গবেষণা নকশার ধাপসমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো গবেষণা নকশার ধাপসমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের গবেষণা নকশার ধাপসমূহ আলোচনা কর ।
গবেষণা নকশার ধাপসমূহ আলোচনা কর |
গবেষণা নকশার ধাপসমূহ আলোচনা কর
উত্তর ভূমিকা : সমাজ গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য দলিল হলো গবেষণা নকশা। বিজ্ঞানসম্মতভাবে জ্ঞান অন্বেষণ অথবা অনুভূতি সমাধানকল্পে গবেষককে অনুসন্ধান কাজের
একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করতে হয় এবং সে অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করা অনেকটা সহজ হয়। একটি গবেষণার সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা নকশার ওপর।
গবেষণা নকশার ধাপসমূহ : গবেষণা নকশা বিভিন্ন ধাপে প্রণীত হয়। নিম্নে গবেষণা নকশার ধাপসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. গবেষণার সমস্যা সম্পর্কে ধারণা : গবেষণা নকশার প্রাথমিক কাজ হলো গবেষণার সমস্যা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত অথচ জ্ঞানগর্ভ ধারণা প্রদান করা। এ বিবরণে আরও থাকে গবেষণার বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ । সমস্যা সমাধানে কী কী পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্ছনীয় তাও এ বিবরণিতে উল্লেখ করা হয়।
২. তথ্যের উৎস : গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্যের প্রয়োজন হয়। গবেষকরা প্রয়োজনীয় তথ্য অনুসন্ধানে কোন কোন উৎস হতে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তা গবেষণা নকশার এ অংশে তুলে ধরেন। তথ্য সাধারণত দুই ভাগে সংগ্রহ করা হয়।
প্রথমত, মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে নতুনভাবে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। দ্বিতীয়ত, বইপত্র, গবেষণাপত্র, দলিল দস্তাবেজ, সংবিধান প্রভৃতি হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে গবেষণার জন্য যে উৎস হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তা গবেষণা নকশায় উল্লেখ করতে হয়।
৩. তথ্য বিশ্ব বা সমগ্রক: যে তথ্য সমগ্রক বা বিশ্ব থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তা এ অংশে সঠিকভাবে বর্ণনা করা হয়। সম্পূর্ণ সমগ্রক থেকে তথ্য নেয়া হবে নাকি নমুনা বাছাই করে তা থেকে তথ্য নেয়া হবে তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে হবে। নমুনা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হলে নমুনায়ন পদ্ধতির বর্ণনা দিতে হবে।
৪. তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণ : গবেষণার প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে তা বিশ্লেষণ করা অতীব জরুরি। এক্ষেত্রে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পন্ন করতে হয়।
যেমন— তথ্য যদি প্রশ্নমালা বা সাক্ষাৎকারমালা ব্যবহার করে সংগ্রহ করা হয় তাহলে এগুলো সম্পাদনা, সারণিবদ্ধকরণ, পরিকল্পনা তৈরি, সঠিক জায়গায় স্থাপন ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয় ।
৫. তথ্যের শুদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতা : গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহের আগে কোন উৎস হতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে তা যেমন নির্ধারণ করা হয় তেমনি উক্ত তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও শুদ্ধতা কেমন হবে তা নিয়ে ভাবা হয়।
কেননা তথ্যের শুদ্ধতা ও নির্ভরযোগতা না থাকলে গবেষণালব্ধ ফল প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। গবেষণায় ব্যবহৃত প্রতয়সমূহের ব্যাখ্য দান, সুশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ তথ্য সংগ্রাহক নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ, প্রশ্নপত্র ও সিডিউলের প্রাক নিরীক্ষ, তথ্য তত্ত্বাবধান প্রভৃতি তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করে।
৬. প্রকল্প গঠন : অধিকাংশ সময়ই প্রকল্প গঠন গবেষণা নকশার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকল্প গঠনের উদ্দেশ্য সঠিকভাবে গবেষণা নকশায় স্পষ্টভাবে বর্ণনা থাকতে হয় ।
গবেষকের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও ধারণা, পূর্ববর্তী গবেষণার ফলাফল, কোনো তাত্ত্বিক গবেষণা থেকে অনুমান প্রভৃতি উৎস হতে প্রকল্প গঠন করা হয় ।
৭. প্রত্যয়সমূহের কার্যকরি সংজ্ঞা প্রদান : গবেষণা নকশার এ ধাপে গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যয়সমূহের যথার্থ সংজ্ঞা বা পরিচয় তুলে ধরা হয়।
তবে এ প্রত্যয়গুলোর সংজ্ঞাগত ভিন্নতা অনেক সময় সমস্যা সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে শ্রেণিগত সমস্যা দেখা যায় । তাই গবেষণার বিষয়সমূহের সঠিক সংজ্ঞা দেওয়া না হলে গবেষণা সফল হবে না।
৮. গবেষণার উদ্দেশ্য : গবেষণা নকশার এ ধাপে গবেষণার উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা প্রদান করা হয়। গবেষণার ধারণাগত দু'ধরনের উদ্দেশ্য থাকে । মুখ্য উদ্দেশ্য এবং গৌণ উদ্দেশ্য।
তবে গবেষণা নকশায় মুখ্য উদ্দেশ্যকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে কী কী সুফল পাওয়া যাবে তারও উল্লেখ থাকে এ অংশে ।
৯. অঞ্চল নির্ধারণ : সাধারণত গবেষণা পরিচালিত হয় একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে । তাই কোন অঞ্চলে গবেষণা পরিচালিত হবে গবেষণা নকশায় তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে যে এলাকায় গবেষণা পরিচালনা করলে গবেষণার মান ও ফলাফল সঠিক ও কার্যকর হবে, সে এলাকা গ্রাম বা শহর যাই হোক না কেন তা নির্ধারণ করা হয় । এবং ঐ এলাকার ঠিকানাটি গবেষণা নকশায় সঠিকভাবে লিখতে হয় ।
১০. বাজেটিং : একটি গবেষণা নকশায় বাজেটিংও স্থান পায়। প্রত্যেক গবেষণায় অর্থ ব্যয়ের মাত্রা এক নয়। সাধারণভাবে বৃহৎপরিসরের গবেষণায় অধিক অর্থ ব্যয় হয়।
গবেষণার জন্য প্রাক্কালিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এতে জনবল নিয়োগের যেমন স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায় তেমনি অর্থ অপচয়ের সম্ভাবনাও হ্রাস পায় ।
১১. সাধারণীকরণ : গবেষণার সঠিক লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য তথ্যের সাধারণীকরণ অত্যন্ত জরুরি। তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর গবেষক সাধারণীকরণ করে থাকেন। এ সাধারণীকরণের কোনো কল্পনা যাচাই করে সঠিক হলে তা নমুনা বর্হিভূত সফল ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে ঘোষণা দেয়া হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গবেষণা নকশা মানেই একটি গবেষণার আগা গোড়ার সামগ্রিক বিশ্লেষণ তবে গবেষণার ভিন্নতার কারণে অনেক সময় গবেষণা নকশাতেও ভিন্নতা আসে।
সুতরাং গবেষণার প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও কার্যকরণ অনুযায়ী গবেষণা নকশা প্রণয়ন করতে হয়। প্রয়োজন অনুসারে গবেষক তার নির্দিষ্ট কোনো অংশের কিংবা সার্বিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ গবেষণা নকশার ধাপসমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম গবেষণা নকশার ধাপসমূহ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।