খলিফা হারুন অর রশিদ ইতিহাসে এত বিখ্যাত কেন
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো খলিফা হারুন অর রশিদ ইতিহাসে এত বিখ্যাত কেন জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খলিফা হারুন অর রশিদ ইতিহাসে এত বিখ্যাত কেন ।।
খলিফা হারুন অর রশিদ ইতিহাসে এত বিখ্যাত কেন |
খলিফা হারুন অর রশিদ ইতিহাসে এত বিখ্যাত কেন
উত্তর : ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাসে খলিফা হারুন অর রশীদ একজন সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। তার সুদীর্ঘ রাজত্বকাল বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামের ইতিহাসকে গৌরবমণ্ডিত করেছে। হারুন অর রশীদ সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমনকরেন।
তিনি বিদেশি শত্রুর হাত থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেন। এভাবে তিনি সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে এবং বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করে সাম্রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন ।
মূলত তিনি রাজ্য বিস্তারের চেয়ে রাজ্যের সংহতি রক্ষায় বেশি মনযোগী ছিলেন। এ মনযোগী থাকা সত্ত্বেও এশিয়ার কিয়দংশ, পশ্চিম আফ্রিকার আনুগত্য স্বীকার প্রাপ্তি, বাইজান্টাইনীদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন।
তাছাড়া প্রশাসনব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ, জনকল্যাণমূলক কাজ, শিল্প ও ব্যবসা- বাণিজ্যের প্রসার, বাগদাদের ঐশ্বর্য বৃদ্ধি এবং জ্ঞানবিজ্ঞান ও | সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছিল তার সময়ে। এ জন্যই ইসলামের | ইতিহাসে তার শাসনামলকে স্বর্ণযুগ বলা হয়।
পরিচয় : তার পিতা ছিলেন আব্বাসীয় খলিফা মাহদী। তার ভ্রাতা ছিলেন আল-হাদি। মূলত আল-হাদীর মৃত্যুর পর তিনি আব্বাসীয় খিলাফতে অধিষ্ঠিত হন। তার মাতার নাম খায়জুরান
সিংহাসন আরোহণ : ভ্রাতা আল হাদীর মৃত্যুর পর হারুন অর রশীদ ৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে ২৫ বছর বয়সে বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন ।
→ খলিফা হারুন অর রশিদের কৃতিত্ব : খলিফা হারুন অর রশীদ আব্বাসীয় খিলাফতের ইতিহাসে একজন সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। নিম্নে তার কৃতিত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো-
১. খারেজিদের বিদ্রোহ দমন : খলিফা হারুন-অর-রশীদ তার সময়ে কয়েকটি বিদ্রোহের মুখোমুখি হন। এগুলোর মধ্যে খারেজি বিদ্রোহ উল্লেখযোগ্য। তিনি সকল বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেন।
খারেজি নেতার অধীনে মসুলে ৭৮৭-৮৮ খ্রি. চরম বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহীগণ মেসোপটেমিয়ার শাসনকর্তা আবু- হোরায়রাকে পরাজিত করে রাজধানী দখল করে নেয়।
খলিফা একটি বিশাল বাহিনী প্রেরণ করে সেখানে শাস্তি প্রতিষ্ঠা করেন। আবার নাসিবিনের অধিবাসী ওয়ালিদ-বিন-আরিফের নেতৃত্বে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানেও বিদ্রোহ দেখা দেয়।
খলিফা সেনাবাহিণীসহ ওয়ালিদকে পরাজিত ও হত্যা করে। ওয়ালিদ মৃত্যুর পর তার ভগ্নী লায়লা খারিজিদের নেতৃত্ব প্রদান করেন।
