সেলজুক তুর্কিদের আবির্ভাব ইসলাম ও খেলাফতের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সেলজুক তুর্কিদের আবির্ভাব ইসলাম ও খেলাফতের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সেলজুক তুর্কিদের আবির্ভাব ইসলাম ও খেলাফতের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল।
সেলজুক তুর্কিদের আবির্ভাব ইসলাম ও খেলাফতের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল |
সেলজুক তুর্কিদের আবির্ভাব ইসলাম ও খেলাফতের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল
উত্তর : ভূমিকা : তুর্কি বংশোদ্ভূত সেলজুক সুলতানদের উত্থান ইসলামের ইতিহাসে এবং আব্বাসীয় খেলাফতে এক নব যুগের সূচনা করে। একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে তারা এগারো শতকে সুন্নি ইসলাম এবং আব্বাসীয় খেলাফতকে চরম বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন।
তারা শাসনব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন এবং শিক্ষার প্রসার ঘটান। আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে তারা ব্যাপক সমৃদ্ধি আনয়ন করেন।
→ সেলজুকদের পরিচয় : সেলজুকরা তুর্কিস্থানের কিরঘিজ তুন্দ্রা অঞ্চলের তুর্কি গোত্রীয় ঘুজ বা ঘুমুজ বংশোদ্ভূত ছিলেন। তারা ৯৫৬ সালে সেলজুক বিন রায়হাকের নেতৃত্বে তুর্কিস্থানের কিরঘিজ মালভূমি ছেড়ে বুখরায় এসে বসতি স্থান করেন।
কালক্রমে তারা সুন্নি ইসলাম গ্রহণ করে ইসলামের ধারক বাহক হয়ে উঠেন। এর পর সেলজুকের পুত্র আরসালানের নেতৃত্বে তারা পারস্যে এসে বসতি স্থাপন করেন। সেলজুক বিন রায়হাকের নাম অনুসারে এই বংশের নাম সেলজুক করা হয় ।
→ ইসলাম এবং খিলাফতে সেলজুকদের অবদান : নিম্নে ইসলাম এবং খিলাফতে সেলজুকদের অবদান আলোচনা করা হলো :
১. বুয়াইয়াদের হাত থেকে ইসলাম রক্ষা ; বুয়াইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা মুইজ-উদ্-দ্দৌলা তুর্কিদের বিতাড়িত করে খিলাফতের সকল ক্ষমতা হস্তগত করেন। খুৎবা এবং মুদ্রায় খলিফার নামের সাথে তার নামও মুদ্রিত হতে থাকে।
এক পর্যায়ে মুইজ খলিফা মুসতাকফিকে অন্ধ করে সিংহাসনচ্যুত করেন। এভাবে বুয়াইয়াদের অত্যাচার বেড়ে গেলে ১০৫৫ সালে দুর্বল কাইম বিল্লাহ সেলজুকের পুত্র তুগ্রিলকে বাগদাদে আমন্ত্রণ জানালে তিনি ৮ ডিসেম্বর বাগদাদ দখল করেন।
২. সুসংঘবদ্ধ খিলাফত প্রতিষ্ঠা : বুয়াইয়া অত্যাচার আব্বাসীয় খেলাফতকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলে। সেলজুকগণ বুয়াইয়াদের ধ্বংস করে আব্বাসীয়দের পতন রোধ করতে সক্ষম হন এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুদের নির্মূল করে একটি সসংঘবদ্ধ খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৩. সুন্নি ইসলামের সেবা : সেলজুক সুলতানগণ সুন্নি ইসলামের ধারক বাহক ছিলেন। তাদের উত্থানকে শিয়াদের উপর সুন্নিদের প্রাধান্য বলা যেতে পারে।
বুয়াইয়ারা ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত, এজন্য তারা আব্বাসীয়দের সহ্য করতে পারতেন না। ফলে সেলজুকগণ ক্ষমতা গ্রহণ করে শিয়াদের সকল প্রভাব মুক্ত করেন ।
৪. শাসনতন্ত্র প্রণয়ন : সেলজুক উজির নিজামুলমূলক একজন কৌশলী রাজনৈতিক ছিলেন। তিনি মালিক শাহের অনুরোধে শাসনতন্ত্রের উপর সিয়াসত নামা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।
