রাষ্ট্র গঠন ও শাসক নির্বাচন সম্পর্কে নিজামুল মুলক এর ভূমিকা আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো রাষ্ট্র গঠন ও শাসক নির্বাচন সম্পর্কে নিজামুল মুলক এর ভূমিকা আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সিয়াসতনামার আলোকে নিজামুল মুলকের রাষ্ট্রদর্শন আলোচনা কর।
রাষ্ট্র গঠন ও শাসক নির্বাচন সম্পর্কে নিজামুল মুলক এর ভূমিকা আলোচনা কর |
রাষ্ট্র গঠন ও শাসক নির্বাচন সম্পর্কে নিজামুল মুলক এর ভূমিকা আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগের ইতিহাস আব্বাসীয় খিলাফতে একজন ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্রের অধিকারী ছিলেন মালিক শাহের উজির নিজামুলমূলক। সে যুগে আরব ভূমিতে যে কয়জন হাতেগোনা রাষ্ট্র চিন্তাবিদ তার মধ্যে অন্যতম নিজামুলমূলক ।
তিনি তার বিখ্যাত সিয়াসতনামা গ্রন্থে রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার বাস্তব দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্র দর্শনে তিনি যে মৌলিক আলোচনা করেছেন তা ইতিহাসে তার তুলনা বিরল। ফিকহ এবং হাদিস শাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন নিজামুলমূলক।
অসাধারণ কৃতিত্ব, যোগ্যতা বিচক্ষণতার জন্য মালিক শাহ নিজামুলমূলক সিংহাসনে বসতে পেরেছিলেন। নিজামুলমূলকের সিয়াসতনামাকে রাষ্ট্র গঠনের বাইবেল বলা হয়ে থাকে ।
নিজামুলমূলকের পরিচয় : আবু আলী আল হাসান আলী বিন ইবনে ইসাহাক আততুসী ১০১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে ইরানের তুস নগরী ও খারুসান নগরীর মধ্যবর্তী রাকন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতামহ ইসহাক ছিলেন রায়হাকের সীমান্তবর্তী এক গ্রাম্য কৃষক এবং পিতা ছিলেন গজনবী রাজ্যের একজন কর আদায়কারী। তিনি আলপ আরসনালের সময়ে প্রথম উজির নিযুক্ত হন।
→ সিয়াসতনামার আলোকে নিজামের রাষ্ট্র দর্শন : নিজামুলমূলকের সিয়াসতনামা আলোকে রাষ্ট্রদর্শনের আলোচনা নিম্নে তুলে ধরা হলো :খলিফা নির্বাচন : শাসনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রনীতি বিষয়ে তার পূর্বসরি আল মাওয়াদীর নীতি অনেকটা অনুসরণ করেন।
নিজামুলমূলক তার সিয়াসতনামা গ্রন্থে উল্লেখ করেন ক্ষমতাসীন খলিফা তার সর্বোচ্চ যোগ্য ভাই বা সন্তানকে খলিফা মনোনীত করতে পারেন। এত দোষের কিছু নেই।
শাসনব্যবস্থায় যদি কোন যোগ্য ব্যক্তিকে না পাওয়া যায় তাহলে জাতির বিশেষ ব্যক্তিদের পরামর্শে একমত হয়ে একজন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে খলিফা নির্বাচন করা যাবে।
বায়াত বা শপথ : ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থায় বায়াত অপরিহার্য একটি বিষয়। কেননা ইসলামি খিলাফত যখন শুরু হয় তখন থেকেই মূলত বায়াত বা শপথ প্রথা চলে এসেছে। সেলজুক সুলতান মালিক শাহ এর সময় নিজামুলমূলক বায়াত বা শপথ প্রথা চালু ব্যবস্থা করেন।
নিজামুলমূলকের বায়াত নেয়ার উদ্দেশ্য ছিল খিলাফত ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করা। খিলাফত ব্যবস্থা পরিচালনার প্রারম্ভে রাজ্যের গণ্যমান্য লোকের উপস্থিতি আমির উমরাগণ বায়াত বা শপথ গ্রহণ করবে। এটি নিজামুলমূলকের রাষ্ট্র দর্শনের অন্যতম একটি বিষয় ।
→ খলিফার যোগ্যতা : নিজামুলমূলক তাঁর সিয়ামতনামা গ্রন্থ বলেন, একজন খলিফার পক্ষে নিম্নোক্ত যোগ্যতার অধিকারী হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়
১. ন্যায়পরায়ণতা : নিজামুলমূলকের মতে, খলিফাকে একান্তই ন্যায়পরায়ণ থাকতে হবে এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। তার মতে দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্রনায়ক দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
২. বীরত্ব : মুসলিম সাম্রাজ্যকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার মত বীরত্ব ও সাহস খলিফার অবশ্যই থাকতে হবে।
৩. শরীয়তের জ্ঞানসম্পন্ন : খলিফাকে ইসলামি শরিয়তের যাবতীয় আইন-কানুন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। কুরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াসের ভিত্তিতে তাকে যাবতীয় সমস্যার সমাধান দেওয়ার মতো যোগ্যতা থাকতে হবে।
৪. শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ না হওয়া : খলিফাকে শারীরিকভাবে সুস্থ, সবল ও মানসিকভাবে ফুরফুরে মেজাজের অধিকারী হতে হবে। নিজামুলমূলকের রাষ্ট্রপ্রধানের ধৈর্য ও সহনশীলতার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।
৫. জ্ঞান বুদ্ধি : নিজামুলমূলকের মতে, খলিফাকে অবশ্যই জ্ঞানবিজ্ঞানে বুদ্ধি সম্পন্ন এবং বিচক্ষণ হতে হবে। আমিরুল মুমিনকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উভয় জগতের জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে।
