অগবার্নের সংস্কৃতির অসম অগ্রগতি তত্ত্বটি পর্যালোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো অগবার্নের সংস্কৃতির অসম অগ্রগতি তত্ত্বটি পর্যালোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের অগবার্নের সংস্কৃতির অসম অগ্রগতি তত্ত্বটি পর্যালোচনা কর ।

অগবার্নের সংস্কৃতির অসম অগ্রগতি তত্ত্বটি পর্যালোচনা কর
অগবার্নের সংস্কৃতির অসম অগ্রগতি তত্ত্বটি পর্যালোচনা কর

অগবার্নের সংস্কৃতির অসম অগ্রগতি তত্ত্বটি পর্যালোচনা কর

  • অথবা, সাংস্কৃতিক ব্যবধান কী? অগবার্নের ‘সাংস্কৃতিক পশ্চাৎমুখী' তত্ত্বটি আলোচনা কর। 
  • অথবা, সাংস্কৃতিক ব্যবধান কী? অগবার্নের “সাংস্কৃতিক পশ্চাৎমুখী' তত্ত্বটি পর্যালোচনা কর। 

উত্তর : ভূমিকা : সমাজ জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সংস্কৃতি হলো সমাজস্থ মানুষের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিচয়ের সুস্পষ্ট ইঙ্গিতবহ একটি উপাদান। 

আবহমানকাল থেকে সভ্যতার উৎকর্ষ ও বিকর্ষ সাধনে সংস্কৃতির রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। বস্তুত, ব্যক্তিকে সমাজে পরিপূর্ণভাবে বসবাস করার উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত ব্যাপক। 

মানবজীবনের ভিত্তি সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। এ সংস্কৃতির সঙ্গে ব্যক্তিমানুষের ব্যক্তিত্বের রয়েছে একটা প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। 

ব্যক্তিত্ব ... হলো সমাজবদ্ধ মানুষের গোষ্ঠী জীবনের সামগ্রিক ফল। সমাজে বসবাসরত ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিত্বের গঠন ও বিকাশের ক্ষেত্রে তার পারিপার্শ্বিক সংস্কৃতিক ভূমিকা বিশেষভাবে সক্রিয় ও কার্যকরী।

সাংস্কৃতিক ব্যবধান বা অসম অগ্রগতি তত্ত্ব : সাংস্কৃতিক ব্যবধান বা অসম অগ্রগতি বিষয়টির ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Cultural Lag.' ইংরেজি Lag শব্দের আভিধানিক অর্থ পিছিয়ে থাকা। সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল । 

সংস্কৃতির বিকাশের সকল ক্ষেত্রে সমগতি বেগসম্পন্ন হয় না। ফলে এক অংশ অন্য অংশ থেকে পিছিয়ে পড়ে এবং এতে একটি ব্যবধানের তৈরি হয়। সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন সংস্কৃতির এ অসম অগ্রগতির বিষয়টিকে বোঝানোর জন্যই তাঁর 'Social Change' নামক গ্রন্থে সাংস্কৃতিক ব্যবধান বা 'Cultural lag' তত্ত্ব পেশ করেন। 

যদিও অগবার্নের অনেক আগেই কয়েকজন - সমাজবিজ্ঞানী; যেমন- সামনার, মিলার, ভিরকান্ট এবং স্পেন্সার তাদের নিজ নিজ রচনার সাংস্কৃতিক ব্যবধান সংক্রান্ত ধারণার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এটা কথা ঠিক যে, অগবার্নই সর্বপ্রথম এ ধারণাকে ভিত্তি করে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাজতাত্ত্বিক মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন।

সমাজবিজ্ঞানী অগবার্নের সাংস্কৃতিক ব্যবধানের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে এই যে, বস্তুগত সংস্কৃতির উপাদানসমূহ ক্রমান্বয়ে সঞ্চিত হওয়ার ফলে সমাজে বিচিত্র আবিষ্কার ও উদ্ভাবন সম্ভবপর হয়। 

