তাহিরি বংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি উল্লেখপূর্বক তাহিরি বংশ সম্বন্ধে আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো তাহিরি বংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি উল্লেখপূর্বক তাহিরি বংশ সম্বন্ধে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের তাহিরি বংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি উল্লেখপূর্বক তাহিরি বংশ সম্বন্ধে আলোচনা কর।
তাহিরি বংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি উল্লেখপূর্বক তাহিরি বংশ সম্বন্ধে আলোচনা কর |
তাহিরি বংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি উল্লেখপূর্বক তাহিরি বংশ সম্বন্ধে আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাসে আব্বাসীয় যুগের শাসন আমলে যে সকল রাজবংশ আব্বাসীয়দের রাজধানী বাগদাদের পূর্বাঞ্চলে গড়ে ওঠে তার মধ্যে তাহেরি রাজবংশ ছিল একটি অন্যতম রাজবংশ।
এই রাজবংশের ইতিহাস খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই রাজবংশটি ছিল স্বাধীন রাজবংশ তারা স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করতে। তৎকালীন সময়ে বাগদাদে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশ গড়ে ওঠার পিছনে বিভিন্ন কারণ আমরা দেখতে পাই,
যেমন- আব্বাসীয় শাসকদের দুর্বলতা, অযোগ্য, হেরেমে মগ্ন ইত্যাদি। এই তাহেরি রাজবংশ গড়ে ওঠে আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের সময় ।
তাহেরি রাজবংশের পটভূমি : তাহেরি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা তাহির ইবনে হুসাইন। তিনি ছিলেন বাগদাদের হিরাত প্রদেশের বুশানজ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুসা অব ইবন রাজিক। তার পিতা ছিলেন বুশানজ শহরের একজন গভর্নর।
পিতার মৃত্যুর পর তিনি এই শহরের গভর্নর নিযুক্ত হন। অপরদিকে আব্বাসীয় খলিফা হারুন-অর-রশিদ এর মৃত্যুর পর আল মামুন যখন আব্বাসীয় খলিফা নিযুক্ত হন তখন তাহির তার সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে তিনি সেনাপতি পদ লাভ করেন ।
তাহিরের বিভিন্ন যুদ্ধে জয়লাভ : তাহির আব্বাসীয় খলিফার আল মামুনের সেনাপতির পদ লাভ করার পর বিভিন্ন যুদ্ধে জয়লাভ করেন ।
আব্বাসীয় খলিফা আল আমিনের বিরুদ্ধে : আব্বাসীয় খলিফা আল আমিন মামুনের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে সেনাপতি আলী ইবন ঈসাকে মামুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রেরণ করলে মামুন তাহিরকে এই যুদ্ধে প্রেরণ করেন। এই যুদ্ধে তাহির জয়লাভ করে ।
বিভিন্ন অঞ্চল বিজয় : তাহির আল আমিনের বাহিনীকে পরাজিত করে বিভিন্ন অঞ্চল জয় করেন। যেমন— কাযবীন, হুলওয়ান, আহযাব, সুসা।
বাগদাদ অবরোধ : তাহির ৮১৩ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদ অবরোধ করেন। তিনি বাগদাদ অবরোধ করে আমিনকে পরাজিত করে তাহাকে হত্যা করেন। যার ফলে আল মামুন বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন ।
বিভিন্ন পদে নিয়োগ : আব্বাসীয় খলিফা হিসেবে আল মামুন অধিষ্ঠিত হয়ে তাহিরকে বিভিন্ন পদে নিযুক্ত করেন।
* ইরাক-ইরানের গভর্নর নিযুক্ত;
* বাগদাদের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত;
* পুলিশ প্রধান মাওয়াদের অর্থ উপদেশ নিযুক্ত ও
* খোরাসান প্রদেশের শাসনভার অর্পণ ।P.K. Hitti-এর মতে, ভ্রাতৃযুদ্ধে জয়ের পর খলিফা মামুন তাহিরকে খোরাসানের গভর্নর নিযুক্ত করেন। [আরব জাতির ইতিহাস]
→ তাহিরের রাজবংশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস : আব্বাসীয় খলিফা যখন ভ্রাতা হত্যার কথা স্মরণ করে চিন্তা করতে লাগলেন তখন তিনি বুঝতে পারলেন ভাই হত্যাকারী তাহির তার সাম্রাজ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই তিনি তার সেনাপতির প্রাণনাশ করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।