৬. মজলিস উস শূরা : মজলিস উস শূরা ব্যবস্থা চালু হয় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমরের সময় থেকে। সাম্রাজ্যর শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য মজলিস উস শূরা ব্যবস্থা অপরিহার্য উপাদান।
প্রশাসনিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরামর্শের জন্য অবশ্যই মজলিসে শূরার বৈঠক অপরিহার্য। তবে খলিফা মজলিসে শূরার সিদ্ধান্ত মানতেও পারেন নাও পারেন ।
৭. সার্বভৌমত্ব : রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের মধ্যে সার্বভৌমত্ব একটি অন্যতম। আর নিজামুলমূলকের রাষ্ট্র দর্শনে মূল বিষয় ছিল সার্বভৌমত্ব যা চলবে আল কুরআন, আল হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তিতে।
খলিফা সকল ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আল-কুরআন, আল হাদিস ও ইজমা, কিয়াস দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হবার ফলে খলিফা একক কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতো না ।
৮. বিচারক ও মোকদ্দমা : নিজামুল নিজামূল মূলকের মতে, খলিফা কেন্দ্রে ও প্রদেশে বিচারক নিয়োগ করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।
বিচারকগণ কুরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস মোতাবেক বিচারকার্য পরিচালনা করবে। তবে বিচার বিভাগের কেন্দ্রবিন্দু থাকবে খলিফা নিজে ।
প্রাদেশিক কার্য ও নিম্ন আদালতের কাজির রায় পুনঃ বিবেচনা করবার ক্ষমতা খলিফা ভোগ করেন।
৯. শরীয়তের অনুশাসন প্রয়োগ : নিজামূল মূলকের মতে, ইসলামি রাষ্ট্রের শাসকগণ সর্বদাই শরিয়তের বিধি বিধান বাস্ত বায়নে সচেষ্ট থাকবেন।
হজের কাফেলায় খলিফার নেতৃত্বে নেওয়া একান্ত কর্তব্য বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া নামাজ ও রোজার পবিত্রতা রক্ষা করা তার কর্তব্যের অন্তর্গত।
১০. মন্ত্রিসভা : নিজামুলমূলকের মতে, খলিফা বা বাদশার একার পক্ষে সাম্রাজ্যের যাবতীয় প্রশাসনিক কাজের তত্ত্বাবধায়ন করা সম্ভব নয়। এর জন্য খলিফাকে মন্ত্রী বা উজির নিয়োগ করতেই হবে। নিজামের মতে, উজিরের যেসব গুণ থাকা দরকার তা হলো-
(ক) প্রশাসনিক কাজে বাস্তব জ্ঞানের অধিকারী হওয়া ।
(খ) ইসলামি পাণ্ডিত্য থাকা।
(সা.) সদাচারী হওয়া ও
(ঘ) সৎচরিত্রের অধিকারী হওয়া।
১১. আয়ব্যয় : নিজামুলমূলক রাষ্ট্রের আয়ের সাথে ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। অন্যথায় রাজকোষ শূন্যতাসহ দেউলিয়াত্ব দেখা দিতে পারে। তিনি রাষ্ট্রের আয়ের খাত হিসেবে মহানবি (সা) ও প্রথম চার খলিফার আমলে উৎসসমূহকে বৈধ বলে রায় দিয়েছেন।
তদ্রুপভাবে ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোরআন হাদিস বর্ণিত খাতসমূহ ছাড়াও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের চাহিদা মোতাবেক অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
১২. গোয়েন্দা বিভাগ : নিজামুলমূলক রাষ্ট্র দর্শনে বর্ণনা করেন, রাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য গোয়েন্দা বিভাগ গঠন একান্ত জরুরি কেননা গোয়েন্দা বিভাগের ভয়ে সকলে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে এবং সাম্রাজ্য বিদ্রোহের মূলে তা কুঠারাঘাত হিসেবে কাজ করবে।
১৩. কূটনৈতিক মিশন : নিজামুলমূলকের মতে, একটা সাম্রাজ্য সবসময়ই অন্য একটা সাম্রাজ্যের উপর নির্ভরশীল । ব্যবসা-বাণিজ্য জ্ঞানবিজ্ঞানে, বিনিময় প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে হলে বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন জরুরি । এক্ষেত্রে কূটনৈতিক মিশন প্রেরণ করে দ্বিপাক্ষিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলতে পারি যে, মালিক শাহের আমলে নিজামুলমূলকের অবদান ছিল অপরিসীম। মূলত নিজামুলমূলকের রাষ্ট্র দর্শন ছিল জনকল্যাণকামী । মধ্যযুগে তিনি একজন পরিপূর্ণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচিত নিজাম নিজেকে সবসময় ছোট মনে করতেন।
তিনি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যেসব উপাত্ত সংযোজন করেছেন তার মধ্যে সবগুলোই আধুনিক | রাষ্ট্রসমূহ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ গ্রহণ করেছেন। ইবনুল আসীব তার সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, তার সদগুণাবলি ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য উচু নিচু নির্বিশেষে সকলের কাছে সমাদৃত ছিলেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সিয়াসতনামার আলোকে নিজামুল মুলকের রাষ্ট্রদর্শন আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম রাষ্ট্র গঠন ও শাসক নির্বাচন সম্পর্কে নিজামুলমূলক এর অবদান বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।