রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহ উল্লেখ কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহ উল্লেখ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহ উল্লেখ কর ।
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহ উল্লেখ কর |
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহ উল্লেখ কর
- রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান চারটি মূলনীতির বর্ণনা দাও ৷
- অথবা, রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতির প্রয়োগ ক্ষেত্র আলোচনা কর।
- অথবা, রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান চারটি মূলনীতি ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক গণতন্ত্র রাষ্ট্র হচ্ছে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। আধুনিক রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জনগণের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক দিকের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণসাধন করা।
এ উদ্দেশ্যে ভারত, আয়ারল্যান্ড, প্রভৃতি দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কতকগুলো মৌল নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে । এ নীতিগুলো হচ্ছে রাষ্ট্র শাসনের মূলসূত্র।
সরকারের কর্তব্য হলো রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে এগুলোকে প্রয়োগ করা। অনুরূপভাবে বাংলাদেশের সংবিধানেও কতকগুলো মূলনীতি সংযোজন করা হয়েছে। যেগুলো রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কাজের ভিত্তিস্বরূপ হিসেবে কাজ করে।
১৯৭২ সালের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে ৮ নং অনুচ্ছেদ থেকে ২৫ নং অনুচ্ছেদ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ সন্নিবেশিত করা হয়েছে ।
→ রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান মূলনীতি : ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার যেসব মূলনীতি গৃহীত হয় সেখানে ৪টি নীতির প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। নিচে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান মূলনীতির বর্ণনা দেওয়া হলো :
১. জাতীয়তাবাদ : ১৯৭২ সালের সংবিধানে ৪টি প্রধান স্তম্ভের মধ্যে একটি অন্যতম স্তম্ভ হলো জাতীয়তাবাদ।
অভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে একই ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য লালিত বাঙালি জাতির ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে নিজেদের পৃথক মনে করতে শুরু করে।
বাঙালি জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য মহান মুক্তি সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
১৯৭২ এর সংবিধানের ৯ নং অনুচ্ছেদে বলা হয় “ভাষাগত ও সাংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছিল, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।”
২. সমাজতন্ত্র : ১৯৭২ সালের সংবিধানের দ্বিতীয় মূলনীতি হলো সমাজতন্ত্র। বাংলাদেশে একটি শোষণমুক্ত ও সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কায়েম করা হবে।
সংবিধানের ১০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—‘মানুষের ওপর মানুষের শোষণ অবসান করে ন্যায়ানুগ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে শোষণহীন সমাজব্যবস্থা কায়েম করা হবে।
এ উদ্দেশ্যে সকল উৎপাদন যন্ত্র রাষ্ট্রের হাতে অর্পণ করা হয়। সংবিধানে আরও উল্লেখ করা হয় যে, মেহনতী মানুষকে সকল প্রকার শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দেওয়া হবে রাষ্ট্রের উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার মালিক হবে জনগণ তথা রাষ্ট্র ।
৩. গণতন্ত্র : ১৯৭২ সালের সংবিধানের উল্লেখযোগ্য একটি মূলনীতি হলো গণতন্ত্র। সংবিধানের ১১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—“প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র' যেখান মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে।
অর্থাৎ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা হবে গণতান্ত্রিক। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে এ এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। মানবিক মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা শাসন কাজ পরিচালিত হয়ে শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত হবে।
৪. ধর্মনিরপেক্ষতা : ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে। মূল সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে কোনো বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না।
জনগণের পূর্ণ ধর্মীয় - স্বাধীনতা থাকবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মের অপব্যবহার বিলুপ্ত করা হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ধর্ম পালন, চর্চা ও প্রচার করতে পারবে।
মোটকথা সমাজ জীবন হতে সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থা কায়েম করাই হবে রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি মূলত রাষ্ট্রীয় বিধিবিধানের ন্যায়সঙ্গত দিককে নির্দেশ করে।
এ নীতিগুলোর কোনো আইনগত মর্যাদা নেই কোনো আদালতে তা শাসন পরিচালনার মূল সূত্র হবে এবং আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তা প্রয়োগ করবে।
তাছাড়া এ সংবিধান এবং বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যা কালে এ নীতিসমূহ নির্দেশক হবে। সর্বোপরি সেগুলো রাষ্ট্র পরিচালনা ও এর নাগরিকদের কাজের ভিত্তি রূপে ব্যবহৃত হবে।
বাংলাদেশের জনগণ এগুলো বাস্তবায়িত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবে এবং রাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে তারা হবে দিশারীস্বরূপ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহ উল্লেখ কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহ উল্লেখ কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।