শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বুয়াইয়াদের অবদান আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বুয়াইয়াদের অবদান আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বুয়াইয়াদের অবদান আলোচনা কর।
শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বুয়াইয়াদের অবদান আলোচনা কর |
শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বুয়াইয়াদের অবদান আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ইতিহাস এর পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকতে কেন বা চায়। মধ্যযুগীয় প্রত্যক্ষ শাসক কিছু ব্যতিক্রম ধর্মীয় কার্য সম্পাদন করে স্মরণীয় এবং বরণীয় হওয়ার চেষ্টা করেছেন। আব্বাসীয় খিলাফত মূলত ছিল জ্ঞানবিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে স্বর্ণযুগ।
১০৪৫-১১৫৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আব্বাসীয় খিলাফত বুয়াইয়া রাজবংশ শাসনকার্য পরিচালনা করেন। রাজন্যবর্গ এবং খিলাফতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে করতেন শিক্ষা ও সংস্কৃতির চর্চা ব্যতীত রাজ্যের সম্প্রসারণ সম্ভব নয়।
তারই ধারাবাহিকতায় বুয়াইয়ারা শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখেন। কিন্তু বুয়াইয়াদের প্রথমে সারির শাসক শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তেমন অবদান রাখতে না পারলেও পরবর্তী শাসকগণ ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন।
→ বুয়াইয়া শাসকদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি অবদান : নিয়ে বুয়াইয়া রাজন্য বর্গের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে অবদান তা তুলে ধরা হলো :
১. সাহিত্য ও আরবি ভাষা : বুয়াইয়া প্রতাপ বলয়ের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে আরবি ভাষার প্রভাব ছিল অত্যন্ত। কেননা উমাইয়া এবং আব্বাসীয় শাসনামলে কতিপয় অঞ্চল ব্যতীত প্রায় অঞ্চলের আরবি ভাষার ব্যবহার ব্যাপক পরিলক্ষিত হয়।
প্রথম দিকে বুয়াইয়া শাসকদের অন্যতম দুজন উজির ইবনুল আমীদ ও ইবনুল আব্বাস ঐ সময়ের আরবি ভাষার প্রথিতযশা পণ্ডিত ছিলেন। আবুল কাফাজ যিনি বুয়াইয়াদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিখ্যাত গ্রন্থ আল-আগানী ও আন নাদীম তার ফি হরিসত সংকলন করেন। যা আরবি সাহিত্য ভান্ডারের অমূল্য সম্পদ হিসেবে পরিচিত
২. নাসারী রীতির প্রবর্তনকরণ : বুয়াইয়াদের আমলে একটি অন্যতম নতুন কীর্তি হলো আরবি লিখন পদ্ধতি প্রবর্তন, ইবনুল বাওয়ার যিনি আন-নাসাখী রীতির প্রবর্তন করেন।
৩. অনুবাদ ক্ষেত্র অবদান : শিক্ষা ও সংস্কৃতির বুয়াইয়াদের অবদানের মধ্যে অন্যতম হলো অনুবাদ ক্ষেত্র। বুয়াইয়াদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ অনুবাদ করা হয়। অনুবাদকদের মধ্যে ইবনুল আব্বাস অন্যতম।
যিনি প্রায় শতাধিক গ্রন্থাদি অনুবাদ করেন। যেমন- আল আগানীর(সংগীত গ্রন্থ) এবং আন নাদিন তার ফি হরিসত গ্রন্থ। এ গ্রন্থগুলো সাহিত্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।
৪. পণ্ডিত ব্যক্তিদের সাহায্য প্রদান : বুয়াইয়াদের শাসনামলে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যারা বিশেষ অবদান রাখেন তাদেরকে বুয়াইয়া শাসকদের পক্ষ থেকে বিশেষ বৃত্তি প্রদান করা হতো। কেননা তৎকালীন সময়ে শিক্ষা ও সংস্কৃতি পণ্ডিত ব্যক্তিদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
৫. গণিতবিদ্যায় অবদান : বুয়াইদের পৃষ্ঠপোষকতায় গণিতশাস্ত্র ও জ্যামিতিবিদ্যা সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠে। বিশেষ করে আজাদ-উদ- দৌলার সময় গণিত শাস্ত্রের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। তাদের সময় বিখ্যাত গণিতবিদ হলেন আবুল কাসিম আল আনতাকী।
তিনি ইউবিড ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি বই ও পাটি গণিতের উপর একটি রই লিখেন। এছাড়া আবু নাসর আল কালাওয়াদানী, আবুল ওয়াফা আল বুয়জানী আল নাসাবী বিখ্যাত ছিলেন।
৬. জ্যোতিষ শাস্ত্রের অবদান : বুয়াইয়াদের শাসনামলে জ্যোতিষবিদ্যায় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছিল। তাদের সময় জোতিষীরাও সমাজ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখতে সচেষ্ট হন। আজাদ-উদ-দৌলার এক জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ।
৭. প্রাসাদ নির্মাণ : বুয়াইয়াদের যে সংস্কৃতির ব্যাপক অবদান ছিল তা বুঝতে পারা যায় বিভিন্ন অট্টালিকা নির্মাণ ইত্যাদি থেকে। আর তাদের প্রাসাদ নির্মাণরত কাজ হলো তাদের অনন্য বহিঃপ্রকাশ ।
৮. গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা : বুয়াইয়াদের আমলে বিভিন্ন শহর গণগ্রন্থাগার গড়ে তোলা হয়েছিল। গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার মূল্য উদ্দেশ্য ছিল জনসাধারণের মেধাকে সম্প্রসারিত করা।
