সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধাসমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধাসমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধাসমূহ আলোচনা কর।
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধাসমূহ আলোচনা কর |
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধাসমূহ আলোচনা কর
উত্তর ভূমিকা : সামাজিক গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় সাক্ষাৎকার পদ্ধতি বা Intervied Method তার মধ্যে অন্যতম প্রধান।
এ পদ্ধতিতে একজন গবেষক গবেষণাধীন বিষয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিকট থেকে সাক্ষাৎকার পদ্ধতির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহের মাধ্যমে গবেষণাকার্য সম্পন্ন করে থাকেন।
অন্যান্য গবেষণা পদ্ধতির ন্যায় এ পদ্ধতিরও কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে এ পদ্ধতির আবেদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধাসমূহ : তথ্যসংগ্রহের কৌশল হিসেবে সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে। এর ফলে সামাজিক গবেষণায় এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলো নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো :
১. নমনীয় পদ্ধতি : সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে ব্যাপক নমনীয়তা বিদ্যমান। এতে অনেকভাবে প্রশ্ন করা যায়, উত্তরদাতার ভিতরে প্রবেশ করা যায় এবং বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করে তথ্য বের করে আনা যায় । এভাবে সঠিক উত্তর নিশ্চিত করা সম্ভব হয় ।
২. জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয়ের ব্যবহার : এ পদ্ধতিতে জটিল ও দুর্বোধ্য প্রশ্ন ব্যবহার করা যায়। কেননা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী উত্তরদাতার কাছে জটিল প্রশ্নগুলোও সহজসরল ও বোধগম্যভাবে তুলে ধরেন এবং ব্যাখ্যা করেন। উপরন্তু, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী নানাভাবে জটিল প্রশ্নকে বোধগম্য করে তুলতে পারেন।
৩. তথ্যের সহজলভ্যতা : এ পদ্ধতিতে প্রচুর তথ্যসংগ্রহ করা যায় এবং নিরুত্তরজনিত সমস্যা অনেক কমানো যায় । কেননা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী অনিচ্ছুক উত্তরদাতার কাছ থেকেও উত্তর পেতে পারেন এবং দুর্বোধ্য প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে এগুলোর উত্তর সংগ্রহ করেন ।
৪. পর্যবেক্ষণ যোগ্যতা : সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে একদিকে যেমন উত্তরদাতার কাছ থেকে মৌখিক উত্তর পাওয়া যায় অন্যদিকে, তেমনি তার আচরণ পর্যবেক্ষণ করা যায়।
অনেক সময় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী উত্তরদাতার আচরণ, ভাবভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করে সঠিক উত্তর বের করে আনতে পারেন ।
৫. স্বতঃস্ফূর্ততা : সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে উত্তরদাতারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও আগ্রহ সহকারে সাক্ষাৎকার দান প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। এটি সম্ভব হয় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর র্যাপোর্ট প্রতিষ্ঠা এবং প্রেষণা প্রদানের ফলে।
৬. নিয়ন্ত্রণ : সাধারণত সাক্ষাৎকার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ অনুষ্ঠিত হয় না তথাপি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী বিভিন্নভাবে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ।
বিশেষ করে, উত্তরদাতার প্রতি আস্থা প্রতিষ্ঠা, গোপনীয়তা রক্ষা, সাক্ষাৎকারের জন্য নির্জন স্থান নির্বাচন, কাঠামোগত প্রশ্নপত্র অনুসরণ ইত্যাদি পদ্ধতিতে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
৭. তথ্যের তারতম্য : সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে সময়ের ব্যবধানে প্রদত্ত উত্তরের তারতম্য ঘটলে তা জানা যায় এবং তুলনা করা যায়।
