সেলজুক সুলতান আল্প আরসালান এর কৃতিত্ব ও চরিত্র নিরূপণ কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সেলজুক সুলতান আল্প আরসালান এর কৃতিত্ব ও চরিত্র নিরূপণ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সেলজুক সুলতান আল্প আরসালান এর কৃতিত্ব ও চরিত্র নিরূপণ কর।
সেলজুক সুলতান আল্প আরসালান এর কৃতিত্ব ও চরিত্র নিরূপণ কর |
সেলজুক সুলতান আল্প আরসালান এর কৃতিত্ব ও চরিত্র নিরূপণ কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসকদের অযোগ্যতা ও দুর্বলতার সুযোগে সাম্রাজ্যের মধ্যে কতকগুলো স্বাধীন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশ গড়ে উঠে, তার মধ্যে অন্যতম হলো সেলজুক রাজবংশ। ইসলামের ইতিহাসে সেলজুক তুর্কীদের উত্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
সেলজুক বংশের দ্বিতীয় শাসক ছিলেন আলপ আরসানাল । তিনি একজন স্বনামধন্য শাসক ছিলেন। রাজ্যের বিস্তৃতি, সংহতি বিধানের লক্ষ্য এবং বৈদেশিক শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধে তিনি যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন সত্যই তা প্রশংসার যোগ্য। চারিত্রিক গুণাবলির ক্ষেত্রেও তিনি এক মহান ব্যক্তি ছিলেন, ধর্মভীরু, প্রজাহিতৈষী ও ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন।
→ আলপ আরসনালের কৃতিত্বসমূহ : আলপ আরসানাল তার অপুত্রক পিতৃব্য তথা চাচা তুমিল বেগের মৃত্যুর পর ১০৬৩ খ্রিস্টাব্দে মহান সিংহাসন আরোহণ করেন এবং খলিফা আল কইম কর্তৃক সুলতান উপাধি লাভ করিয়া শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। নিম্নে আলপ আরসানালের কৃতিত্বসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. গৌরবোজ্জ্বল শাসনের সূচনা : সেলজুক সুলতান আলপ আরসালান মুসলিম সাম্রাজ্য সূদৃঢ় এবং সুসংহত করার জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল মুসলিম শাসনের শুভ সূচনা করেন।
পি.কে হিট্টি, সৈয়দ আমির আলী, শামছের উদ্দীন, এবং প্রখ্যাত ঐতিহাসিক লেনপুনসহ অধিকাংশ ঐতিহাসিক তুমিল বেগ, আলপ আরসালান ও মালিক শাহের শাসনামলকে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের শুভ সূচনা বলে মনে করেন ।
২. কেন্দ্রীয় রাজধানী পরিবর্তন : সেলজুক বংশের প্রতিষ্ঠাতা তুমিল বেগ পূর্বাঞ্চলের খোরাসান প্রদেশের মার্চে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু এটি রাজ্যের এক প্রান্ত অবস্থিত হওয়ায় বিদ্রোহ দমন ও বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য মোকাবিলায় সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।
একজন দূরদর্শী শাসক হিসেবে আলপ আরসানাল রাজ্যের কেন্দ্রভূমি ইস্পাহান নগরীতে রাজধানী স্থাপন করেন।
৩. সাম্রাজ্য সুসংহতকরণ : আলপ আরসানাল এর রাজত্বকালে তুর্কী উপজাতিগণ দলে দলে মুসলিম বাহিনীতে যোগদান করলে তার পক্ষে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল পুনর্দখল করে একটি সুসংহত রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।
যার ফলশ্রুতিতে মুসলিম সৈন্যবাহিনীর গৌরব, মানমর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। মুসলিম বাহিনী আরোও শক্তিশালী এবং অপ্রতিরোধ্য অার অধিকারী হয়। পরবর্তী শাসনামলে মালাজকদের যুদ্ধে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
