উদ্দীপকের সুমনের মধ্যে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের শফিক সাহেব ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের লেখকের প্রতিভূ”- মন্তব্যটি বিচার করো ।
১৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক.. মনুষ্যত্ববোধে জাগ্রত হতে পারলেই ধর্মের সত্য উন্মোচিত হবে।
খ.. মিথ্যা বা ভণ্ডামির সংস্পর্শে প্রকৃত সত্যের উপলব্ধি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝাতে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আমিত্বকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। এজন্য প্রকৃত সত্যের উপলব্ধি থাকা জরুরি। এই উপলব্ধিকে টিকিয়ে রাখতে গিয়ে যদি কখনো ভুল হয়ে যায়, তখন নিঃসংকোচে তা স্বীকার করে নিতে হবে । কোনোরূপ মিথ্যা বা ভণ্ডামির আশ্রয় নেওয়া যাবে না । মিথ্যার আশ্রয় নিলে নিজের মধ্যকার প্রকৃত সত্যের বিনাশ ঘটবে। আর এটি বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটির অবতারণা করা হয়েছে ।
গ.. উদ্দীপকের সুমনের মধ্যে 'আমার পথ' প্রবন্ধের পরাবলম্বনের এবং নিজের সত্যকে অস্বীকার করার দিকটি ফুটে উঠেছে।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক পরাবলম্বনকেই সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব বলেছেন। কেননা পরাবলম্বনের ফলেই মানুষ আপন শক্তি ও সামর্থ্যকে বুঝতে পারে না। তাই লেখক আমাদের পরাবলম্বনের মনোভাব ছেড়ে | আত্মনির্ভরশীল হতে বলেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি গান্ধীজির কথা বলেছেন, যিনি মানুষকে নিজের প্রতি অটুট বিশ্বাস রাখতে শিখিয়েছেন ।
উদ্দীপকের সুমন ছাত্রজীবন থেকেই পরনির্ভরশীল। সে নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করাতে ভালোবাসে। এ পরাবলম্বন সে কর্মজীবনে এসেও ছাড়াতে পারেনি। এছাড়া এর পাশাপাশি তার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত বিনয় ও তোষামোদ, যার ফলে অফিসের লোকদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়।
অতিরিক্ত বিনয় আমাদের সত্য প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে। স্পষ্ট কথায় সত্য নিহিত থাকে এবং তাতে অবিনয়ের ভাব থাকে। কিন্তু সুমন অতিরিক্ত বিনয় প্রকাশ করে, যা সত্য প্রকাশে বাধাস্বরূপ। এছাড়া তার মধ্যে পরনির্ভরশীলতাও রয়েছে। পরনির্ভরশীলতা মানুষকে নিষ্ক্রিয় করে তোলে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সুমনের মধ্যে 'আমার পথ' প্রবন্ধের পরাবলম্বন এবং নিজের সত্যকে প্রকাশ না করার দিকটি ফুটে উঠেছে।
ঘ. “উদ্দীপকের শফিক সাহেব ‘আমার পথ' প্রবন্ধের লেখকের প্রতিভূ”— মন্তব্যটি যুক্তিযুক্ত ।
'আমার পথ' প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম: আত্মবিশ্বাসী মানুষের ক্ষমতার কথা বলেছেন। তিনি প্রত্যাশা করেছেন আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ব্যক্তিত্বকে। মানুষ যদি নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারে তাহলে সে সকল কাজেই সফল হতে পারে।
উদ্দীপকের শফিক সাহেব কর্মজীবনে সফলতা লাভের পেছনে যে সত্য আবিষ্কার করেছেন তা হলো সততা, আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা। তিনি অন্যের ভরসায় নিজের জীবন পরিচালনা করেন না। তিনি জানেন এ পথে জীবনে সাফল্য আসে না। তাই তিনি সতৃতার সাথে কাজ করে সকলের প্রিয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক মনে করেন, পরাবলম্বনতা মানুষের সঞ্জীবনী শক্তি ও আত্মশক্তি ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট করে দেয়। নিজস্ব শক্তি ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়েই