১৯টি বিলাসী গল্পের বইয়ের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ২০২৪ (PDF) - Bilashi Question Answer

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৩  hsc Bangla 1st Paper Bilashi Question Answer

১৫টি বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৪ | hsc Bangla 1st Paper Bilashi Question Answer

১ নম্বর প্রশ্ন

উজ্জয়িনীর রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজসভার প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহিরের স্ত্রী খনা। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে খনা এ সমস্যার সমাধান দেন । রাজা বিক্রমাদিত্য তাঁর গুণে মুগ্ধ হন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাসে রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতেন বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। কিন্তু খনার এই খ্যাতি ও সম্মান অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর জীবনে বিড়ম্বনা নিয়ে আসে। রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে ও নারীর জ্ঞানের কাছে নিচু হওয়ার লজ্জায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বরাহের আদেশে মিহির খনার জিহ্বা কেটে দেন। এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্যু হয়।

ক. খুড়া কোন বংশের?

খ. “ইহা আর একটি শক্তি'— বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. বিলাসী চরিত্রের কোন দিকটি খনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ তা বর্ণনা করো ।

ঘ. ‘মৃত্যুঞ্জয় ও মিহির পরস্পর বিপরীত চরিত্রের মানুষ।'— মন্তব্যটি যাচাই করো ।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. খুড়া মিত্তির বংশের।

ইহা আর একটি শক্তি'— কথাটি দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রকৃত ভালোবাসার প্রসঙ্গকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

স্বামী-স্ত্রী বহু বছর একত্রে বসবাস করলেও সত্যিকারের ভালোবাসার সন্ধান খুব কম যুগলই পায়। আলোচ্য গল্পে প্রসঙ্গক্রমে গল্পকথক তাঁর এক আত্মীয়ার উদাহরণ টেনেছেন। সেই নারী স্বামীর সাথে পঁচিশ বছর ঘর করেছে । 

অথচ স্বামীর মৃতদেহ আগলে পাঁচ মিনিটও একাকী থাকার সাহস তার নেই। এর কারণ প্রকৃত ভালোবাসার সম্পর্কের অনুপস্থিতি। স্বামীর মৃতদেহের কাছে থাকার জন্য প্রয়োজন ছিল 'আর একটি শক্তি' অর্থাৎ খাঁটি ভালোবাসা। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে এ বিষয়টিই ইঙ্গিতময় হয়ে উঠেছে।

গ. বিলাসী চরিত্রের করুণ পরিণতির দিকটি উদ্দীপকের খনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘বিলাসী’ ‘গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিলাসী। উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয় তাকে ভালোবেসে বিয়ে করে। কিন্তু রক্ষণশীল সমাজ তাদের এই সম্পর্ককে মেনে নেয়নি। 

ফলে সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয় নিজের জাত বিসর্জন দিয়ে সাপুড়ে হয়ে ওঠে। একদিন গোখরো সাপ ধরতে গিয়ে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে বিলাসীও বিষপানে আত্মহত্যা করে।

উদ্দীপকে উল্লিখিত খনা জ্যোতির্বিদ্যায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তাঁর দেওয়া পূর্বাভাসে কৃষকরা উপকৃত হলে রাজদরবারে তাঁর মর্যাদা বেড়ে যায়। 

তাঁর এই সুনাম অর্জনের বিষয়টিকে শ্বশুর বরাহ ভালোভাবে নেননি। শুধু তাই নয়, রাজসভায় প্রতিপত্তি এবং নারীর কাছে সম্মান হারানোর ভয়ে তাঁর শ্বশুর বরাহ নিজের ছেলেকে খনার জিহ্বা কেটে নেওয়ার আদেশ দেন । 

পিতার আদেশ মতো পুত্র মিহির নিজ স্ত্রী খনার জিভ কেটে নিলে কিছুদিন পর খনার মৃত্যু হয়। একইভাবে, 'বিলাসী' গল্পের বিলাসীও রক্ষণশীল সমাজের প্রতিহিংসার শিকার। এ কারণেই তার স্বামী মৃত্যুঞ্জয়কে সর্বস্ব হারিয়ে সাপুড়ে হতে হয় এবং পরিণতিতে সর্প-দংশনে মৃত্যু হয় তার। 

আর পতি- অন্তঃপ্রাণ বিলাসীও স্বামীর মৃত্যু শোক সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে। অর্থাৎ প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও আলোচ্য গল্পের বিলাসী এবং উদ্দীপকের খনা উভয়েই করুণ পরিণতির শিকার। 'এদিক থেকে খনার সাথে বিলাসীর সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