বিশেষ করে সিরাজ ইসফাহন, গীলান অঞ্চলে বুয়াইয়াদের শাসনামলে যে গ্রন্থাগারগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা বিশ্ববাসীর নিকট জ্ঞানবিজ্ঞান বিস্তারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।
৯. ইতিহাস শাস্ত্রে অবদান : আব্বাসীয় শাসনামল থেকে শুরু হয় ইতিহাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা। এ ধারাবাহিকতা চলতে থাকে বুয়াইয়া শাসনামল পর্যন্ত।
বুয়াইয়ারা অনেক সুখ্যাত ইতিহাসবিদদের ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেছেন। বুয়াইয়া সচিব আবু ইসহাক এবং ইবনে মিসওয়াকাহ ছিলেন ইতিহাস রচনার অন্যতম বিখ্যাত লেখক।
১০. বিভিন্ন সাহিত্য রচনায় পৃষ্ঠপোষক : আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়ারা আরবি সাহিত্যের পাশাপাশি ফারসিসহ কতিপয় ভাষায় সাহিত্য রচনা করেন। বুয়াইয়া শাসকগণ আরবি সাহিত্য ও বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি নব্য ফারসি সাহিত্যের ক্ষেত্রেও আন্তরিক আগ্রহের পরিচয় দেন।
প্রথমদিক বুয়াইয়ারা এর প্রতি আগ্রহী না থাকলেও পরবর্তী বুয়াইয়া শাসকগণ যথেষ্ট অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিল ।
১১. ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার : বুয়াইয়ারা শিয়া মতাবলম্বী হলেও তারা ধর্মীয় বিষয়ে ব্যাপক গুরুত্ব প্রদান করেন। কেননা ইসলাম ধর্ম একমাত্র বিশ্বে ধর্ম শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক গুরুত্ব প্রদান করেছে।
নামায, হজ্ব, যাকাত ও বিভিন্ন মাসয়ালা শিক্ষাদানের জন্য মসজিদগুলোতে নিয়মিত আসর এর ব্যবস্থা করা হতো ।
১২. মক্তব শিক্ষার প্রচলন : বিশেষ এলাকায় শিক্ষা পৌছানোর লক্ষ্য ধর্মীয় দৃষ্টিতে মক্তব শিক্ষার ব্যাপক প্রচলন করেন। আরবি শিক্ষা প্রদান, কুরআন, এ হাদিস চর্চায় মনোনিবেশের ব্যবস্থার লক্ষ্যই কেবল বুয়াইয়া শাসকরা মক্তক কেন্দ্রীক শিক্ষার প্রচলন করেন।
১৩. চিকিৎসাশাস্ত্রে বুয়াইয়াদের কৃতিত্ব : চিকিৎসাশাস্ত্রে বুয়াইয়াদের বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়েছিল। কেননা বিখ্যাত চিকিৎসক আজাদ এর সময়ে হাসপাতালের পার্শ্বে একটি মেডিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আজাদ-উদ-দৌলা। এ সময়ের বিখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন আলী ইবনে আল আব্বাস আল মাজুসী। যিনি স্বল্পমূলে চিকিৎসা প্রদান করতেন।
১৪. হাসপাতাল নির্মাণ : বুয়াইয়াদের যে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধন করেছিলেন তার অন্যতম পরিচয় হলো নতুন নতুন স্থাপনা।
জনসাধারণের মঙ্গল সাধন করা এবং সঠিক সেবা প্রদান করার বুয়াইয়ারা হাসপাতাল নির্মাণ করেন এবং সেখান থেকে যেন জনসাধারণ বিনামূল্যে সেবা গ্রহণ করতে তারও ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
১৫. ব্যাকরণবিদ্যার সংস্কার : ব্যাকরণ শব্দের অর্থ হলো বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। আর এই বিষয়টি উপলব্ধি করে আরবি ও ফারসি ভাষার ব্যাকরণ তৈরি করেন। আর এতে জনসাধারণ যেন সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং
এর সাথে সঠিক জ্ঞানার্জন করতে উৎসাহ যোগ করে শিক্ষা সংস্কৃতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে পারেন সে বিষয়টি এর সাথে সংযোজিত হয়েছিল।
১৬. শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শিক্ষা গ্রহণের প্রধান মাধ্যম বলা হয়ে থাকে। বুয়াইয়া শাসকগণ শিক্ষার চরম উন্নতি করার নিমিত্তে দারুল ইলম একটি শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণ করেন ।
১৭. ধর্মীয় সংস্কৃতি পরিচালনা : বুয়াইয়া শাসকগণ ধর্মীয় শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে জনগণকে আনন্দ-ফুর্তি প্রদানের জন্য ইসলামি সংগীত এর ব্যাপক প্রচলন করেন।
মূলত ইসলামিক বিষয়গুলির ভিত্তি করে গানের আসর বসতো। তা কেবল উদ্দেশ্য ছিল জনসাধারণকে সাময়িক আনন্দ প্রদান করা ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় স্বর্ণ যুগে | বুয়াইয়ারা ক্ষমতা দখল করে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে যে অবদান রেখেছেন সত্যিই তা কৃতিত্বের দাবিদার।
বিশেষজ্ঞ আজাদ-উদ- দৌলা ও বাহা-উদ-দৌলা যিনি শিক্ষা ও সংস্কৃতিক চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। আব্বাসীয়দের যেমন জ্ঞানবিজ্ঞান ব্যাপক ভূমিকা ছিল তেমনি ক্ষুদ্র রাজবংশ হয়েও বুয়াইয়া শাসকবর্গ ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বুয়াইয়াদের অবদান আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বুয়াইয়াদের অবদান আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।