খলিফা হারুন অর রশিদের বৈদেশিক নীতি আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো খলিফা হারুন অর রশিদের বৈদেশিক নীতি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খলিফা হারুন অর রশিদের বৈদেশিক নীতি আলোচনা কর ।
খলিফা হারুন অর রশিদের বৈদেশিক নীতি আলোচনা কর |
খলিফা হারুন অর রশিদের বৈদেশিক নীতি আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২৫ বছর বয়সে হারুন- অর-রশীদ ভ্রাতা হাদীর মৃত্যুর পর বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ৮০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২৩ বছর আব্বাসীয় সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন ।
সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি কতিপয় সফল বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাসকদের মধ্যে অন্যতম। তার শাসনকালে বৈদেশিক নীতিই তাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করেছে।
→ খলিফা হারুন-অর-রশীদের বৈদেশিক নীতি : খলিফা হারুন- অর-রশীদের উদার বৈদেশিক নীতির ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বহু রাজদরবারে তার বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপিত হয়। নিম্নে তার বৈদেশিক নীতির দিকগুলো আলোচনা করা হলো :
১. বাইজান্টাইনদের প্রতি নীতি : খলিফা হারুন-অর-রশীদ তার সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্য প্রতিদ্বন্দ্বী বাইজান্টাইনদের প্রতি কতিপয় নীতি অবলম্বন করেন। বাইজান্টাইনদের প্রতি তার গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো :
(ক) সাইপ্রাস ও ক্রীট উদ্ধার : খলিফা মাহদীর সময় রোমান সম্রাজ্ঞী আইরিন যে সন্ধি স্থাপন করেন তা ভঙ্গ করে রোমানরা ৭৯১ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম রাজ্য আক্রমণ করে। মুসলিম বাহিনী তাদের আক্রমণ প্রতিহত করে এবং মাতারাও সানমিরা শহর দুটি তাদের অধিকারে আসে।
মুসলিম বাহিনী সাইপ্রাস ও ক্রীট দ্বীপে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ফলে রোমানগণ পুনরায় পূর্বসন্ধির শর্তানুযায়ী রীতিমতো করদানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় ।
(খ) নাইসিফোরাসের সিংহাসন দখল : ৮০২ খ্রিস্টাব্দে সরকারি কোষাধ্যক্ষ নাইসিফোরাস সম্যাজ্ঞী আইরিনকে সিংহাসনচ্যুত করে স্বয়ং সম্রাট হন।
মুসলমানদের সাথে সম্রাজ্ঞী আইরিনের যে সন্ধি হয়েছিল, তা তিনি ভঙ্গ করেন ক্ষমতা লাভ করে স্কুলবুদ্ধিসম্পন্ন এবং অবিবেচক নাইসিফোরাস ঔদ্ধতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে খলিফা হারুনের নিকট ৮০৩ খ্রিস্টাব্দে একটি অপমানজনক পত্র লিখেন।
এ সম্পর্কে এস. এফ. মাহমুদ তাঁর A Short History of Islam গ্রন্থে বলেন, তিনি শুধু সন্ধির অনুসন্ধান করেননি, বরং যে পরিমাণ অর্থ কর হিসেবে আইরিন হারুনকে দিয়েছিল তা বাইজান্টাইন কোষাগারে ফেরত চেয়ে হারুনের নিকট একটি চরমপত্র প্রেরণ করেছিলেন ।
(গ) নাইসিফোরাসের ঔদ্ধত্যপূর্ণ চিঠি : সন্ধির শর্ত প্রত্যাখ্যান করে নাইসিফোরাস খলিফাকে লিখেন রোমান সম্রাট নাইসিফোরাসের নিকট হতে আরবদের নৃপতি হারুনের নিকট আমার পূর্ববর্তী সম্রাজ্ঞী আপনাকে অহেতুক প্রভূত মর্যাদা দান করে স্বীয় প্রতিপত্তি ক্ষুণ্ণ করেন এবং নারীসূলভ দুর্বলতা ও নির্বুদ্ধিতার জন্য আপনার নিকট স্বীয় ঐশ্বর্য দান করেন।
সুতরাং আপনি পত্র পাঠমাত্র কালবিলম্ব না করে প্রেরিত অর্থের দ্বিগুণ অর্থ প্রত্যর্পণ করুন নতুবা তরবারিই আমার ও আপনার মধ্যে যে, মীমাংসা করবে।
নাইসিফোরাসের অপমানজনক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ চিঠি পাঠ করে খলিফা ক্ষোভে এতোই উত্তেজিত হয়ে উঠেন তার মুখের দিকে তাকাতে কেউ সাহস করল না এবং ভয়ে সভাসদগণ স্থান ত্যাগ করলেন।
বাইজান্টাইন সম্রাটের চিঠির- জবাবে খলিফা প্রত্যুত্তর পাঠান। তিনি লিখেন, “বিশ্বাসীদের নেতা খলিফা হারুনের নিকট হতে রোমানদের কুকুর নাইসিফোরাসের নিকট যে পৌত্তলিক মায়ের সন্তান পত্রের উত্তর কর্ণে শুনতে হবে না; স্বচক্ষেই অবলোকন করতে পারবে”।
(ঘ) যুদ্ধাভিযান : রোমান সম্রাটের পত্রের প্রত্যুত্তর প্রেরণ করার সাথে সাথে খলিফা হারুন একটি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে স্বয়ং বাইজান্টাইন সম্রাটকে সমুচিত শিক্ষ প্রদানের উদ্দেশ্যে কনস্টান্টিনোপলের দিকে অগ্রসর হন।
কোনোরূপ বাধা-বিপত্তি সম্মুখীন না হয়ে তিনি হিরাক্লিয়াস ও টিরানা অধিকার করলেন। এভাবে নাইসিফোরাসকে পরাজিত করে তাকে শান্তি চুক্তি সম্পাদন এবং কর প্রদানে বাধ্য করেন।
(ঙ) নাইসিফোরাসের বিশ্বাসঘাতকতা : খলিফা হারুন-অর- রশীদ নাইসিফোরাসকে যুদ্ধে পরাজিত করে তাকে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করেন।
