সাংস্কৃতিক আধিপত্য কাকে বলে
সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ কাকে বলে? অথবা, সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা দাও ।
সাংস্কৃতিক আধিপত্য কাকে বলে |
সাংস্কৃতিক আধিপত্য কাকে বলে
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় সাংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির সকল বিষয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান। বিশ্বের উন্নত ও প্রভাবশালী সাংস্কৃতির দেশগুলো অন্যান্য দেশের উপর অঘোষিত সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার করে চলছে।
এজন্য সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি প্রভাবই রয়েছে।
সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের কারণে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলো তাদের নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হাড়িয়ে ফেলছে। তাই সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদসংক্রান্ত আলোচনা একান্ত প্রয়োজন ।
সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ/সাম্রাজ্যবাদের পরিচয় : সমাজবিজ্ঞানে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ মূলত আধুনিকীকরণ, নির্ভরশীলতা, বিশ্বব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমানে জটিল ও আপেক্ষিক প্রত্যয় হিসাবে শব্দটি ব্যবহার হয়।
প্রাচ্যবাদের প্রবক্তা এডওয়ার্ড সাঈদ এ সম্পর্কে বলেন- "In out time, direct colonialism has largely imperialism, as we shall see, lingers where it has always been in a kind of general culture spheres as well as in specific political, ideological, economical and social practice."
সাধারণ কথায় সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ বলতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতিকে বুঝায়। অর্থাৎ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ফলে এক দেশের সংস্কৃতির উপর অন্যদেশের সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ও আগ্রাসনে পর্যবসিত হওয়াকে বুঝায় ।
Robert Chambers -এর মতে, “সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যাবাদ বলতে পশ্চিমা বা উন্নত দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশের উপর সাংস্কৃতিক যে আধিপত্য বিস্তার করে তাকে বুঝায়।”
বর্তমান বিশ্বে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ প্রবলভাবে টিকে আছে । কারণ সাংস্কৃতিক আগ্রসনের ফলে দুর্বল দেশগুলোর নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য খুব দ্রুত হাড়িয়ে যাচ্ছে এবং অনুপ্রবেশকৃত সংস্কৃতি মানুষের সকল ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করছে।
অলিভার বয়েড ব্যারেট -এর মতে, “সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ প্রত্যয়টি এমন সাম্রাজ্যবাদ নির্দেশ করে যা কোনো দেশের গণমাধ্যমের মালিকানা, কাঠামো, বিতরণ বা অন্য বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করে।”
অধ্যাপক সর্দার আমিনুল ইসলাম -এর মতে, “সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্য এমন এক ব্যবস্থা যা আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে তৃতীয় বিশ্ব পশ্চিমা সংস্কৃতি গ্রহণ করে এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হয়।”
মোটকথা সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ হলো— একটি চলমান ক্রিয়াশীল প্রক্রিয়া যার দ্বারা একদেশের সংস্কৃতি আর এক দেশে গ্রহণ হয় এবং এই গ্রহণের দ্বারা আগ্রাসনের শিকার হয় । সংস্কৃতির আগ্রাসনের ফলে মানুষের সকল ক্ষেত্রে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করে।।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সবলরা সবসময় দুর্বলদের উপর বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করে। তেমনিভাবে উন্নত দেশগুলো তাদের সংস্কৃতির আগ্রাসন চালিয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোর সাংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
তাই আমাদের এ বিষয়ে আরো বেশি সচেতন হয়ে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে। অপসংস্কৃতি ও বিদেশি সংস্কৃতি থেকে বিরত থেকে নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।