লোক প্রশাসন অধ্যয়নের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা করো
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো লোক প্রশাসন অধ্যয়নের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা করো জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের লোকপ্রশাসন অধ্যয়ন পদ্ধতিগুলোর বিবরণ দাও।
লোক প্রশাসন অধ্যয়নের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা করো |
লোক প্রশাসন অধ্যয়নের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা করো
- অথবা, লোকপ্রশাসন অধ্যয়ন পদ্ধতিগুলোর বিবরণ দাও ।
- অথবা, লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের পদ্ধতিসমূহ লেখ।
উত্তর ভূমিকা : অধ্যয়নশাস্ত্র হিসেবে লোকপ্রশাসন একটি নতুন বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের ব্যবহারিক প্রয়োগ সেই আদিম যুগ থেকেই চলে আসছে। সামাজিক বিজ্ঞানে প্রতিটি শাখা অধ্যয়নের নিজস্ব কিছু পদ্ধতি রয়েছে।
এসময় পরিবর্তনের সাথে সাথে অধ্যয়ন পদ্ধতিরও পরিবর্তন ঘটেছে। লোকপ্রশাসনও একটি সামাজিক বিজ্ঞান তাই এর পাঠেও বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় ।
লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের পদ্ধতি প্রশাসনিক সংগঠনের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য, কাঠামো এবং স্বরূপ সঠিকভাবে অনুধাবন করার জন্য লোকপ্রশাসন পাঠের বিভিন্ন পদ্ধতির জন্ম হয়েছে।
লোকপ্রশাসন আলোচনায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন গবেষক এর অধ্যয়ন পদ্ধতিকে ২ ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
ক. সনাতন পদ্ধতি ও
খ. আধুনিক পদ্ধতি ।
ক. সনাতন পদ্ধতি : সনাতন পদ্ধতির প্রধান দৃষ্টিভঙ্গি হলো আদর্শমুখী। অতি প্রাচীন এ পদ্ধতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত অধিক জনপ্রিয় ছিল। কিছু মৌলিক ও চিরায়িত ধারণা যেমন— ন্যায়, সামা, স্বাধীনতা, আনুগত্য ইত্যাদি বিষয়গুলো সনাতন পদ্ধতির প্রধান আলোচ্য বিষয় নিয়ে এর অন্তর্গত বিভিন্ন পদ্ধতি তুলে ধরা হলো :
১. ঐতিহাসিক পদ্ধতি : লোকপ্রশাসন অধ্যয়নে ঐতিহাসিক পদ্ধতি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এ পদ্ধতির মাধ্যমেই প্রাচীন কালের প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি উপলব্ধি করা যায়।
এ প্রতিষ্ঠানগুলো অতীতে কীভাবে জন্মলাভ করেছে, কী বিশেষ পরিবেশে তারা গড়ে উঠেছে এবং কী বিশেষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থায় তাদের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা জানার জন্যই ঐতিহাসিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
সাম্প্রতিককালে ইউরোপ ও আমেরিকার প্রখ্যাত প্রশাসকগণ প্রশাসন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনাবলির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
২. পরীক্ষামূলক পদ্ধতি : লোকপ্রশাসন অধ্যয়নে পরীক্ষামূলক পদ্ধতি বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাকে এক একটি পরীক্ষাগার বলে গণ্য করা যেতে পারে।
এসব পরীক্ষাগারে বিভিন্ন নীতিমালা প্রবর্তন করা হয়। সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবনযাপনের জন্য এ নীতিমালা পরীক্ষামূলকভাবে গৃহীত হয়ে থাকে ।
৩. প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি : লোকপ্রশাসন পঠনের এ পদ্ধতিটি রাজনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে। তবে এ পদ্ধতির প্রবক্তাগণ নিরপেক্ষ থেকে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের আশা আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপদানের পক্ষপাতী।
প্রশাসনের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। এল. ডি হোয়াইট এবং লুথার গুলিক এ পদ্ধতির প্রধান প্রবক্তা ।
৪. দার্শনিক পদ্ধতি : সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্গত সব বিষয়ের পাঠের ক্ষেত্রে দার্শনিক পদ্ধতি অত্যন্ত প্রাচীন পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মূল কথা হলো প্রশাসনিক কার্যকলাপের অন্তর্ভুক্ত সব নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা করা।
প্লেটোর “রিপাবলিক’, হবসের ‘লেভিয়াথান', লকের 'টু ট্রিটি অন সিভিল গভর্নমেন্ট' গ্রন্থে দার্শনিক পদ্ধতির সন্ধান পাওয়া যায়।
৫. কাঠামোগত পদ্ধতি : প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কাঠামোগত পদ্ধতির প্রচলন ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। মূলত এ পদ্ধতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সরকারি সংস্থার প্রশাসনিক কাঠামো বর্ণনা করা।
লুথার গুলিকের POSDCORB মতবাদের ওপর এ পদ্ধতিটি অধিক গুরুত্বারোপ করে থাকে। এ পদ্ধতিটি প্রশাসনিক সংগঠন, কর্মচারী ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক প্রশাসন নিয়ে আলোচনা করে।
৬. আইনগত পদ্ধতি : লোকপ্রশাসনকে প্রশাসনিক আইনের অংশ বলে মনে করা হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইউরোপের দেশগুলোতে লোকপ্রশাসনকে প্রশাসনিক সরকারি আইনের শাখা হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
