লোক প্রশাসন অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো লোক প্রশাসন অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের লোক প্রশাসন অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
লোক প্রশাসন অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর |
লোক প্রশাসন অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
- অথবা, লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
- অথবা, লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
উত্তর ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রীয় কার্যের প্রসারতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেই সাথে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রশাসনিক কার্যকলাপ। আধুনিক রাষ্ট্র আর পুলিশি রাষ্ট্রের গণ্ডিতে না থেকে কল্যাণকামী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।
জনগণের কল্যাণসাধন করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় কার্যাবলির প্রসারতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান কাজের দায়িত্ব এসে পড়ছে লোকপ্রশাসনের ওপর । কাজেই লোকপ্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উড্রো উইলসন লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকারের কার্যাবলি এবং সমাজের জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।” নিম্নে লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো :
১. জনগণের স্বার্থরক্ষা : লোকপ্রশাসনের প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে জনগণের স্বার্থরক্ষা করা এবং জনগণের কাছে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া। এক্ষেত্রে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. সমাজ স্থিতিশীলতার প্রতীক : লোকপ্রশাসন হলো সামাজিক স্থিতিশীলতার অন্যতম প্রতীক। সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু প্রশাসনের পরিবর্তন খুব কমই ঘটে। প্রশাসনের সাংবিধানিক ভিত্তি রয়েছে যার ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষিত হয়।
৩. জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের জন্ম : জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৃদ্ধির ফলে লোকপ্রশাসনের কার্যাবলির পরিধি বেড়েই যাচ্ছে। রাষ্ট্রের এখন দায়িত্ব সকল শ্রেণির মানুষকেই সেবাদান করা। বর্তমানে লোকপ্রশাসন বেসরকারি অর্থনৈতিক শিল্পকেও পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করছে।
৪. প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার : লোকপ্রশাসনের অন্যতম কাজ হলো দেশের প্রাকৃতিক ও জনশক্তির পূর্ণ এবং সুদক্ষ ব্যবহার বণ্টনের দ্বারা জন্যকল্যাণসাধন করা। এদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অনেক জটিল হলেও লোকপ্রশাসন মানবতার কল্যাণে তা অনবরত কাজ করে চলেছে।
৫. সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশ : সমাজের কৃষ্টি সংরক্ষণ ও বিকাশের মাধ্যম হিসেবেও লোকপ্রশাসন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। লোকপ্রশাসন শুধুমাত্র সামাজিক কৃষ্টিই সংরক্ষণ করে না; বরং এটি সামাজিক পরিবর্তন ও প্রগতির পথ প্রশস্ত করে।
৬. নাগরিক চেতনার বিকাশ : লোকপ্রশাসন শাস্ত্র পাঠের ফলে একদিকে যুবসমাজের মধ্যে নাগরিক চেতনার বিকাশ ঘটবে, ঠিক তেমনই অন্যদিকে এর ফলে দেশের উন্নয়ন ও অন্যান্য কর্মসূচিতে যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করা প্রশাসকের পক্ষে সহজতর ও সুবিধাজনক হবে।
৭. ভবিষ্যৎ প্রশাসক তৈরি : লোকপ্রশাসন বিষয়ে অধ্যয়ন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীগণকে ভবিষ্যতে সরকারি প্রশাসনের জন্য তৈরি করে তুলবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের সাথে লোকপ্রশাসনের অধ্যয়ন রাষ্ট্রযন্ত্রের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ও ধারণা প্রদান করে ।
৮. আধুনিক প্রশাসনিক সমস্যার গবেষণা : লোকপ্রশাসন অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আধুনিক সরকারের অনেক প্রশাসনিক সমস্যা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষণা করা যায়। এর ফলে বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি নিরসনের পদ্ধতি ও কলাকৌশল উদঘাটন করা যায় ।
৯. প্রশাসকের কার্যাবলির ধারণা : লোকপ্রশাসন পাঠের মাধ্যমে বুঝা যায়, একজন প্রশাসক কোন কোন কার্য সম্পাদন করে থাকেন। রাষ্ট্রীয় সংগঠনের কাঠামো, কার্যাবলি, প্রকৃতি, নিয়োগ, জনগণের সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় লোকপ্রশাসন পাঠের মাধ্যমে।
১০. জাতীয় চরিত্র সম্পর্কে ধারণা : একটি জাতির চরিত্র জানতে হলে আমাদের প্রথমেই সে জাতির প্রশাসনিক কাঠামোতে নজর দিতে হবে। কেননা প্রশাসন একটি জাতির চরিত্র ও কার্যাবলি নির্ধারণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র এ ধারণা আমরা পাই উক্ত দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর কার্যাবলি বিবেচনা করেই।
১১. আমলাতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা : যেকোনো দেশেই আমলাতন্ত্র প্রশাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। আমলাতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে লোকপ্রশাসন পাঠ করা জরুরি ।
১২. প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি : একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন সেই দেশের প্রশাসনের হাতে ন্যস্ত । কেবলমাত্র দক্ষ প্রশাসনই পারে জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে। তাই প্রশাসককে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে।
১৩. প্রশাসনিক ধারণা প্রদান : প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত হতে হলে সেসব কর্মচারীদের প্রথমে প্রশাসনিক ধারণা লাভ করতে হবে । এক্ষেত্রে লোকপ্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
১৪. নাগরিক জীবনের নিয়ন্ত্রণ : আধুনিক বিশ্ব প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নগরায়ণ প্রক্রিয়া দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। তাই নাগরিক জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানের বিষয়টি নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে।
১৫. বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন : বিদ্যুৎ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে। টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, টাইপরাইটার, ক্যালকুলেটর, কম্পিউটার, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট ইত্যাদির উদ্ভব অফিস ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে। তাই এক্ষেত্রে লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, লোকপ্রশাসন কেবল পরিচালকই নয়; বরং সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর সফলতা মানেই রাষ্ট্রের সফলতা। বস্তুত মানবিক জীবনের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।