৪. দুর্বল আব্বাসীয় খলিফাদের গভীর সম্পর্ক : আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়া সেলজুক, সাফফারী সামানীসহ অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের জন্মলাভ হয়েছিল।
বুয়াইয়া শাসকগণ দুর্বল আব্বাসীয় খলিফাদের দুর্বলতার সুযোগে একর্মণ্যতার এবং উদাসীনতার সুযোগে সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্ব আঘাত হানলেও সেলজুক সুলতানগণ খলিফাদের সাথে শ্রদ্ধা ও ভক্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন ।
আলপ আরসানাল ও তার পূর্বসূরি তুমিলের ম দুর্বল খলিফা কাইমের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন
৫. বাইজাস্টাইনদের সাথে সংঘর্ষের পটভূমি : তুম্রিলের সময় মুসলমানদের সাথে বাইজান্টাইনদের যে সংঘর্ষের সূচনা হয় আলপ আরসনালের সময় তা চরমাকার ধারণ করেন তুমিল ১০৬ খ্রিস্টাব্দে বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদেরকে কাপাডোসিয়া ও ফ্রিজিয়া থেকে বিতাড়িত কালেও এ অঞ্চলকে স্থায়ীভাবে জয় করেন আলপ আরসানাল ।
৬. মালাজকার্দের যুদ্ধ : আলপ আরসনালের কৃতিত্ব মধ্যে অন্যতম হলো মালাজকার্দের যুদ্ধে বাইজান্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করে বাইজান্টাইন শাসক রোমানাসকে বন্দি করে। মালাজকার্দের বর্তমান আজেরুস এবং ভ্যান নগরদ্বয়ের মধ্যস্থলে অবস্থিত একটি বিখ্যাত দুর্গ ছিল।
প্রথম দিকে মুসলমানদের শত্রুর সংখ্যাধিক্য অভিভূত হয়ে পড়লেও তাদের অদম্য যুদ্ধ স্পৃহার ফলে অচিরেই | বাইজান্টাইনগণ শোচনীয় পরাজয়বরণ করতে বাধ্য হয় ।
৭. সন্ধিপত্র : রোমানাস তার অনুচরবর্গসহ বন্দি হয়ে সুলতানের শিরিরে উপনীত হলেন। সেখানে তিনি তার পদ মর্যাদানুযায়ী | সদয় ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার প্রাপ্ত হন। দীর্ঘদিন ধরে আলাপ- আলোচনার পর সুলতান ও রোমানাদের মধ্যে শান্তি সন্ধি স্থাপিত হয়।
এ সন্ধির শর্তানুসারে রোমানাস তার কন্যাগণকে আলপ আরসানালের পুত্রদের সাথে বিবাহ দিতে ও বন্দির মোচনের জন্য দশ লক্ষ্য এবং বাৎসরিক রাজস্ব স্বরূপ তিন লক্ষ ষাট হাজার স্বর্ণমুদ্রা এবং সকল যুদ্ধ বন্দিদের ফিরিয়ে দিতে রাজি হন ।
৮. মালাজকার্দের যুদ্ধের গুরুত্ব : মালাজকার্দের যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তা আমরা ইসলামের ইতিহাসের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পারে। কেননা মধ্যে এশিয়ায় বাইজান্টাইনদের প্রভূত লোপ পেয়ে সেলজুক তুর্কী বাহিনীর প্রাধান্য বৃদ্ধি পায় ।
মালাজকাদের যুদ্ধে বিজয় লাভ করার পর আলপ আরসানাল তার পিতৃব্য পুত্র সুলায়মানের উপর অধিকৃত অঞ্চলের শাসনভার অর্পণ করেন এবং বিখিনিয়ার নাইসিয়া নগরীতে রাজধানী স্থানান্ত র করেন। মূলত মালাজকার্দের যুদ্ধে খ্রিস্টানদের প্রভুত্ব ধ্বংস হয় এবং ইসলাম বিজয় লাভ করার মধ্যে দিয়ে এশিয়া মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃতি লাভ করে।
৯. এশিয়া অঞ্চল তুর্কীকরণ : এশিয়া মাইনরে ইসলামি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা এবং ইসলাম প্রচার এর ব্যাপক সহায়ক ছিল।
