তুলুনীয় বংশের উত্থান-পতন সম্পর্কে আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো তুলুনীয় বংশের উত্থান-পতন সম্পর্কে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের তুলুনীয় বংশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখ।
তুলুনীয় বংশের উত্থান-পতন সম্পর্কে আলোচনা কর |
তুলুনীয় বংশের উত্থান-পতন সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, তুলুনীয় বংশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখ।
- অথবা, তুলুনীয় বংশের উত্থান-পতন আলোচনা করা।
- অথবা, তুলুনী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ ইবনে তুলুনের অবদান মূল্যায়ন কর।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক ঐতিহাসিকগণ আব্বাসীয় খিলাফতের প্রথম নয় খলিফার যুগকে স্বর্ণযুগ বলে অবহিত করেছেন। দশম খলিফা মুতাওয়াক্কিল থেকে চতুর্দশ পর্যন্ত ছিল। | দ্বিতীয় যুগ। এই পর্বে মুতাওয়াক্কিল প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের পাশাপাশি সামরিক নেতাদেরও ইকতা প্রদান করেন।
এভাবে সামরিক ইকতা প্রথার সূচনা হয়। এ সময় আহমদ ইবনে | তুলুনকে মিশরের ইকতা প্রদান করলে তিনি মিশরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তুলুনী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
→ আহমদ ইবনে তুলুনের পরিচয় : আহমদ ছিলেন একজন তুর্কি কৃতদাসের পুত্র। তার পিতা ছিলেন একজন তুর্কি কৃতদাস। বোখরার সামানীয় শাসনকর্তা তাকে ৮১৬ সালে মামুনের নিকট উপহার স্বরূপ প্রেরণ করেন ।
তুলুন স্বীয় প্রতিভা বলে বাগদাদের উচ্চপদে আসীন হন।পিতার প্রতিভার উত্তরাধিকারী হয়ে ৮৬৮ সালে আহমদ মিশরের উপ গভর্নর হন এবং ৮৭৭ সালে গভর্নর এবং সিরিয়ার শাসন ক্ষমতা লাভ করেন । তার রাজধানীর নাম ছিল আলকাতাই।
→ তুলুনীয় বংশের ইতিহাস : তুলুনীয় বংশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. সামরিক প্রশাসনব্যবস্থা চালু : মুতাওয়াক্কিল তার সাম্রাজ্যকে তিন পুত্রের মধ্যে ভাগ করে দেন। জ্যেষ্ঠপুত্র মুনতাসিরকে সিরিয়া ব্যতীত সমস্ত পশ্চিম অঞ্চল, মুতাজকে খোরাসান, তারাবিস্তান, আজারবাইজান ও পারস্য এবং মুয়াইদকে হিমস, দামাস্কাস, সিরিয়া, প্যালেস্টাইনের শাসনভার প্রদান করেন।
মুতাওয়াক্কিল সামরিক বাহিনীকে তিন ভাগে তিন পুত্রের মধ্যে বন্টন করেন। তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে তাদের প্রত্যেকের জন্য একজন দক্ষ সামরিক প্রশাসক নিয়োগ করেন। এসময় সামরিক প্রশাসককে ভূমি মঞ্জুরি বা ইফতা প্রদান করা হয়। ফলে প্রশাসনে ইকতা প্রথার সূত্রপাত হয় ।
২. বাগদাদ সামারা দ্বন্দ্ব : খলিফা মুতাওয়াক্কিল সামারা বাহিনী এবং তার দেহরক্ষী শাকারিয়া বাহিনীর সমন্বয়সাধন করতে চাইলে সামারা বাহিনী তাকে হত্যা করে। অতঃপর মুনতাসির ক্ষমতা গ্রহণ করে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য শাকারিয়া বাহিনীকে চার বছরের জন্য বাইজেন্টাইন সীমান্তে পাঠিয়ে দেন।
মাত্র ছয় মাসের মাথায় খলিফা মৃত্যুবরণ করলে তার একপুত্রকে মুস্তায়িন উপাধি দিয়ে সিংহাসনে বসানো হয়। অপর পুত্র মুতাজ ও মুয়াইজকে খিলাফতের দাবি থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হয়। সামারার সমর নেতা উতামিশ এবং আহমদ বিন খামিরকে কাতিব নিয়োগ দেওয়া হয়।