নাইসিফোরাস সন্ধি প্রার্থনা করলে খলিফা তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। কিন্তু খলিফা রাক্কায় প্রত্যাবর্তন করলে নাইসিফোরাস চুক্তিভঙ্গ করে বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দেন।
(চ) নাইসিফোরাসের দ্বিতীয় পরাজয় : খলিফা রাক্কায় প্রত্যাবর্তন করলে নাইসিফোরাস পুনরায় চুক্তিভঙ্গ করে মুসলিম সাম্রাজ্য আক্রমণ করলে খলিফা হারুন তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বার অভিযান পরিচালনা করে সমুচিত শিক্ষা দেন।
এবারেও বাইজান্টাইন সম্রাট করদানে সম্মত হয়ে সন্ধি প্রস্তাব করলে মহান ও সুহৃদয় খলিফা তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন।
(ছ) নাইসিফোরাসের তৃতীয় পরাজয় : কপটতা ও ধূর্ততার প্রতীক নাইসিফোরাস খলিফার ট্রান্সঅক্সিয়ানায় বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত থাকার সুযোগে তৃতীয়বার সন্ধি ভঙ্গ করেন এবং মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমান্তে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।
এবার বিশ্বাসঘাতক নাইসিফোরাসকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায়ে খলিফা হারুন ১,৩৫,০০০ সৈন্যসহ বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে তৃতীয়বারের মতো যুদ্ধাভিযান করেন, নাইসিফোরাস আবার শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে শান্তি প্রার্থনা করেন।
খলিফা তাঁর সপরিণামদর্শী ক্ষমা দ্বারা তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। হারুন এবার বর্ধিত হারে কর প্রদানে বাধ্য করেন। এ সম্পর্কে এস. এফ. মাহমুদ তাঁর A Short History of Islam গ্রন্থে বলেন।
“এশিয়া মাইনরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর আইকোনিয়াম ও ইফিসাস দখল করা হয় এবং নাইসিফোরাস উপযুক্ত শিক্ষা পেয়ে বর্ধিত হারে কর প্রদান ছাড়াও সম্রাট নাইসিফোরাস এবং রাজ পরিবারের প্রত্যক সদস্যের উপর কর প্রদানে বাধ্য হন ।
২. শার্লিমেনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন : খলিফা হারুন-অর-রশীদ ফ্রান্সের নৃপতি শার্লিসেনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন।
ফ্রান্সের নৃপতি শার্লিমেন এবং খলিফা হারুনের মধ্যে মৈত্রী সম্পর্ক স্থাপনের মূলে কূটনৈতিক কারণ বিদ্যমান ছিল। বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে খলিফা হারুনকে মিত্র হিসেবে পাওয়ার জন্য শার্লিমেন আগ্রহী ছিলেন।
অন্যদিকে স্পেনের নবপ্রতিষ্ঠিত উমাইয়া রাজত্বের বিরদ্ধে শার্লিমেনকে মিত্র হিসোব পাওয়ার জন্য হারুন ব্যস্ত ছিলেন। হারুন ও শার্লিমেন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাষ্ট্রদূতের উপঢৌকন আদান-প্রদান করেছিলেন।
৩. সীমান্তবর্তী দেশের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন : খলিফা হারুন- অর-রশীদ এর বৈদেশিক নীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল পার্শ্ববর্তী বা সীমান্তবর্তী দেশসমূহের বাণিজ্যিক দূতকে সাদরে অভ্যর্থনা করেন এবং পরস্পরে সাথে উপঢৌকন বিনিময়ের রীতি চালু করেন।
হারুনের এই নীতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের বন্ধুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় ছিল।
৪. চীন ও ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন : খলিফা হারুন-অর-রশীদ এর সাথে ভারত ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। খলিফা হারুন-অর-রশীদই মুসলিম খলিফা যিনি চীনের সম্রাট ফাগফুর প্রেরিত রাষ্ট্রদূতকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।
কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে হারুন-অর- রশীদ যে দূরদর্শিতা প্রদান করেছেন নবম শতকে তা সত্যিই বিরল ছিল।
চীন এবং ভারতবর্ষের কূটনৈতিক এবং উপঢৌকন আদান-প্রদানে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। আব্বাসীয়দের গৌরব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা হারুনের বৈদেশিক নীতি গৌরব ও যশকে খ্যাতির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে সাহায্য করেছিল। তার গৃহীত বৈদেশিক শান্তি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল।
ফলে আরবদেশের বাহিরে ও হারুন অর রশিদের নাম কৃতিত্বের সাথে উচ্চারিত হতো। এজন্য ঐতিহাসিক খোদাবক্স বলেন, “পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের খলিফাদের মধ্যে হারুন অর রশীদ এক অপ্রতিদ্বন্দী শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ খলিফা হারুন অর রশিদের বৈদেশিক নীতি আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম খলিফা হারুন অর রশিদের বৈদেশিক নীতি আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।