ঘ. মৃত্যুঞ্জয় স্ত্রীকে গভীরভাবে ভালোবাসলেও উদ্দীপকের মিহির স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘বিলাসী’ গল্পটি বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের প্রণয় এবং তাদের করুণ পরিণতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়কে নিম্নবর্ণের বিলাসী সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুললে ভালোবেসে তাকে বিয়ে করে সে। 

বিলাসীর হাতে মৃত্যুঞ্জয় ভাত খাওয়ার অজুহাতে গ্রামবাসীর প্রতিহিংসার শিকার হয় তারা। অবশেষে মৃত্যুঞ্জয় জাত বিসর্জন দিয়ে বিলাসীর সাথে ঘর বাঁধে এবং পুরোদস্তুর সাপুড়ে হয়ে ওঠে।

উদ্দীপকের মিহিরের স্ত্রী খনা ছিলেন অত্যন্ত গুণী। জ্যোতির্বিদ শ্বশুর ও স্বামী আকাশের তারা গণনা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে খনা সমাধান বাতলে দেন। 

খনার দেওয়া পূর্বাভাসে কৃষকরা উপকৃত হলে রাজদরবারে "তাঁর সম্মান বেড়ে যায়। কিন্তু খনার শ্বশুর একজন নারীর কাছে প্রতিপত্তি হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। 

পরিশেষে তাঁর নির্দেশে পুত্র মিহির খনার জিহ্বা কেটে নিলে খনার মৃত্যু হয়। স্ত্রীর প্রতি মিহিরের এমন ঘৃণ্য আচরণের বিপরীতে আলোচ্য গল্পের মৃত্যুঞ্জয় স্ত্রী বিলাসীর প্রতি অনুরক্ত ও দায়িত্বশীল ছিল।

মৃত্যুঞ্জয় অকৃত্রিমভাবে বিলাসীকে ভালোবেসেছে। নিজে উচ্চবর্ণের হলেও সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীকে বিয়ে করতে দ্বিধা করেনি সে। 

তাদের ভালোবাসা রক্ষণশীল ও অনুদার গ্রামীণ সমাজ মেনে নিতে না পারায় সে জাত বিসর্জন দিয়েছে অবলীলায়। বিলাসীর সাথে বেদেপল্লিতে গিয়ে ঘর বেঁধে সাপুড়ে হয়েছে। নিজের বিশাল সহায়-সম্পত্তি হারানোর ভয় তাকে এতটুকুও আচ্ছন্ন করেনি। 

পক্ষান্তরে, উদ্দীপকের মিহির স্ত্রীর খ্যাতিতে খুশি না হয়ে বরং প্রতিহিংসাপরায়ণ পিতার কথায় তার জিহ্বা কেটে নেওয়ার মতো গর্হিত কাজ করেন। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা থাকলে তিনি এমনটি অন্যায় করতে পারতেন না। সেদিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

২ নম্বর প্রশ্ন

নিয়াজ আর সুমন একই স্কুলে পড়ত। একই ক্লাশের ছাত্র না হলেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্বভাব ছিল । ধনাঢ্য ঘরের সন্তান হলেও নিয়াজ সকলকেই আপন করে নিত। সুমন কতদিন যে নিয়াজের টিফিনে ভাগ বসিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তারপর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করায় বহু দিন তাদের আর দেখা হয়নি। একদিন সুমন হঠাৎ জানতে পারে— নিয়াজ অসুস্থ। পুরোনো দিনের কথা মনে করে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে সে। দেখতে যায় নিয়াজকে তারপর জানতে পারে নিয়াজের দীর্ঘদিনের অসুস্থতার কথা ।

ক. মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর পর বিলাসী কয়দিন বেঁচে ছিল?

