নারীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ আলোকপাত কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো নারীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ আলোকপাত কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের নারীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ আলোকপাত কর।

নারীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ আলোকপাত কর
নারীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ আলোকপাত কর

নারীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ আলোকপাত কর

উত্তর : ভূমিকা : জ্ঞানের প্রতিটি শাখারই তাত্ত্বিক ভিত্তি রয়েছে। নারীবিষয়ক অধ্যয়ন এবং গবেষণার তাত্ত্বিক ভিত্তিই হলো নারীবাদ । যুগের বিবর্তনেই নারীরা নিজ খোলসের বাইরে এসে নিজ আবিষ্কার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হয় আর তাদের তাত্ত্বিক ও জ্ঞানগত সহযোগিতা দান করে নারীবাদ তথা বিভিন্ন নারীবাদী তাত্ত্বিকগণ ।

→ উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ : নারীবাদের সুদীর্ঘ ইতিহাস বিদ্যমান। ধারণা করা হয়, পঞ্চদশ শতাব্দীতে এ ইতিহাসের যাত্রা শুরু হয়। তবে কোথায়, কখন, কবে, কে, নারীর প্রতি বৈষম্য ও নারীর অধিকার নিয়ে কথা প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। 

ফরাসি লেখক ও গবেষক সিমন দ্য বুভোয়ার বলেন, “যে মহিলা নারীর স্বপক্ষে প্রথম কলম তুলে ধরেছিল তাঁর নাম খ্রিস্টিন ডি. পিজান (Christine de Pisan) ১৪০৫ সালে প্রকাশিত 'The Book of the City of Ladis গ্রন্থে তিনি দাবি করেন, “বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, নারী ও পুরুষ উভয়ে ঈশ্বরের প্রজা এবং মানবজাতির অন্তর্ভুক্ত। 

নারী ভিন্ন প্রজাতি বা পুরুষ থেকে জ্বি নরগোষ্ঠী নয়। কাজেই তাদের নৈতিক শিক্ষা থেকে বাদ দেবার যুক্তি নেই।” তাঁর রচনায় তিনি নারীর অধস্তন অবস্থান সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যানধারণার বিরোধিতা করেন।

১৯৬২ সালে ওলন্দাদ নারী মার্গারেট লুকাস রচিত 'নারী ভাষণ' (Female Orations) বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম নারীবাদী সাহিত্য হিসেবে পরিচিতি পায়। সেখানে নারীর পরাধীনতা ও অসম অধিকারের বিষয়সমূহ স্থান পেয়েছে। 

তবে নারীবাদের মূল প্রেরণ নিহিত পাশ্চাত্যের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও উদার গণতান্ত্রিকতার মধ্যে যার থেকে ধীরে ধীরে নারীবাদী চিন্তা ও আন্দোলন ডানা বাঁধতে শুরু করে। নারীবাদী চিন্তা চেতনার উদ্ভবের মূল সময়কাল হিসেবে ঊনবিংশ শতাব্দীকে চিহ্নিত করা হলেও তত্ত্বীয় কাঠামো হিসেবে নারীবাদ ঊনবিংশ শতাব্দীর ৮০ দশকে দৃঢ়তা লাভ করে। 

নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশকে ২টি পর্যায়ে ভাগ করা যায় ।

১. নারীবাদ উদ্ভবের প্রথম পর্যায় : নারীবাদের প্রথম পর্যায় হিসেবে অষ্টাদশ শতাব্দীর ৭০ দশক থেকে শুরু হয়। ১৭৭৬ সালের আমেরিকার ‘স্বাধীনতার ঘোষণা' ও ১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধান গৃহীত হলে নারীরা সমান অধিকারের দাবি জানাতে থাকে । 

তদুপরি ১৭৮৯ সালের ‘সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের' মহান আদর্শ নিয়ে ফরাসি বিপ্লবের যাত্রা শুরু হলে আবারও নারীর অধিকারের বিষয়টি সামনে চলে আসে, ফলে স্বীয় নাগরিক অধিকার তথা ভোটাধিকারের দাবিতে নারীরা রাস্তায় আন্দোলন শুরু করে । 

১৭৯০ সালে অলিম্পি ডি গুজেস (Olympe De Gouges) ফ্রান্সে পুরুষের ন্যায় নারী অধিকারের পক্ষে 'Declaration of the Rights of Women and the Female Citizen' গ্রন্থটি রচন করেন । তিনি প্রশ্ন করেন, “নারীর যদি ফাঁসিকাষ্ঠে যাবার অধিকার থাকে, তবে পার্লামেন্টে থাকার অধিকার থাকবে না কেন।”

