১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।।
১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর |
১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
উত্তর ভূমিকা : সংবিধান হলো রাষ্ট্রের দর্পণস্বরূপ, সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের রূপ ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। লিখিত বা অলিখিত যাই হোক সংবিধান একটি রাষ্ট্রের শাসননীতি ও শাসনব্যবস্থা পরিচালনার দিক নির্দেশ করে।
এক কথায়, সংবিধান হলো বিশ্বের সব স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষভাবে অপরিহার্য একটি দলিল ।
১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো : নিম্নে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো :
১. লিখিত সংবিধান : ১৯৭২ সালের সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান। এ সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ ও ৪টি তফসিল লিখিত রয়েছে। এছাড়া ১৫৩টি অনুচ্ছেদের সমন্বয়ে প্রণীত এ সংবিধান।
এ সংবিধানের প্রথম ভাগে প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ, দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিসমূহ, তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার, চতুর্থ ভাগে নির্বাহী বিভাগ,
পঞ্চম ভাগে জাতীয় সংসদ, ষষ্ঠ ভাগে বিচার বিভাগ, সপ্তম ভাগে নির্বাচন, অষ্টম ভাগে মহাহিসাব নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রক, নবম বিভাগে কর্মকমিশন, দশম ভাগে সংবিধান সংশোধন ও একাদশ ভাগে বিবিধ বিষয় লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
২. ভাষা : ১৯৭২ সালের সংবিধানে বাংলা ভাষার ব্যবহার করা হয়েছে। সংবিধান বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লিখিত হয়েছে। তবে সংবিধানে বাংলা ভাষাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের 'আমার সোনার বাংলা' গানটির প্রথম ১০ চরণ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয় । এ সংবিধানে দেশের নাগরিকদের বাঙালি হিসেবে উল্লেখ করা হয় ।
৩. দুষ্পরিবর্তনীয় : দুষ্পরিবর্তনীয়তা '৭২-এর সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । এ সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় না। সংবিধান পরিবর্তনের জন্য সংসদ সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। তাই ১৯৭২ সালের সংবিধানকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
৪. রাষ্ট্রীয় মূলনীতি : ১৯৭২ এর সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি সংযোজন করা হয়েছে, যা রাষ্ট্র ব্যবস্থার হাতিয়ার। ১৯৭২ এর সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ৪ আদর্শকে গ্রহণ করা হয়েছে।
যথা : জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। এর মূল লক্ষ্য ছিল এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করা।
৫. সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন : ১৯৭২ সালের সংবিধানে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সমস্ত শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত করে। উক্ত সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে নামসর্বস্ব রাষ্ট্রপ্রধান করা হয়।
৬. মৌলিক অধিকার : ১৯৭২ সালের সংবিধানে মৌলিক অধিকার সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সংবিধানের ২৭- ৪৭ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার সন্নিবেশিত করা হয়।
সংবিধানের ৪৪ নং অনুচ্ছেদ দ্বারা সুপ্রিম কোর্টকে সকল ধরনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার রক্ষাকবচ করা হয়েছে। এ সংবিধানে মানুষের চলাফেরা, বাকস্বাধীনতা, সংগঠন, সমানাধিকার প্রভৃতি মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭২ এর সংবিধান ছিল একটি লিখিত, দুষ্পরিবর্তনীয় শাসনতান্ত্রিক দলিল । এটি ছিল একটি ব্যাপক সুলিখিত দলিল এবং এ উপমহাদেশের অন্যান্য সংবিধানের তুলনায় অনেক উন্নতমানের।
সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তেমনি আইনের মূল উৎস হিসেবেও কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।