ইসলামে বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের অগ্রগতি আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ইসলামে বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের অগ্রগতি আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ইসলামে বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের অগ্রগতি আলোচনা কর।
ইসলামে বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের অগ্রগতি আলোচনা কর |
ইসলামে বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের অগ্রগতি আলোচনা কর
উত্তর : উমাইয়াদের আমল ছিল রাজ্য বিস্তারের যুগ, কিন্তু আব্বাসীয়দের যুগ ছিল জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার যুগ। আব্বাসীয় যুগ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি সোনালি অধ্যায় সৃষ্টি করে। আব্বাসীয় খলিফারা জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাম্রাজ্যের বিশালতাকে টিকিয়ে রেখে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য চাই সভ্য জাতি। আর এ সভ্য জাতি গঠনের মূলে কাজ করে শিক্ষা। এই জন্যই বিভিন্ন স্থানে স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদ্রাসা ইত্যাদি নির্মাণ করেন। তারা বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রেও অবদান রাখেন ।
→ আব্বাসীয় আমলে বিজ্ঞানের অবদান : আব্বাসীয় যুগ, শিক্ষা সাহিত্যে ও বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ। নিম্নে বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. চিকিৎসাবিজ্ঞান : চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রকৃত উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল আব্বাসীয় আমলে। এ যুগে জুন্দি শাহপুর মেডিকেল কলেজটি বিদ্যমান ছিল তাতে গ্রিক, ইরানী, সিরিয় ও ভারতীয় ছাত্র-শিক্ষক অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করতেন।
আব্বাসীয় খিলাফতের সময় যেসব প্রথিতযশা চিকিৎসক ও অনুবাদক চিকিৎসাশাস্ত্রের মৌলিক অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে সাধিত বিন করো, ইসা বিন ইয়াহিয়া, হুসাইন বিন ইসহাক প্রমুখ ব্যক্তির নাম উল্লেখযোগ্য।
অনুবাদ কার্য আরম্ভ হলে চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর রচিত অনেক গ্রিকও গ্যালেন ও পলের রচনাদি ডিসফোকা ইডসের মেটারিয়া মেডিকা প্রভৃতি গ্রন্থাবলি আরবি ভাষায় অনুবাদ করেন ৷
২. রসায়ন বিজ্ঞান : রসায়ন শাস্ত্র আলকেমি (Alchemy) থেকে জন্ম লাভ করেছে এবং তার উন্নতির জন্য আব্বাসীয়দের অবদান অপরিসীম। তারা পারদ, সীসা, তাম্র, রৌপ্য ও স্বর্ণে রাসায়নিক সাদৃশ্যের সন্ধান করতো।
তারা ধাতুর সাথে অম্লজান মিশ্রণ ও হিসাব নিরূপণের রাসায়নিক পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত ছিল। তারাই পৃথিবীতে প্রথম পাতন, পরিস্রাবণ ও স্বচ্ছকরণের শিক্ষা দান করেন। তারা তরল পদার্থকে বাষ্পে পরিণত করতে জানতেন। জাবির ইবনে হাইয়ানকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়।
৩. জ্যোতির্বিদ্যা : জ্যোতির্বিদ্যায় আব্বাসীয়রা অবদান রেখেছিল এবং প্রাভূত উন্নতি সাধন করেন। “সিদ্ধান্ত” ও “আবকান্দ” নামক ভারতীয় গ্রন্থদ্বয় এবং পরে টলেমির অর্থ সাজেন্ট এর প্রভাবে জ্যোতিষশাস্ত্রে মুসলমানদের অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল।
মামুন জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে যথেষ্ট অনুরাগী ছিলেন এবং রাজধানী বাগদাদের নিকটবর্তী শামাসিয়া মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সৌরজগৎ ও গ্রহ নক্ষত্রের গতি ও পরিক্রমা সম্পর্কে তারা বহু তথ্য আবিষ্কার করেন। ইবনে জুনারস নাসিরুদ্দিন তুসী ও আল বাওনী মূল্যবান জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত তথ্য আবিষ্কার করেন।
মুসলমানগণই প্রথম ইউরোপে মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করে এবং দূরবীক্ষণ যন্ত্র ও দিক নির্ণয় যন্ত্র এবং অন্যান্য সাহায্যকারী যন্ত্র আবিষ্কার করেন। জ্যোতিবিদ্যা জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করে।
৪. গণিতশাস্ত্র : গণিতশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান অপরিসীম । অধ্যাপক আরলন্ডের মতে, প্রকৃতপক্ষে মুসলমানরাই সমতল ক্ষেত্রে, গোলাকার ও ত্রিকোণমিতি প্রতিষ্ঠা, দশমিক পদ্ধতি আরবদেরই সৃষ্টি। আরবগণ পাশ্চাত্য জগতের জনগণকে সংখ্যাগণনা পদ্ধতিও শিক্ষাদান করেছিলেন।
বীজগণিত পরিসংখ্যান প্রভৃতি ফলিত বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলোও মুসলমানদের আবিষ্কার। আল-খারিয়মী ছিলেন সর্বযুগের- শ্রেষ্ঠ গণিতবিদদের অন্যতম। খারিজমী সর্বপ্রথম শূন্যসহ অন্যান্য সংখ্যার ব্যবহার শুরু করেন। ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতি, ঘন সমীকরণ সম্পর্কে তার অনেক গ্রন্থ রয়েছে।
