উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন স্তর বর্ণনা কর।
উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে আলোচনা কর |
উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন স্তর বর্ণনা কর।
- অথবা, তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন স্তর বা ধাপ সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর ভূমিকা : যেকোনো ধরনের গবেষণা পরিচালনার অন্যতম প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে তথ্য। সংগৃহীত তথ্য প্রাথমিক পর্যায়ে এলোমেলো বা অগোছালো থাকে। বিশ্লেষণের সুবিধার্থে তথ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের দরকার হয়।
যথাযথ উপস্থাপন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ না হলে তথ্যসংগ্রহের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য তথ্যের সম্পাদনা, ক্ষেপণ, শ্রেণিবদ্ধকরণ ও সারণিবদ্ধকরণ অপরিহার্য।
তথ্য বা উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের ধাপ বা স্তরসমূহ : তথ্যসংগ্রহের পর তা নিরীক্ষণের মাধ্যমে ভুলভ্রান্তি চিহ্নিতকরণ ও সংশাধনকে তথ্য সম্পাদনা বলা হয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং তথ্যসংগ্রহের বিভিন্ন পর্যায়ে অদক্ষতা, দ্রুততা ও অসতর্কতার জন্য বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সংগৃহীত হতে পারে। নিম্নে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ধাপ বা স্তরগুলো সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :
তথ্য সম্পাদনা : তথ্য সাধারণত যাচাইবাছাই করে উপস্থাপন করা হয়। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত যেসব অসংগতি লক্ষ করা যায় সেগুলো নিম্নরূপ :
অযৌক্তিক সংকেত : প্রশ্নের সাথে সংগতিহীন উত্তর তথ্য সংগ্রহকারী কর্তৃক গ্রহণ করা ।
বর্ষন : অসতর্কতাবশত বা অন্য কারণে কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর সংগৃহীত না হওয়া।
যৌক্তিক অসংগতি : প্রক্রিয়াগত কারণে অযৌক্তিক উত্তর সংগৃহীত হওয়া। যেমন— কোনো উত্তরদাতার বর্তমান বয়স যদি তার চাকরি গ্রহণকালীন বয়সের চেয়ে কম উল্লেখ করা হয়।
অসম্ভব উত্তর : গবেষণার ক্ষেত্রে অবাস্তব তথ্য সংগৃহীত হওয়া। যেমন— অবিবাহিত মহিলার বৈধ সন্তান সংখ্যা উল্লেখ করা ।
স্বার্থক ও অস্পষ্ট উত্তর: গবেষণার জন্য স্বার্থক ও অস্পষ্ট উত্তর কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেমন— উত্তর একাধিক হতে পারে এমন উত্তরসমূহ থেকে যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দেওয়া। আবার এমন উত্তর সংগৃহীত হতে পারে যাতে অস্পষ্টতা রয়েছে।
এসব ভ্রান্তি তথ্য সংগ্ৰহকালীন সংশোধনের চেষ্টা করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যের পরীক্ষণ এবং যথার্থতা প্রতিপাদনের মাধ্যমে ত্রুটিবিচ্যুতি দূর করা হয়।
ভ্রান্তির পরিমাণ একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় বিদ্যমান থাকলে সংশ্লিষ্ট উত্তরদাতার নিকট থেকে পুনরায় তথ্যসংগ্রহ করে সংশোধন করা হয়। অধিক মাত্রায় প্রান্তি পরিলক্ষিত হলে সংগৃহীত তথ্যসমূহ বাতিল করে প্রয়োজনৰোধে নতুনভাবে তথ্যসংগ্রহ করতে হবে। ।
তথ্য সম্পাদনার সময় উত্তরপত্রের সম্পূর্ণতা, স্পষ্টতা, সমরূপতা, বোধগম্যতা ইত্যাদির প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। প্রশিক্ষিত তথ্যসংগ্রহকারী এবং দক্ষ সমীক্ষক উপযুক্ত তথ্যসংগ্রহ ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন ।
সংকেতায়ন : তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি পর্যায় হলো সংকেতায়ন। এর মাধ্যমে প্রশ্নের প্রতিটি উত্তরের জন্য সাংকেতিক নম্বর প্রদান করা হয়।
E. R. Babbie এর মতে, “সংকেতায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে যান্ত্রিক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণের উপযোগী করার জন্য অপরিশোধিত তথ্যকে একটি আদর্শমানে রূপান্তর করা হয়।”
