যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর ।
যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর |
যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, যক্ষ্মা রোগ নিরাময়ে যে ধরনের চিকিৎসা নেওয়া যায় তা আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : যক্ষ্মা এক প্রকার মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এটি একটি কঠিন রোগ অনেক সময় এ রোগ শনাক্ত করণে জটিল একটি পথ অতিক্রম করতে হয়। আগের দিনে একটি প্রবাদ ছিল আছে যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা।
কিন্তু এখন আর এ কথাটি সত্য নয়; বরং যক্ষ্মা রোগ এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ঔষধ সেবনের মাধ্যমে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। যক্ষ্মা সম্বন্ধে আজকের দিনের স্লোগান হলো যক্ষ্মা হলে রক্ষানাই এ কথার ভিত্তি নাই ।
→ নিম্নে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা আলোচনা করা হলো :
১. চিকিৎসার সূচনা : যক্ষ্মা রোগে চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় করতে হবে এবং তারপর চিকিৎসা দিতে হবে। এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় করবেন।
রোগীর সমস্ত পরীক্ষার রিপোর্ট রেকর্ড করতে হবে, তার বিশেষত কফ পরীক্ষা (Spectrum Snear) রিকর্ড করতে হবে। যে সমস্ত রোগীর পরীক্ষায় যক্ষ্মার জীবাণু ধরা পরে যাবে তাদেরকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে।
এমনকি বুকের তাদেরকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে। এমনকি বুকের এক্সরে টিউবারকুলিন পরীক্ষা করে যক্ষ্মা হয়েছে কিনা তা পরোক্ষভাবে বুঝা যেতে পারে। কাজেই আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে যাতে অন্যকোনো সুস্থ মানুষের মাঝে না ছড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
২. কখন চিকিৎসা দিতে হবে : যদিও সরকার যক্ষ্মার চিকিৎসার ঔষধ বিনামূল্যে বিতরণ করছে তথাপি এ চিকিৎসা ব্যায় সাপেক্ষ। তাই মাঝে মাঝে ব্যবহৃত ঔষধ রোগীর ক্ষতি করতে পারে।
তাই শুধুমাত্র যাদের যক্ষ্মা হয়েছে তাদের চিকিৎসা দিতে হবে। যাদের থুথু পরীক্ষায় যক্ষ্মার জীবাণু পাওয়া যাবে। তারাই চিকিৎসার অগ্রাধিকার পাবে, যেসব রোগীর কালচার পজিটিভ এবং যে সকল শিশুর সক্রিয় যক্ষ্মা রোগ আছে তাদেরকে চিকিৎসা দিতে হবে।
আচার যাদের বুক এক্সরে করার পর যক্ষ্মার উপসর্গ পাওয়া যায় তাদের চিকিৎসা দিতে হবে। যাদের বেশি কৃমি আছে তাদেরকে কৃমির ঔষধ খাওয়াইয়ে দিয়ে দিতে হবে।
এবং বলতে হবে যদি পুনরায় কোনো সমস্যা হয় তবে নিজেরা কোনো কিছু না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া । আবার যদি নতুন করে থুথু পরীক্ষা পজেটিভ হয় তাহলে আবার, চিকিৎসা করতে হবে।
৩. যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা : যক্ষ্মা মানবদেহের ফুসফুস ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গে হতে পারে। ফুসফুস যক্ষ্মার ক্ষেত্রে আর্ন্তজাতিক | মানের স্বীকৃতভাবে স্বীকৃত ডটকে ( Direct abserve treatment- Dot) প্রক্রিয়ার বোঝায়। এতে লক্ষ লক্ষ যক্ষ্মার জীবাণুকে ধাপেই মেরে সম্ভব।
গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে স্ট্রেপটোমাইসিস পরিহার করা উচিত। কারণ এতে নবজাতক বধির হতে পারে । স্টোপ পদ্ধতিতে ২ টি চ্যালেঞ্জ হলো। এস ডি আর মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি বা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা ও টিবি এ আই বি যক্ষ্মা নিরাময়ের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি।
অনেক সময় দেখা যায় রোগী ২-৩ মাস চিকিৎসা নেবার ফলে যক্ষ্মা ভালো হয়ে গেছে বলে মনে হয় কিন্তু আর চিকিৎসা নেয না । ফলে ঔষধ প্রতিরোধী বা (MDR) এম, ডি, আর যক্ষ্মার আক্রান্ত হয় । যা অত্যধিক ব্যয়বহুল ।
৪. চিকিৎসার সময়কাল : আধুনিক যুগে যক্ষ্মার রক্ষা নাই এ কথায় ভিত্তি নাই; বরং যক্ষা রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।
যক্ষ্মা রোগ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হবার জন্য সাধারণত ৮-১০ মাস পর্যন্ত চিকিৎসা নেয়া দরকার। বর্তমান থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ রোগের ঔষধ বিনামুল্যে দেওয়া হয় ।
৫. যক্ষ্মা প্রতিরোধের ব্যবহার্য ঔষধ : যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসার জন্য সরকার বিনামূল্যে ঔষধ দিয়ে থাকে, থায়োসিটাজন, রিফামপিসিন, আইসোনিয়াডি, পাইরিজিমাইড, আথানবিউটল ও স্ট্রেপটোমাইসিন এ সবগুলো ঔষধ যক্ষ্মা রোগের প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতীত কোনো ঔষধ কাউকে খাওয়ানো যাবে না এবং কোনো ঔষধ খাওয়া বাদও দেওয়া যাবে না। নতুবা যক্ষ্মার জীবাণু ঔষুধের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে ।
