লোক প্রশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো লোক প্রশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের লোক প্রশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর।
লোক প্রশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর |
লোক প্রশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর
উত্তর ভূমিকা : অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের প্রাক্কালে এবং জাতিরাষ্ট্র (Nation State) এর বিকাশের পথে লোকপ্রশাসন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ক্রমবর্ধমান রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ৬০ এর দশকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হতে পৃথক হয়ে ‘লোকপ্রশাসন' নামে নতুন পাঠ্যবিষয় রূপায়িত হয়।
ব্যক্তিগত, সামাজিক অথবা জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লোকপ্রশাসনের প্রভাব অত্যন্ত সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি নীতি বাস্তবায়ন এবং প্রশাসনিক সংস্থাসমূহের সমস্যাবলিই এর আলোচ্য বিষয় ।
• লোকপ্রশাসনের পরিধি : লোকপ্রশাসনের পরিধি নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. রাষ্ট্রীয় সংগঠনের আলোচনা : রাষ্ট্রের যাবতীয় সাংগঠনিক বিষয়াবলি লোকপ্রশাসনের অন্তর্গত। একটি রাষ্ট্রের ভিতরের যাবতীয় বিষয়াবলি যেমন— সরকার ব্যবস্থা, সাংবিধানিক কাঠামো, শাসনসংক্রান্ত কার্যাবলি, সরকারের বিভাগগুলোর মধ্যে সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়াবলি লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু।
২. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যালোচনা : রাজনীতি ও প্রশাসনের পর্যালোচনা লোকপ্রশাসনের আওতাভুক্ত। মার্শাল ডিমোক বলেন, "An understanding of Politics is the key to an understanding of Public administration. "
অর্থাৎ, রাজনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লোকপ্রশাসনকে বুঝার একমাত্র চাবি। ক্ষমতাই রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। একজন প্রশাসক তার কর্মী হতে শুরু করে সংগঠনের সব পর্যায়ে কর্মী হতে সমর্থন লাভ করেন।
৩. অর্থ প্রশাসন : সরকারি প্রশাসনের যেকোনো কাজ অর্থ ব্যতীত সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই অধ্যাপক ডিমোক ও ডিমোক বলেছেন, “বায়ুর জন্য যেমন অক্সিজেন প্রয়োজন ঠিক তেমনই প্রশাসনের জন্য প্রয়োজন অর্থ" । আত্মা ব্যতীত যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না তেমনি অর্থ ব্যতীত প্রশাসনিক সংগঠন টিকে থাকতে পারে না।
৪. কর ধার্য ও বাজেট প্রণয়ন : কর প্রশাসন, বাজেট প্রশাসন এবং নিরীক্ষা ও হিসাব পদ্ধতি অর্থ প্রশাসনের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট তৈরি করে আর মন্ত্রিপরিষদ সে বাজেট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা, তদারক এবং তাতে অনুমোদন দান করে । তারপর আইনসভায় উপস্থাপন করা হয় এবং পরিশেষে এর ওপর বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
৫. সরকারি কর্মচারী প্রশাসন : লোকপ্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হলো এটি সরকারি কর্মচারী প্রশাসন। একটি সুষ্ঠু কর্মচারী প্রশাসনই পারে সমগ্র প্রশাসনের দায়িত্ব নিতে।
সরকারি কর্মচারী প্রশাসন নিয়োগ পদ্ধতি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। নিয়োগকৃত কর্মচারীদের সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, পদোন্নতি, বেতন কাঠামো ইত্যাদি নিশ্চিত করাও সরকারি কর্মচারী প্রশাসনের দায়িত্ব।
৬. প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা : প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও লোকপ্রশাসন আলোচনা করে। পদ্ধতিগতভাবে কোনো কাজ সম্পন্ন করার অর্থই ব্যবস্থাপনা। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়সাধন করাই ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য।
৭. পরিকল্পনা : পরিকল্পনা ও প্রশাসনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। সরকারি প্রশাসক ও কর্মকর্তাগণই পরিকল্পনা তৈরি ও কার্যকর করে থাকেন। পরিকল্পনার মূল অর্থ হলো, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জনগণের বিকল্প চাহিদা এবং আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য সীমিত সম্পদ নিয়োজিত করা।
৮. প্রশাসনিক আইন : এটিও লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তুর অন্তর্গত। প্রশাসনিক সংস্থার কাজ পরিচালনা করার জন্য কোনো প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যেসব আইন ও নিয়মাবলি ঘোষণা ও কার্যকর করে থাকে তাকেই প্রশাসনিক আইন বলা হয়।।
৯. উন্নয়ন প্রশাসন : উন্নয়ন প্রশাসন লোকপ্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু। কারণ গতানুগতিক প্রশাসন দেশের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না। লোকপ্রশাসনকে দক্ষতার সাথে এগিয়ে নেওয়ার প্রভায়ে উন্নয়ন প্রশাসনকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে, লোকপ্রশাসন সরকারের সব ধরনের কার্যাবলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এছাড়াও এটি সরকারি শিল্পকারখানার ব্যবস্থাপনা এবং বেসরকারি শিল্পের পরিচালনায় বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত তিনটি দৃষ্টিকোণ হতে বিবেচনা করা যায়। যথা:
ক. সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : লুম্বার গুলিক লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু নির্ধারণে এ পন্থা উল্লেখ করেন। তার মতে, লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু POSDCORB এ অক্ষরগুলোর মধ্যে নিহিত আছে। এ অক্ষরগুলোর ব্যাখ্যা নিম্নরূপ :
P – Planning (পরিকল্পনা) : কোন পদ্ধতিতে, কী কাজ এবং কী উদ্দেশ্যে কাজটি করা হবে তার একটি রূপরেখাই হচ্ছে পরিকল্পনা।
0 - Organization (সংগঠন) : প্রশাসনিক সংগঠনের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগ, উপবিভাগ, সংস্থা, দপ্তর, অধিদপ্তর প্রভৃতিতে বিভক্ত করা হয় এবং এগুলোর বৈধ রূপ দেওয়ার কাজই হলো সংগঠন।
S - Staffing (কর্মীবর্গ) : Staffing বলতে কর্মী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, বেতন, পদোন্নতি, অবসর, পেনশন প্রভৃতি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
D – Directing (নির্দেশনা) : সংগঠনের কার্যক্রমকে সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সঠিক নির্দেশনা, প্রদান গুরুত্বপূর্ণ। নির্দেশনা বলতে বুঝায়, "Making decisions and issasting order and divisions."