ইরাকে ব্যাপক সন্ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল খারেজিরা লায়লার নেতৃত্বে। অবশেষে খলিফার এক সেনাপতির নিকট লায়লা পরাভূত হন এবং তাকে নারীসুলভ জীবনে ফিরে যাবার জন্য প্ররোচিত করা হয় । এভাবে খারিজি বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে।
২. খাজা উপজাতির বিদ্রোহ দমন : খাজার বিদ্রোহ দমনে খলিফা কৃতিত্বের পরিচয় দেন। গ্রিকদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে খাজা নামক উপজাতি ৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে মধ্য এশিয়ার আর্মেনিয়াতে আক্রমণ করেছিল। সেখানে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
খলিফা চিন্তিত হয়েছিলেন তাদের সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য। | যার ফলে খলিফা ২ জন সুদক্ষ সেনাপতিকে প্রেরণ করেন বিদ্রোহ দমনের জন্য ।
তারা খাজা উপজাতিকে কঠোর হস্তে দমন করেছিলেন। ফলে আর্মেনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
৩. উত্তর-আফ্রিকার বার্বারদের দমন : উত্তর আফ্রিকার বার্বার বিদ্রোহ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আফ্রিকা আরবদের হস্তচ্যুত হয়েছিল।
আফ্রিকার এ বিদ্রোহ দমনের জন্য সেনাপতি হারসামাকে আফ্রিকায় প্রেরণ করেন। হারসামা কিছু সাফল্য অর্জন করেছিলেন কিন্তু পূর্ণ সাফল্য অর্জন সম্ভব নয় বলে পদত্যাগ করেন।
ফলে খলিফা চিন্তা করলেন, বাগদাদ থেকে আফ্রিকায় শাসন পরিচালনা ব্যয়বহুল। তাই তিনি হারসামার পরামর্শে বার্ষিক চল্লিশ হাজার দিনার রাজকর প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে আফ্রিকা প্রদেশের শাসনভার ইব্রাহিম ইবনে আগলবের উপর ন্যস্ত করেন।
এর ফলে আফ্রিকা আব্বাসীয় স্বায়ত্তশাসিত এলাকায় পরিণত হয়। এভাবে তিনি আফ্রিকার বার্বার বিদ্রোহ দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
৪. মুদারীয় ও হিমারীয়দের দমন : খলিফা হারুন-অর- রশীদ মুদারীয় ও হিমারীয়দের গোত্রকলহ দমনে তৎপর হন। মুদারীয় ও হিমারীয়দের মধ্যে এই গোত্র কলহের কারণে ৭৯২ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়া ও সিন্ধু প্রদেশে এ কলহ এক গৃহযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করে।
খলিফা এই গৃহযুদ্ধ দমনে সেসব অঞ্চলে দক্ষ সেনাপতি নিয়োগ করেন। সিরিয়াতে সেনাপতি মুসাকে, এবং সিন্ধু প্রদেশে সেনাপতি দাউদ মুহল্লাবীকে প্রেরণ করেন। দক্ষ সেনাপতিদ্বয় এ বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেছিল ।
৫. মধ্য এশিয়ায় শান্তি স্থাপন : খলিফা হারুন অর রশীদ শাসনকাল সাম্রাজ্যের বিস্তার অপেক্ষা সংহতির জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। তার আমলে এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল আব্বাসীয় সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
সমগ্র কাবুল ও সানবাদ আব্বাসীয় সাম্রাজ্যভুক্ত হয় এবং এর সীমানা হিন্দুকুশ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। খলিফা এই প্রদেশসমূহে একজন শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন, ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় ।
৬. বাইজান্টাইনদের সাথে যুদ্ধ : বাইজান্টাইদের সাথে সংঘর্ষ খলিফা হারুন অর রশিদের সময়ে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সে সময় এশিয়ার মাইনরের বাইজান্টাইদের আক্রমণের সম্ভাবনা ছিল। ফলে খলিফা সতর্কতা অবলম্বন সিরিয়ার সীমান্তে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা করেন।
