মার্কসীয় নারীবাদে গৃহকর্ম সম্পর্কে কী বলা হয়েছে
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মার্কসীয় নারীবাদে গৃহকর্ম সম্পর্কে কী বলা হয়েছে জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মার্কসীয় নারীবাদে গৃহকর্ম সম্পর্কে কী বলা হয়েছে।
মার্কসীয় নারীবাদে গৃহকর্ম সম্পর্কে কী বলা হয়েছে |
মার্কসীয় নারীবাদে গৃহকর্ম সম্পর্কে কী বলা হয়েছে
উত্তর : ভূমিকা : মাকর্সবাদী দর্শনে নারী নির্যাতন অপেক্ষা শ্রমিক নির্যাতনকে অধিক গুরুত্বের সাথে ব্যাখ্যা করে। শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই নারী নির্যাতন রোধ করা সম্ভব। কার্ল মার্কসের হৃদয় বন্ধু ফ্রেডারিক এঙ্গেলস মার্কসের অনুমোদন নিয়ে নারী নিযাতনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তার মধ্যে অন্যতম হলো গৃহকর্মে নারী নির্যাতন। এছাড়াও ধনিকতন্ত্রে নারীর অবমূল্যায়ন ও পুরুষের অধীনস্থ জীবন-যাপনে বাধ্য করেছে এবং নারীকে ভোগের পণ্য হিসেবে গণ্য করা হতো ।
→ মার্কসীয় মতবাদ : নারী সম্পর্কে কার্ল মার্কস ও তার অনুসারীদের চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে মার্কসীয় নারীবাদ বলা হয়। মার্কসীয় নারীবাদীরা বলেন, নারীরা মনমানসিকতা ও সামাজিক অস্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে।
পুরুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক শক্তির অধীনস্থ থেকে নারীরা তাদের মধ্যে মান্যতা ও হীনমন্যতা গঠন করে। যদি নারীকে পুরুষের অধীনস্থ করে রাখা না হতো তাহলে নারীর মধ্যে ভিন্নতা দেখা যেত।
→ গৃহকর্ম সম্পর্কে মার্কসীয় দর্শন : মার্কসীয় মতবাদ নারীকে উৎপাদনের সাথে অন্তর্ভুক্ত করেছে। গৃহকর্মে নারীর কাজও উৎপাদনের আওতায় রয়েছে। গৃহকর্মে নারীবাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. গৃহ উৎপাদনে অংশগ্রহণ : মার্কসীয় নারীবাদীরা পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থাকে চরমভাবে বিশ্লেষণ ও আক্রমণ করেছেন। নারী হলো গৃহ উৎপাদনকারী। এছাড়াও নারী হচ্ছে গৌণত ভোক্তা। এজন্যই নারী সমাজ একটি শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে।
মার্গরেট বুস্টন বলেছেন- গৃহের সাথে অংশগ্রহণ কর্মের মাধ্যমে সহজ ব্যবহারযোগ্য মূল্যবান সৃষ্টির জন্য দায়ী। নারী শ্রম ব্যয় করে যা গৃহে উৎপাদন করে অপরদিকে তা বাজারে বিক্রয়ের জন্য তার চেয়ে অধিক শ্রম ব্যয় করা হয় এটা বলা যাবে না ।
২. রাষ্ট্রীয় কর্মে নারী : গৃহের যে কর্ম নারীরা করে তার যদি দায়িত্ব সমাজকে দেয়া হয় তাহলে সমাজ নারীর এই সেবাকে বিনিময়ের মাধ্যমে মজুরির দ্বারা নিয়োগ দিবে।
যার ফলে যে উৎপাদন নারী গৃহে করতো সেই উৎপাদন নারী সমাজ ও দেশের বাহিরে করতে যাবে। তাই নারীবাদীরা বলেছেন এই পরিবর্তন যদিও সামান্য তবে এই পরিবর্তন হবে নারীর জন্য মুক্তি ও স্বাধীন হওয়ার পাথেয়।
৩. সামাজিকভাবে গৃহকর্ম : নারী স্বাধীনতা ও মুক্তির অন্যতম একটি দিক হলো সমাজ ও গৃহকর্ম সম্পাদনের দায়িত্ব নারীকে নিজ হাতে গ্রহণ করতে হবে। আর তা সামাজিকভাবে সম্পন্ন হবে। গৃহকর্মকে সেবা শিল্পে পরিণত করার মাধ্যমে সমাজ সেই শিল্প গ্রহণ করবে।
যদি নারীর গৃহকর্ম সামাজিকভাবে পরিচালনা ও দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে নারীর কর্মের দায়িত্ব ও বোঝা হালকা হবে। যার ফলে শ্রম শক্তিতে নারীর অবদান আরো বেড়ে যাবে। তখন নারীর সেবা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে গণ্য হবে। এতে মূলত নারীর স্বাধীনতা ও মুক্তির পথ সুগম হবে।