সত্যিকারের নারীবাদী কন্ঠের আবির্ভাব হয় ইংরেজ লেখিকা মেরী ওলস্টোনক্রাফট (Mary Wollstonecraft)-এর যুগান্তকারী এ Vindication of the Rights of Women' গ্রন্থের মধ্য দিয়ে। বইটি নারীবাদী চিন্তার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। 

গ্রন্থে তিনি নারী সম্পর্কিত সমাজের বিভিন্ন বিশ্বাস ও রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং নারী অধিকারের পক্ষে বলিষ্ঠ যুক্তি তুলে ধরেন। নারী শিক্ষার ওপর তিনি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন । পরবর্তীতে নারীর অধিকারের দাবি কেবল রচনা ও গবেষণায় সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং তা আন্দোলনে রূপ নেয় ।

এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যানটন ও লুক্রেশিয়া ঘট-এর নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ১৯-২০ জুলাই এলিজাবেথ যুক্তরাষ্ট্রের সেনেকা ফলস শহরে 'নারী অধিকার সম্মেলন' (Women's Right's Conference) অনুষ্ঠিত হয় যা বিশ্বের প্রথম নারী অধিকার বিষয়ক সম্মেলন সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল 'নারীর সামাজিক, নাগরিক ও ধর্মীয় অবস্থা এবং অধিকারের আলোচনা"।

সম্মেলনে আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা পরের অনুরূপ বা ন্যায় Declaration of Sentiments' পেশ করা হয়। ঘোষণায় ১৮টি দাবি ও অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয় যার মধ্যে অন্যতম ছিল নারীর উচ্চতর শিক্ষালাভের অধিকার। 

এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ১৯৪৮ সালে jen's College' প্রতিষ্ঠিত হয়। নারীর ভোটাধিকারের প্রশ্নে মতবিরোধ থাকায় এটি ছাড়া বাকি সকল দাবিই সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ঊনবিংশ শতাব্দীর ৫০-৬০ এর দশকে যে কয়জন দার্শনিক নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill) ছিলেন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

হ্যারিয়েট টেইলর মিলের 'Enfranchisement of Women' গ্রন্থটি ১৮৫১ সালে প্রকাশিত হয় যাতে তিনি ইংরেজ নারীর পূর্ণ আইনগত ও রাজনৈতিক নাগরিকত্বের দাবি করেন। ১৯৫৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী জন স্টুয়ার্ট মিল নারীর ভোটাধিকারের পক্ষে ১৮৬৯ সালে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করেন। Mill তাঁর The Subjection of Women' গ্রন্থে নারীর মানবাধিকার, শিক্ষা, সম্পত্তি ও ভোটাধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

ভোটাধিকার ছাড়াও নারীরা বিভিন্ন ইস্যুতে পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন পরিচালনা করেছে। যেমন ১৮৫৭ সালে নিউইয়র্কের সেলাই কারখানায় উন্নত কাজের পরিবেশ, কর্মঘন্টা হ্রাস ও ট্রেড ইউনিয়নের দাবিতে নারী শ্রমিকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। 

ফ্রান্সে ১৮৭১ সালে শ্রমজীবী শ্রেণির প্রথম কমিউনিস্ট সমাজ বিনির্মাণের চেষ্টায় 'প্যারিকমিউন' এ হাজার হাজার নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ নারীবাদকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করে। জার্মানিতে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের অগ্রণী নেত্রী ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চের রূপকার ক্লারা জেটকিন মার্কসবাদ /সমাজতন্ত্রের সাথে নারীবাদের যোগসূত্র ঘটান। 

তিনি জার্মান সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে ১৮৯৩ সালে সরকারের কাছে নারী ভোটাধিকারের দাবিতে বলেন, “শ্রমজীবী নারীরা কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ও নৈতিক মর্যাদা রক্ষার জন্য ভোটাধিকার দাবি করে না বরং পুরুষদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে তারা ভোটাধিকারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।”

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইংল্যান্ড ও আমেরিকাতে 'ভোটাধিকারের দাবি' নারী আন্দোলনের মূল্য ইস্যুতে পরিণত হয় এবং আমেরিকায় 'National American Women Suffrage Association ও ইংল্যান্ডে 'National Union of Women's Suffrage Societies' প্রভৃতি সংগঠনের জন্ম হয়। ফলে নারীর ভোটাধিকারের আন্দোলন সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য সিয়ে নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে।