এর ফলে অধিকতর দ্রুতগতিতে সামাজিক পরিবর্তন সংগঠিত হতে থাকে। তবে সংস্কৃতির অবস্তুগত ক্ষেত্র; যেমন- ধৰ্ম, সরকার, শিক্ষা, পরিবার প্রভৃতি যে গতিতে পরিবর্তন হয় তার চেয়ে বস্তুগত দিক; যেমন- বাসস্থান, তৈজসপত্র, হাতিয়ার, যন্ত্রপাতি, দ্রব্য উৎপাদন, পরিবহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিবর্তন | 

অধিকতর দ্রুতগতিসম্পন্ন। ফলে সংস্কৃতির বস্তুগত দিকের সঙ্গে অবস্তুগত উপাদানের ব্যবধান সৃষ্টি হয়, এটিই সাংস্কৃতিক ব্যবধান বা সংস্কৃতির অসম সম্প্রসারণ নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে অগবার্ন পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের কথা উল্লেখ করেছেন। 

এ ধরনের পরিবার ব্যবস্থা মূলত কৃষি যুগে বিকাশ লাভ করেছিল এবং তা কৃষি উপাদানের জন্য উপযোগীও বটে। কিন্তু আধুনিক শিল্পায়িত ও শহুরে সমাজেও সেই পিতৃতান্ত্রিক পরিবার এখনো রয়েছে। 

যদিও নারী স্বাধীনতার উত্তরোত্তর প্রসারের ফলে পিতার একক প্রাধান্য এখন যথেষ্ট খর্ব হয়েছে বলা যায়, তবুও পরিবারের মৌলিক রূপটি এখনো পিতৃতান্ত্রিক। ফলে কাঙ্ক্ষিত ও বাস্তব অবস্থার মধ্যে একটি ব্যবধান রয়ে গেছে।

ডব্লিউ. এফ. অগবার্ন (W. F. Ogburn) সামাজিক ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে বস্তুগত ও অবস্তুগত এ দু'ভাগে ভাগ করেছেন। নিম্নে

ছকের সাহায্যে দেখানো হলো-

সংস্কৃতি

বস্তুগত সংস্কৃতি

অবস্তুগত সংস্কৃতি

শিল্প, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি বিশ্বাস, আদর্শ, মূল্যবোধ, ভাষা প্রভৃতি 

অগবার্ন এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, আধুনিক সমাজ জীবনের সামঞ্জস্য বিধানের মূলকথা হচ্ছে সংস্কৃতির বস্তুগত ও অবস্তুগত দিকের মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান। 

অন্যভাবে বলা যায় যে, আধুনিক মানুষের প্রধান সমস্যা হচ্ছে প্রচলিত ধ্যানধারণার সাথে সমসাময়িক প্রযুক্তির সমন্বয়হীনতা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পুরাতন ঢাকা নগরীর অন্যতম যানবাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি, মালবাহী গরুর গাড়ি। সে অনুযায়ী তখন রাস্তাঘাট ছিল স্বল্প দৈর্ঘ্য ও সরু। 

নতুন ট্রাক ও গাড়ির জন্য নতুন নিয়ম ও রাস্তার প্রয়োজন হলো। ফলে নতুন নিয়ম মানার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অসুবিধা সৃষ্টি হয় এবং বাস্তব উপাদান মোটর গাড়ির প্রচলন ও অবাস্তব উপাদান নিয়মকানুন প্রবর্তন এ দুয়ের মধ্যে সংগতিপূর্ণ পরিবর্তন হতে বিলম্ব হয়।

→ অগবার্নের সংস্কৃতির অসম্ অগ্রগতি তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য : অগবার্নের তত্ত্বটি বিচার-বিশ্লেষণ করলে কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় । নিম্নে সেগুলো বর্ণনা করা হলো-

১. অসম গতি : সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশের মধ্যে অসম গতি পরিলক্ষিত হয় ।

