একটি উত্তম গবেষণা প্রতিবেদনের গুণাবলি আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো একটি উত্তম গবেষণা প্রতিবেদনের গুণাবলি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের একটি উত্তম গবেষণা প্রতিবেদনের কী কী গুণ থাকা আবশ্যক? বর্ণনা কর।
একটি উত্তম গবেষণা প্রতিবেদনের গুণাবলি আলোচনা কর |
একটি উত্তম গবেষণা প্রতিবেদনের গুণাবলি আলোচনা কর
- অথবা, একটি উত্তম গবেষণা প্রতিবেদনের কী কী গুণ থাকা আবশ্যক? বর্ণনা কর।
- অথবা, উত্তম গবেষণা প্রতিবেদনের গুণসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : গবেষণা প্রতিবেদন গবেষণার চূড়ান্ত পর্যায়ে লিখিত একটি দলিল। একটি গবেষণার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ লিখিত রূপ হলো গবেষণা প্রতিবেদন।
সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সামনে রেখে সরেজমিনে অনুসন্ধানের পর সংগৃহীত তথ্যাবলির সংক্ষিপ্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উপস্থাপনই হলো গবেষণা প্রতিবেদন।
গবেষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে সহজেই গবেষণা সম্পর্কে সমাকজ্ঞান আহরণ করতে পারেন। গবেষণা প্রতিবেদন ভবিষ্যৎ গবেষকদের জন্য পথ প্রদর্শকেরা কাজ করে।
একটি উত্তম গবেষণা প্রতিবেদনের গুণাবলি : নিম্নে একটি উত্তম প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. স্পষ্ট চিন্তা : চিন্তা এবং ভাষা উভয় দিক থেকেই প্রতিবেদনকে স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট হতে হবে। প্রতিবেদনে গবেষকের চিন্তাধারা সুস্পষ্ট, অদ্বৈতক ও বৈপরীত্যহীন হতে হবে।
গবেষকের মৌলিক চিন্তার প্রতিফলন থাকতে হবে, তা যেন জ্ঞানের রাজ্যে নতুন সংযোজন হয়। চিন্তাধারা ও ভাষা এতোই সহজসরল হওয়া উচিত যাতে করে পাঠক অতি সহজেই প্রতিবেদন প্রণয়নকারী কী বলতে চান তা উপলব্ধি করতে পারেন।
২. সুশৃঙ্খল উপস্থাপন : সমগ্র প্রতিবেদনটি এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখার মধ্যে একটি পূর্ণ সঙ্গতি বজায় থাকে। পুরো প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উপস্থাপন করলে পাঠকের নিকট সুখবর পাঠ হিসেবে আবেদন রাখতে সক্ষম হয়।
সমগ্র প্রতিবেদনটিকে কতকগুলো অধ্যায়ে এবং প্রতিটি অধ্যায়কে কতকগুলো অনুচ্ছেদে বিভক্ত করে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করতে হবে।
৩. প্রয়োজনীয় উপাত্তের সন্নিবেশ : গবেষকের কাছে সবসময়ই প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় উভয় প্রকার উপাত্ত থাকে। কিন্তু সব উপাত্ত প্রতিবেদনে সন্নিবেশ করলে প্রতিবেদনটি শুধু বিরক্তিকরই হবে না,
বরং তা প্রতিবেদনকে বিশালাকার করে তুলবে। গবেষণা প্রতিবেদনে যাতে সব প্রয়োজনীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং কোনো কারণে তা বাদ না পড়ে যায় সে ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রণয়নকারীকে নিশ্চিত হতে হবে।
৪. সহজ ও সঠিক ভাষা : একটি উত্তম প্রতিবেদনে ভাষা হবে সহজ ও প্রাঞ্জল। আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। সাধারণ পাঠকের দিক বিচার করে প্রতিবেদনের ভাষা নির্ধারণ করতে হবে।
গুরুগম্ভীর ও দুর্বোধ্য ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। তবে মাঝে মাঝে উদ্ধৃতি দেওয়া যাবে । এছাড়া প্রতিবেদনের ভাষায় অতীতকাল ও তৃতীয় পুরুষ ব্যবহার করার প্রবণতা বেশি
৫. প্রতিবেদনের আকার : প্রতিবেদনের আকার খুব বড় হতে হবে কিংবা খুব ছোট হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। তথ্য উপস্থাপন, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদনটি আলোচনার জন্য যতটুকু বিস্তৃত করা দরকার ততটুকু বিস্তৃত করতে হবে।
অযথা প্রতিবেদনের আকার বড় করার জন্য কোনো বিষয়ের পুনরাবৃত্তি কিংবা অপ্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশিত করার দরকার নেই।