১০৯২ সালে এটি সম্পাদিত হয় । এতে দরবার বিচারকার্য, সামরিক ও অর্থনৈতিক কার্যাবলির উপর ব্যবহারিক উপদেশ প্রদান করা হয়েছে। এতে তিনি রাজতন্ত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
৫. শিক্ষার সম্প্রসারণ : মাক শাহের উৎসাহে নিজামুলমূলক শিক্ষা সম্প্রসারণকল্পে বাগদাদে নিজামিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
এটি ছিল প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুন্নি ও আশারী মতবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ইমাম গাজালি এখানে অধ্যাপনা এবং শেখ শাদি এখানে অধ্যয়ন করেন।
৬. জ্যোতির্বিদ্যার বিকাশ সাধন : উজির নিজামুলমূলকের পরামর্শে মালিক শাহ্ ১০৭৫ সালে নিশাপুরে একটি জ্যোতির্বিদ সম্মেলন আহ্বান করেন।
এই সম্মেলনে জ্যোতির্বিদ চা পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিথাপ একটি মান মন্দির স্থাপন করা হয়। ওমর খৈয়ামের নেতৃত্ত্ব এখানে বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়।
৭. জালালী পুঞ্জিকা উদ্ভাবন : ওমর খৈয়াম চন্দ্র মাসের পরিবর্তে সৌরমাস অনুযায়ী গণনার প্রথা চালু করেন প্রচলিত পদ্ধতির ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করে তিনি একটি পুথিকা তৈরি করেন। মালিক শাহ জালাল উদ-দৌলার নামানুসারে এটির নামকরণ করা হয় জালাল পুঞ্জিকা ।
৮. অর্থনৈতিক সংস্কার : সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করার জন্য মালিক শাহ্ একটি অর্থব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। মালিক শাহ্ সুষ্ঠু কর ব্যবস্থার জন্য জায়গির প্রথার প্রচলন করেন এবং ভূমি বণ্টন করে নিয়মিত কর আদায়ের ব্যবস্থা করেন।
৯. স্থাপত্যশিল্পের বিকাশ : সেলজুক স্থাপত্য শিল্প, পোড়ামাটির ইট কারুকার্য খচিত মসজিদ, মিনার ও মুদ্রা মূর্ত হয়ে আছে। সেলজুক রাজত্বের অতুলনীয় স্থাপত্যের মধ্যে তুঘিলের সমাধি (১১৩৯) ইস্পাহানের মসজিদ (১০৭৫) জাওয়ারা (১৯৫৩) ওগপাই গানের জামে মসজিদ। সর্বশেষ সেলজুক সুলতান সালজারের সমাধি মার্ভে নির্মিত হয়।
জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি : সুলতানগণ প্রজাহিতৈষী শাসক ছিলেন, শান্তি-শ -শৃংঙ্খলার মালিক শাহ সর্বদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। খলিফা মামুনের মত তিনি হজ্জ যাত্রী, বণিক ও পরিব্রাজকদের নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা করেন এবং সরাইখানা নির্মাণ করেন। কৃষি শিল্প ও বাণিজ্যের প্রভূত উন্নতি করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেলজুক বংশ সুন্নি ইসলামের পুনরুজ্জীবন দান করেন। আব্বাসীয় খেলাফতকে বুয়াইয়াদের হাত থেকে রক্ষা করে তৎকালীন সময়ে মুসলমানদের গৌরব বহুলাংশে বৃদ্ধি করেন। তারা মুসলমানদের গৌরব ও ঐক্য রক্ষায় ইস্পাত কঠিন ছিলেন। তাদের কারণে সাসানীয়রা আক্রমণ করতে সাহস পায়নি।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সেলজুক তুর্কিদের আবির্ভাব ইসলাম ও খেলাফতের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সেলজুক তুর্কিদের আবির্ভাব ইসলাম ও খেলাফতের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।