সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি পটভূমি ও ক্রমবিকাশ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি পটভূমি ও ক্রমবিকাশ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি পটভূমি ও ক্রমবিকাশ ।
সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি পটভূমি ও ক্রমবিকাশ |
সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি পটভূমি ও ক্রমবিকাশ
- সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে এমিল ডুর্খেইমের অবদান আলোচনা কর ।
- অথবা, সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে এমিল ডুর্খেইমের অবদান বিশ্লেষণ কর ।
উত্তর : ভূমিকা : সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে যেসব মনীষী উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন; তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন এমিল ডুর্খেইম ।
তিনি সমাজবিজ্ঞানের শ্রমবিভাজন তত্ত্ব দিয়েছিলেন। সমাজে কল্যাণ স্থাপনে তিনি শ্রেণিবৈষম্য দূর করেন। সমাজবিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্য তিনি কতকগুলো ধারণা দেন।
সমাজবিজ্ঞানের বিরাজমান সমস্যাগুলো তিনি সাফল্যের সাথে দূর করেন। অগাস্ট কোঁতের হাত ধরে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি আর এমিল ডুর্খেইম সমাজবিজ্ঞান সাফল্যের উচ্চ শিখরে নিয়ে যান ।
→ সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে এমিল ডুর্খেইমের অবদান : সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে এমিল ডুর্খেইমের অবদান অপরিসীম । নিম্নে তার অবদান উল্লেখ করা হলো :
১. সামাজিক উপাদান : এমিল ডুর্খেইমের অন্যতম অবদান হলো সামাজিক উপাদানগুলোর গুরুত্ব উপস্থাপন। তিনি তাঁর "The Rules of Sociol gical Method" গ্রন্থে দুই ধরনের সামাজিক উপাদানের কথা তুলে ধরেন।
এসব উপাদান সমাজবিজ্ঞান বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তিনি মনে করেন সমাজবিজ্ঞানের বিষয় হবে সামাজিক উপাদান ।
২. সমাজের শ্রমবিভাজন : শ্রমবিভাজনের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তাঁর "The Division of later is society" নামক গ্রন্থের তৃতীয় ভাগে শ্রমবিভাজনের অস্বাভাবিক রূপের কথা বলতে গিয়ে তিন ধরনের রূপের কথা উল্লেখ করেন। যথা— (ক) নৈরাজ্যমূলক শ্রমবিভাজন; (খ) বাধ্যতামূলক শ্রমবিভাজন ও (গ) অন্যান্য রূপ ।
৩. সমাজতন্ত্র সম্পর্কে চিন্তাধারা : সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তিনি সকল সমস্যা সমাধান করেন। তৎকালীন সমাজে পুঁজিবাদীদের প্রভাবের ফলে নিম্নবিত্তদের জীবনে নেমে এসেছিল নির্যাতন। তিনি এই নির্যাতন দূর করার জন্য শ্রেণি সংহতি ধারণার উদ্ভব ঘটান ।
৪. যৌথ চেতনার ধারণা বর্ণনা : এমিল ডুর্খেইম যৌথ চেতনার ধারণা বর্ণনা করেন। যৌথ চেতনা বলতে তিনি সমাজের সকল রীতিনীতি, আচার, অনুষ্ঠান, মূল্যবোধ ও ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যাদিকে বুঝিয়েছেন যা ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত। ডুর্খেইম সমাজের এ সব উপাদান নিয়ে আলোচনা করেন।
৫. আত্মহত্যা : ডুর্খেইম তাঁর "Third Famous" গ্রন্থে "The suicide" এর সংখ্যাতাত্ত্বিক বিবরণ ও বিশ্লেষণ প্রদান করেন। তিনি এ গ্রন্থে সামাজিক সংহতির সাথে আত্মহত্যার সম্পর্ক আলোচনা করেন।
আর আত্মহত্যাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ডুর্খেইম একটি অবস্তুগত সামাজিক উপাদান তথা সামাজিক প্রবাহ এ প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন।
তিনি তাঁর The Rules of Sociological Method' গ্রন্থে এ প্রত্যয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। ডুর্খেইম তিন ধরনের আত্মহত্যার কথা বলেছেন । যথা-
