সেলজুক যুগের সাংস্কৃতিক সংস্কারসমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সেলজুক যুগের সাংস্কৃতিক সংস্কারসমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সেলজুক যুগের সাংস্কৃতিক সংস্কারসমূহ আলোচনা কর।
সেলজুক যুগের সাংস্কৃতিক সংস্কারসমূহ আলোচনা কর |
সেলজুক যুগের সাংস্কৃতিক সংস্কারসমূহ আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনামলে ক্ষুদ্র রাজবংশ গড়ে তুললেও সেলজুকদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং বিশেষ করে সংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদান ছিল অনেক বেশি। সেলজুকদের উত্থানের ইতিহাস যেমন উল্লেখযোগ্য ঘটনা, তেমনি তাদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের অবদান অতুলনীয়।
তাই ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেছেন, নিজ যোগ্য নেতৃত্ব তারা সামরিক ক্ষেত্রে যেমন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, তেমনি শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অপরিসীম অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
সেলজুক সুলতানগণ মনে করতেন শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন ছাড়া নিজ সাম্রাজ্যের উন্নয়ন করা সম্ভব না। তারই ধারাবাহিকতায় সেলজুক শাসনকার্য শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে অবদান রেখে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
→ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সেলজুকদের অবদান : সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সেলজুকদের যে অবদান ছিল তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ : সেলজুকগণ শিক্ষা সংস্কৃতির একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সুলতান মালিক শাহ ও তার উজির খাজা হাসান নিজামুলমূলক সাম্রাজ্যের নগরগুলোতে অগণিত স্কুল, কলেজ মাদ্রাসা, স্থাপন করেন। বিদ্যোৎসাহী নিজাম শিক্ষা সম্প্রসারণকল্পে বাগদাদে ১০৬৫-৬৭ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত নিজামিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এটা স্থাপন করেন। ইসলামের শ্রেষ্ঠ ধর্মতত্ত্ববিদ ও চিন্তাবিদ গাজালি (১০৫৮-১১১১ খ্রি.) নিজামিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করেন। মহাকবি শেখ সাদী ঐ মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন।
২. সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদান : সেলজুক শাসনামলে সাহিত্য ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর উকর্ষতা লাভ করে। বিশেষ করে সুলতান মালেক শাহ এর আমলে ফারসি ভাষায় ভুবন বিখ্যাত দুটি গ্রন্থ রচিত হয় । যথা- (ক) সিয়াসত নামা ও
(খ) দাম্ভরে উজারা।
নিজামুল মুলকের সিয়াসত নামা সম্বন্ধে ঐতিহাসিক আরনল্ড বলেন, রাজনৈতিক নীতিমালা সম্বলিত একটি শুধু দার্শনিক নিবন্ধনই ছিল না, বরং এতে শাসনপ্রণালি, দরবার, বিচারকার্য, সামরিক পদ্ধতি এবং অর্থনৈতিক কার্যাবলির উপর সৃষ্টি নিক্ষেপ প্রভৃতি বিষয়ে ব্যবহারিক উপদেশ প্রদান করা হয়।
