শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর |
শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর
- অথবা, শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর ।
- অথবা, শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ কর ।
উত্তর ভূমিকা : গবেষণা বা অনুসন্ধানের কাজে সংগৃহীত তথ্যকে কোনো সাধারণ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণি বা গুচ্ছে ভাগ করা হলে তাকে শ্রেণিবদ্ধকরণ বলে। তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও উপস্থাপনের একটি অন্যতম পর্যায় হচ্ছে তথ্যের শ্রেণিবন্ধকরণ।
সামাজিক গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্য মাঠ পর্যায় থেকে সংগ্রহ করার পর সেগুলোকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হয়। শ্রেণিবদ্ধকরণকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও এটি পরিসংখ্যানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কতিপয় উদ্দেশ্য সাধনের জন্য শ্রেণিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা : পরিসংখ্যানে প্রাথমিক অবস্থায় সংগৃহীত উপাত্তগুলো বিশৃঙ্খল অবস্থায় থাকে এরূপ বিশৃঙ্খল উপাত্ত দিয়ে কোনোরূপ পরিসংখ্যানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সম্ভব নয়।
তাই সংগৃহীত বিশৃঙ্খল উপাত্তের শ্রেণিবদ্ধকরণ হলো তথ্য উপস্থাপনের প্রথম পদক্ষেপ। তথ্য উপস্থাপনের প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে শ্রেণিবদ্ধকরণে উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে তথ্য শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো :
১. তথ্যের সুস্পষ্টতা সহজবোধ্যতা : তথ্যের শ্রেণিবদ্ধকরণ তথ্যকে সহজবোধ ও সুস্পষ্ট করে তোলে। শ্রেণিবদ্ধকরণ ব্যতীত সব তথ্যকে সহজে বুঝা যায় না।
উপাত্তের শ্রেণিবদ্ধকরণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সংগৃহীত উপাত্ত সম্পর্কে গবেষককে সুনির্দিষ্ট ধারণা লাভে সহায়তা প্রদান করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভোট জরিপ কাজের খসড়া ফলাফল শ্রেণিবদ্ধকরণ করে উপস্থাপন করা হয় ।
২. সুবিন্যস্তকরণ : শ্রেণিবদ্ধকরণে তথ্যের বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিন্যস্ত করা হয়। কাজেই এটি তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম একটি পদ্ধতি ।
৩. তথ্য সংক্ষিপ্তকরণ : শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো তথ্যের সংক্ষিপ্তকরণ। তথ্য সাজানো ও নিয়মতান্ত্রিক করার জন্য গণসংখ্যা নিবেশনের পরেই এর অবস্থান।
৪. তথ্যের প্রাসঙ্গিকতা : শ্রেণিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক তথ্যকে বাদ দেওয়া হয় । কারণ শ্রেণিবদ্ধকরণ পদ্ধতিতে বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের তথ্য বিশেষ বিশেষ সারণিতে স্থান পায় এবং অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ পড়ে ।
৫. সমরূপতা ও অসমরূপতা নির্ণয় : শ্রেণিবদ্ধকরণ বিভিন্ন তথ্যের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে। যার ফলে এক সারির তথ্যের সাথে অন্য সারির তথ্যের তুলনা করা যায় এবং উভয়ের পার্থক্য নিরূপণ করা যায় ।
৬. গবেষণার পূর্বশর্ত : অনেক সময় শ্রেণিবদ্ধকরণ, তালিকাবদ্ধকরণ ও গণসংখ্যা নিবেশনের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় । তাই গণসংখ্যা নিবেশন করার আগে শ্রেণিবদ্ধকরণ করা আবশ্যক।
৭. বৈশিষ্ট্যগত সাদৃশ্যতা নিরূপণ : শ্রেণিবদ্ধকরণের ফলে একই ধরনের এবং একই বৈশিষ্ট্যের এককগুলো একত্রে পাওয়া যায়। ফলে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে তুলনা করা সহজ হয়।
৮. পদ্ধতিগত উপাদান : গণসংখ্যা নিবেশনের অধিকাংশ সময় উচ্চতর পরিসংখ্যান পদ্ধতির অন্যতম উপাদানস্বরূপ। অনেক সময় শ্রেণিবন্ধকৃত তথ্যাদি অধিক উপযোগী বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়।
৯. সুসম শ্রেণিবন্ধকরণ : তথ্য শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্যে তথ্যের শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হয়। শ্রেণিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অবিন্যস্ত ও বিরাট আকৃতির তথ্য সংক্ষিপ্ত করা সহজতর হয়।
১০. অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন : তথ্যের শ্রেণিবদ্ধকরণ তথ্যকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে সহায়তা করে। এর ফলে শ্রেণিবদ্ধকরণ পদ্ধতির অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে জানা যায়। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন তথ্যের মধ্যে তুলনা করার জন্য শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হয়। কেননা এ পদ্ধতি তথ্যকে অধিক তুলনাযোগ্য করে তোলে।
১১. তথ্যের অধিক ব্যবহারযোগ্যতা : তথ্যকে অধিকতর ব্যবহার্য উপযোগী করে তোলার জন্য শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হয়। কারণ এ পদ্ধতিতে তথ্য বিন্যস্ত বোধগম্য ও ব্যবহারযোগ্য হয় ।
১২. তথ্যের সহজ বিন্যাস : শ্রেণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে কম পরিশ্রম ও কম সময়ে তথ্য উপস্থাপন করা যায়। বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তথ্যকে বিন্যস্ত করা সহজসাধ্য ব্যাপার। তথ্যকে বিশ্লেষণের উপযোগী করে তোলার জন্য শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হয়। অশ্রেণিবদ্ধ তথ্য বোধগম্য নয় এবং সেগুলো বিশ্লেষণযোগ্য নয়।
১৩. তথ্যের রৈখিক উপস্থাপনে : তথ্যের রৈখিক উপস্থাপন করাও শ্রেণিব্যকরণের উদ্দেশ্য। যদি তথ্যসমূহের শ্রেণিবদ্ধ করা না হয়, তবে এ রৈখিক উপস্থাপন অসম্ভব। ফলে তথ্যসমূহ সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয় না।
১৪. পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহারযোগ্যতা : অনেক সময় পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী করার ক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। কেননা শ্রেণিবদ্ধকরণ দ্বারা সংগৃহীত তথ্যগুলোকে পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যায় অর্থাৎ উপাত্তগুলোকে পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণ ও সারণিবন্ধকরণের উপযোগী করে তোলা যায়।
১৫. যৌক্তিক উপস্থাপনে : তথ্যাদিকে যৌক্তিকভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা অনেক। কেননা শ্রেণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে তথ্যাদিকে যুক্তিসংগতভাবে তুলে ধরা যায়।
আর তথ্যাদিকে যুক্তিসংগতভাবে উপস্থাপন করে শ্রেণিবদ্ধকরণ তথ্যাদিকে পরস্পর তুলনা উপযোগী করে তোলে এবং পরবর্তী প্রক্রিয়া ও বিশ্লেষণের স্পষ্ট ভিত্তি স্থাপন করা যায়।।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তথ্য উপস্থাপনের প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। শ্রেণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে উপাত্তগুলোকে সুস্পষ্ট ধারণা এবং সহজভাবে উপস্থাপন করা যায়।
যার ফলে উপাত্তসমূহকে সঠিকভাবে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা সম্ভব হয়। পরিসংখ্যানে শ্রেণিবদ্ধকরণের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তাই বলা হয় পরিসংখ্যানে শ্রেণিবদ্ধকরণ নিছক কোনো পদ্ধতি নয়; বরং অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য বিষয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।