সেলজুকদের উত্থান কাহিনী বর্ণনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সেলজুকদের উত্থান কাহিনী বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সেলজুকদের উত্থান কাহিনী বর্ণনা কর ।
সেলজুকদের উত্থান কাহিনী বর্ণনা কর |
সেলজুকদের উত্থান কাহিনী বর্ণনা কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় খিলাফত সেলজুক তুর্কীদের উত্থান ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মধ্যে এশিয়ার বিখ্যাত সেলজুকগণ প্রথমে পারস্য এবং পরে গজনী সুলতান মাহমুদের রাজ্য হানা দিয়ে ক্রমে এ অঞ্চলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেন।
তারা ধ্বংস প্রায় আব্বাসীয় সাম্রাজ্যকে পুনরুজ্জীবন দান করেন। তারা সাম্রাজ্যের একতা এবং সংহতি আনয়ন করেন। পরবর্তীকালে গৃহযুদ্ধ ও ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অগ্রাভিযানের কারণে মূলত তাদের পতন ঘটেছিল।
আমরা জানি দুর্বল আব্বাসীয় খলিফা কায়িম বিল্লাহ বুয়াইয়া আমিরদের দৌরাত্ম্য অতিষ্ঠ হয়ে সেলজুক নেতা তুঘ্রীলকে বাগদাদে আমন্ত্রণ জানালে সেলজুক বংশের উত্থান ঘটে।
→ ঐতিহাতিক পি. কে. হিট্টির মতে, সেলজুক তুর্কীদের আভির্বাবের মধ্যদিয়ে ইসলাম ও খলিফা সাম্রোজ্যের ইতিহাস একটি নতুন ও উল্লেখযোগ্য যুগের সূচনা ঘটে।
→ সেলজুক তুর্কীদের উত্থান ঘটনাবলি : মধ্য এশিয়ায় পারস্য আসার প্রায় একশত বছর পর বাগদাদে দুর্ধর্ষ সেলজুক জাতির উত্থান ঘটে। তাদের উত্থানের মধ্যে দিয়ে ইতিহাসে তারা এক বিরাট স্থান দখল করে আছে। নিম্নে সেলজুকদের উত্থানের ঘটনা তুলে ধরা হলো :
১. ট্রান্স অক্সিয়ানার বুখারায় সেলজুকদের আগমন : সেলজুক তুর্কীস্থানের কিরাঘিজ তুন্দ্রা অঞ্চলের ঘুজ বংশের অন্তর্গত ছিলেন। দশম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তাদের নেতৃত্ব দান করেন সেলজুক বিন তুকাক নামক এক দম্পতি তার নামানুসারে এ জাতি এবং বংশ সেলজুক নামে খ্যাতি লাভ করে ।
আনুমানিক ৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তারা সেলজুক বিন তুর্কীরা এর নেতৃত্বে তুর্কীস্থানের কিরঘিজ মালভূমি থেকে সয়ুহন নদী অতিক্রম করে পারস্যের অন্তর্গত দক্ষিণ ট্রান্স আক্সিয়ানার বোখারায় বসতি স্থাপন করেন। কালক্রমে তারা সুন্নি ইসলাম গ্রহণে করেন এবং সেবায় নিজেদের নিয়জিত করেন।
২. পূর্ব পারস্যে আগমন এবং সুলতান মাহমুদের সাথে দ্বন্দ্ব : এক পর্যায় সেলজুক পুত্র আলাপ আরসনালের নেতৃত্বে সেলজুক অক্সাল তথা আমু নদী অতিক্রম করে পূর্ব পারস্যে বসতি স্থাপন করেন।
নিজের রাজ্যের পাশে দুর্ধর্ষ শত্রুর উপস্থিতি টের পেয়ে গজনীর সুলতান মাহমুদ তাদের একটি দলকে দলপতি সেলজুকসহ বন্দি করেন এবং খোরাসানে নির্বাসিত করেন। এখানেই তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি সুযোগ ঘটে এবং তাদের মনে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে আধিপত্য প্রতিস্থাপনের কামনা বাঁধে ।
৩. সেলজুক কর্তৃক গজনী রাজ্য দখল : ১০৩০ সালে সুলতান মাহমুদ এর মৃত্যুর সাথে সাথে গজনী বংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। সুলতান মাহমুদের দুর্বল পুত্র এবং উত্তরাধিকারী মাসুদ সেলজুকদের প্রতিরোধে অক্ষম ছিলেন।
ফলে সেলজুকদের অভ্যুত্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ সময় সেলজুকগণ গজনী রাজ্য দখল করে এবং ইসলামি ও সামানী রাজ্যও দখল করে।
৪. আল বাসাসিরি বিদ্রোহ দমন : তুঘ্রিল বাগদাদে আগমনের পূর্বে আল বাসাসিরি নামক জনৈক তুর্কী নেতা বুয়াইয়া আমির মালিক এবং রহিমকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেকে আমির উমারাহ বলে ঘোষণা করেন।