পরবর্তী শাসনামলে অটোমান তুর্কীদের আগমন সুনিশ্চিত হয় এবং বাইজান্টাইনদের আবির্ভাব সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল জয়ের প্রথম পদক্ষেপ বলে অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন।
আস্তে আস্তে সমগ্র এশিয়া অঞ্চল সেলজুক আধিপত্য বিস্তার লাভ করে এবং এশিয়ার বাইজান্টাইন ক্ষমতা চির বিলুপ্তি ঘটে ।
১০. উদার শাসক : আলপ আরসানাল চারিত্রিক দিক দিয়ে একজন মহানুভব শাসক ছিলেন। আর উদারতা এত দূর পর্যন্ত পৌঁছে ছিল তা বর্ণনা করতে গিয়ে অনেক ঐতিহাসিক বিস্ময় করেছেন।
১১. প্রজারঞ্জক শাসক : সেলজুক শাসক আলপ আরসানাল একজন প্রজাহিতৈষী শাসক ছিলেন। জনসাধারণের মঙ্গল সাধনের লক্ষ্য রাস্তাঘাট সংস্কার, সরাইখানা নির্মাণ, ডাক বিভাগসহ অনেক কিছু স্থাপন করে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ।
১২. ধর্মভীরু : ধর্মের ভয় তৎকালীন শাসনামলে প্রায়ই না থাকলেও আলপ আরসানাল একজন ধর্মভীরু লোক ছিলেন। ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে আরসানাল শাসনকার্য পরিচালনা করতেন ।
১৩. রণনিপুণ শৌর্যবীর্য : সামরিক শক্তির দিক দিয়ে আলপ আরসানাল একজন মূলত শক্তিশালী বীর সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। তার প্রমাণ হলো মালাজকার্দের যুদ্ধে বিজয় লাভ এবং পরবর্তী শাসনকালে ইসলামি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং সাম্রাজ্য সংহত করার জন্য সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৪. শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক : সেলজুক সুলতান আলপ আরসানাল শিক্ষা ও সংস্কৃতির একজন একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। কেননা আরসানাল মূলত একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। আল্লামা জালালউদ্দীন রুমীমামসনভী গ্রন্থের রচয়িতা।
পরবর্তী সুলতান আলাউদ্দিনের পৃষ্ঠপোষকতায় আধ্যাত্মিক চর্চার মনোনিবেশ করেন। আলপ আরসনালের শাসনামলে সবচেয়ে বড় কীর্তি হলো খাজা হাসান নামক এক ব্যক্তিকে নিজামুলমূলক উপাধি প্রদান করে তার উজির পদে নিযুক্ত করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আলপ আরসানালকে উদার, মহানুভব, ন্যায়পরায়ণ, জ্ঞানী শাসক, জীবন যাপনে পবিত্র ধার্মিক খোদাভীরু দয়ালু, দানশীল দরিদ্রের বন্ধুত্ব সর্বোপরি সাহসী ও বিক্রমশালী বলে অভিহিত করা হয়। কেননা আলপ আরসানাল একজন স্বনামধন্য শাসক ছিলেন।
তিনি তার সমসাময়িক মুসলিম শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। আব্বাসীয় খিলাফতের সংহতি বিধানে তার অবদান অপরিসীম। এশিয়া অঞ্চল সুন্নি মুসলিম প্রভুত্ব বিস্তারের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন আলপ আরসনালের ভূমিকা আব্বাসীয় শাসনামলে অনেক গুরুত্বের দাবিদার।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সেলজুক সুলতান আল্প আরসালান এর কৃতিত্ব ও চরিত্র নিরূপণ কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সেলজুক সুলতান আল্প আরসালান এর কৃতিত্ব ও চরিত্র নিরূপণ কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।