প্রতিটি প্রশাসনিক সংগঠন আইন অনুযায়ী প্রশাসনের কর্মপ্রক্রিয়াগুলো সম্পাদন করলেই প্রশাসন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে।
৭. অর্থনৈতিক পদ্ধতি : একটি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি এবং উন্নয়ন অনেকাংশেই সে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর নির্ভরশীল।
দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির দিকদর্শন অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপরই নির্ভরশীল। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রশাসনিক নীতিমালা প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা হয় ।
৮. তুলনামূলক পদ্ধতি : তুলনামূলক পদ্ধতি দ্বারা বিভিন্ন দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য সম্পর্কে বর্ণনা ও গবেষণামূলক আলোচনা করা হয়। এরিস্টটল তার "The Politics' নামক গ্রন্থে এ মতবাদটি প্রয়োগ করেন ।
খ. আধুনিক পদ্ধতি : লোকপ্রশাসনের আধুনিক পদ্ধতিগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. আচরণগত পদ্ধতি : সাম্প্রতিক সময়ে লোকপ্রশাসন অধ্যয়নে আচরণগত পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একে সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি বলেও অভিহিত করা হয়।
সংগঠনের ব্যক্তির আচরণ পর্যবেক্ষণ করে কতকগুলো সাধারণ সূত্রে উপনীত হওয়া এ পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য। এ পদ্ধতির অন্যতম প্রবক্তা হলেন হার্বার্ট এ. সাইমন (Herbert A. Simon) |
২. মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি : মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ হতে লোকপ্রশাসন অধ্যয়ন করে থাকে। সংগঠনে মানব আচরণ কেমন হবে তা এ পদ্ধতির আলোচ্য বিষয়।
মূলত এ দৃষ্টিকোণ থেকে আমলাদের ধ্যানধারণা, অনুভূতি এবং প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সম্পর্ক আলোচনা করা হয়।
৩. গোষ্ঠীগত পদ্ধতি : লোকপ্রশাসন অধ্যয়নে গোষ্ঠীগত পদ্ধতি বর্তমানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মূলত এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রশাসনিক নীতি প্রণয়নে সংগঠিত গোষ্ঠীগত ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
৪. ঘটনাসংক্রান্ত পদ্ধতি : লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন সংযোজন যা মূলত আমেরিকান ধারণা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ঘটনা একটি নির্দিষ্ট সমস্যা
যেটি সংগঠিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ইউনিটকে সংশোধন করতে হয়। ঘটনাসংক্রান্ত দৃষ্টিকোণের সফলতা নির্ভর করে সংগঠনে কর্মরত প্রশাসকদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের ওপর।
৫. সংখ্যাত্মক পদ্ধতি : সংখ্যাত্মক পদ্ধতি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে বেশি প্রয়োগ হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই এ দৃষ্টিকোণের প্রয়োগ লোকপ্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর প্রয়োগ অত্যন্ত কার্যকরী।
৬. ক্ষমতা বিশ্লেষণ পদ্ধতি : প্রশাসনিক কার্যক্রমে ক্ষমতার প্রয়োজন রয়েছে। ক্ষমতা সুদৃঢ়, ক্ষমতার বৃদ্ধি এবং ক্ষমতার সংরক্ষণসংক্রান্ত বিষয় এ পদ্ধতির মাধ্যমে আলোচিত হয়।
৭. অশান্ত পদ্ধতি : মানবসমাজ নিয়ত পরিবর্তনশীল। এ পরিবর্তন ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে। অশান্ত ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ নতুন আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয়।
এরকম পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক সংগঠনের আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন পড়ে। আর এমন পরিস্থিতিতে লোকপ্রশাসন আলোচনায় অশান্ত পদ্ধতি সর্বাপেক্ষা কার্যকর ভূমিকা পালন করে ।
৮. ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি : সাম্প্রতিক সময়ে লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল পদ্ধতির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরূপ পদ্ধতি মূলত উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দেওয়া হয়। যেমন—— বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (BPATC), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানব গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের নানাবিধ পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলোর আলোচনার মাধ্যমেই লোকপ্রশাসনের পরিধি বিস্তার ঘটেছে।
তবে একথা নিশ্চিত যে লোকপ্রশাসন অধ্যয়নে কোনো একক পদ্ধতি প্রয়োগযোগ্য নয়; বরং এদের সামগ্রিক ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বর্তমানে লোকপ্রশাসনকে অধিকতর সমৃদ্ধশীল করা যেতে পারে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ লোক প্রশাসন অধ্যয়নের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা করো
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের পদ্ধতিসমূহ লেখ। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।