সংকেতায়নের সংজ্ঞায় D. C. Sancheti & V. K. Kapoor বলেন, “সংখ্যাক্রম বা বর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্যের সারণীকরণ সহজতর করার জন্য সংখ্যাত্মক বা গুণাত্মক উভয় ধরনের উত্তরের ওপর সংখ্যা বা বর্ণ আরোপ করা হচ্ছে সংকেতায়ন "
অতএব সংকেতায়ন বা কোডভুক্তকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যসমূহের ওপর সংখ্যামান বা অন্য যেকোনো প্রতীক আরোপিত হয়।
সংকেতায়নের উদ্দেশ্য হলো সারণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সহজ করা। সীমিত তথ্য বিশ্লেষণের জন্য সংকেতায়নের প্রয়োজন হয় না। প্রশ্নমালার আকার বড় হলে বিশাল তথ্যবাজি বিশ্লেষণে সংকেতায়ন করা হয়।
কম্পিউটারভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণে সংকেতায়ন একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া। তথ্যসংগ্রহের সময় বা সংগৃহীত তথ্য সম্পাদনার পর সংকেত প্রদান করা হয়ে থাকে। আবদ্ধ প্রশ্নের (Close-ended question) ক্ষেত্রে সম্ভাব্য উত্তর লিপিবদ্ধ থাকায় তথ্যসংগ্রহের পূর্বেই সংকেত প্রদান করা যায়।
উন্মুক্ত প্রশ্নের ক্ষেত্রে তথ্য সম্পাদনার পর সংকেত প্রদান করা হয় । কেননা, এতে প্রশ্নপত্রে উত্তর নির্দেশিকা থাকে না বলে সংকেতায়নও সম্ভব হয় না । সংকেতায়নের একটি নমুনা নিম্নে তুলে ধরা হলো : আপনার বৈবাহিক অবস্থান কী?
উত্তর
অবিবাহিত বিবাহিত
সংকেত ১ বিধবা 22
তালাকপ্রাপ্ত 8
অন্যান্য ৫
শ্রেণিবদ্ধকরণ : সমগ্রক বা তথ্যবিশ্ব থেকে সংগৃহীত তথ্য বিভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। তথ্যসমূহের মধ্যে যেমন সাদৃশ্য দেখা যায়, তেমনি বৈসাদৃশ্যও দেখা যায়। এরকম অবস্থায় তথ্যের সঠিক উপস্থাপন এবং তাৎপর্য ব্যাখ্যা কঠিন।
এজন্য তথ্যসমূহকে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম বা রীতিতে সাজাতে হয়। কতকগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্যের আলোকে তথ্যসমূহকে সাজানো বা বিন্যস্ত করার পদ্ধতিকে শ্রেণিবদ্ধকরণ বলা হয়।
S. K. Kapur এর মতে, শ্রেণিবদ্ধকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার সাহায্যে একক ও দফাসমূহকে সাদৃশ্য অনুসারে বিভিন্ন দলে বা শ্রেণিতে সাজানো হয়।
L. R. Connor এর মতে, “সত্যিকার অর্থে বা ধারণাগতভাবে সাদৃশ্য ও পারস্পরিক সম্বন্ধ অনুযায়ী তথ্যসমূহকে কতকগুলো দলে বা শ্রেণিতে সাজানোর প্রক্রিয়াই হলো শ্রেণিবদ্ধকরণ।” মূলত তথ্যসমূহের নিয়মানুগ ও যৌক্তিক বিন্যাসই শ্রেণিবদ্ধকরণ।
তালিকাবদ্ধকরণ : সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে সংগৃহীত তথ্যকে তালিকাবদ্ধকরণের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে । সাধারণত উপাত্তসমূহকে সংক্ষিপ্ত যিনি নির্দিষ্ট এবং যৌক্তিক নিয়মে উপস্থাপন করাকে. তালিকাবদ্ধকরণ বা সারণিবদ্ধকরণ বলা হয়।
তই বলা যায়, কোনো বিষয় ব্যাখ্যা করার জন্য সংখ্যাত্মক উপাত্তের নিয়মতান্ত্রিক ও সুশৃঙ্খল উপস্থাপনাই তালিকাবদ্ধকরণ বা সারণিবদ্ধকরণ ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণার অপরিহার্য অনুষঙ্গ হচ্ছে তথ্য। আর গবেষণার সঠিক ফলাফল লাভের ক্ষেত্রে সংগৃহীত তথ্য প্রক্রিয়াকরণের কোনো বিকল্প নেই।
তাই একজন গবেষককে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য উল্লিখিত ধাপ বা স্তরগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হয়। তাই তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ধাপ সম্পর্কে গবেষকের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা আবশ্যক ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন স্তর বা ধাপ সম্পর্কে যা জান লেখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।