খ. “ওরে বাপরে, আমি একলা থাকতে পারব না।”- ব্যাখ্যা করো। 

গ. উদ্দীপকের সুমনের সাথে 'বিলাসী' গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. “উদ্দীপকে 'বিলাসী' গল্পের আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে।”— মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর পর বিলাসী সাতদিন বেঁচে ছিল ।

খ. উক্তিটির মাধ্যমে ন্যাড়া তার এক আত্মীয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তার মেকি স্বামীপ্রেমের প্রতি ইঙ্গিত করেছে।

'বিলাসী' গল্পে ন্যাড়ার এক আত্মীয় মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী শোকাহত হয়ে স্বামীর সঙ্গে সহমরণের জন্য হাহাকার করতে থাকে। কিন্তু লাশের পাশে তাকে একাকী রেখে ন্যাড়া যখন মৃতের সৎকারের জন্য লোক ডাকতে বাইরে পা বাড়ায়, তখনই সে চিৎকার করে উদ্ধৃত উক্তিটি করে। এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, বহুদিনের সাহচর্য সত্ত্বেও স্বামীর সঙ্গে তার কোনো আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। এভাবে উক্তিটির মধ্য দিয়ে তার মেকি স্বামীপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

গ. ‘বিলাসী' গল্পের কথক চরিত্র ন্যাড়ার সঙ্গে উদ্দীপকের সুমন চরিত্রের কৃতজ্ঞতা স্বীকারের দিকটি সংগতিপূর্ণ ।

'বিলাসী' গল্পের কথক ন্যাড়া ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয়ের বন্ধু। মৃত্যুঞ্জয়ের কাছ থেকে সে স্নেহ লাভ করেছে। এ কারণে মৃত্যুঞ্জয়ের অসুস্থতার কথা শুনে সে তাকে দেখতে গিয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের বিপদ-আপদে ন্যাড়া সবসময় তার পাশে থেকেছে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

'বিলাসী' গল্পের ন্যাড়ার মতো উদ্দীপকের সুমন চরিত্রটির ভেতরেও কৃতজ্ঞতাবোধ কাজ করেছে। কারণ সে তার বন্ধুর টিফিনের ভাগ নিয়েছে এবং তার পাশে পাশে থেকেছে। 

ফলে ন্যাড়া যেমন মৃত্যুঞ্জয়ের অসুস্থতার খবরে ব্যথিত হয়ে তাকে দেখতে গিয়েছে, ঠিক তেমনই সুমন ও নিয়াজের বাস দুর্ঘটনার খবরে স্মৃতিকাতর ও বিচলিত হয়েছে। 

বন্ধুত্বের মতো স্বার্থহীন সম্পর্কের মাঝে পরস্পরের প্রতি টান থাকে হৃদয়ের গভীর থেকে। সুমন ও নিয়াজের সম্পর্কের মাঝেও এমন একটি বিষয়ই কাজ করেছে। এভাবেই ন্যাড়া চরিত্রের সঙ্গে উদ্দীপকের সুমন চরিত্রটি সংগতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ।

ঘ. বন্ধুত্ব ও সৌহার্দের দিক থেকে উদ্দীপকের নিয়াজ এবং 'বিলাসী' গল্পের মৃত্যুঞ্জয় এক ও অভিন্ন হলেও মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের সবটুকু নিয়াজের মাঝে উঠে আসেনি ।

‘বিলাসী” গল্পের নায়ক চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়। ন্যাড়ার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব অনেক গভীর । তাই ন্যাড়াকে সে সব কাজের সঙ্গী করেছে। মৃত্যুঞ্জয় তার সমস্ত বিপদের সময় ন্যাড়ার সাহায্য পেয়েছে, ন্যাড়াকেও সে সাহায্য করেছে। 

রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি মৃত্যুঞ্জয়ের জীবনকে এলোমেলো করেছে। তবু সব প্রতিকূলতা সহ্য করে নিচু জাতের বিলাসীর সাথে ঘর বাঁধে সে । সাপুড়ে জীবন বেছে নেওয়া মৃত্যুঞ্জয় সাপের কামড়েই অকালে মৃত্যুবরণ করে।

উদ্দীপকের নিয়াজ অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে। সবার সঙ্গে সে সদ্ভাব বজায় রেখে চলে। এমনকি স্কুলের টিফিন ভাগাভাগি করে খায় বন্ধু সুমনের সঙ্গে। মৃত্যুঞ্জয়েরও দোকানের খাবার কিনে অন্যকে খাওয়ানোতে কোনো কার্পণ্য ছিল না। এসব বৈশিষ্ট্য 'বিলাসী' গল্পের মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের সঙ্গে সুমনের যেন বন্ধন তৈরি করেছে ।

সমবয়সীদের মাঝে বন্ধুত্ব খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। তবে কোনো বিরোধে না জড়িয়ে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা বেশ কঠিন একটি কাজ । উদ্দীপকের নিয়াজ এ কাজটিই করেছে। ফলে সুমনের সঙ্গে তার একটি নির্বিরোধী সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