৬. মুখবন্ধ : গবেষণা প্রতিবেদনে মুখবন্ধ একটি অপরিহার্য বিষয়। তবে ছোট আকারের গবেষণায় মুখবন্ধ সাধারণত লেখা হয় না । গবেষণাটি জার্নালে প্রকাশ করার ইচ্ছা থাকলে তারও মুখবন্ধ লেখা হয় না।
অনেকে মুখবন্ধ ও ভূমিকাকে এক চোখে দেখেন। ভূমিকা ও মুখবন্ধের মধ্যে পার্থক্য হলো মুখবন্ধে থাকে গবেষণা সমস্যাটি নির্বাচনের কারণ, প্রকৃতি, পরিধি ও উদ্দেশ্য যা ভূমিকায় থাকে না।
৭. সুনির্দিষ্ট সমস্যা : একজন ভালো প্রতিবেদন প্রণয়নকারীকে প্রথমেই সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করতে হবে এবং সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমাধানের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
৮. সাবলীল ভাষা ; প্রতিবেদনের ভাষা হবে সহজ এবং সঠিক। যাতে করে গবেষণার বিষয়বস্তুর যথার্থ অর্থ প্রকাশ পায় এবং পাঠক তা সহজে বুঝতে পারেন।
প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সরল বাক্যের সাহায্যে উপস্থাপন করা উচিত। অতীতকালের চেয়ে বর্তমান কাল ব্যবহার করা উচিত কিন্তু কোনো report যদি অতীতের ঘটনার নির্দেশ দেয় তবে তা অবশ্যই অতীতের আঙ্গিকেই উপস্থাপন করতে হবে।
৯. উদ্ধৃতি ও পদটীকা : উদ্ধৃতি ও পাদটীকা থাকলে এটিকে উত্তম প্রতিবেদন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে গবেষণার প্রতিবেদনে মাত্রাতিরিক্ত কিংবা অতি দীর্ঘ উদ্ধৃতি ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এতে পাঠকের ধের্যচ্যুতি ঘটে।
উদ্ধৃতির অংশ পাঠকের জ্ঞাতকরণের জন্য পাদটীকা ব্যবহার করা হয়। পূর্বের কোনো গবেষণামূলক প্রবন্ধ, লেখকের বক্তব্য, যুক্তি কিংবা ফলাফল ইত্যাদির সহায়তা নিলে তা পাদটীকায় উল্লেখ করতে হবে।
১০. তথ্যের প্রকৃতি : তথ্যের প্রকৃতিসহ যাবতীয় তথ্য প্রতিবেদনে থাকলে তাকে আমরা একটি উন্নত প্রতিবেদন বলে থাকি । তথ্যের উৎস, প্রকৃতি, সংগ্রহের পদ্ধতি, মাঠকর্মীদের অবস্থান, সময়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রভৃতি প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকে।
সময় এক্ষেত্রে অনেক জরুরি। সময়ভেদে একই তথ্যের ভিন্নতা থাকতে পারে। তথ্যের প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত করলে পাঠকরা উপকৃত হয় ।
১১. প্রাসঙ্গিক গ্রন্থপুঞ্জি : গবেষণা করার সময় গবেষক বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রবন্ধ, বইপুস্তক, প্রকাশিত থিসিস, গবেষণা সাময়িকী ইত্যাদির আশ্রয় গ্রহণ করেন। প্রতিবেদনে এসব প্রাসঙ্গিক ও সাহায্যকারী তথ্যসূত্রের নাম উল্লেখ করতে হয় ।
গ্রন্থপুঞ্জি অংশে গ্রন্থের নাম, প্রকাশকের নাম ও প্রকাশনার স্থান এবং পৃষ্ঠা নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। প্রাসঙ্গিক গ্রন্থপুঞ্জি উল্লেখ না থাকলে প্রতিবেদনটি পূর্ণতা পায় না ।
১২. পরিশিষ্ট : পরিশিষ্ট একটি উত্তম প্রতিবেদন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বহন করে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদি মূল গবেষণায় স্থান না পায় তাহলে তা পরিশিষ্টতে উল্লেখ করতে হয়। এতে ভবিষ্যতে গবেষণার প্রতিবন্ধকতা অনেকটা কমে যাবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গবেষণা প্রতিবেদন হলো গবেষকের স্বাধীনভাবে পরিচালিত অনুসন্ধানের ফল যা সুপারিশসহ বা সুপারিশ ব্যতীত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা পাঠকের নিকট উপস্থাপন করা হয়।
যদিও গবেষণার ধরনের ওপর নির্ভর করে গবেষণা প্রতিবেদন ভিন্ন আঙ্গিকতা লাভ করে তথাপি একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যাবলি থাকা অপরিহার্য । অর্থাৎ একটি উত্তম প্রতিবেদন স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ একটি উত্তম গবেষণা প্রতিবেদনের গুণাবলি আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম উত্তম গবেষণা প্রতিবেদনের গুণসমূহ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।