অর্জন করা যায় সফলতা। লেখকের মতে, পরনির্ভরশীল হয়ে অন্যের দয়া-দাক্ষিণ্যে বেঁচে থাকার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। তাই তিনি বলেছেন, পরনির্ভরশীলতা দূর করে নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস রাখতে হবে, তবেই মানুষ জীবনে সাফল্য পাবে। উদ্দীপকের শফিক সাহেবের মধ্যেও এ বিষয়গুলো দেখা যায়। তিনি পরনির্ভরশীল না হয়ে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়েছেন এবং জীবনে সফলতা পেয়েছেন। তাই বলা যায়, শফিক সাহেব ‘আমার পথ' প্রবন্ধের লেখকের প্রতিভূ।
১৮ নম্বর প্রশ্ন
শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে জ্ঞানচর্চা ও মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধন। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার লক্ষ্যে পৌছানোর জন্যে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার আগ্রহ কম। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্যে তারা নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলে না। তাই আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্যে তাদের খুঁটির জোরের আশ্রয় নিতে হয়। ফলে জ্ঞানার্জনের আনন্দ থেকে তারা দূরে সরে পড়ে। এভাবে তারা নিজেদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। পরিণতিতে তাদের মধ্যে জন্ম নেয় হতাশা ও পরনির্ভরশীলতা।
ক. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে ‘আমার পথ' আমাকে কী দেখাবে?
খ. ‘আগুনের সম্মার্জনা' বলতে 'আমার পথ' প্রবন্ধে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে 'আমার পথ' প্রবন্ধের মিলসমূহ চিহ্নিত করো।
ঘ. 'নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না জানলে তৈরি হয় পরনির্ভরতা’— উদ্দীপক ও 'আমার পথ' প্রবন্ধ অবলম্বনে মন্তব্যটি বিচার করো ।
১৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক.. 'আমার পথ' প্রবন্ধে আমার পথ আমাকে আমার সত্য দেখাবে।
খ.. 'আগুনের সম্মার্জনা' বলতে 'আমার পথ' প্রবন্ধে সমাজের সকল অশুদ্ধি, ক্লেদ দূর করার হাতিয়ারকে বোঝানো হয়েছে।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক যে সমাজের ভিত্তি পচে গেছে তাকে সমূলে উৎপাটিত করার পক্ষপাতী। তিনি পক্ষপাতী যা কিছু অশুভ মিথ্যা, মেকি তা দূর করার । এজন্য তাঁর মতে, প্রয়োজন আগুনের। কেননা আগুন সব রকম অশুদ্ধিকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। আগুনের সম্মার্জনা বলতে লেখক এ বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন।
গ.. আত্মনির্ভরতা ও পরনির্ভরশীলতা সম্বন্ধে 'আমার পথ' প্রবন্ধের প্রাবন্ধিকের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে।
'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আত্মনির্ভরশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন । পরাবলম্বন আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে । তিনি মনে করেন, এ পরাবলম্বনই সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব। অন্তরে যাদের গোলামির ভাব বাইরের গোলামি থেকে তাদের মুক্তি নেই। আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে যথেষ্ট। কিন্তু আত্মনির্ভরশীলতা না থাকলে মানুষ নিজের উন্নতির জন্যে অন্যের ওপর নির্ভর করে। বস্তুত যেদিন মানুষের মনে আত্মনির্ভরশীলতা আসবে সেদিনই মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতা পাবে। এমন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় আলোচ্য উদ্দীপকেও পাওয়া যায়।