C - Co-ordinating (সমন্বয়) : সমন্বয় বলতে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কাজের বিভিন্ন অংশের একত্রিকরণকে বুঝায়।
R = Reporting (প্রতিবেদন) : প্রতিবেদন বলতে বুঝায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর সংগঠনের প্রশাসনিক কার্যকলাপ কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করা ।
B - Budgeting (অর্থবরাদ্দ ) : প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন কোন খাতে অর্থ আসবে এবং কোন কোন খাতে তা ব্যয় হবে সেটির একটি নির্দিষ্ট প্রতিবেদন তৈরি করা।
খ. বৃহত্তর অর্থে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু: প্রফেসর উড্রো উইলসন ও এল. ডি. হোয়াইট এ তত্ত্বের প্রবক্তা। তাদের মতে,
১. লোকপ্রশাসন সরকারের তিনটি বিভাগ যথা : আইন, শাসন ও বিচার বিভাগকে সংযুক্ত করে এবং এ তিনটি বিভাগের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে।
২. লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু অনেকাংশে সহযোগী গ্রুপের মতো। এটি প্রথম শ্রেণি হতে প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়ে গঠিত।
গ. নিয়ন্ত্রণের দিক হতে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : নিয়ন্ত্রণের দিক হতে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন Walker, তিনি লোকপ্রশাসনকে দুই ভাগে বিভক্ত করেন। যথা :
১. তত্ত্বগত প্রশাসন : তত্ত্বগত প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :
i. প্রশাসনিক সংগঠনের গঠন কাঠামো, কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয় লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু।
ii. প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্যাবিনেট ও সংসদীয় নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সমস্যাবলি।
iii. প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল ।
iv. বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ।
v. সরকারি নীতিমালা নির্ধারণ, কর্মসূচি ইত্যাদি বিষয়াদি ।
vi. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগসংক্রান্ত বিষয় ।
২. ব্যবহারিক প্রশাসন : ব্যবহারিক প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :
i. রাজনৈতিক কার্যাবলি রাষ্ট্রের আইন, শাসন বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক, মন্ত্রিসভার প্রশাসনিক কার্যাবলি ইত্যাদি।
ii. আইনগত কার্যাবলি : আইনবিভাগ সংসদীয় পদ্ধতিতে আইন প্রণয়ন করবে যা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবায়িত হবে।
iii. প্রতিরক্ষা : সামরিক প্রশাসন সম্পর্কিত কার্যাবলি। iv. শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যাবলি : শিক্ষার যাবতীয় উন্নয়ন ও বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসংক্রান্ত বিষয়াবলি
v. সামাজিক কল্যাণসংক্রান্ত কার্যাবলি : সামাজিক বিষয়াবলি যেমন --- খাদ্য, বাসস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি কার্যক্রম।
vi. অর্থনৈতিক প্রশাসন : উৎপাদন এবং কৃষি ও শিল্পের প্রতি উৎসাহিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যাবলি।
vii. বৈদেশিক প্রশাসন: বৈদেশিক নীতি, বাণিজ্য, কূটনীতি, আন্তর্জাতিক সহায়তা সবকিছু এর অন্তর্ভুক্ত।
viii. স্থানীয় প্রশাসন : স্থানীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাসংক্রান্ত কার্যাবলি লোকপ্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু ব্যাপক এবং বিস্তৃত। তবে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু নির্ধারণে তাত্ত্বিকদের বক্তব্যের পাশাপাশি স্বীয় দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশকে বিবেচনায় আনতে হবে।
সুতরাং লোকপ্রশাসনের পরিধি রাষ্ট্রীয় কার্যাবলির পরিধি থেকে কোনো অংশে কম না। আধুনিক কল্যাণকামী রাষ্ট্রে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে লোকপ্রশাসন জনগণকে বিভিন্ন কল্যাণমূলক ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক সেবা প্রদান করছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ লোক প্রশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম লোক প্রশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।