সেলজুক আমির তুমিল বেগের শাসনকাল আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সেলজুক আমির তুমিল বেগের শাসনকাল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সেলজুক আমির তুমিল বেগের শাসনকাল আলোচনা কর।
সেলজুক আমির তুমিল বেগের শাসনকাল আলোচনা কর |
সেলজুক আমির তুমিল বেগের শাসনকাল আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনামলে কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের উত্থান হয়েছিল। তাদের প্রভাব, প্রতিপত্তি যোগ্যতা, দক্ষতার মধ্যে দিয়ে অতি কালের মধ্যে শাসন ক্ষমতায় আরোহণ করতে তারা সচেষ্ট হয়েছিল।
তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সেলজুক বংশ। আর সেলজুক বংশের গোড়াপত্তন হয়েছিল সেলজুক সুলতান তুগ্রিল বেগের হাত ধরে।
১০৫৫-১১৯৪ সাল পর্যন্ত তুমিল বেগের সেলজুক রাজবংশ একশত চল্লিশ বছর ক্ষমতায় আসীন ছিল। তুমিল সেলজুক বংশ প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয় আছেন।
→ তুগ্রিল বেগের শাসনকাল : নিম্নে সেলজুক আমির তুঘ্রিলের শাসনকাল বিস্তারিত তুলে ধরা হলো :
১. ক্ষমতা লাভ : বুয়াইয়া আমিরদের অতিষ্ঠ হয়ে আব্বাসীয় খলিফাগণ ব্যাপক উদ্বিগ্ন ছিলেন। ১০৫৫ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় খলিফা কাইয়ুম বিল্লাহ বুয়াইয়াগণের সীমাহীন প্রতাপে উত্ত্যক্ত হয়ে তাদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়ার জন্য সেলজুক সুলতান তুঘ্রিলের সাহায্য কামনা করেন।
খলিফার আমন্ত্রণে তুঘ্রিল কালবিলম্ব না করে বাগদাদে প্রবেশ করেন এবং বুয়াইয়া আমির আর রহিমকে বিতাড়িত করেন। আর রহিমকে বিতাড়িত করার মধ্যদিয়ে তুমিল ১০৫৫ সালে ক্ষমতা লাভ করেন।
২. সুলতান উপাধি গ্রহণ : বুয়াইয়া আমির আর রহিম বিল্লাহকে কাইমকে বিতাড়িত করলেও পরবর্তীকালে তুমিল সাহায্যে ১০৬০ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় ক্ষমতায় আরোহণ করেন।
ফলে কৃতজ্ঞ খলিফা সাম্রাজ্যের যাবতীয় ক্ষমতা তুম্রিলের হাতে অর্পণ করেন। খলিফা স্বয়ং তার মাথায় আরব ও পারসিকদের কর্তৃত্ব চিহ্নস্বরূপ সাতটি পোষাক পরিধান করান এবং সুলতান উপাধিতে ভূষিত করেন ।
৩. সেলজুক বংশ প্রতিষ্ঠা : আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে উত্থান হয় অনেক রাজবংশের। তেমনি সেলজুক বংশটিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেলজুক বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আমির তুঘিল বেগের কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যম ১০৫৫ খ্রিস্টাব্দে।
পরবর্তীকালে ১০৫৫-১১৯৪ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। এ বংশের শাসকদের মধ্যে ছিল আলপ আরসনাল, মালিক শাহ এবং নিজামুলমূলক তুষী।
৪. কতিপয় বিদ্রোহ দমন : ১০৫৫ সালের আগেই তথা তুমিল বেগের বাগদাদে প্রবেশ করার পূর্বে আল বাসিসারী নামক তুর্কী বাগদাদে আক্রমণ চালায়। বুয়াইয়া আমিরকে পরাজিত করে নিজেকে খলিফা হিসেবে ঘোষণা করেন।
কিন্তু তুমিল বাগদাদে আগমন করলে বাসাসিরি পলায়ন করেন এবং পুনরায় আল বাসাসিরি বাগদাদ থেকে পলায়নের পর পারস্য অঞ্চলে গিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তুমিল আবার এদেরকে দমানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযান পরিচালনা করে আব্বাসীয় খলিফা আল মুনতাসির বিল্লাহকে খলিফা ঘোষণা করেন। তুমিল অতি দ্রুততার সহিত বাগদাদে এসে বাসাসিরিকে পরাজিত এবং নিহত করেন এবং এর মধ্যে তুমিল পুনঃক্ষমতার মালিক হন ।
— তুলি বেগের কৃতিত্ব : সেলজুক সুলতান তুমিল বেগের কৃতিত্ব ছিল অনেক । নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :
১. সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী জাতি গঠন : তুমিল বেগের কৃতিত্ব এর মধ্যে ছিল অধিক গুরুত্বের দাবিদার একটি শক্তিশালী জাতি গঠন। কেননা সেলজুক তুগ্রিলের অধীনে এশিয়ায় সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়েছিল।
২. শিক্ষা ও সংস্কৃতি পৃষ্ঠপোষকতা : সেলজুক সুলতান | তুমিল বেগ একজন বিদ্যোৎসাহী শাসক ছিলেন। তিনি নিজেও একজন জ্ঞানবিজ্ঞানের তাপস ব্যক্তি ছিলেন। তার শাসনামলে বলখ, তারবারিস্তান হামাদান, ইস্পাহান এ ইসলামি শিক্ষা প্রচারের লক্ষ্যে মাদ্রাসা ও মক্তব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইসলাম প্রচার ও দ্বীনি শিক্ষায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল।
৩. সুশৃঙ্খল সৈন্যবাহিনী গঠন : উমাইয়া আমল থেকে শুরু হয় সৈন্যবাহিনীর মাধ্যমে রাজ্য জয়ের প্রথা এবং সেনাবাহিনীর উপর নির্ভরশীল প্রবণতা পরবর্তীতে আব্বাসীয় সাম্রাজ্য কিছুটা প্রভাব কম দেখা গেলেও বুয়াইয়া সেলজুক সুলতান ক্ষমতায় আরোহণ করেছিল মূলত সেনাবাহিনীয় রণনিপুণ কার্যবলির মধ্যে। আর সেলজুক আমির তুঘিল সৈন্যবাহিনী গঠন করে সাম্রাজ্য স্থিতিশীলতা আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ।
৪. রাজস্ব সংস্কার : সেলজুকগণ ক্ষমতায় আরোহণ করার পর তাদের কার্যাবলি মধ্যে অন্যতম ছিল রাজস্ব সংস্কার। আর তুম্রিল বেগ রাজস্ব সংস্কার করে আব্বাসীয় খিলাফতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সচেষ্ট ছিলেন।
৫. প্রশাসনিক ক্ষমতা কুক্ষিগত : সেলজুকদের উত্থানের সাথে সাথে আব্বাসীয়দের ক্ষমতা বহুলাংশে কমে যায়। তাদের ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে। খলিফাদেরকে হাতের ক্রীড়নকে পরিণত করে সার্বভৌমত্বে আঘাত হানা। সেলজুক আমির আব্বাসীয়দের দেওয়া কিছু নিয়োগ পরিবর্তন করে সেলজুকদের প্রশাসনিক কাজে বসানো হয় ।
৬. সুন্নি ধর্মমত প্রতিষ্ঠা : তুগ্রিল বেগের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব হলো বুয়াইয়া শিয়াদের বিতাড়িত করে আব্বাসীয় শাসনামলে সুন্নি ধর্মমত প্রতিষ্ঠা করা। যার জন্য তুমিল বেগ ইসলামের ইতিহাসে এক মহান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত
৭. ধৈর্য্যশীল শাসক : পৃথিবীর অন্যান্য শ্রেষ্ঠ শাসকদের মধ্যে তুমিল ছিলেন অন্যতম একজন ধৈয্যশীল শাসক। ধৈর্য্যের মধ্যে দিয়ে তুলি সেলজুক বংশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন
৮. ধার্মিক ও খোদাভীরু : পরধর্ম সহিষ্ণু ধার্মিক এবং খোদাভীরু ছিলেন সেলজুক তুমিল বেগ। রোজা, নামাজ, যাকাত, দ্বীন ইসলামের নিয়মকানুন তিনি যথাযথভাবে পালন করতেন । এছাড়া তিনি একজন আল্লাহ ভীরু শাসক ছিলেন।
৯. অনাড়ম্বর জীবনযাপন : নিজ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছু তিনি ব্যবহার করতেন না। সাধারণদের ন্যায় তিনি একজন অনাড়াম্বরপূর্ণ শাসক হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আছেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বুয়াইয়াদের পতনের অবদান ছিল সেলজুক তুমিল বেগের। তার জীবন যাপন ছিল অনাড়ম্বর। তার শাসনামলে সেলজুক জাতি এশিয়ার সর্বাপ্রেক্ষা শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়।
কথিত আছে সেলজুক আমির তুমিল কোন নগর অধিকার করলে সেখান তার বিজয়ের স্মরণার্থে একটি মসজিদ এবং মাদ্রাসা স্থাপন করতেন। আর এইজন্য ঐতিহাসিকগণ তাকে সেলজুক বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান বলে অভিহিত করেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সেলজুক আমির তুমিল বেগের শাসনকাল আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সেলজুক আমির তুমিল বেগের শাসনকাল আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।