যেমন 'বিলাসী' গল্পের কথক ন্যাড়ার সঙ্গে মৃত্যুঞ্জয়ের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। বন্ধুত্বের অটুট বন্ধনে ন্যাড়াকে কখনোই কাছ ছাড়া করেনি মৃত্যুঞ্জয়, যেমন করেনি নিয়াজ, তবে 'বিলাসী' গল্পের মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রটি কেবল এতেই সীমাবদ্ধ নয় । 

গল্পে সুমনকে তার জীবনের নানা উত্থান-পতন দেখানো হয়েছে। সেখানে তার মানবিক পরিচয়, প্রেমিকসত্তা ও করুণ পরিণতির পরিচয় পাওয়া যায়। উদ্দীপকের নিয়াজের মাঝে এ দিকগুলো অনুপস্থিত বলে তাকে সম্পূর্ণরূপে মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে তুলনা করা যায় না ।

৩ নম্বর প্রশ্ন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় হদিস মিলল করোনার এক ভুয়া টিকাকেন্দ্রের। কেন্দ্রটি থেকে শত শত মানুষকে ভুয়া টিকা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এটির কর্ণধার দেবাঞ্জন দেবকে। তিনি নিজেকে কলকাতা পৌর করপোরেশনের যুগ্ম কমিশনার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে টিকাদান শিবির চালিয়ে যান। নিজেকে একজন আইএএস কর্মকর্তা হিসেবেও পরিচয় দেন তিনি। দেবাঞ্জনের চালচলনে এতটুকু ঘাটতি ধরা পড়েনি। তিনি কসবার টিকাকেন্দ্রে গত ১০ দিনে বিনামূল্যে টিকা প্রদান করেন প্রায় দেড় হাজার মানুষকে। টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে সুবিধা আদায় করেন তিনি। চাঁদা হিসেবে নেন লাখ লাখ রুপি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, শুধু কসবায় নয়, কলকাতার সিটি কলেজেও টিকাদান ক্যাম্প খুলে কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদেরও ভুয়া টিকা প্রদান করেছেন তিনি (পরিমার্জিত) (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো: ২৪ জুন ২021/

ক. গোয়ালার বাড়িতে মৃত্যুঞ্জয় কী জাতের সাপ ধরেছিল? 

খ. খুড়া মৃত্যুঞ্জয়কে অন্নপাপের জন্য দায়ী করেছেন কেন?.

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে 'বিলাসী' গল্পের কোন দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘বিলাসী' গল্পের মূলভাবকে ধারণ করতে পেরেছে কি? তোমার মতামত দাও ।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. গোয়ালার বাড়িতে মৃত্যুঞ্জয় খরিশ গোখরা জাতের সাপ ধরেছিল । 

খ. নিচু জাতের বিলাসীর হাতে ভাত খাওয়ার কারণে খুড়া মৃত্যুঞ্জয়কে অন্নপাপের জন্য দায়ী করেছে।

.‘বিলাসী' গল্পে হিন্দু সমাজব্যবস্থায় জাত প্রথার প্রবল বিষবাষ্পের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে । এই সমাজব্যবস্থায় নিচু জাতের কারো হাতে রান্না করা খাবার বিশেষত ভাত খেলে অন্নপাপ হয় বলে মনে করা হয়। আর এই অন্নপাপের কোনো প্রায়শ্চিত্তও নেই। অসুস্থ মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়ের শুশ্রূষা করতে আসা বিলাসী ছিল নিচু জাতের। ফলে বিলাসীর হাতের খাবার খাওয়া মেনে নিতে পারেননি ধর্মান্ধ খুড়া। তাই তিনি মৃত্যুঞ্জয়কে অন্নপাপের জন্য দায়ী করেছেন ।

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে 'বিলাসী' গল্পে বর্ণিত সাপুড়েদের ভুয়া পথ্য হিসেবে শিকড়-বাকড় বিক্রির বিষয়টির সাদৃশ্য রয়েছে।

'বিলাসী' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিলাসী একজন সাপুড়েকন্যা। বিলাসীর | সঙ্গে বিয়ে করে মৃত্যুঞ্জয়ও পুরোদস্তুর সাপুড়ে হয়ে ওঠে। এই সাপুড়েদের প্রধান ব্যবসায় শিকড়-বাকড় বিক্রি। মূলত এসব শিকড়ে প্রকৃতার্থে সাপ পলায়ন করে না। কিন্তু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে সাপুড়েরা এই শিকড়ই বিক্রি করে। সাপুড়েদের এই মানুষ ঠকানোর ব্যবসায় পছন্দ করে না বিলাসী। সে তার স্বামী মৃত্যুঞ্জয় এবং গল্পকথক ন্যাড়াকে এই শিকড় বিক্রির ব্যবসায় থেকে নিরস্ত করার চেষ্টা করে।