এ জন্য তিনি একজন তুর্কি সেনাপতির অধীনে তার সাথে একটি নতুন দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন। বাইজান্টাইনদের সাথে আব্বাসীয়দের প্রায়ই যুদ্ধ হতো এবং এতে খলিফা নিজেও উপস্থিত থকতেন।
মুসলিম সেনাবাহিনীরা ক্রীট ও সাইপ্রাস আক্রমণ করে বাইজান্টাইন নৌ-সেনাপতিকে বন্দি করে। এভাবে যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে রাজ্যের বিস্তার ঘটতে থাকে ।
৭. সম্রাজ্ঞী আইরিনের সাথে সন্ধি : আইরিন ছিলেন সে সময়ে বাইজান্টাইনের সম্রাজ্ঞী। কিন্তু মুসলমান বাহিনী খলিফার নেতৃত্বে ১৮১ হিজরিতে ইফিসাস এবং অনসিয়া পর্যন্ত অগ্রসর হয়।
এতে সম্রাজ্ঞী উপায় না দেখে খলিফার সাথে কর প্রদানের ভিত্তিতে ৪ বছরের জন্য যুদ্ধ বিরতির চুক্তি করে। এভাবে বাইজান্টাইন আব্বাসীয়দের দখলে আসে। এখানে খলিফা হারুন-অর-রশীদ উজ্জ্বল কৃতিত্বের পরিচয় দিল।
৮. রোমান সম্রাট নাইসিফোরাসের সাথে যুদ্ধ এবং দমন : খলিফা সম্রাজ্ঞী আইরিনকে দমনের পর রোমান সম্রাট নাইসিফোরাসের দিকে দৃষ্টি দেন। সে সময় নাইসিফোরাস রোমান সিংহাসনে আরোহণ করেই খলিফাকে অস্বীকার এবং কর প্রদান বন্ধ করে দেয় এবং পূববর্তী সমস্ত প্রদত্ত অর্থ ফেরত চেয়ে খলিফার নিকট পত্র প্রেরণ করে।
ফলে খলিফা ক্রোধান্বিত হয়ে একদল শক্তিশালী সেনাবাহিনী নিয়ে গ্রিসের দিকে অগ্রসর হন। মুসলিম বাহিনী হিরাক্লিয়াস পর্যন্ত অধিকার করলে রোমান সম্রাট কর প্রদানে সম্মত হন।
কিন্তু খলিফা অন্যদিকে ব্যস্ত থাকলে তিনি আবার বিদ্রোহ করেন ও কর প্রদান বন্ধ করে দেন। ফলে ৮৯৬ | খ্রিস্টাব্দে তাকে চূড়ান্তভাবে কর প্রদানে বাধ্য করা হয়।
৯. বার্মাকিদের পতন সাধন : খলিফা হারুন-অর-রশিদের সময়কালে বার্মাকি বংশের পতন একটি উল্লেখযোগ্য এবং বিস্ময়কর ঘটনা।
প্রথমদিকে বার্মাকিরা তাদের সেবা, বুদ্ধিমত্তা এবং বিশ্বস্ততার মধ্য দিয়ে নানাভাবে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যকে গৌরবমণ্ডিত করেছিল। আর এই বার্মাকি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খালিদ বিন বার্মাকি।
তিনি আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুরের সময়ে উজির পদে নিযুক্ত ছিলেন। তার পুত্র ইয়াহিয়া ৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে আল মনসুরের সময়ে আর্মেনিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।
পরবর্তীতে হারুন অর রশীদ ক্ষমতায় আসলে ইয়াহিয়াকে উজির পদে নিযুক্ত করা হয়। ইয়াহিয়ার ৪ পুত্র ছিল ।
এরা হলো : ফজল, জাফর, মুসা ও মুহাম্মদ। তার চার পুত্র দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত ছিল। অপরিসীম গুণ ও ক্ষমতার অধিকারী আল ফজল এতবেশি প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন করেছিলেন যে, কার্যত তিনিই সাম্রাজ্যের শাসনকর্তা ছিলেন। জাফরও নিজ গুণে প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন করেছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ জাফরকে হত্যা করা হয়। ক্রমাগত এই বংশের পতন ঘটতে থাকে। ৮০৬ খ্রিস্টাব্দে ইয়াহিয়া এবং ৮০৯ খ্রিস্টাব্দে ফজলকে বন্দি করে তাদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