৪. কর্মের মজুরি প্রদান : যদি গৃহকর্মের কর্ম যদি উৎপাদনশীল পর্যায়ের হয় তাহলে নারী তার জন্য মজুরি পাবে এবং নারীকে অবশ্যই মজুরি দেয়া হবে। নারী গৃহে কাজ করবে মজুরিহীন আবার ঘরের বাহিরেও কাজ করবে এটা কোনভাবে হতে পারে না।
এটা বরং একটি নারীর জন্য অন্যায্য তাই নারী মুক্তির জন্য নারীকে গৃহ কর্মের জন্য অবশ্যই মজুরি দিতে হবে। গৃহকর্মের মজুরি পেলে নারী মুক্তির পথ আরো দ্রুতগতিতে প্রসারিত হবে। তবে এই মজুরি পিতা, স্বামী-ভাই কেউ দিবে না। এটা একমাত্র সমাজ ও রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।
৫. পরিবারের গুরুত্ব : গৃহকর্ম যদি সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্বাহ করা হয় তাহলে তাতে পরিবারের গুরুত্ব কমে আসবে। রান্না থেকে সন্তান উৎপাদন ও সেবা প্রদান যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে হয় তবে এতে পরিবারের প্রয়োজন ও অস্তিত্ব থাকবে বলে মনে হয় না।
পরিবারের অবস্থান বিবেচনা করে ধনিকতন্ত্রকে দায়ী করে পরিবার ভেঙে ফেলা মোটেই উচিত হবে না। ধনিকতন্ত্রের পরিবার শুধু নারীর ভালোবাসা, আরাম, আয়েশ লাভের চেষ্টা করে যা সকল মানুষের প্রত্যাশা থাকে ।
৬. উদ্বৃত্ত মূল্য : মালিক শ্রেণিরাই পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। শ্রমিকের মজুরির ফলে যে মূল; অতিরিক্ত লাভ আসে সেটা মালিক শ্রেণি পায় ।
মূলত মালিকের লাভ শ্রমিকের শোষণের ফসল। কার্ল মার্কস এ লাভকে উদ্বৃত্ত মূল্য বলে চিহ্নিত করেছেন। কারণ, শ্রমিককে বঞ্চিত করে মালিক এই মূল্য ভোগ করে ।
৭. গৃহকর্মে নারী নির্যাতন : মার্কসবাদীদের মতে- নারী ধনিক শ্রেণি ও শ্রমিক শ্রেণি যাই হোক সকল নারীই অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার । নারীর প্রতি এই নির্যাতনের কৌশল ও মাত্রা প্রায় একই হয়ে থাকে ।
গৃহকর্মে নারীর পরিশ্রমের অবমূল্যায়ন সকল নারীর জীবনে একই সত্য ঘটনা। তাই অভিন্ন অভিজ্ঞতায় নারীর একতাবদ্ধতা তাদের মধ্যে মান্যতা ও সচেতনতা জাগ্রত করে ।
৮. শ্রম ও নারী : ধনিকতন্ত্রে নারীকে ভোক্তা হিসেবে গণ্য করা হয়। নারীরা ব্যয় করে শুধু আর পুরুষেরা আয় করে থাকে। মার্গারেট ধনিকতন্ত্রকে প্রবলভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন।
তিনি বলেন, নারীগণ প্রধানত উৎপাদনকারী এবং গৌণত ভোক্তা নারী এমন শ্রেণি যারা গৃহ কর্মের সাথে অন্তর্ভুক্ত। তিনি আরো বলেছেন- গৃহ ও পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সহজ ব্যবহারযোগ্যতা মূল্যবান সৃষ্টির জন্য নারী দায়ী।
উপসংহার : গৃহকর্মে নারীর কমের মজুরি যদি আশানুরূপ হয় তাহলে নারীর পাশাপাশি পুরুষও এই কাজ করতে আগ্রহী হবে। তখন গৃহকর্ম আর নারীর জন্য নির্ধারিত না থেকে সকলের জন্য একটি শিল্প হিসেবে দেখা দিবে।
নারীবাদীদের মতে- নারী যখন কোন চাকরি পায় তখন তাকে এমন একটি কাজ দেয়া হতো তা অনেকটা গৃহকর্মের সঙ্গে সাদৃশ্য। সুতরাং নারী সচেতনতা ও একতাবদ্ধতার মাধ্যমে মুক্তি ও গৃহকর্মের মজুরি আদায় করা সম্ভব।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মার্কসীয় নারীবাদে গৃহকর্ম সম্পর্কে কী বলা হয়েছে
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মার্কসীয় নারীবাদে গৃহকর্ম সম্পর্কে কী বলা হয়েছে। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।