উদ্দীপকে বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীদের পরনির্ভরশীলতার প্রকৃত চিত্রটি তুলে ধরা হয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলে না। আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য তাদের অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয় বলে জ্ঞানার্জনের আনন্দ থেকেও তারা বঞ্চিত হয়। এমনকি প্রায়শই তারা নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে।
পরিণতিতে তাদের মধ্যে জন্ম নেয় হতাশা ও পরনির্ভরশীলতা। 'আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কীভাবে মানুষের মাঝে পরনির্ভরশীলতা তৈরি হয় সে সম্পর্কে মত প্রকাশ করেছেন, যা উদ্দীপকের মূলভাবেও বর্তমান। সেদিক বিবেচনায় পরনির্ভরশীলতা ও আত্মনির্ভরতার বিষয়ে ‘আমার পথ' প্রবন্ধ ও উদ্দীপকের মিল রয়েছে।
ঘ..‘আমার পথ' প্রবন্ধের লেখক মনে করেন স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন নিজের প্রতি বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করার সাহস ।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে সমাজ ও সমকাল পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রাবন্ধিক দেখিয়েছেন যে, সুস্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না জানলে তৈরি হয় পরনির্ভরতা, আহত হয় আমাদের ব্যক্তিত্ব। পরাবলম্বন আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। আর প্রাবন্ধিক মনে করেন, এটিই সবচেয়ে বড় দাসত্ব। অন্তরে যাদের গোলামির ভাব, বাইরের গোলামি থেকে তাদের মুক্তি নেই ।
উদ্দীপকে কীভাবে মানুষ পরনির্ভরশীলতায় আবদ্ধ হয় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যারা আত্মনির্ভরশীলতার জন্যে নিজেদের যোগ্য করে তোলে না তারাই আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্যে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়। ফলে জ্ঞানার্জনের আনন্দ থেকে তারা দূরে সরে পড়ে। এভাবে তারা নিজেদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে । পরিণতিতে তাদের মধ্যে জন্ম নেয় হতাশা ও পরনির্ভরশীলতা । ‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখকের বর্ণনায় পরনির্ভরশীলতা পরিহারের আহ্বানের মধ্য দিয়ে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কেননা পরাবলম্বন থেকেই তৈরি হয় দাসত্ব। আর নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠাই দাসত্ব থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়। আলোচ্য উদ্দীপকের ঘটনাবর্তেও এর ছায়াপাত ঘটেছে। বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের পরনির্ভরশীলতার দিকটি তুলে ধরে সেখানেও এর কারণ উন্মোচন করা হয়েছে। এই ব্যাখ্যা প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যটিকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে।
১৯ নম্বর প্রশ্ন
স্বামী বিবেকানন্দ আত্মবিশ্বাসকে একটি অতীব জরুরি গুণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিশ্বের ইতিহাসগুলো কয়েকজন আত্মবিশ্বাস সম্পন্ন মানুষের ইতিহাস। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকলেই তবে অন্তরে দেবত্ব জাগ্রত হয়। তাই তিনি বলেছেন, তেত্রিশ কোটি দেব-দেবীতে বিশ্বাস থাকলেও কারও যদি আত্মবিশ্বাস না থাকে, তবে সে মুক্তি পাবে না।
ক. 'মৃত্যু-ক্ষুধা' নজরুলের কোন ধরনের গ্রন্থ?
খ. ‘একেই বলে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব', 'দাসত্ব' বলতে নজরুল কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের চরিত্রটির মতো নজরুল 'আমার পথ' প্রবন্ধে কোন চরিত্রটির কথা উল্লেখ করেছেন?