কিন্তু তুরঘিল বেগ বাগদাদে আগমনের পর আল বাসাসিরি পলায়ন করেন। তুগ্রিল বাগদাদে নিজ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করে পারস্য বিদ্রোহ দমনে গেলে এ সুযোগে বাসাসিরি পুনরায় বাগদাদে এসে
আব্বাসীয় খলিফার স্থলে মিসরের ফাতমীয় বংশের খলিফা মুনতাসির বিল্লাহকে বাগদাদে খলিফা বলে ঘোষণা করেন। এ সংবাদ পেয়ে তুঘিল বাগদাদ ফিরে আসেন এবং বাসাসিরিকে পরাজিত ও হত্যা করেন।
৫. তুগ্রিলের বাগদাদে প্রবেশ : ১০৫৫ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় খলিফা কায়িম বিলাহ তার বুয়াইয়া আমিরের সীমাহীন দৌরাত্ম্য অতিষ্ঠ হয়ে সেলজুক নেতা তুগ্রিলের সাহায্য কামনা করেন।
খলিফা আমন্ত্রণে পেয়ে তুমিল তার দুর্ধর্ষ তুর্কীবাহিনী নিয়ে বাগদাদে প্রবেশ করেন। তুমিল ১০৫৫ সাল বাগদাদে প্রবেশ করলে বুয়াইয়া আমির মালিক আর রহিমকে পরাজিত করেন।
৬. হিস্টের যুদ্ধ : তুগ্রিল বেগ ১০৩৭ সালে দুর্বল গজনী নৃপতি মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে হিস্টের যুদ্ধে তাকে পরাজিত করা হয়।
এ যুদ্ধে জয়লাভের মধ্যদিয়ে সেলজুক শক্তি বহুগুণে বেড়ে যায় এবং তারা আদি সেলজুক নেতার পৌত্র তুমিল বেগকে দলপতি নির্বাচিত করে। ১০৪১ সালের মধ্যে তারা সমগ্র গজনী রাজ্য দখল করতে সক্ষম হন।
৭. সেলজুক বংশ প্রতিষ্ঠা : বস্তুত গজনী বংশের ধ্বংস্তূপের উপর সেলজুক শক্তি ও সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সাম্রাজ্য দখলের পর ১০৪৩ সালের মধ্যে তুগ্রিলের নেতৃত্বে সেলজুকগণ পারস্যের তারারিস্তানে হামাদান, রাই, ইস্পাহান, পারসিক, ইরাক প্রভৃতি স্থানে প্রভুত্ব কায়েম করেন।
এভাবে তুঘিল পারস্য সেলজুকে বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই ছিলেন এ বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তাদের আদি নেতা সেলজুক বিন বায়হাকের নামানুসারে এ বংশের নামকরণ করা হয় সেলজুক বংশ।
৮. রাজধানী স্থাপন : সুলতান হিসেবে তুমিল আব্বাসীয় সাম্রাজ্যর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেও তিনি খলিফা আল কায়েমকে শ্রদ্ধা করতেন । খলিফার কর্তৃত্ব যাতে এতটুকু বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য তিনি খোরাসানের মর্ভে নগরীতে রাজধানী স্থাপন করেন।
বস্তুত সেলজুক সুলতান তুঘিল বাগদাদে উপস্থিত না থেকে একজনি প্রতিনিধির মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি ছিলেন সেলজুকের আদি নেতার পৌত্র (১০৫৫-৬৩ খ্রিস্টাব্দ) মোট আট বছর শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।
সেলজুক সুলতান তুলি বেগ অতি অল্পকালের মধ্যদিয়ে খারিজ বলখ প্রভৃতি অঞ্চল দখল করেন । তুঘ্রিল বেগ একজন বিদ্যোৎসাহী শাসক ছিলেন। একজন মহান শাসক হিসেবে তার নাম ইতিহাসে রচিত হয়ে আছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বুয়াইয়া সুলতানদের ধ্বংসস্তুপের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেলজুক বংশ। সেলজুক সুলতানগণ তাদের নিজ দক্ষতা, কর্মক্ষমতা দ্বারা তাদের শাসন বংশকে ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজবংশ পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তাদের দীর্ঘ সেবায় আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। ইসলামের ইতিহাসে যে সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশ শাসন পরিচালনায় অপরিসীম ভূমিকা পালন করেছিলেন তার মধ্যে সেলজুক বংশ অন্যতম।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সেলজুক বংশের উত্থানের ঘটনা বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সেলজুক বংশের উত্থানের ঘটনা বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।