(ক) অহমিকাবাদী আত্মহত্যা : মূলত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে যখন বাঁধন দুর্বল হয়ে যায়, তখন এক ধরনের আত্মহত্যা পরিলক্ষিত হয়, যাকে বলা হয় অহমিকাবাদী আত্মহত্যা। সাধারণত যে সমাজে সংহতি কম থাকবে, সে সমাজে অহমিকাবাদী পরিলক্ষিত হবে।
(খ) আদর্শহীন আত্মহত্যা : ডুর্খেইম মনে করেন একটি সমাজে অর্থনৈতিক মন্দা, অর্থনৈতিক প্রাচুর্য ও বিভিন্ন কারণে যদি আদর্শহীনতা দেখা দেয়, তাহলে আদর্শহীন আত্মহত্যা সংঘটিত হয় ।
(গ) স্বার্থহীন আত্মহত্যা : ব্যক্তি যখন কোন সামাজিক উদ্দেশ্য আত্মহত্যা করে, তখন তাকে স্বার্থহীন আত্মহত্যা বলা হয় ।
এখানে মূলত ব্যক্তির আত্মহত্যা সমাজের অন্য কারও দ্বারা নিবেদিত। "Suicide when there are socially enoyed." ডুর্খেইম এ ধরনের আত্মহত্যার দু'টি উদাহরণ দেন। যথা-
(ক) আদিম সমাজে যখন একজন বৃদ্ধলোক দলের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য Suicide করত । এবং
(খ) ভারতে বিধবাদের মৃত স্বামীদের সাথে সহমরণের ঘটনাকে এ ধরনের Suicide বলা হয় ।
৫. ধর্মীয় জীবনের উপাদান : ধর্ম সংক্রান্ত সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হলেন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ডুর্খেইম "The. Elementary Forms of Religious Life" গ্রন্থে ডুর্খেইম ধর্ম সম্পর্কে তাঁর মতবাদকে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করেছেন ।
Durkheim Primitive Society-তে Mana বা অলৌকিক শক্তির অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন। Totem বা পবিত্র বংশচিহ্ন হলো আদিম মানুষের সামাজিক বা যৌথ জীবনযাত্রার নিদর্শন। Mana এবং Totem উভয়ই পবিত্র এব উভয়ই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
৬. সামাজিক সংস্কার : ডুর্খেইম সামাজিক সংস্কার বিশ্বাস করতেন। তিনি মনে করতেন সমাজের সমস্যা হচ্ছে নিরাময়যোগ্য, যার নিরাময় সম্ভব সামাজিক বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে।
এমিল ডুর্খেইমের মতে, “আধুনিক সমাজের সমস্যা হচ্ছে জৈবিক সমস্যা, যা সমাজ কাঠামোতে সংস্কার সাধন করে দূর করা সম্ভব।
৭. পুঁজিবাদী সমাজ : ডুর্খেইম পুঁজিবাদী সমাজের সম্পদ কেমন হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি এ সমাজে মালিক ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষের অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন।
তিনি মার্কস পন্থিদের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেতন যে, তখন কার সামাজিক সংহতি সৃষ্টি হয়েছিল সামাজিক নৈতিকতার অভাব থেকে।
আর এ নৈতিকার সংহতি তখনই পূরণ করা যাবে যখন একই শিল্পের সকলে মিলে একই দল সৃষ্টি করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ডুর্খেইমের সমাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এমিল ডুর্খেইম রক্ষণশীলতার সপক্ষে এবং সামাজিক দ্বন্দ্বের দ্বন্দ্বের এক ধরনের ক্রিয়াবাদী বিশ্লেষণ করেছেন।
তবে তিনি সামাজিক ঘটনাবলির মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণকে প্রত্যাখ্যান করেন। সমাজবিজ্ঞানে তাঁর এতদসত্বে অবদান থাকা সত্ত্বেও তিনি সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। তবুও সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের কথা আমরা কখনো অস্বীকার করতে পারব না।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি পটভূমি ও ক্রমবিকাশ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি পটভূমি ও ক্রমবিকাশ । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।