ঘ. “বিশ্বের ইতিহাস হলো কয়েকজন আত্মবিশ্বাস সম্পন্ন মানুষের ইতিহাস'— মন্তব্যটি 'আমার পথ' প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো ।
১৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক.. 'মৃত্যু-ক্ষুধা' নজরুলের উপন্যাস গ্রন্থ।
খ.. ব্যক্তিত্বহীন মানুষের পরনির্ভরতাকে নজরুল ইসলাম ‘দাসত্ব' বলে অভিহিত করেছেন ।
মানুষের ব্যক্তিত্বের জাগরণ ও আত্মনির্ভরতা থেকেই স্বাধীনতা আসে। নজরুল ইসলামের বিশ্বাস, নিজের সত্যকে নিজের কর্ণধার মনে করলে আপন শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস জন্ম নেয়। এ ধরনের অবলম্বনের কথা শেখাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। কিন্তু জনগণ মহাত্মা গান্ধীর সেই স্বাবলম্বনের কথা না বুঝে তাঁর ওপর নির্ভর করতে শুরু করে। এটাই হলো পরাবলম্বন ।
আর পরালম্বন মানুষের আত্মশক্তিকে নষ্ট করে দেয়। মানুষের হৃদয়ে তৈরি করে মানসিক দাসত্ব । নজরুল ইসলাম তাঁর 'আমার পথ' প্রবন্ধে পরাবলম্বন তথা পরনির্ভরতাকে ‘দাসত্ব' বলে বুঝিয়েছেন।
গ.. উদ্দীপকের স্বামী বিবেকানন্দ চরিত্রটির মতো নজরুল 'আমার পথ' প্রবন্ধে মহাত্মা গান্ধীর চরিত্রটির কথা উল্লেখ করেছেন।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আত্মবিশ্বাসের ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, মানুষের আত্মবিশ্বাস না থাকলে সে মানুষ কোনো কাজই সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারে না। তিনি প্রবন্ধে গান্ধীজির কথা বলেছেন, যিনি মানুষকে নিজের প্রতি অটুট বিশ্বাস রাখতে শিখিয়েছেন। এই আত্মবিশ্বাসের কথা অভিন্নভাবে উঠে এসেছে উদ্দীপকের স্বামী বিবেকানন্দ চরিত্রে
উদ্দীপকের স্বামী বিবেকানন্দ চরিত্রে আত্মবিশ্বাসের অটুট গুণ প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর আত্মবিশ্বাস দৃঢ় ছিল বলে অন্তরে দেবত্ব জেগে উঠেছিল। তাই তিন বলেছেন, তেত্রিশ কোটি দেব-দেবীতে বিশ্বাস থাকলেও কারও যদি আত্মবিশ্বাস না থাকে তবে সে মুক্তি পাবে না। আর নিজের আত্মবিশ্বাস থেকে জন্ম নেয় স্বাধীনতার চেতনা। এভাবেই আসে মানসিক মুক্তি। এ কথাটি নজরুল তাঁর ‘আমার পথ' প্রবন্ধে গান্ধীজি চরিত্রের উদাহরণ দিয়ে · উপস্থাপন করেছেন। গান্ধীজি চরিত্রে অটুট আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই তিনি মানুষকে পরনির্ভরতা মুক্ত হতে শিক্ষা দিয়েছেন এবং আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হতে বলেছেন। মানুষের মনে আত্মবিশ্বাস জন্ম নিলেই সে হয়ে ওঠে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। আর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ সমাজে অসাধ্য সাধন করতে পারে। যেমনটি মহাত্মা গান্ধী করতে পেরেছিলেন তাঁর আত্মবিশ্বাসপ্রসূত ব্যক্তিত্বের বদৌলতে, যা উদ্দীপকের স্বামী বিবেকানন্দ চরিত্রে অভিন্নভাবে ফুটে উঠেছে। এভাবেই উদ্দীপকের চরিত্রটির মতো নজরুল 'আমার পথ' প্রবন্ধে মহাত্মা গান্ধীজির চরিত্রটির কথা উল্লেখ করেছেন ।
