বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কিছু তথ্য ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখ |
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখ
- বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বক্তব্য
- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে লিখ
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কিছু তথ্য
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লিখ
- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : স্বাধীনতা সংগ্রাম বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে বর্বর পাক বাহিনীর কাছে হারাতে হয়েছে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণ, অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জত এবং অপরিমিত ধন-সম্পদ।
তবুও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মানুষ পেয়েছে রক্তিম স্বাধীনতা। তাই বাংলার মুক্তিযুদ্ধ পৃথিবীর নির্যাতিত ও পরাধীনতার গ্লানিতে দগ্ধ মুক্তিপাগল মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি : পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগণ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর বিমাতাসুলভ আচরণ করতে থাকে।
তারা প্রথমে পূর্ব পাকিস্ত ন্যাানের জনগণের মাতৃভাষা পদদলিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। ল পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমষ্টির মুখের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও তারা বাঙালিদের মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে ক রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়।
তাদের এ নির্বিচারবাদের প্রতিবাদে শুরু হয় ঐতিহাসিক 'ভাষা আন্দোলন'। শুধু ভাষার অধিকার কেঁড়ে নিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি; বরং কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চাকরিসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পূর্ব পাকিস্ত ানের জনগণের প্রতি তারা বৈষম্য প্রদর্শন করে।
সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এরূপ বৈষম্যের কারণে স্বাভাবিকভাবেই বাঙালিরা পশ্চিমাদের প্রতি প্রতিবাদী হয়ে উঠে। যার ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠে শিক্ষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, ৭০- এর সাধারণ নির্বাচন এবং ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ তথা মুক্তিযুদ্ধ ।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু : বাঙালির অসহযোগ আন্দোলনের ফলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাত্রিতে হিংস্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন ঢাকার পিলখানা, ই. পি. আর. হেড কোয়ার্টার, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ চালায় মূলত তখন থেকেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জিয়া কর্তৃক শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারিত হয়। শুরু হয় দেশব্যাপী প্রতিরোধ আন্দোলন।
এদেশের ছাত্র, জনতা, কৃষক, শ্রমিক সকলেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বাধীন বাংলা বেতারের জাতীয় সংগীত, সংবাদ বুলেটিন এবং চরমপত্র অনুষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধাদেরকে স্বাধীনতা যুদ্ধে নব.. উদ্যমে উদ্দীপ্ত করে তোলে ।
মুক্তিবাহিনী গঠন : দেশমুক্তির মানসে জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানীর নেতৃত্বে সাবেক ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, সাবেক ই.পি. আর. পুলিশ, আনসার, ছাত্র, যুবক, শ্রমিক প্রভৃতি সম্প্রদায় থেকে যুদ্ধে গমনেচ্ছুক লোকদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়।
তাদের অনেকেরই যুদ্ধসংক্রান্ত ব্যাপারে পূর্বে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা অস্ত্র হাতে তুলে নেয় ।
পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে ভারত সরকার তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। এভাবে মাত্র কয়েক সপ্তাহের প্রশিক্ষণের সকল অসুবিধা কাটিয়ে বাঙালি ছাত্র ও যুবকরা রণকৌশল শিখে নেয়।
প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হবার পর তারা অধিকৃত বাংলাদেশের বনে-জঙ্গলে, গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে ঢুকে পড়ে পাক বাহিনীর উপর গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ চালায় এবং প্রয়োজনে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।
তারা এভাবে নিজদের প্রাণের বিনিময়ে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করেছে। এ সময় তাদেরকে বাংলাদেশের জনগণ নানাভাবে সাহায্য করেছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। তাই দেশের সব প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল এতে যোগ দেয়। অবশ্য এ সংগ্রামের সব রাজনৈতিক দলের সমান ভূমিকা ছিল না।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাঙালি জনগণের যথার্থ প্রতিনিধি হওয়ায় স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয় ।
শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার গঠন করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে সার্বিক লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
মুজিবনগর সরকারকে মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনায় পরামর্শ দেওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়।
এতে তাজউদ্দিন আহমদ, খন্দকার মোশতাক আহমদ এবং আওয়ামী লীগের দুজন প্রতিনিধি ছাড়াও মাওলানা ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, শ্রী মণি সিং এবং কংগ্রেস দলীয় শ্রী মনোরঞ্জনধরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ভারতের সহযোগিতা ও স্বীকৃতি প্রদান : ভারত অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছিল। জেনারেল ইয়াহিয়া মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়ার মানসে ভারতের বিরুদ্ধে ৩ ডিসেম্বর বিমান হামলা চালায় এবং মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধে পরিণত করে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও ফায়দা লুটার চক্রান্ত করে ।
কিন্তু তার সে চক্রান্ত সফল হয়নি। সাবেক সোভিয়েত রশিয়া ভেটো প্রয়োগ করে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। অতঃপর ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানে বিমান হামলার পর ৬ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেন ।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় : ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর সহযোগিতায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়। এ মিলিত সংঘবদ্ধ আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নাজেহাল হয়ে পড়ে।
অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪-৩০ মিনিটে ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান নিয়াজী পূর্বাঞ্চলের কমান্ডারের পক্ষ থেকে ৯৩ হাজার সৈন্যসহ মিত্র বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। এভাবে মাত্র কয়েক মাসের যুদ্ধের পর স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, স্বাধীনচেতা বাঙালি জাতি কখনো অপরের পরাধীনতা স্বীকার করে নেয়নি।
পলাশীর যুদ্ধে বাঙালির স্বাধীনতা নিশ্চিহ্ন হওয়ার পর থেকে তারা বারবার স্বাধীনতা আদায়ের চেষ্টা করেছে। নির্যাতিতও হয়েছে বহুবার। কিন্তু তাই বলে থেমে যায়নি।
অবশেষে নানা ঘটনার প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রাম ও অশেষ আত্মোৎসর্গের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘটে। তাই বাংলাদেশের অভ্যুদয় আধুনিক সমাজের কাছে এক স্মরণীয় ঘটনা।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লিখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।