মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব আলোচনা কর ।
মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব আলোচনা কর |
মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব আলোচনা কর
- অথবা, মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
- অথবা, মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তাৎপর্য আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় এ সরকার গঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। তবে মুজিবনগর সরকারের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়ন। বিশ্বে যে কয়টি দেশ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিয়ে যুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম।
আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এ ঘোষণাপত্রের মধ্যদিয়ে যুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভিত্তি পায় এবং বিশ্ববাসীর | দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
এ ঘোষণাপত্রে যুদ্ধের যৌক্তিক কারণ তুলে ধরার পাশাপাশি যুদ্ধ পরিচালনার জন্য একটি গণপরিষদ গঠনের বিষয়কে উত্থাপন করা হয়। এজন্য মুক্তিযুদ্ধে এ ঘোষণাপত্রের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।
→ মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব : ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার যে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয় তা মুক্তিযুদ্ধকে যৌক্তিক করে তোলে। নিম্নে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. স্বাধীনতা ঘোষণার স্বীকৃতি প্রদান : ১৯৭০ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানে যে বিশৃঙ্খল অবস্থা ও অচল অবস্থার সৃষ্টি হয় তারই পরিপ্রেক্ষিতে পাক সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে এবং সামরিক অভিযান পরিচালনা করে।
বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছেন। ২৬ শে মার্চের এ ঘোষণায় তিনি বলেন, “আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।
বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, যা কিছু আছে তা নিয়ে দখলদার বাহিনীর মোকাবিলা করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি” এতদিন এ ঘোষণা স্বীকৃতরূপ লাভ করেনি।
কিন্তু ১০ এপ্রিল প্রণীত 'স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু কতৃক ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় । মুক্তিযুদ্ধে যেটির গুরুত্ব ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।
২. যুদ্ধের যৌক্তিকতা নিরূপণ : স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা নিরূপণ করে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হয়। এ ঘোষণাপত্রে বলা হয় ১৯৭০ সালের যুক্ত নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সে হিসেবে ১৬৭টি আসন পাওয়া আওয়ামী লীগের গণপরিষদ গঠন করার কথা ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ গণপরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন।
কিন্তু ১ মার্চ এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চ আহূত অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন এবং আলোচনা চলা অবস্থায় অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোঁষণা করে।
তাই এরূপ বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানকে প্রতিরোধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই বাঙালিদের সম্মান ও সংহতি রক্ষার জন্য এ যুদ্ধ যৌক্তিক।
৩. যুদ্ধকে সাংগঠনিক রূপ প্রদান : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা সংগঠিত কোনো যুদ্ধ ছিল না।
ফলে পাক বাহিনীর আক্রমণে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। এ অবস্থায় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণীত হয়।
যেখানে সরকারকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় যুদ্ধকে নিজের কর্তৃত্ব এনে সংহত ও সংগঠিত করার। ফলে যুদ্ধ সাংগঠনিক রূপে আত্মপ্রকাশ করে। তাই যুদ্ধকে সাংগঠনিক রূপ প্রদান করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
৪. যুদ্ধকালীন সরকার গঠন : যেকোনো যুদ্ধে নেতৃত্ব একটি বড় বিষয় হিসেবে কাজ করে। নাবিক ছাড়া জাহাজ যেমন বেশিদূর অগ্রসর হতে পারে না।
তেমনি দক্ষ নেতৃত্ব ছাড়া যুদ্ধও সঠিক পথে অগ্রসর হতে পারে না। ২৫ মার্চ যুদ্ধ শুরু হলেও তা দক্ষ নেতৃত্বের অভাবে দিক হারিয়ে ফেলেছিল।
কিন্তু ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যে গণপরিষদ গঠনের কথা বলা হয় তা যুদ্ধকে সঠিক পথে পরিচালনা করার নেতৃত্ব খোঁজে পায়।
এ ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আমরা যারা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের জনগণ আমাদের উপর যে দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলনে আমরা একটি গণপরিষদ গঠন করলাম। আর গণপরিষদ দক্ষ নাবিকরূপে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক পথের নির্দেশ প্রদান করে ।
৫. বিশ্ব জনমত গঠন : স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত যুদ্ধের যৌক্তিকতা দ্বারা এবং স্বাধীনতার স্বীকৃতি এবং সর্বোপরি একটি সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত বিশ্ববাসীর কাছে এ যুদ্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরে।
তারা এ যুদ্ধের জন্য দায়ী দোষী গোষ্ঠীকে ঘৃণা করতে শুরু করে এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
আর এ বিশ্বজনমত বাংলাদেশের বিজয়ের পিছনে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। কেননা বিশ্বজনমত বাংলাদেশের পক্ষে না থাকলে এ যুদ্ধে জয়লাভ করা সুদূর পরাহত হতো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
এ ঘোষণাপত্রে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং যুদ্ধকে যৌক্তিক করে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হয়।
এ ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হয় তা যুদ্ধকে সাংগঠনিক ও সংহত রূপ প্রদান করে এবং যুদ্ধকে সঠিক পথে পরিচালিত করার দিক নির্দেশনা প্রদান করে।
তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একথা নিঃসন্দেহ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।