ঘ..‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আত্মবিশ্বাসী মানুষের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। ‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক আত্মবিশ্বাসী মানুষের ক্ষমতার কথা বলেছেন। আত্মবিশ্বাস মানুষকে এমন এক জোরালো অবস্থান ও ক্ষমতা দেয় যার ফলে সে অসাধ্য সাধন করতে পারে। মানুষ যদি নিজের ওপরই বিশ্বাস রাখতে না পারে তাহলে সে কোনো কাজেই সফল হতে পারে না। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখার জন্য প্রয়োজন নিজের সম্পর্কে জানা ও নিজের সত্যকে শ্রদ্ধা করা।
উদ্দীপকের স্বামী বিবেকানন্দ মানুষের সফলতা লাভের পেছনে যে সত্যকে আবিষ্কার করেছেন তা হলো আত্মবিশ্বাস। তিনি সফল মানুষের সফলতার পেছনে খুঁজে পেয়েছেন আত্মবিশ্বাসকে। যাঁদের নিজের সত্যে বিশ্বাস ছিল তাঁরাই পৃথিবীতে সফল মানুষ হয়েছেন।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক মিথ্যাকে পরিহার করে নিজের সত্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন । এর ফলে নিজের মধ্যে অবিনয় ভাব থাকলেও আত্মবিশ্বাসের মূলমন্ত্র হিসেবে বিবেচ্য। আর আত্মবিশ্বাসই পারে একজন মানুষকে সাফল্য এনে দিতে। উদ্দীপকে স্বামী বিবেকানন্দও একই কথা বলেছেন। মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস থাকলেই কেবল সফলতা সম্ভব। যার মাঝে আত্মবিশ্বাস নেই সে কখনো মুক্তি পাবে না । অতএব উদ্দীপক ও ‘আমার পথ' প্রবন্ধের বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্বের ইতিহাস হলো কয়েকজন আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন মানুষের ইতিহাস 1
২১ নম্বর প্রশ্ন
প্রত্যক্ষ জ্ঞানের যেখানে অভাব সেখানে সমস্ত জ্ঞানই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যে কোনোদিন পথ ভোলার কষ্ট ভোগ করে নাই, সে কখনো পথ চলার আনন্দ উপভোগ করতে পারে না। যে কোনোদিন পানিতে পড়ে হাবুডুবু না খেয়েছে সে কখনো নৌকায় চড়ার সুখ ভালো করে বুঝতে পারে না। মূলত নিজের শক্তি কাজে লাগাতে না পারলে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে না।
ক. কোনটি মানুষকে ছোটো করে ফেলে?
খ. প্রাবন্ধিক ভুলকে প্রাণ খুলে স্বীকার করে নিতে বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে 'আমার পথ' প্রবন্ধের কোন দিকের প্রতিফলন আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘আমার পথ’প্রবন্ধের প্রাবন্ধিকের বক্তব্যে যে নির্ভীকতা ফুটে উঠেছে তা উদ্দীপকের আলোকে মূল্যায়ন করো ।
২১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক.. অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে ছোটো করে ফেলে ।
খ.. ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়েই সত্যকে পাওয়া যায় বলে প্রাবন্ধিক ভুলকে প্রাণ খুলে স্বীকার করে নিতে বলেছেন ।
প্রাবন্ধিকের মতে সত্য মানুষকে পথ দেখায়। সেই সত্যকে খুঁজে পাওয়ার পথে মানুষের ভুল হতেই পারে। কিন্তু শুধু জেদের খাতিরে বা গোঁ বজায় রাখতে ভুলকে অস্বীকার করা উচিত নয়। তাই সত্যের সন্ধান পাওয়ার জন্য প্রাবন্ধিক ভুলকে প্রাণ খুলে স্বীকার করে নিতে বলেছেন।
গ..‘আমার পথ' প্রবন্ধে ব্যক্ত হয়েছে, ভুলকে স্বীকার করে সত্য প্রকাশে অসংকোচ হলে এবং পরাবলম্বনকে ত্যাগ করলে প্রাপ্তি মেলে আত্মনির্ভরশীলতার, এরই প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকের বক্তব্যে।
‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, নিজেকে চিনলে, নিজের সত্যকেই নিজের কর্ণধার বলে জানলে নিজের শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে। মহাত্মা গান্ধী আমাদেরকে এই স্বাবলম্বনই শেখাতে চেয়েছিলেন। লেখকের মতে পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। আত্মনির্ভরশীলতা প্রত্যাশা করে লেখক তাই বলেছেন আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আসবে, সেদিনই আমরা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন হব ।
উদ্দীপকে লেখক প্রত্যক্ষ জ্ঞানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কারণ, তাঁর মতে প্রত্যক্ষ জ্ঞান ছাড়া মানুষের জ্ঞান অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মানুষ পথ ভোলার কষ্ট ভোগ না করলে চলার আনন্দ উপভোগ করতে পারে না,
আবার পানিতে হাবুডুবু না খেলে নৌকায় চড়ার সুখ বুঝতে পারে না। অর্থাৎ নিজের শক্তিকে কাজে না লাগাতে পারলে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে না। আলোচ্য প্রবন্ধে লেখকও অনুভব করেছেন যে, অসাধ্য সাধন করতে চাইলে মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরতা প্রয়োজন। আর আত্মনির্ভরতা তখনই আসে যখন মানুষ সত্য প্রকাশে অসংকোচ হয় এবং পরনির্ভরতাকে ত্যাগ করতে পারে। অতএব, উদ্দীপক আত্মনির্ভরশীল হয়ে অসাধ্য সাধনের পথ দেখাচ্ছে, যা আলোচ্য প্রবন্ধেও প্রতিফলিত বক্তব্য ।
ঘ.. নিজের সত্য ও বিশ্বাস প্রকাশে 'আমার পথ' প্রবন্ধের আত্মনির্ভরশীল প্রাবন্ধিকের বক্তব্যে রয়েছে নির্ভীকতা, যা উদ্দীপকের লেখকের অসাধ্য সাধনের শক্তি ।
'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক নির্ভীক ও সুস্পষ্টভাবে নিজের সত্য ও বিশ্বাসকে প্রকাশ করতে চান। কারণ, তিনি মনে করেন এটি করতে না পারলে তৈরি হয় পরনির্ভরতা। তাতে আমাদের ব্যক্তিত্ব আহত হয়। সত্য প্রকাশে নির্ভীক হলেই কেবল অসাধ্যকে সাধন করা সম্ভব বলে লেখক মনে করেন ।
উদ্দীপকের লেখক পানিতে হাবুডুবু খেতে রাজি, পথ ভুলে যেতে রাজি। কারণ, এইসব অবস্থা মানুষকে আত্মনির্ভরশীল হতে শেখায়। আর আত্মনির্ভরশীল মানুষ অনায়াসে নির্ভীক হয়ে উঠতে পারে। আর নির্ভীক মানুষই অসাধ্য সাধন করতে পারে। অসাধ্য সাধনে উদ্দীপকের লেখকের আত্মনির্ভরশীলতা থেকে প্রাপ্ত নির্ভীকতার শক্তি আলোচ্য প্রবন্ধের লেখকের প্রত্যাশিত জাতিরই অনুরূপ।
'আমার পথ' প্রবন্ধ ও উদ্দীপকের লেখক আত্মনির্ভরশীলতার প্রত্যাশা করেছেন। কারণ, আত্মনির্ভরতা মানুষকে অসাধ্য সাধনে নির্ভীক করে. তোলে। আর নির্ভীক মানুষের শক্তি অসামান্য। উদ্দীপকে লেখক সমস্ত বাধা-বিপত্তির মুখে নির্ভীক, কারণ তাঁর মধ্যে কোন পরনির্ভরতা নেই। আত্মনির্ভরশীলতা তাকে নির্ভীক করেছে। সেই একই শক্তিতে আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক বলতে পারছেন 'আমার কর্ণধার আমি'। আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়ে সত্যকে জানতে চান, নিজের সত্যকে অসংকোচে প্রকাশ করে আত্মনির্ভরশীলতায় হতে চান নির্ভীক, যার অনুরূপ বক্তব্যে উদ্দীপকের আলোচনাও মুখর হয়ে উঠেছে।
Thanks onak onak valo basha apnadar jonno
Thank u so much
Thank you