গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো বর্ণনা কর।
গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোচনা কর |
গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোচনা কর
- অথবা, গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো বর্ণনা কর ।
- অথবা, গবেষণা প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে বাধাসমূহ আলোচনা কর ।
উত্তর ভূমিকা : গবেষণা প্রতিবেদন গবেষণার একটি প্রকৃত দলিল। সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সামনে রেখে সরেজমিনে অনুসন্ধানের পর সংগৃহীত তথ্যাবলির সংক্ষিপ্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উপস্থাপন হলো প্রতিবেদন।
বস্তুত গবেষক গবেষণার উদ্দেশ্যে প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত যে কাজগুলো করে থাকেন, তার সকল কার্যাবলি সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করাই হলো গবেষণা প্রতিবেদন । একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে গবেষকের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । তাই প্রতিবেদন তৈরির সময় গবেষককে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হয় ।
গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে প্রতিবন্ধকতাসমূহ : একজন গবেষক গবেষণার প্রতিবেদন তৈরির সময় কতিপয় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। নিম্নে এসব প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. তথ্যের অপূর্ণাঙ্গতা : গবেষণার মূল উপজীব্য হলো তথ্য উপাত্ত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গবেষণা তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তথ্য সংগ্রহের নানাবিধ কৌশল রয়েছে।
বরাদ্দকৃত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গবেষক নিজে অথবা সহকর্মীদের দ্বারা তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তথ্য সংগ্রহের পর সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করা হয় ।
প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণ শেষে দেখা যায় যে, অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতে প্রতিবেদন তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে ।
২. তথ্যের বিন্যাস ও উপস্থাপনের সমস্যা : মাঠ পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্যসমূহ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। গবেষণার উপযোগী করে তোলার জন্য তথ্যসমূহকে যথাযথ সম্পাদনের মাধ্যমে বিন্যস্ত করে উপস্থাপন করা হয় ।
এসব তথ্য সারণিবদ্ধ করে সেগুলো বিভিন্ন সারণি, রেখাচিত্র, দণ্ডচিত্র প্রভৃতির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। এসব কাজ যথাযথভাবে করা সম্ভব না হলে গবেষক প্রতিবেদন তৈরির সময় সমস্যার সম্মুখীন হন।
৩. বইপুস্তকের অপর্যাপ্ততা : গবেষণা প্রতিবেদন তৈরির সময় আনুষঙ্গিক বইপুস্তকের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি তেমন মজবুত নয়। গবেষণা সম্পর্কিত বইপুস্তকের স্বল্পতা রয়েছে।
আবার যেসব বইপুস্তক রয়েছে তার অধিকাংশই বিদেশি বলে পরিবেশগত বৈচিত্রতার কারণে ঐ সব বইপুস্তক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় বইপুস্তকের অভাবে যথাযথ প্রতিবেদন তৈরি করা কষ্ঠসাধ্য হয়ে পড়ে।
৪. পরিবর্তনশীল : সামাজিক জরিপে অনেকগুলো বিষয় অতিদ্রুত পরিবর্তিত হয়। এসব বিষয়ে গবেষণা করলে সংগৃহীত তথ্য অল্প সময়ের ব্যবধানে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, আমরা বাংলাদেশের রাজনীতির কথা উল্লেখ করতে পারি; বাংলাদেশের রাজনীতির কোনো স্থায়ী ভিত্তি নেই।
জনমত জরিপের ফলাফল অল্প সময়ের ব্যবধানে বদলে যেতে পারে। কাজেই দ্রুত পরিবর্তনশীল সমস্যা নিয়ে গবেষণা করলে প্রতিবেদন তৈরি কষ্টসাধ্য হয়ে যায় ।
৫. তথ্যের আধিক্য : তথ্যের অপূর্ণাঙ্গতা যেমন প্রতিবেদন তৈরিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে তেমনি আবার অধিক তথ্যও এক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে। বর্তমানে গবেষণার সুনির্দিষ্ট প্রশ্নপত্রের আলোকে সরাসরি প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