ইয়াহিয়া এবং আল ফজল বন্দি অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেন। মূলত বার্মাকি বংশের জনপ্রিয়তা ও প্রতিপত্তিই বোধ হয় এই বংশের পতনের অন্যতম কারণ ছিল।
১০. রাফি বিন লাইসের বিদ্রোহ দমন : সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে অর্থাৎ সমরখন্দে অদ্ভূত প্রকারের এক বিদ্রোহ দেখা দেয়। এই সমরখন্দে এক সম্পদশালী মহিলা ছিল।
কিন্তু তার স্বামী বাগদাদ থাকায় অন্য এক ব্যক্তি রাফি বিন নাইসের প্রতি আসক্ত হন এবং মহিলা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে তাকে বিয়ে করেন। ফলে প্রথম স্বামী খলিফার নিকট নালিশ করে এবং খলিফা তাকে বন্দি করেন।
কিন্তু রাফি কারাগার থেকে পালায়ন করে সমরকন্দে চলে যান এবং সেখানকার শাসনকর্তাকে হত্যা করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ফলে খলিফা এ বিদ্রোহ দমনের জন্য সেনাপতি হারসামাকে প্রেরণ করেন। তিনি সেখানে রাফিকে আক্রমণ করে সমরখন্দ অধিকার করে নেন
১১. শাসক হিসেবে : খলিফা হারুন-অর-রশীদ শাসক হিসেবে ছিলেন সুদক্ষ। তিনি ন্যায়বিচারের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি শুধু সাম্রাজ্যের বিদ্রোহ দমন এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেননি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতেও সক্ষম হয়েছিলেন।
অন্যায়কারী এবং বিদ্রোহীদের প্রতি তিনি যেমন কঠোর ছিলেন তেমন অসহায়, দুঃখীর প্রতি ছিলেন কোমল।
মূলত সাম্রাজ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই তার শাসনতন্ত্রের মূল লক্ষ্য ছিল। এভাবে তিনি উদার, সদাশয় এবং প্রজারঞ্জক শাসক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাই আব্বাসীয় শাসকদের মধ্যে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক বলে বিবেচিত।
১২. বাগদাদ নগরীর সমৃদ্ধি : খলিফা হারুন-অর-রশিদের সময়ে বাগদাদ নগরী তার ঐশ্বর্য এবং জাঁকজমকতার জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নগরী বলে বিবেচিত হয়েছিল।
এ নগরীর সুরক্ষা, রাজপ্রাসাদ, আড়ম্বরপূর্ণ দরবার, নীল রাজপ্রাসাদ, নয়নাভিরাম মিলানায়তন, সুমার্জিত হেরেম, বিভিন্ন মসজিদ প্রভৃতি নগরের সৌন্দর্য ও শ্রী বৃদ্ধি করেছিল।
তার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে অনেক কবি সাহিত্যিক তার রচনার রসদ যুগিয়েছে। ঐতিহাসিক P. K. · Hitti বলেন, “ইতিহাসে ও রূপকথার আশ্চর্যপুরী বাগদাদের সর্বশ্রেষ্ঠ গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলো হারুনের রাজত্বেই দেখতে পাওয়া যায়।” তার এই উক্তি থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হারুন এর সময়ে বাগদাদ নগরী প্রসিদ্ধ ছিল।
১৩. শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ : খলিফা হারুনের সময় শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধিত হয়। তার সময়ে স্থাপত্যশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। যার ফলে নীল গম্বুজবিশিষ্ট রাজ প্রাসাদ এর তার পাশে মসজিদ প্রভৃতি নির্মিত হয়েছিল।
তাছাড়াও তার সময়ে বাগদাদ নগরীর পণ্য শিল্প বিশ্ববিখ্যাত ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এর ফলে বাহিরের বিভিন্ন দেশের সাথে ব্যবসায়িক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এভাবে তার সময়ে এতবেশি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে যে, বাগদাদ নগরী উন্নতির শিখরে উঠেছিল।
