সেলজুকদের শ্রেষ্ঠ সুলতান মালিক শাহের শাসনকাল বর্ণনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সেলজুকদের শ্রেষ্ঠ সুলতান মালিক শাহের শাসনকাল বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সেলজুকদের শ্রেষ্ঠ সুলতান মালিক শাহের শাসনকাল বর্ণনা কর।
সেলজুকদের শ্রেষ্ঠ সুলতান মালিক শাহের শাসনকাল বর্ণনা কর |
সেলজুকদের শ্রেষ্ঠ সুলতান মালিক শাহের শাসনকাল বর্ণনা কর
উত্তর ভূমিকা : সেলজুকদের আবির্ভাব ইসলামের ইতিহাসে তথা আব্বাসীয় খিলাফতে একটি নবযুগের সূচনা করেছিল। একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে তারা আব্বাসীয় খেলাফত এবং সুন্নি ইসলামকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছিল।
মালিক শাহের আমলে সেলজুকগণ তাদের ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন। তার রাজত্বকালে মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমানা চতুর্দিকে সম্প্রসারিত হয়েছিল।
→ মালিক শাহের কৃতিত্ব : সেলজুকদের মধ্যে মালিক শাহ্ ছিলেন শ্রেষ্ঠ সুলতান। তিনি প্রায় ২০ বছর কৃতিত্বের সাথে শাসন কার্য পরিচালনা করেন। শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে তার কৃতিত্ব আলোচনা করা হলো :
১. ক্ষমতা লাভ : ১০৬৩ সালে তুগ্রিলের মৃত্যুর পর তদীয় ভ্রাতুষ্পুত্র আলাপ আরসালান ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১০৭৩ সালে মৃত্যু হলে তার পুত্র মালিক শাহ্ জালাল উদ-দৌলা উপাধি ধারণ করে সেলজুক সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ১০৭৩ থেকে ১০৯২ সাল পর্যন্ত কৃতিত্বের সাথে পরিচালনা করেন ।
২. সাম্রাজ্য সুসংহত করেন : মালিক শাহের শাসনামলে মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমানা পূর্বে কাশ্মীর থেকে পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত এবং উত্তরে জর্জিয়া থেকে দক্ষিণে ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। এতদসত্ত্বে তিনি সাম্রাজ্য সুসংহতকরণ | এবং শান্তিপূর্ণভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন ।
৩. উপযুক্ত উজির নিয়োগ : মালিক শাহ্ তার পিতার আমলের বিখ্যাত উজির নিজামূল মূলককে স্বপদে বহাল রাখেন ৷ নিজামের বিচক্ষণতা, কর্মনৈপুণ্যতা, দূরদর্শিতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার জন্যই মালিক শাহের রাজত্বকাল চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। নিজামের অসামান্য অবদানের জন্য সুলতান তাকে আতাবেগ উপাধিতে ভূষিত করেন।
৪. শাসনতন্ত্র প্রণয়ন : নিজামুলমূলক একজন দক্ষ ও বিচক্ষণ লোক ছিলেন। তিনি সুলতান মালিক শাহের অনুরোধে রাজ্যশাসন প্রণালীর উপর সিয়াসতনামা একটি বিখ্যাত গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেন। ১০৯২ সালে এটি সম্পাদিত হয়।
৫. শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা : নিজামুল মূলক একজন বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। সুলতান মালিক শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজাম শিক্ষা সম্প্রসারণকল্পে বাগদাদে নিজামিয়া মাদ্রাসা নামে ইসলামের সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।
ইসলামের শ্রেষ্ঠ ধর্মতাত্ত্বিক ইমাম গাজালি এখানে অধ্যাপনা করেন। মালিক শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় গাজালী শিয়া মতবাদের সমালোচনা করেন এবং সুন্নি মতবাদ প্রচার করেন।
৬. জ্যোতির্বিদ্যার পৃষ্ঠপোষকতা : নিজামুলমূলকের পরামর্শে মালিক শাহ ১০৭৫ সালে নিশাপুরে একটি জ্যোতির্বিদ সম্মেলন আহ্বান করেন। এই সম্মেলনে জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার সুষ্ঠু পরিকল্পনা | প্রণীত হয়।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিশাপুরে একটি মান মন্দির | নির্মাণ করা হয়। প্রখ্যাত দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়ামের তত্ত্বাবধায়নে বিজ্ঞানীগণ বিজ্ঞান সংস্কারে মনোনিবেশ করেন।
৭. জালালী পঞ্জিকা : বিখ্যাত দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ উমর খৈয়ামের নেতৃত্বে নিশাপুরে জ্যোতিবিদগণ চান্দ্র মাসের পরিবর্তে সৌর মাস অনুযায়ী গণনার প্রথা প্রচলন করেন।
প্রচলিত গণনা পদ্ধতির যাবতীয় ভুল সংশোধন করে একটি নতুন পঞ্জিকা তৈরি করা হয়। মালিক শাহ জালাল উদ্দিনের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় জালালী পঞ্জিকা।
৮. অর্থনৈতিক সংস্কার : মালিক শাহ্ রাজত্ব ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে একটি অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলেন। যা সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেন।
মালিক সুষ্ঠু কর আদায়ের জন্য সামন্ত প্রথা চালু করেন। সৈন্যদের মধ্যে ভূমি বন্টন করে সুষ্ঠু কর আদায়ের ব্যবস্থা করেন।
৯. জনহিতকর কার্যাবলি : তিনি প্রজাহিতৈষী শাসক ছিলেন। শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য তিনি সমগ্র সাম্রাজ্যে দৃষ্টি রাখতেন। হারুন-অর-রশীদ এবং মামুনের মত তিনিও বণিক, হজ্বযাত্রী ও পরিব্রাজকদের জন্য সরাইখানা নির্মাণ করেন ।
১০. স্থাপত্যশিল্পের বিকাশ : স্থাপত্যশিল্পের দিক দিয়ে মালিক শাহের রাজত্বকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইস্পাহানের জামে মসজিদ নির্মাণে (১০৭৫ খ্রি.) সেলজুক স্থাপত্যরীতি নিজাম উল মূলক প্রথম প্রবর্তন করেন।
এর অনুকরণে আরদিস্তানে জাওয়ারা এবং গুলপাইগানের জামে মসজিদ নির্মিত হয়। এছাড়া পারস্য আমলে অসংখ্যা স্থাপত্যরীতির মধ্যে সাভা মসজিদ দামগান মসজিদ বিজ্ঞান মিনার ও রায়ের সমাধি উল্লেখযোগ্য ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মালিক শাহের আমলে সেলজুক বংশ এবং আব্বাসীয় খেলাফতের গৌরব বৃদ্ধিতে গতিশীলতা এসেছিল তা খুব কম শাসকের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল।
তিনি সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ঐক্য ও সংহতি রক্ষার চেষ্টা করেছেন। সেজন্য তাকে সেলজুক বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক বলা হয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সেলজুকদের শ্রেষ্ঠ সুলতান মালিক শাহের শাসনকাল বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সেলজুকদের শ্রেষ্ঠ সুলতান মালিক শাহের শাসনকাল বর্ণনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।