মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা কর ।

মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা কর
মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা কর

মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা কর

  • মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা লিখ
  • অথবা, মুজিবনগর সরকার কি? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা উল্লেখ কর । অথবা, মুজিবনগর সরকার বলতে কি বুঝ ? ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা আলোচনা কর।
  • অথবা, মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : মুজিবনগর সরকার বাংলদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। 

বাঙালির মুক্তির বাসনাকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমর্থনের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন' করা ছিল মুজিবনগর সরকারের সাফল্য ও কৃতিত্ব। 

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল এ সরকার শপথ গ্রহণ করে। এ সরকারের প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

তারই নামানুসারে বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ হয় মুজিবনগর এবং অস্থায়ী সরকারও পরিচিত হয় মুজিবনগর সরকার নামে ।

→ মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ছিল অতুলনীয় । 

যুদ্ধে গতিবেগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এ সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল । নিম্নে মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা আলোচনা করা হলো : 

১. সংগঠিত প্রতিরোধ পরিচালনা : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালির উপর যে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তারই পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে উঠে। 

কিন্তু এ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা সংগঠিত না থাকায় অচিরেই এ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হানাদার বাহিনীর আক্রমণে ভেঙ্গে পড়ে। এমতাবস্থায় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। 

যে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করে এবং দীর্ঘ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে ।

২. যুদ্ধের গতিসঞ্চারের ক্ষেত্রে : মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর যুদ্ধে তুমুল গতি সঞ্চার হয়। পূর্বে যে বিক্ষিপ্ত আক্রমণ ও প্রতিরোধের মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল তা ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছিল। 

সরকার প্রতিষ্ঠার পর যুদ্ধ তার আপন গতি ফিরে পায়। প্রতিষ্ঠিত সরকার তার প্রশাসনতন্ত্রের মাধ্যমে এক সংগঠিত অভিযান পরিচালনা করতে থাকে। 

এ সরকার নিয়মিত ও অনিয়মিত বাহিনী প্রতিষ্ঠা করে যুদ্ধকে দুই ভাবে পরিচালনা করতে থাকে। নিয়মিত বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আর অনিয়মিত বাহিনী গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে পাক বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। এর মাধ্যমে যুদ্ধে গতি সঞ্চারিত হয়।

৩. পরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে : মুজিবনগর সরকার বিক্ষিপ্ত যুদ্ধকে একটি পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসে এবং সুনির্দিষ্ট নীতি ও কৌশল অবলম্বন করে যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকে। 

যুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন করে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ । 

প্রধান সেনাপতি ছিলেন কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী, সেনাপ্রধান ছিলেন লেঃ কর্নেল আব্দুর রব। বাংলাদেশের সমস্ত অঞ্চলকে এ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে ৩টি ব্রিগেডও গঠিত হয়। 

এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই সার্বিক মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ধাপে ধাপে যুদ্ধকে পরিচালনা করে এ মন্ত্রণালয়। যা যুদ্ধ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ।

৪. শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলা: যুদ্ধকালীন সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিল শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলা করা। যুদ্ধের সময় প্রায় এককোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। 

এ বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আশ্রয় ব্যবস্থা ও খাদ্য সরবরাহ করা ছিল মুজিবনগর সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। 

এ লক্ষে একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শরণার্থীদের কল্যাণে শরণার্থী কল্যাণ বোর্ড কার্যকর ছিল। যা শরণার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করেছিল।

৫. বিশ্বজনমত সৃষ্টি : মুজিবনগর সরকার শুধু যুদ্ধ পরিচালনা করেই শান্ত ছিল না। এ সরকার বিশ্ব জনমত গঠন করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

এ সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দূত প্রেরণ, রাষ্ট্রদূত নিয়োগ, দূতাবাস স্থাপন করে সেসব দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে। 

মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালির প্রতি বিশ্বব্যাপী যে সহানুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল তা বহির্বিশ্বে মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার ফসল। এসব তৎপরতার ক্ষেত্রে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যুদ্ধকালে প্রতিষ্ঠিত অস্থায়ী সরকার তথা মুজিবনগর সরকার দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং যুদ্ধের পক্ষে বহির্বিশ্বে জনমত গঠনের লক্ষ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। 

যার পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধে অবাধ গতি সঞ্চারিত হয়। যুদ্ধ আরও সুসংগঠিত ও সুপরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হয় একই সাথে বিশ্বের আপামর জনসাধারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং মুক্তিযুদ্ধে তারাও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। 

মুজিবনগর সরকারের এসব কার্যক্রম পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের ক্ষেত্রে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

মুজিবনগর সরকারের এ তৎপরতার কারণেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্বল্প সময়ের মধ্যে সাফল্যে পরিণতি লাভ করে। তাই মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা অপরিসীম।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা মূল্যায়ন করতে পারবে । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 03 October

    Great writing

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