এতে তিনি রাজতন্ত্রের ব্যাখ্যা দেন। এছাড়া সেলজুকদের জালালী দিনপঞ্জিকার মূল্যায়ন করতে গিয়ে মুসা আনসারী তার মধ্যযুগের মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতি বই লিখেছেন। ১২৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রেগার পঞ্জিকা পদ্ধতিতে ৩৩তম বছরে একদিনের হেরফের হয়।
কিন্তু জালাল, পঞ্জিকা, সাল-গণনা পদ্ধতিতে ৫,০০০ বছর একদিন বিভ্রান্ত দেখা দেয় । বস্তুত একাদশ শতকের জালালি বর্ষপঞ্জি তৎকালীন জ্যোতির্বিদ্যার উৎকর্ষতার প্রমাণ মেলে । বাস্তবিকই সাহিত্য ক্ষেত্রে সেলজুকদের অবদান অতুলনীয় ।
৩. স্থাপত্যশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা : সেলজুক স্থাপত্যশিল্পে পোড়ামাটির ইট, কারুকার্যখচিত মসজিদ, মিনার ও মাদরাসায় মূর্ত হয়েছে। স্থাপত্যশিল্পের বিচারে মালিক শাহের রাজত্বকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইস্পাহানের জামে মসজিদ নির্মানে (১০৭৫ খ্রি.) সেলজুক স্থাপত্যরীতি নিজামুল মূলক প্রথম প্রবর্তিত করেন।
এর অনুকরণে আরদিস্তানে (১১৮০) জাওয়ারা (১১৫৩) এবং গুলপাইস্পানের (১১২০–৩৫) জামে মসজিদ নির্মিত হয়। এছাড়া সেলজুক আমলে পারস্যে নির্মিত অসংখ্য স্থাপত্যকীর্তির মধ্যে একাদশ শতাব্দীতে স্থাপিত সংবস্ত মসজিদ, দামগান মসজিদ, সাভা মসজিদ, বিস্তাম মিনার ও রায়ের তুঘবিলের সমাধি উল্লেখযোগ্য ।
৪. চিত্রাঙ্কন : সেলজুক আমলে মৃৎশিল্পের ব্যবহার ছিল, কিন্তু মৃৎশিল্প কারুকার্যখচিত ধাতব শিল্পকর্ম হওয়ার তেমন বেশি দিন টিকেনি। তবে দুর্লভ নমুনা থেকে বুঝা যায় যে, এ সময়ের পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা চিত্রায়ণ ও পত্ররঞ্জন কেবল গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, অত্যন্ত জনপ্রিয়তাও লাভ করেছিল।
এ সম্পর্কে ইসলামি বিশ্বকোষ এ বলা হয়েছে, সেলজুক আমলে গ্রন্থকলা অভূতপূর্ব সমৃদ্ধি লাভ করে এবং প্রসারিত করে। সেলজুক রাজবংশের শাসন আমল অবসানের পর মেসোপটোমিয়ার সম্পন্ন পুস্তক চিত্রায়ণ ও রঞ্জন প্রায়ষ পারস্যের নমুনাশ্রয়ী বলে প্রতীয়মান হয়। সেলজুক সাম্রাজ্য মানসে চিত্রাঙ্কন স্কুল সক্রিয় ছিল ।
৫. জ্ঞানী গুণীদের পৃষ্ঠপোষকতা দান : সেলজুক সুলতানগণ গুণীদের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ইমাম গাজালি নিজামী উদার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। গাজালি শিয়া মতবাদের সমালোচনা করে সুন্নি ইসলামের প্রভুত্ব কায়েম করেন। মসনভী গ্রন্থের প্রণেতা মৌলানা জামালউদ্দিন রুমী পরবর্তী সুলতান আলাউদ্দিন পৃষ্ঠপোষকতা আধ্যাত্মিক চর্চার মনোনিবেশ করেন।
মালিক শাহের রাজত্বে পারস্যের অতিন্দ্রীয়বাদী কবি ফরিদ উদ্দিন আক্তার, জ্যোতির্বিদ ও কবি ওমর খৈয়াম, কবি ও পরিব্রাজক নাসির-ই-খসরু সাহিত্যিক নিজামী প্রমুখ মনীষী মুসলিম কৃষ্টি ও সভ্যতা বিকাশে অশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।
৬. পানি বিশুদ্ধকরণ : সেলজুকদের সময় নগরীর মানুষকে পানি সরবরাহ করার জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া বাগদাদ শহরের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার প্রচেষ্টায় শহরে গণ গোসলখানার দূষিত পানি টাইগ্রিস থেকে একত্রে প্রবাহিত করার সকল উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