৫. ভূগোলশাস্ত্র : অজানাকে জানার ইচ্ছা মুসলমানদের যেমন | ভূগোল পাঠে অনুপ্রাণিত করেন, তেমনি ধর্মীয় প্রয়োজনেও তাদেরকে ভূগোলের প্রতি উৎসাহিত করে। মহান হজ্জব্রত পালন, মসজিদের কিবলা নির্ধারণ, বহির্বিশ্বের সাথে বাণিজ্যের প্রয়োজনে এবং স্রষ্টার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভের উদ্দেশ্যে মুসলমানগণ ভূগোলশাস্ত্রে আত্মনিয়োগ করেন।
→ দর্শন শাস্ত্র : বিভিন্ন বিষয়ের মতো মুসলমানরা দর্শনশাস্ত্রে অবদান রেখেছেন। দর্শনের ক্ষেত্রে মুসলমানরা ছিল ইউরোপের পথ- প্রদর্শক । নিম্নে দর্শনশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করা হলো :
১. আল-কিন্দি : দর্শনশাস্ত্রের উন্নতিতে মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে ছিলেন আল-কিন্দি। তিনি প্লেটো ও এরিস্টটলের দর্শনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে চেয়েছিলেন এবং পীতাগোরাসের অঙ্কশাস্ত্রকেই সকল বিজ্ঞানের উৎস বলে অভিমত ব্যাক্ত করেছেন।
তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ২৬৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং অনেক গ্রিক ভাষার বই তিনি আরবিতে অনুবাদ করেছেন। সংগীত বিষয়ে তিনি বারোটি গ্রন্থ তিনি রচনা করেন এবং এতে গ্রিকদের প্রভাব ছিল বলে প্রতীয়মান। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম দার্শনিক আল-কিন্দি মুতাজিলায় ধর্মতত্ত্ববিদ।
নিও পীথাগোরিয়ান চিন্তাধারার সমৃদ্ধ নিও পেটোনিক দার্শনিক তিনি প্রথম এরিস্টটল তথা গ্রিক মুসলিম বিশ্বের সাথে পরিচিত করেন। মুসলিম দর্শনের জনক বলে আল কিন্দিকে সর্বকালের সর্বযুগে তিনি সমাদৃত হবেন।
২. ইমাম গাজালি (রহ.) : ইমাম গাজালি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ ও দার্শনিক। ইসলামি ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে যারা ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝতে শিখেছে তাদের মধ্যে ইমাম গাজালি অন্যতম। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪০০টি।
“ফাত্তহাতুল সালাসিফা” তার রচিত দর্শন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। তার রচিত “ইহইয়া উল উলুমুদ্দীন “কিমিয়ায়ে সায়াদাত” তার প্রভৃতি গ্রন্থ মুসলিম দর্শন ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি মুসলিম দর্শনকে বিদেশি প্রভাবমুক্ত করেছেন। তিনি সারা বিশ্বে “হুজ্জাতুল ইসলাম” নামেও পরিচিত।
৩. আল-ফারাবী : আল-ফারারি দর্শনশাস্ত্রের অপূরণীয় অবদান রেখেছেন । তিনি মুসলিম জাহানের একজন মৌলিক চিন্তাবিদ ছিলেন। সংগীত বিশারদ হিসেবেও তার বিশেষ খ্যাতি ছিল। সংগীতের ওপর তার লিখিত গ্রন্থ হচ্ছে “কিতাব উল মাসকি আল কবির”।
তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রায় শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি যুক্তিবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বে অন্যতম যুক্তিবিদ হিসেবেও পরিচিত।
৪. ইবনে সিনা : দর্শনশাস্ত্রের অন্যতম অবদান রাখেন দার্শনিক ইবনে সিনা। তিনি ছিলেন একাধারে দার্শনিক, গণিত, ভাষাবিদ, কবি ও শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিদ । তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ১২৫টি গ্রন্থ রচনা করেন। তার রচিত “আল শিফা” দর্শনের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ।
তিনি ছিলেন প্রাচ্যের শেষ ও শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তার চর্চার্থে এরিস্টটলীয় দর্শনের চর্চা সর্বোচ্চ সীমানায় উপনীত হয়। উল্লেখ্য, ইবনে সিনার রচিত আল শিফা গ্রন্থটি দর্শনশাস্ত্রের বিশ্বকোষ হিসেবে আজও সারা বিশ্বে খ্যাত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জ্ঞানবিজ্ঞানের দুটি বিখ্যাত শাখা হিসেবে পরিচিত জ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রে মুসলমানদের বিভিন্ন গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে সারাবিশ্বে তাদের অবস্থান সর্বোচ্চ স্থানে তুলে ধরেছেন।
জ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের বিভিন্ন শাখায় মুসলমানরাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। আব্বাসীয়দের অনুপ্রেরণায় তারা জ্ঞানের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ইসলামে বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের অগ্রগতি আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ইসলামে বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের অগ্রগতি আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।