এরূপ খলিফা নিয়োগের বিরুদ্ধে বাগদাদে লোকজন বিদ্রোহ করে, তাহিরের পুত্র বাগদাদে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। আহমদ বিন খামির রাজস্ব বিভাগ থেকে সামরিক বিভাগ আলাদা করতে চাইলে উতামিশ তাকে ক্রীটে নির্বাসিত করেন। পরবর্তীতে বাগদাদের শাকারিয়া বাহিনীকে অপসারণ করতে চাইলে বিরোধ দেখা দেয়।
ফলে যৌথ একটি প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করা হয়। উতামিশ সামারা বাহিনীকে সুসংঘটিত করতে চাইলেও তিনি | তাদের রাজস্ব বিভাগ থেকে আলাদা করতে চাইলে তারা তাতে হত্যা করে। খলিফা মুতাওয়াক্কিলের হত্যাকারী বুগারকে কুফার শাসনকর্তা নিয়োগ করলে শাকারিয়া বাহিনী তাকে হত্যা করে।
এভাবে বাগদাদেও সামারা ও শাকারিয়া বাহিনীদ্বয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধে। সামারা বাহিনী বুগা এবং ওয়াসিফের উপর থেকে সমর্থন। প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু শাকারিয়া বাহিনী সমর্থন দেয়। এদিকে সামারা বাহিনী মুস্তাইন সাথে নিয়ে বাগদাদে এসে তাহিরী গভর্নরের সমর্থন চায়।
অন্যদিকে বুগা ও ওয়াসিক শাকারিয়া বাহিনীর সকল সদস্যকে বাগদাদে এনে শক্তি বৃদ্ধি করেন। পরবর্তীতে মুতাওয়াফিকলের এক পুত্রকে মুতাজ উপাধি দিয়ে তাকে খলিফা ঘোষণা করেন।
৩. মুয়াফ্ফাকের উত্থান : মুতাজকে খলিফা করার পর তার ভ্রাতা বাগদাদ অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া হয়। ফলে আবু আহমদ ৮৬৮ সালে বাগদাদ অবরোধ করেন। অবশেষে বাগদাদের গভর্নর তাহির ও আহমদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী শাকারিয়া বাহিনীকে একটি স্বতন্ত্রবাহিনী হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত হয় এবং মোতামিদ বাহিনীর দাবি অনুযায়ী আবু আহমদকে সেনাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং তাকে মোয়াক্কাফ বা সকল মতের সমন্বয়কারী উপাধি দেওয়া হয় । সেনাপতিদের নিয়ন্ত্রণে রাখা ছিল তার দায়িত্ব।
৪. মুয়াফ্ফাকের যুগ্ম সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন : সামরিক প্রশাসনিক ইকতা ব্যবস্থার পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলে জারবাহ ও ফুরাত পরিবার। জাররাহ পরিবার ছিল ইকতার সমর্থক আর ফুরাত ছিল বিপক্ষে।
এমতাবস্থায় মুয়াফ্ফাক যুগ্ম সামরিক বেসামরিক আমলা প্রথার প্রবর্তন করেন । যার ফলে বিরোধী দলগুলোর সহবস্থান নিশ্চিত হয়।
৫. আহমদ ইবনে তুলুন মিশরের সামরিক ইকতা প্রদান : মুয়াফ্ফাকের নেতৃত্বে বাগদাদে নয়া রাজনীতির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকলে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের অবক্ষয় দ্রুততর অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে।
এসময় পূর্বাঞ্চলের তাহিরীরা দ্রুত পতনের দিকে ধাবিত হলেও আঞ্চলিক স্বার্থ চেতনার কারণে পারস্য ও ইরাকের যথাক্রমে সাফফারী ও জানজ নামে দুটি | আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। এ বিদ্রোহ শান্ত রাখার জন্য ইবনে তুলুনকে মিশরের ইকতা প্রদান করা হয়।