৭. জালালী পঞ্জিকা প্রবর্তন : ওমর খৈয়ামের নেতৃত্বে নিশাপুরের জ্যোতির্বিদগণ চান্দ্র মাসের পরিবর্তে সৌর মাস অনুযায়ী গণনার প্রথা প্রচলন করেন। প্রচলিত গণনা পদ্ধতির যাবতীয় ভুল সংশোধন করে একটি নতুন পঞ্জিকা তৈরি করা হয়। সুলতান মালিক শাহ, শাহ জালালদৌলার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় জালালী পঞ্জিকা ।
জালালী পঞ্জিকা বর্তমানে প্রচলিত যেকোনো পঞ্জিকা অপেক্ষা সূক্ষ্ম ও নির্ভুল ছিল। ঐতিহাসিক গিবন এই পঞ্জিকা সম্পর্কে বলেন এটা জুলিয়ানের পঞ্জিকা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং গ্রেগরী পঞ্জিকার নির্ভুলভাবে সমকক্ষতা দাবি করে ।
৮. মুদ্রার সংস্কার সাধন : রাজবংশের সকল শাখা কর্তৃক মুদ্রা অঙ্কনকৃত হয়েছিল। এতে তাদের মানও সংখ্যায় ব্যাপক তারতম্য ছিল । বিশ্বকোষে বলা হয়েছে। সুলতানদের মধ্যে তুঘিল সর্বাধিক পরিমাণ মুদ্রা অঙ্কন করেন।
তিনি সৌভাগ্যক্রমে (১০৪০-১০৪১) সালে নিশাপুর (১০৪২ - ১০৪৩) সালে আর আয় (১০৫২-৫৫)সালে ইসফাহান ১০৫৫ সালে বাগদাদে তথা মদিনাতুল সালাত প্রভৃতি বড় বড় টাকশালের শহর দখল করেন।
এসব বৃহৎ টাকশাল ও তৎসব বহুসংখ্যক ছোট ছোট টাকশাল থেকে অধিকসংখ্যক উচ্চ মানসম্পন্ন স্বর্ণনির্মিত দিনার তুঘরিলের নামে প্রবর্তিত হয়েছিল ১০৫৩ সালে মৃত্যুকাল অবধি অব্যাহত ছিল।
৯. মানমন্দির প্রতিষ্ঠা : সেলজুক সুলতান মালিক শাহের সময় নিজামুল মুলকের পরামর্শক্রমে মালিক শাহ একটি মানমন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ বর্ণনা করেছেন যে, নিজামূলমূলকের পরামর্শক্রমে মালিক শাহ ১০৭৫ খ্রিস্টাব্দে নবনির্মিত মানমন্দির নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিদ এক মহা সম্মেলনের আহ্বান করেন।
এ সম্মেলনে এ যাবৎ প্রচলিত ফারসি দিনপঞ্জির পরিবর্তে সৌর মাস অনুসারে দিনপঞ্জি প্রস্তুতির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বিশ্ববিখ্যাত একশাস্ত্র কবি ও জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম বাগদাদে অনুষ্ঠিত। এ ‘মহতী বিজ্ঞান' সম্মেলনে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় শাসনামলে সেলজুকগণ ক্ষমতা দখল করে শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শিল্প রচনা, স্থাপত্যশিল্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ইত্যাদিতে অবদান রেখে গেছেন সত্যিই তার অবদান অনস্বীকার্য।
মালিক শাহের উজির নিজামুল মূলক ছিলেন একজন মহাবিদ্যোৎসাহী শাসক। তার পৃষ্ঠপোষকতা সাম্রাজ্যের সর্বত্র স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। তার বিদ্যানুরাগের বড় প্রমাণ ছিল নিজামীয়া মাদ্রাসা নির্মাণ করা। মাদ্রাসা সুন্নি মতবাদ প্রচারে এক বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে।
বিশ্ববিদ্যালয় দার্শনিক ইমাম গাজালি। মরসি কবি ফরিদউদ্দিন সাহিত্যিক নিজামী, পর্যটক নাসির-ই-খসরু খান এবং জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম প্রমুখ মনীষী মালিক শাহের দরবার অলংকৃত করেছিলেন। যা উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা প্রতীয়মান হলাম ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সেলজুক যুগের সাংস্কৃতিক সংস্কারসমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সেলজুক যুগের সাংস্কৃতিক সংস্কারসমূহ আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।