নিউজিল্যান্ড-১৮৯৩

অস্ট্রেলিয়া-১৯০২ 

রাশিয়া—১৯১৭ 

আমেরিকা-১৯২০

ইংল্যান্ড-১৯২৮

২. নারীবাদ উদ্ভবের দ্বিতীয় পর্যায় : নারীবাদের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর ৪০-এর দশক থেকে। কারণ প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন (১৯১৪-১৯৪৫) সময়ে নারীবাদী আন্দোলন অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। 

কিন্তু ফরাসি লেখক সিমন দ্য বেড়োয়ার (Simone de Beauvior)-এর The Second Sex' (১৯৪৯) প্রকাশিত হলে নারীবাদী আন্দোলনে প্রাণের সঞ্চার হয় ১৯৬৩ সালে মার্কিন সাংবাদিক বেটি ফ্রাইডান 'The Femine Mystique' গ্রন্থটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে নারীবাদী আন্দোলনে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। 

নারীরা মনে করেছিল ভোটাধিকার অর্জিত হলেই নারীদের অন্যান্য অধিকারও পুনঃজীবিত অর্জিত হবে। কিন্তু ভোটাধিকার লাভের কয়েক যুগ পরেও নারী তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। কারণ আসল অসুবিধা ব্যালট বাক্সে নয়, 

আসল অসুবিধা পরিবারে, যেখানে স্বামীই সর্বসেরা। ফলে ১৯৭০ সালে নারীবাদী আন্দোলন আবারও প্রবল হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনের বাস্তব ঘটে ১৯৭০ সালে অক্সফোর্ডের রাস্কীন কলেজে 'নারী মুক্তি সভা' আয়োজনের দিয়ে। এ সভায় তাৎপর্যপূর্ণ কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়। যথা :- 

১. নারী-পুরুষের জন্য সমান বেতন-ভাতা;

২. নারী-পুরুষের জন্য শিক্ষার সমসুযোগ।

৩.২৪ ঘণ্টা শিশু সেবা প্রদানের আশ্রম

৪. চাওয়া মাত্র বিনামূল্যে গর্তনিরোধক ও গর্ভপাতের ব্যবস্থা।

পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে এসব দাবি আরও সুনির্দিষ্ট রূপ পরিগ্রহ করে। ফলে নারী স্বাধীনতার দাবি হয়ে দাঁড়য়া ভাতীতি হতে স্বাধীনতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে স্বাধীনতা, বলপূর্বক নারীর শ্লীলতাহানী থেকে স্বাধীনতা এবং যেসব আইন নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্য সুসংহত করে তা বাতিলকরণ । 

নারীর অধিকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যৌনতা। ঊনবিংশ শতাব্দীর ৫০-৭০ এর দশকে ব্রিটেন ও আমেরিকায় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার যৌনতা বিষয়ক বিভিন্ন লেখনীর প্রকাশ ঘটে। এসব লেখনীতে (Sexual Politics, Human Sex and Perpoonse, The Dialectic of Sex) 

পুরুষরা কীভাবে নিজেদের চাহিদা ও স্বার্থ সংরক্ষণে নারীর যৌনতাকে জন্মহার করছে এবং কীভাবে পুরুষ নিয়ন্ত্রিত যৌনতা থেকে মুক্ত হয়ে নারী তার প্রয়োজন অনুসারে নিজ যৌনতাকে পুননির্মাণ করতে পারে তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। 

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পর তা নারী অধিকারের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে। ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের ৩০১ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭৫ সালকে 'আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ এবং ১৯৭৬-৮৫ সালকে 'আন্তর্জাতিক নারী দশক' ঘোষণা করা হয়। 

১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপের জন্য সিও (CEDAW) সনদ অনুমোদন করে। এভাবেই নারী আন্দোলনের বিজয় সূচিত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিংশ শতাব্দীর নবজাগ্রত নারীবাদী আন্দোলনের সাথে অতীতের নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম পার্থক্য এই যে, নবজাগ্রত নারীবাদী আন্দোলনকে গুরুগত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠার প্রয়াস যা অতীতের নারীবাদী আন্দোলনগুলোর ছিল না।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ নারীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ আলোকপাত কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম নারীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ আলোকপাত কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