প্রথমে গবেষণা চালিয়ে গ্রামে পরিবারের সংখ্যা, লোকসংখ্যা, বয়স, শিক্ষা, লিঙ্গ, আর পেশা, বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
৬. গবেষকের অভাব : একটি গবেষণার নানা অংশ হয়েছে, যেগুলোর প্রত্যেকটি সমান গুরুত্ব বহন করে। ফলে প্রতিটি অংশের সার্থক কার্যকারণের মধ্য দিয়ে গবেষণা সফলকাম হয়। নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর দক্ষ গবেষকের অভাব গবেষণার কাঙ্খিত ফললাভে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
৭. সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের সমস্যা : সংগৃহীত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও সঠিকতা না থাকলে প্রতিবেদন তৈরি করা কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ভিত্তিহীন তথ্যের দ্বারা প্রতিবেদন তৈরি করা হলে প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাওয়ার আশংকা থাকে।
এমনকি পুরো গবেষণার মূল উদ্দেশ্যও ব্যাহত হতে পারে। সুতরাং প্রতিবেদন তৈরির পূর্বে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও সঠিকতা সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন।
৮. সরঞ্জামের অভাব : আধুনিক বিশ্বে গবেষণা প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। একটি গবেষণা সফলভাবে সম্পন্ন করতে হলে দক্ষ জনবল যেমন প্রয়োজন তৈমনি নানা ধরনের যান্ত্রিক উপকরণও প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশের গবেষকগণ গবেষণা কার্যে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য উপকরণ পান না। ফলে তথ্য সংগ্রহ, তথ্য, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিশ্লেষণ, উপস্থাপন প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো যথার্থভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। ফলে প্রতিবেদন তৈরিতেও নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় ।
৯. নমুনায়ন ও সমগ্রক নির্ণয়ের সমস্যা : সামাজিক গবেষণায় নমুনায়ন ও সমগ্রক দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষক প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষ শ্রেণিকে বাছাই করেন, যারা এ গবেষণা সমস্যার প্রতিনিধিত্ব করে।
তাদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অর্থাৎ সমগ্রক থেকে নমুনায়ন করে তথ্যের ভান্ডার পূর্ণ করা হয়। কিন্তু সমগ্রক নির্ণয় ও পরবর্তীতে নমুনায়ন কাজ যথাযথভাবে না হলে প্রতিবেদন তৈরির সময় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
১০. প্রশিক্ষণের অভাব : সাম্প্রতিকালে সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যান ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে গেছে। কিন্তু সামাজিক গবেষণার অধিকাংশ তথ্য গুণাত্মক যেগুলো সংখ্যায় উপস্থাপন করা যায় না। এসব তথ্যকে বর্তমানে নানা কৌশল ব্যবহার করে সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়।
আবার মাঠ পর্যায় হতে তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গবেষণা কাজে নিয়োজিত জনবলের যথাযথ প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই, পরিবেশ থাকে না। এক্ষেত্রে প্রতিবেদন তৈরিতে এক ধরনের কৃত্রিমতা চলে আসে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণায় প্রতিবেদন তৈরি একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। যথাযথ প্রতিবেদন তৈরির মধ্য দিয়ে একটি গবেষণা কাজের পরিসমাপ্তি টানা হয়।
গবেষক গবেষণার মাধ্যমে যে জ্ঞান লাভ করেন বা সামাজিক সমস্যা সমাধানের যে উপায় খুঁজে পান তা অপরকে জানানোর জন্য গবেষণা প্রতিবেদন লেখা হয়।
এভাবে যতো গবেষণা হয় তত গবেষণা প্রতিবেদনের আবির্ভাব ঘটে। গবেষণা ও গবেষণার প্রতিবেদন জ্ঞানের রাজ্যকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে বাধাসমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।