কারণ সাক্ষাৎকারের সময়, তারিখ ও স্থান লিপিবদ্ধ থাকে। সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তিত তথ্যকে পূর্বের তথ্যের সাথে তুলনা করা যায় ।
৮. তথ্যের যথার্থতা : এ পদ্ধতিতে সংগ্রহীত তথ্যের সঠিকতা ও নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি থাকে। কেননা এ পদ্ধতিতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী উত্তরদাতার মনের গভীরে পৌঁছে তথ্যসংগ্রহ করেন এবং নানা ধরনের কৌশল প্রয়োগ করে প্রকৃত তথ্য বের করে আনেন।
৯. প্রয়োগ যোগ্যতা : সাক্ষাৎকার পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ যোগ্যতা রয়েছে। একজন শিশু, নিরক্ষর, অন্ধ, ব্যস্ত মানুষ সবার কাছ থেকে তথ্যসংগ্রহ করতে এ পদ্ধতি বেশ কার্যকর। অথচ অন্য পদ্ধতির মাধ্যমে এ ধরনের লোকের কাছ থেকে তথ্যসংগ্রহ করা সম্ভব নয়।
১০. প্রতারণার সুযোগ না থাকা : সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে উত্তরদাতার প্রতারণা করার সুযোগ থাকে না। অন্যের সাহায্য নিয়ে বা অন্যের দ্বারা প্রশ্নপত্র পূরণ করিয়ে উত্তর দেওয়া যায় না। কারণ এ পদ্ধতিতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর উপস্থিতিতে উত্তর দিতে হয়।
১১. সম্পর্কগত দিক : সাক্ষাৎকার পদ্ধতি যেহেতু সাক্ষাৎ গ্রহণকারী ও সাক্ষাৎকার দানকারীর মুখোমুখি সম্পর্ক, কাজেই এতে সব প্রশ্নের উত্তর প্রদান নিশ্চিত করা যায়। কোনো প্রশ্নের উত্তর অসম্পন্ন থাকলে তা পূরণ করা যায় এবং অস্পষ্ট উত্তর সুস্পষ্ট করা যায় ।
১২. প্রয়োগের ক্ষেত্র : উন্নয়নশীল সমাজে, বিশেষত যেখানে অশিক্ষিত উত্তরদাতার সংখ্যা বেশি সেখানে এ পদ্ধতি খুবই কার্যকর। এ দিক থেকে এ পদ্ধতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজ অধ্যয়নে এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
১৩. পারস্পরিক ভাব বিনিময় : সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে উত্তরদাতার মনের গভীরে প্রবেশ করা যায় বা অন্য পদ্ধতিতে সম্ভব নয় । কেননা এ পদ্ধতিতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ও উত্তরদাতার মধ্যে কার্যকর ভাবের বিনিময় হয় এবং উভয়েই পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসে। এ অবস্থা উত্তরদাতার মনথোলা উত্তর পেতে সহায়তা করে।
১৪. সহায়ক তথ্যের সমাহার : সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে দুজনের কথোপকথন কেবল গবেষণার মূল বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং এ ছাড়াও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এসব তথ্য গবেষণায় সহায়ক তথ্য হিসেবে কাজ করে এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে গবেষণা করার পথ প্রশস্ত করে।
১৫. চিন্তার উৎকর্ষতা : এ পদ্ধতিতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ও উত্তরদাতার মধ্যে পারস্পরিক ভাবের বিনিময় হয়। কোনো সমস্যার ব্যাপারে উভয়েই চিন্তাধারার বিনিময় করেন। এর ফলে অনুসন্ধানকারীর চিন্তাও পরিপুষ্টি লাভ করতে পারে।
১৬. সব শ্রেণির নিকট থেকে তথ্যসংগ্রহ : সমাজে কিছু কিছু ব্যক্তি আছে যারা তথ্য প্রদানে অনিচ্ছুক। সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে এ অনিচ্ছুকদের কাছ থেকেও তথ্যসংগ্রহ করা যায়। কারণ প্রয়োজনীয় র্যাপোর্ট প্রতিষ্ঠা করে এবং প্রেষণা প্রদান করে তাদের কাছ থেকে তথ্যসংগ্রহ করা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার গ্রহণ পদ্ধতি অন্যতম প্রধান পদ্ধতি হিসেবে গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছে।
যদিও এ পদ্ধতির কিছু অসুবিধা রয়েছে, তথাপি গবেষক বা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী যদি যথাযথ জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দক্ষতার অধিকারী হয়ে থাকে তাহলে এসব অসুবিধাকে অতিক্সম করে এ পদ্ধতির আলোকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধাসমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধাসমূহ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।