২. ভারসাম্যহীনতা : সংস্কৃতির অংশগুলো অসমানভাবে এগিয়ে চলার কারণে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় এবং এজন্য গোটা সংস্কৃতির মধ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পিছিয়ে পড়া | সংস্কৃতির অংশকে এগিয়ে আনার প্রয়োজন দেখা দেয় ।

৩. কার্যকারণ সম্পর্কে আবদ্ধ : মূলত সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশ পরস্পরের সাথে কার্যকারণ সম্পর্কে আবদ্ধ ।

৪. মাত্রাগত পার্থক্য : সাধারণত বস্তুগত সংস্কৃতি অবস্তুগত সংস্কৃতির তুলনায় বেশি গতি ও মাত্রায় এগিয়ে চলে ।

৫. সোস্যাল ইনোভেশন : বিভিন্ন Non-technological social innovation প্রবর্তনের ফলে Cultural lag বা সাংস্কৃতিক ব্যবধান সৃষ্টি হতে পারে। 

যেমন- আধুনিক রাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান হারে কর ধার্য করায় যাদের কর খুব বেশি হয়ে যায়, তারা বিভিন্ন কৌশলে কর ফাঁকি দিতে আরম্ভ করে। অথচ এ সমস্যা রোধের জন্য কোনো * কার্যকরী ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় সাংস্কৃতিক ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে।

৬. ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়াস : ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়াস সত্ত্বেও প্রায়ই বস্তুগত সংস্কৃতির সাথে অবস্তুগত সংস্কৃতি তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, ফলে সাংস্কৃতিক ব্যবধান সৃষ্টি হয় ।,

→ সমালোচনা : কোনো তত্ত্বই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। স্বভাবতই অগবার্নের এ তত্ত্বও বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী এ তত্ত্বের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

প্রথমত, কতক সমাজবিজ্ঞানী অগবার্নের তত্ত্বে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনকে বেশি জোর দেওয়ায় ব্যঙ্গ করে বলেন, "He made technology a tail that waged the dog (Culture)."

দ্বিতীয়ত, বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী এস. সি. গিলকি মনে করেন, “সামাজিক পরিবর্তন প্রকৃতপক্ষে নানাবিধ জটিল উপাদানের ফলশ্রুতি। অতএব সেখান থেকে বিশেষ কোনো উপাদানকে প্রধানরূপে চিহ্নিত করা বাস্তবিকই অসম্ভব।”

তৃতীয়ত, Maclver and Page তাদের 'Society' গ্রন্থে এ তত্ত্বের সমালোচনা করে উল্লেখ করেন যে, এ তত্ত্বে কেন Cultural lag সৃষ্টি হয় তা বর্ণনা করা হয় না। তাদের মতে, 'Progress' বা 'lag' এ প্রত্যয় দুটির সঙ্গে Valuation' এর ব্যাপার জড়িত থাকে। 

সে কারণে যেসব ক্ষেত্রে সর্বজনস্বীকৃত বস্তুনিরপেক্ষ বিচার (Value judgement ) মান নেই সেক্ষেত্রে শব্দ দুটির প্রয়োগ অর্থহীন হয়েছে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান তা যথারীতি বা আনুপাতিক গতিতে পরিবর্তত না হলে সমাজের ভারসাম্য ও স্বাভাবিক গতি রক্ষিত হয় না এবং অসম গতির সৃষ্টির হয়। 

তাছাড়া অগবার্নের অসম অগ্রগতি তত্ত্বটি মাত্রাতিরিক্ত সহজীকরণের দোষে দুষ্ট। কারণ সাংস্কৃতিক সূত্র অত্যন্ত জটিল ও অনিশ্চিত। সাংস্কৃতিক সকল অংশের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সংজ্ঞাতীত ও অত্যন্ত অসীম । তাই এতো সহজে একে বোঝানো অসম্ভব।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ অগবার্নের সংস্কৃতির অসম অগ্রগতি তত্ত্বটি পর্যালোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম অগবার্নের সংস্কৃতির অসম অগ্রগতি তত্ত্বটি পর্যালোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