মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর ভূমিকা বিবরণ দাও
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর ভূমিকা বিবরণ দাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর ভূমিকা বিবরণ দাও ।
মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর ভূমিকা বিবরণ দাও |
মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর ভূমিকা বিবরণ দাও
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।
- অথবা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর বিবরণ দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকহানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর আক্রমণ করলে বাঙালিরাও বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে প্রতিরোধ গড়ে তুলে।
অর্থাৎ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে। আর এরা যার যার অবস্থান থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বাহিনী গঠন করে। যুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীগুলোর ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
→ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনী : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নে বর্ণিত হলো :
১. নিয়মিত বাহিনী : ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইউনিটগুলোর সমন্বয়ে বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে এই ইউনিটগুলোর সমন্বয়ে বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়।
সৈন্যবলের ঘাটতি পূরণের জন্য আধা-সামরিক বাহিনী (যেমন-পুলিশ আনসার, মুজাহিদ বা যুবকদের) পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৮টি ব্যাটালিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এছাড়া সেক্টর ট্রুপস গড়ে তোলা হয়। সেক্টর ট্রুপসের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০,০০০। নিয়মিত বাহিনীর সদস্যদের সেক্টর ট্রুপসে নেয়া হয়।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়ন নিয়ে ৩টি ব্রিগেড গঠন করা হয়। সরকারি পর্যায়ে এদের নামকরণ করা হয় এম. এফ (মুক্তিফৌজ)।
নিয়মিত বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮,৬০০ জন। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ সরকার নিয়মিত বাহিনী হিসেবে সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনী গড়ে তোলে ।
২. অনিয়মিত বাহিনী : যুবক, ছাত্র, শ্রমিক কৃষক ও সকল পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন সেক্টরের অধীনে অনিয়মিত বাহিনী গঠিত হয়।
এই বাহিনীর সরকারি নামকরণ ছিল গণবাহিনী বা এফ এম (ফ্রিডম ফাইটার বা মুক্তিযোদ্ধা)। এ বাহিনীর সদস্যদের দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণের পর একজন কমান্ডারের অধীনে তাদের নিজ নিজ এলাকায় গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করার জন্য প্রেরণ করা হয়।
৩. কাদেরিয়া বাহিনী : ঢাকা থেকে অদূরে টাঙ্গাইল জেলায় এক দুঃসাহসী তরুণ আব্দুল কাদের সিদ্দিকী এই বাহিনী গড়ে তোলেন।
তারই নাম অনুসারে এই বাহিনীর নামকরণ করা হয় কাদেরিয়া বাহিনী । কাদের সিদ্দিকী ১৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও ৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের সমন্বয়ে তার এ বিশাল বাহিনী গড়ে তোলেন।
কাদেরীয়া বাহিনী গেরিলা বাহিনী হলেও প্রচলিত গেরিলা পদ্ধতি হিট এন্ড রান অনুসরণ করেনি; বরং তার পরিবর্তে হিট এন্ড এডভান্স এই নীতি অনুসরণ করে ছোট বড় প্রায় সাড়ে তিনশরও বেশি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
তার অসামান্য দক্ষতা সাহস ও সামরিক প্রতিভার জন্য তাকে টাইগার সিদ্দিকী নামে অভিহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়।
৪. হেমায়েত বাহিনী : গোপালগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিনের নিজস্ব প্রচেষ্টায় গঠিত হয় হেমায়েত বাহিনী।
হেমায়েত উদ্দিন পেশায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন হাবিলদার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি আরও কিছু বাঙালি সৈনিক নিয়ে সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে এসে নিজ গ্রামে এ বাহিনী গড়ে তোলেন।
এছাড়া কোটালিপাড়ার জহুরেরকান্দি হাইস্কুলে তিনি একটি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলেন এবং তিনি মাসে প্রায় ৪,০০০ যুবককে প্রশিক্ষণ দান করেন।
এ বাহিনীতে মোট মুক্তিযুদ্ধে ছিল ৫০৫৪ জন। এদের মধ্যে নিয়মিত বাহিনীর লোক ছিল ৩৪০ জন। মুক্তিযুদ্ধে হেমায়েত উদ্দীনের অসামান্য অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর সরকার তাকে বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করেন ।
৫. আকবর বাহিনী : আকবর হোসেন ছিলেন মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার শ্রীলোক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মাত্র ছয়টি রাইফেলস ও সামান্য কিছু গোলাবারুদ এবং কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু করেন এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে তিনি শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তোলেন।
আকবর হোসেনের প্রচেষ্টায় তৈরি বাহিনী তাই ‘আকবর বাহিনী' নামে পরিচিত। আকবর বাহিনীর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধে হলো : ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানা দখল, আলফাপুরের যুদ্ধ, খামার পাড়া যুদ্ধ, মালাশিয়ার যুদ্ধ, মাগুরা আনসার ক্যাম্প আক্রমণ ইত্যাদি । মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর ৪১ জন বীরযোদ্ধা শহিন হন ।
৬. মুজিব বাহিনী : মুক্তিযোদ্ধাকালীন সময় মুক্তিবাহিনীর কর্তৃত্ব ব্যতীতই মুজিব বাহিনী নামে একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে উঠে।
শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ ছিলেন এই বাহিনীর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
অসহযোগ আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ কর্তৃক স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়েছিল এবং ২৩ মার্চ তারিখে এই পরিষদ কর্তৃক প্রতিরোধ দিবস উদযাপনের সময় রেসকোর্স ময়দানে প্রাক্তন সৈনিক ও ছাত্রদলের এক সম্মিলিত কুচকাওয়াজ এবং যুদ্ধে মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্রলীগের এই কার্যক্রমের পরিণতি ছিল মুজিব বাহিনী । বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট বা মুজিব বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সম্ভবত এই কারণেই তা ‘মুজিব বাহিনী' নামে পরিচিত ছিল । মুজিব বাহিনী মূলত গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ প্রদান করতো।
৭. আঞ্চলিক বাহিনী : বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনেকে মুক্তিসেনাদের নিয়ে গেরিলাবাহিনী সৃষ্টি করেন ।
যেমন- টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনী, আফসার ব্যাটালিয়ান (ভালুকা- ময়মনসিংহ), বাতেন বাহিনী (টাঙ্গাইল), হেমায়েত বাহিনী (গোপালগঞ্জ-বরিশাল), মহালিম বাহিনী (মানিকগঞ্জ), আকবর বাহিনী (মাগুরা-ঝিনাইদহ), রফিক মির্জা বাহিনী (সিরাজগঞ্জ- পাবনা) ও জিয়া বাহিনী (সুন্দরবন) উল্লেখযোগ্য। এসব গেরিলাবাহিনী ছিল স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধা ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলার সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছিল এর তিন থেকে চার গুণ সদস্য।
আর মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে দলমত নির্বিশেষে সকল বাহিনীরই লক্ষ্য ছিল এক ও অভিন্ন, আর তা হলো বাংলার স্বাধীনতা অর্জন। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে উপযুক্ত বাহিনীসমূহের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর ভূমিকা বিবরণ দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর ভূমিকা বিবরণ দাও । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।