৬. The importance of regular using medicine আমরা জানি যক্ষ্মার জীবাণু খুব সহজে একজনের কাছ থেকে আরেক জনের কাছে যেতে পারে। কিন্তু এ জীবাণু অত্যন্ত শক্তিশালী। তাই প্রথম পর্যায়ে ৪ প্রকার ঔষধ সেবন করতে হয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা লক্ষ্য করা যায় তাহলে তাড়াতাড়ি রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু এটা ভাবা ভুল যে রোগী যক্ষ্মা থেকে পুরোপুরি সুস্থতা লাভ করছে; বরং এ সময় ও যক্ষ্মার জীবাণু পুরোপুরি সক্রিয় থাকে। তাই চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী পুরোপুরি সময় পূর্ণ করতে হবে নতুবা পুনরায় যক্ষ্মা আক্রমণ করবে।
৭. ব্যবহার্য ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : সাধারণভাবে সবারই জানা আছে অধিকাংশ ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে।
তাই যদি রোগীর সমস্ত শরীরে ফোসকা পরে, অজ্ঞান হয়ে পরে, জ্বর হয়, চোখে দেখতে অসুবিধা হয় মাথা ঘোরে, এমনকি চামড়ার নিচে রক্তজমে ফোসকা পরে তবে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসতে হবে ।
৮. বি.সি.জি টিকা : যক্ষ্মা সাধারণত বয়সকে অতিক্রম করে চলে। তাই শিশুরা যাতে যক্ষ্মার আক্রান্ত না হয় সে জন্য তাদের বি.সি.জি টিকা দিতে হয়।
জন্মের পর থেকে ১ বছরের মধ্যে এ টিকা দেওয়া প্রয়োজন। এটি সাধারণত একবার দিলেই চলে। এটি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কিংবা ইপিআই টিকা কেন্দ্রে বিনামূল্যে দেওয়া হয় ।
→ রোগীর জন্য পালনীয় সতর্কতা :
১. রোগী হাঁচি/ কাশির সময় রুমাল দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে নিতে হবে ।
২. যেখানে সেখানে কফ ও থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকা ।
৩. একটি নির্দিষ্ট পাত্রে কফ/ থুথু ফেলে প্রয়োজনে পরবর্তীতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৪. ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।
৫. শিশুদেরকে কোলে বা নাক মুখ মুখের কাছে নেয়া যাবে না ।
চিকিৎসকের করণীয় :
১. রোগীর সাথে আন্তরিক, ধৈর্যশীল ও বন্ধুভাবাপন্ন হতে হবে ।
২. পুরো চিকিৎসা নেওয়ার জন্য রোগীকে এবং তার আত্মীয়স্বজনদের ভালোভাবে বুঝতে হবে ।
৩. রোগীকে এবং আত্মীয়স্বজনদের ঔষধ দেখাতে হবে এবং কোনো ঔষধ কিভাবে খাবে বলে দিতে হবে ।
৪. যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কীয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কীয় প্রচারপত্র দিতে হবে ।
৫. রোগী এবং আত্মীয়স্বজনদের ঔষধের পার্শ্বপ্রক্রিয়া সম্বন্ধে জানাতে হবে । যাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া যায়।
৬. স্থানীয়ভাবে যে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা আছে তা জানাতে হবে। বাড়িতে যক্ষ্মা হলে করণীয় :
১. যদি সম্ভব হয় তবে সবাইকে পরীক্ষা করে নিতে হবে।
২. যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা সাথে সাথে করাতে হবে এবং যাতে আর না ছড়ায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. যক্ষ্মা রোগের প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হলো দ্রুত ও পরিপূর্ণ চিকিৎসা নেয়া।
৪. জন্মের এক বছরের মধ্যে শিশুদের বি. সি.জি টিকা দিতে হবে ।
৫. যক্ষ্মা রোগীকে আলাদা জায়গায় থাকতে ও খেতে দিতে হবে।
৬. থালা, বাসন, বাটি, গ্লাস আলাদা করে খেতে দিতে হবে।
৭. কাশি বা থুথুর সময় যক্ষ্মা রোগীকে রুমাল দিয়ে চেপে ধরতে হবে, যাতে জীবাণু অন্য কারো না ছড়ায় ।
৮. শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে হবে।
→ রোগীকে যা বুঝতে হবে : কিভাবে ভালো হওয়া যাবে, কিভাবে চলাফেরা করতে হবে, কতদিন ঔষধ খেতে হবে। কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কি কি কাজ করা যাবে না ইত্যাদি ভালোভাবে বুঝতে হবে। এছাড়াও নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো ভালোভাবে জানতে হবে।
১. যক্ষ্মা কি;
২. যক্ষ্মা কিভাবে ছড়ায় ও
৩. কি কি পদক্ষেপ নিলে যক্ষ্মা রোগ বিস্তার কমানো যাবে। .
৪. চিকিৎসা কতদিন নিতে হবে।
৫. চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কি কি হতে পারে ইত্যাদি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যক্ষ্মা একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগের জীবাণু সাধারণত হাঁচি কাশি থুথু ইত্যাদি এবং বায়ুর মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে তাই কেউ যক্ষ্মার আক্রান্ত হলে তার কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে এ রোগটি অন্যের মাঝে ছড়িয়ে না পরে।
তেমনি যক্ষ্মার চিকিৎসা করানোর জন্য একজন ডাক্তারকেও নানা দিক বিবেচনা করতে হয় এবং একই সাথে রোগীর পরিবারের অনেকেই পরীক্ষা করা ও লাগে, সুতরাং যক্ষ্মা একটি জটিল রোগ ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।