অপর দিকে তাহির ছিলেন একজন বিচক্ষণ, চালাক ও জ্ঞানী। তাই তিনি আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের ষড়যন্ত্রের কথা বুঝতে পেরে তিনি নিজ নামে খোরাসানে শাসন প্রতিষ্ঠা করার বন্দবস্ত করেন। যার জন্য তিনি নিজ নামে খুতবা পাঠ করলে এবং ৮২১ খ্রিস্টাব্দে পূর্বাঞ্চলীয় শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়ে তিনি রাজত্ব করতে থাকেন।
তার এই প্রতিষ্ঠিত রাজবংশের নামকরণ করা হয় তাহেরি রাজবংশ তার নাম অনুসারে। এই রাজবংশের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন নিশাপুরে।
ঐতিহাসিক গীবন বলেন, “এই রাজবংশ ছিল ইরানীদের প্রথম রাজবংশ।”
→ তাহেরি রাজবংশের শাসকদের পরিচয় : তাহির যে রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন তা ৫২ বছর স্থায়ী ছিল। তার এই রাজবংশে যে কয়জন শাসক রাজ্য শাসন করেন তারা হলেন-
১. তাহির : ৮২১ খ্রিস্টাব্দে এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে তিনি মাত্র দুই (২) বছর রাজ্য শাসন করেন। পরবর্তীতে তিনি বিষ প্রয়োগের ফলে মৃত্যুবরণ করেন।
২. তালহা বিন তাহির : তাহেরি বংশের প্রতিষ্ঠাতা তাহিরের এর মৃত্যুর পর তার পুত্র তালহা বিন তাহির ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে ৮২২-২৮ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত শাসন করেন। কিন্তু তিনি শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে সাম্রাজ্যর বিদ্রোহ দমন কাজে বেশি সময় ব্যয় করেন। কারণ তাঁর পিতার মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা যায়।
৩. আলী ইবনে তালহা : ৮২৮ খ্রিস্টাব্দে তালহা বিন তাহির মৃত্যুবরণ করলে আলী ইবনে তালহা ক্ষমতা গ্রহণ করেন তিনি মাত্রা কয়েক মাস রাজ্য শাসন করে মৃত্যুবরণ করেন।
৪. আব্দুল্লাহ বিন তাহির : এই বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসন ছিল আব্দুল্লাহ বিন তাহির। আলী ইবনে তালহা মৃত্যু বরণ করলে ৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতা গ্রহণ করে ৮৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই বংশের শাসক ছিলেন তিনি। তিনি আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। যার জন্য খলিফা মামুন তাকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব প্রদান করেন ।
৫. দ্বিতীয় তাহির : আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর ৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় তাহির ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন খোরাসানের বিদ্রোহ দেখা যায় তাই তিনি শাসনভার গ্রহণ করে এই বিদ্রোহ দমন করেন ।
৬. মুহাম্মদ বিন তাহির : দ্বিতীয় তাহির এর মৃত্যুর পর মুহাম্মদ বিন তাহির ক্ষমতা গ্রহণ করে ৮৫২-৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেন। তার শাসন আমলে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দেখা যায় এবং তার মাধ্যমে এই ক্ষুদ্র রাজ্যবংশের পতন ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের রাজত্বকালে বাগদাদের পূর্বাঞ্চলে যে সকল রাজবংশের উদ্ভব হয় তার মধ্যে তাহেরি রাজবংশ ছিল অন্যতম কারণ এই রাজবংশ খলিফা আল মামুনের সিংহাসন গ্রহণ থেকে শুরু করে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করেন শেষ পর্যন্ত নিজের ক্ষমতা টিকে রাখার জন্য তাহির রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। যার ফলে এই রাজবংশের নামকরণ করা হয় তাহেরি রাজবংশ এবং এটি ছিল ইরানী রাজবংশ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ তাহিরি বংশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট উল্লেখপূর্বক তাহিরি বংশ সম্পর্কে বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম তাহিরি বংশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট উল্লেখপূর্বক তাহিরি বংশ সম্পর্কে বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।