১৪. সাহিত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন : খলিফা হারুন-- অর-রশিদের সময়ে সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞানের ব্যাপক উৎকর্ষ সাধিত হয়।
কারণ তিনি কবি, সাহিত্যিক, জ্ঞানী-গুণী এবং তাদের সাহিত্য কর্ম ও বিজ্ঞানের চর্চাকে একনিষ্ঠভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। এ সময়ে কাব্য, সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসা, সংগীত, শিল্পকলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে আব্বাসীয়রা ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছিল।
১৫. জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি : খলিফা হারুন-অর-রশীদ তার সময়ে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে যে জনকল্যাণমূলক কাজ সাধন করেন তাতে কৃতিত্বের দাবি রাখে। প্রজাসাধারণের সুখ- স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি তার প্রত্যক্ষ নজর ছিল।
তাই তিনি সাম্রাজ্যের অবকাঠোমো উন্নয়নে অসংখ্য রাস্তা-ঘাট, রাজপথ, সরাইখানা, সেতু, স্কুল, বিদ্যালয়, কলেজ, মসজিদ, পয়ঃপ্রণালি প্রভৃতি নির্মাণ করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় স্ত্রী যুবাইদা হজ যাত্রার পানির কষ্ট নিবারণের জন্য ফোরাত নদী হতে মক্কা পর্যন্ত “নহরে যুবাইদা’ নামে একটি পয়ঃপ্রণালি খনন করেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন | জনকল্যাণমূলক কাজ করে সাম্রাজ্যে স্বাচ্ছন্দ্য আনায়ন করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা হারুন-অর- রশীদ একজন প্রসিদ্ধ শাসক ছিলেন। তার সময়ে সাম্রাজ্যের | বিভিন্ন বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেন। আববাসীয় সাম্রাজ্যের সংহতি রক্ষাসহ রাজ্যের সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ।
তিনি স্বয়ং নিজে অনেক যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এদিকে তার সময়ে স্থাপত্যশিল্পে উৎকর্ষ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। যার ফলে বাগদাদ শ্রেষ্ঠ নগরীতে পরিণত হয়েছিল।
তার সময়ে জ্ঞানবিজ্ঞান তথা কাব্য, সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন,জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলমানদের অসামান্য অবদান রাখে।
তাছাড়া হাসপাতাল, সরাইখানা, মসজিদ, মাদরাসা, বিদ্যালয় নির্মাণ প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক কাজ দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন। এভাবে বিভিন্ন দিক থেকে সাম্রাজ্য শান্তি, ঐশ্বর্য, প্রাচুর্য, উন্নতি এবং উৎকর্ষে ভরা বলেই হারুন- অর-রশিদের শাসনামলকে খিলফতের স্বর্ণযুগ বলা হয়। তাই ঐতিহাসিক তুলাদণ্ডে হারুনকে যে দিক দিয়েই বিচার করা হোক না কেন, তিনি সর্বদিক দিয়েই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি ও শ্রেষ্ঠ শাসকদের অন্যতম বলে বিবেচিত হবেন।"
আর্টিকেলের শেষকথাঃ খলিফা হারুন-অর-রশিদের গৌরবোজ্জ্বল রাজত্বের বর্ণনা দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম খলিফা হারুন-অর-রশিদের রাজত্বকালকে আব্বাসীয় খিলাফতের স্বর্ণযুগ বলা হয় কেন। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।