বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ বলতে কী বুঝ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ বলতে কী বুঝ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ বলতে কী বুঝ।
বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ বলতে কী বুঝ |
বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ বলতে কী বুঝ
উত্তর ভূমিকা : সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী সংবিধান প্রণয়ন আবশ্যক হয়ে পড়ে। দ্রুত তা প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠতে থাকে।
এ দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি 'বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ” (The Constituent Assembly Order of Bangladesh) জারি করেন। এ কমিটি সংবিধানের খসড়া রচনা করে তা অনুমোদন করে এবং ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর তা কার্যকর করা হয় ।
বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক সদস্যদের নিয়ে অস্থায়ী সংবিধান আদেশবলে যে পরামর্শক পরিষদ গঠিত হয়, তা বাংলাদেশ গণপরিষদ নামে পরিচিত। আর রাষ্ট্রপতির যে আদেশবলে এ পরিষদ গঠিত হয় তাকে বলা হয় বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ ।
বাংলাদেশ গণপরিষদ গঠন : গণপরিষদ আদেশ অনুসারে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১ মার্চের মধ্যবর্তী বিভিন্ন তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেসব জনপ্রতিনিধি সাবেক পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হন তাদের নিয়ে বাংলাদেশ গণপরিষদ গঠিত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমায় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত মোট সদস্য সংখ্যা ছিল (১৬৯ + ৩০০ = ৪৬৯) ৪৬৯ জন। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ১২ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু, ২ জনের পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ,
৫ জন দালাল আইনে আটক, আওয়ামী লীগ থেকে ৪৬ জনের বহিষ্কার ও ১ জনের বৈদেশিক সার্ভিসে যোগদানের কারণে ৬৬ জন সদস্য বাদ পড়েন। ফলে বাকি ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদের কার্যক্রম শুরু হয়।
এদের মধ্যে ৪০০ জন ছিলেন আওয়ামী লীগ ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয়, ১ জন ছিলেন ন্যাপ (মোজাফফর) ও ২ জন স্বতন্ত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভায় গণপরিষদের দলীয় নেতা নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ গণপরিষদের কার্যক্রম : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেন । এ অধিবেশনে শাহ আবদুল হামিদ স্পিকার ও মোহাম্মদউল্লাহ ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন ।
প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন, অর্থাৎ ১০ এপ্রিল গণপরিষদ তার কার্যপ্রণালি বিধি প্রণয়ন করে। ১২ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সকল সদস্যই গণপরিষদের সদস্য ছিলেন।
এ কমিটিতে ৪ জন শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীসহ ৩৩ জন আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য ছিলেন । কমিটির একমাত্র বিরোধীদলীয় সদস্য ছিলেন ন্যাপ (মোজাফফর) এর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত । একজন মহিলা সদস্যও এ কমিটিতে স্থান পান । তিনি হলেন ড. রাজিয়া বানু।
১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ড. কামাল হোসেন খসড়া সংবিধান বিল আকারে উপস্থাপন করেন। ১৯ অক্টোবর সংবিধানের ওপর প্রথম পাঠ শুরু হয় এবং ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে ।
অতঃপর ৩১ অক্টোবর দ্বিতীয় পাঠ শুরু হয় এবং ৩ নভেম্বর পর্যন্ত তা চলে। ৪ নভেম্বর সংবিধানের তৃতীয় ও সর্বশেষ পাঠ অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে সংবিধান প্রণয়ন সংক্রান্ত সাধারণ বিতর্কে মোট ৪৮ জন সদস্য অংশ নেন।
শেষ দিন মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে এ বিতর্ক শেষ হয় এবং বিপুল করতালির মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বহুল কাঙ্ক্ষিত সংবিধান গণপরিষদে গৃহীত হয়। অতঃপর ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস থেকে এটি কার্যকর হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সংবিধান একটি দেশ পরিচালনার মূল মানদণ্ড। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গণপরিষদ আদেশ জারি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের পথে প্রথম পদক্ষেপ।
গণপরিষদকে আইন প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করা না হলেও গণপরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকেই সংবিধান রচনা কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটি নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ বলতে কী বুঝ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ বলতে কী বুঝ। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।