৬. আহমদ কর্তৃক মিশরে তুলুনীয় বংশ প্রতিষ্ঠা : সামরিক | ইকতা লাভ করে আহমদ ইবনে তুলুন উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেন। | তিনি খলিফা কর্তৃক সিরিয়া এবং প্যালেষ্টাইনের কর্তৃত্ব লাভ করেন এবং বাইজেন্টাইন সীমান্তগুলোতে আক্রমণ করে সাম্রাজ্য বৃদ্ধি করেন।
পরবর্তীতে তুলুন বছরে বাগদাদকে তিন লক্ষ দিনারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিশরকে কেন্দ্রীয় শাসন থেকে মুক্ত করেন। এভাবে মিশর ও সিরিয়া প্যালেষ্টাইনে তুলুনীবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
→ তুলুনীয় বংশের পতনের কারণ : তুলুনীয় বংশের পতনের কারণ নিম্নে আলোচনা হলো :
১. প্রাকৃতিক কারণ : ইতিহাসের একটি চরম সত্য হলো উত্থান আর পতন। কোনো রাজবংশই স্থায়ী নয়, বরং পতন অনীবার্য। তুলুনীয় বংশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইবনে খালদুন বলেন পৃথিবীতে কোনো রাজবংশ তিন পুরুষের বেশি স্থায়ী নয় ।
২. সুযোগ্য উত্তরাধিকারীর অভাব : তুলুনীয় বংশের পতনের অন্যতম কারণ হলো সুযোগ্য উত্তরাধিকারীর অভাব। আহমদ ইবনে তুলুন ৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে তুলুনীয় বংশ প্রতিষ্ঠা করলেও তার পরবর্তী উত্তরাধিকারগণ তেমন দক্ষ ও কৌশলী ছিল না। যার ফলে এই তুলুনীয় বংশের পতন ঘটে ।
৩. শক্তিশালী বাহিনীর অভাব : একটি রাজ্য কিংবা শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী বাহিনী। সেটি সর্বাস্থায় রাজ্যকে সুশৃঙ্খল ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করবে।
কিন্তু ইবনে তুলুন নিগ্রো ও তুর্কীদের সম্বনয়ে একটি শক্তিশালী বাহিনী গঠন করলেও, তার পরবর্তী উত্তরাধিকারীগণ তা ধরে রাখতে পারেনি। যার ফলে সৈন্যবাহিনী দুর্বল হলে তুলুনীয় শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে।
৪. রাজকোষ শূন্য : ইবনে তুলুনের পুত্ররা ছিল বিলাস প্রিয়। তারা একটি জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ নিমার্ণ করেন। প্রতি প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়ে যায়। আর অন্যদিকে রাজ্যর বিভিন্নস্থানে আট্টালিকা নির্মাণসহ বিভিন্ন বিলাসবহুল জীবনধারণের ফলে তুলুনীয় বংশের পতন ঘটে ।
৫. প্রশাসানিক ক্ষমতার অভাব : ইবনে তুলুনের ইন্তেকালের পর শাসনকে পরিচালনার জন্য এজন্য দক্ষ প্রশাসনিক লোকের অভাব তীব্র আকার ধারণ করে। যার ফলে রাজ্যের মধ্যে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং তুলুনীয় রাজবংশের পতন হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুয়াফ্ফাক সাফারী এবং জানজ বিদ্রোহের অগ্নি নিভাতে গিয়ে মিশরে যে সামরিক ইকতা প্রদান করেন তা পক্ষান্তরে আগুনে ঘি ঢেলে দেন।
কারণ এর ফলে মিশর হস্তচ্যুত হয় এবং ইবনে তুলুন মিশর, সিরিয়া এবং প্যালেষ্টাইনে তুলুনী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ তুলুনীয় বংশের উত্থান-পতন আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম তুলুনী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ ইবনে তুলুনের অবদান মূল্যায়ন কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।