সমাজবিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সমাজবিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সমাজবিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর ।
সমাজবিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর |
সমাজবিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর
- অথবা, সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের পারস্পরিক সম্পর্ক পর্যালোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : সমাজবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় মানুষ, তেমনি মনোবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় মানুষের আচরণ নিয়ে আলোচনা করা।
সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। সমাজবিজ্ঞান ব্যক্তি আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গী ও ধ্যানধারণা ইত্যাদি আলোচনায় মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে থাকে।
মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণ বিশ্লেষণসহ সমাজবিজ্ঞানের তথ্যের উপর নির্ভর করে। সুতরাং সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান মানব সেবায় একে অপরের উপর নির্ভরশীল ।
→ সমাজবিজ্ঞান : যে শাস্ত্র সমাজ সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করে তাকে সমাজবিজ্ঞান বলে। সমাজবিজ্ঞান সমাজের উৎপত্তি, গঠন, কাঠামো বিকাশ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে।-
মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ Psychology. Psychology শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ Psyche এবং Logos থেকে উৎপত্তি গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতে, মনোবিজ্ঞান মন বা আত্মা সম্পর্কিত বিজ্ঞান ।
ক্রাইডার এবং তাঁর সহযোগীদের মতে, “মনোবিজ্ঞানের আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞানসম্মত অনুধাবন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।”
মনোবিজ্ঞানীর জনক জার্মান মনোবিজ্ঞানী উইল হেল্ম উউন্ড -এর মতে, “মনোবিজ্ঞান হলো চেতনার বিজ্ঞান।”
পরিশেষে বলা যায় যে, মনোবিজ্ঞান হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষ ও প্রাণীর আচরণ নিয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে গবেষণা করে ।
→ সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক : সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান উভয়ই বিজ্ঞানের দুটি শাখা। নিম্নে সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যকার সম্পর্ক আলোচনা করা হলো :
১. অভিন্ন বিষয়বস্তু : সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু এক ও অভিন্ন। সমাজবিজ্ঞান ব্যক্তির সাথে সমাজের সম্পর্ক আলোচনা করে।
অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞান ব্যক্তির আচরণ বিশ্লেষণ করে । উভয় চিন্তাই ব্যক্তির আচরণ নিয়ে আলোচনা করে ।
২. পরস্পর নির্ভরশীল : সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। সমাজবিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে মনোবিজ্ঞানের আলোচনা সফল হতে পারে না।
সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় সাহায্যে করে। অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান ছাড়া সমাজের মানুষ সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা যায় না ।
৩. গবেষণাকার্য : গবেষণা ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। সমাজবিজ্ঞান তার গবেষণাকার্য পরিচালনার জন্য মনোবিজ্ঞানের সহায়তা নিয়ে থাকে। মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু বল, প্রজন্ম। এগুলো সমাজবিজ্ঞানের গবেষণায় সহায়তা করে ।
৪. গভীর যোগাযোগ বিদ্যমান : সমাজবিজ্ঞান সমাজস্থ মানুষের সার্বিক দিক আলোচনা করে। মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।
সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে গভীর যোগাযোগ বিদ্যমান। রডিমার এবং অন্যদের মতে, আচরণ ও মানসিক জীবনের ধারাবাহিক অনুধ্যান হিসেবে মনোবিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করে।
৫. সমস্যা সমাধানে নির্ভরতা : সমস্যা সমাধানে সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান একে অপরের উপর নির্ভরশীল। সমাজবিজ্ঞান সামাজিক সমস্যা সমাধানে মনোবিজ্ঞানের তত্ত্ব ব্যবহার করে। মনোবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভরশীল
৬. মানব কল্যাণ সাধন : সমাজবিজ্ঞানের সকল কার্য পরিচালিত হয় মানবকল্যাণ সাধনে। মানব কল্যাণের জন্য সমাজবিজ্ঞান মানুষের বসবাস উপযোগী সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলেন।
মানুষের সকল সামাজিক সমস্যা হলো মানবকল্যাণ সাধন করা। মানুষের কল্যাণের জন্য আচরণ নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা করে।
৭. উভয়ই তথ্যভিত্তিক : সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান উভয়ই তথ্যনির্ভর। সমাজবিজ্ঞান অতীতের তথ্যের উপর নির্ভর করে গবেষণা পরিচালনা করে । মনোবিজ্ঞানও একটি তথ্যভিত্তিক বিজ্ঞান। বিভিন্ন তথ্যের আলোকে তারা একটি গবেষণা পরিচালনা করে ।
৮. আচরণ বিশ্লেষণ : সমাজবিজ্ঞান সমাজের মানুষের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করে। মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণ নিয়ে গবেষণা করেন। আচরণ বিশ্লেষণ উভয়ই একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
৯. মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ : সমাজবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞান প্রকৃতপক্ষে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সমাজে বিরাজিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
সমাজকে জানতে হলে মনোবিজ্ঞানে জ্ঞান যেমন প্রয়োজন, তেমনি মনোবিজ্ঞানের গবেষণা পরিচালনার জন্য সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান আবশ্যক ।
১০. বিজ্ঞান হিসেবে : বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সমাজবিজ্ঞান প্রমাণসাপেক্ষে একটি বিজ্ঞান হিসেবে খ্যাত, তেমনি মনোবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান যা গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজের বিজ্ঞান। যা সমাজ ও সমাজের মানুষ নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করে। মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণ নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত পর্যালোচনা করে।
উভয় বিজ্ঞানের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। উভয় বিজ্ঞান মানব কল্যাণে কাজ করে। সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান উভয়ই মানবজীবনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সমাজবিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সমাজবিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।