উদ্দীপকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় একটি ভুয়া করোনা টিকাকেন্দ্রের কথা বলা হয়েছে। সেখানে অসংখ্য মানুষকে ভুয়া টিকা দেওয়া হয়েছে। এই টিকাকর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে টিকাকেন্দ্রের কর্ণধার দেবাঞ্জন দেব বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে নানারকম সুবিধা আদায় করেন। মূলত ভুয়া টিকার মাধ্যমে মানুষ ঠকানোর বিষয়টিই মুখ্য হয়ে উঠেছে উদ্দীপকে। আর মানুষ ঠকানোর এই বিষয়টি 'বিলাসী' গল্পের সাপুড়েদের মানুষ ঠকানোর বিষয়টিকেই প্রতিফলিত করেছে।

'বিলাসী' গল্পে সমাজের জাতিভেদের সংকীর্ণ সীমা অতিক্রম করে মানব-মানবীর প্রেমের মহিমা প্রধান হয়ে উঠলেও উদ্দীপকে এদিকটির প্রকাশ না ঘটায় উদ্দীপকটি আলোচ্য গল্পের মূলভাবের ধারক হয়ে উঠতে পারেনি ।

'বিলাসী' গল্পে নিচু জাতের সাপুড়েকন্যা বিলাসী উঁচু জাতের মৃত্যুঞ্জয়কে ভালোবেসেছে। সমাজের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয়ও বিলাসীর প্রেমে জাত ত্যাগ করে সাপুড়ে জীবন বেছে নিয়েছে। সমাজের অনুদারতা ও রক্ষণশীলতার বিপরীতে গল্পে বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের প্রেম অনুপম হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রেমের জন্য মৃত্যুঞ্জয় ত্যাগ করেছে নিজের জাত । আর বিলাসী বেছে নিয়েছে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ।

উদ্দীপকে মানুষ ঠকানোর দিকটি প্রধান হয়ে উঠেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ভুয়া টিকাদানের নাম করে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে টিকাকেন্দ্রের কর্ণধার দেবাঞ্জন দেব। এরূপ কর্মকাণ্ডের কারণে অসংখ্য মানুষ নিজেদের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। দেবাঞ্জন দেবের প্রতারণার বিষয়টি এতই সূক্ষ্ম ছিল যে অসংখ্য মানুষ তার টিকাকেন্দ্রে টিকা নিলেও কেউই তা বুঝতে পারেনি। ফলে টিকা দেওয়ার জন্য অনেক স্থানেই টিকাকেন্দ্র স্থাপন করেছে প্রতারকচক্র।

উদ্দীপকে টিকা দেওয়ার নামে প্রতারণার বিষয়টি মুখ্য হয়ে উঠলেও 'বিলাসী' গল্পের প্রধান বিষয় মানব-মানবীর প্রেমের মহিমা বর্ণনা। গল্পে সংকীর্ণ সমাজের নিষ্ঠুর ব্যবস্থার বিপরীতে বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয় নিজেদের মতো করে জীবন সাজিয়েছিল। একের পর এক ঘটনা ও বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে সংঘাতের মধ্য দিয়ে কাহিনি এগিয়েছে। আর তার মধ্যে বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের প্রেমের মহিমাই প্রধান হয়ে উঠেছে। কিন্তু, উদ্দীপকে এসবের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় না। সেখানে কেবলই মানুষের সঙ্গে প্রতারণার দিকটিই তুলে ধরা হয়েছে। এদিক বিচারে তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘বিলাসী' গল্পের মূলভাবকে ধারণ করতে পারেনি।

৪ নম্বর প্রশ্ন

শিউলি এখন বাবার সঙ্গে ঢাকায় এক বস্তিতে বাস করে। যখন তারা গ্রামে থাকত, তখন মাতব্বরের পুত্র লাভলুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী রাতের অন্ধকারে তার ওপর নির্যাতন চালায়। শিউলির বাবা মাতব্বরের কাছে এর বিচার চাইলে মাতব্বর লোকজনকে দিয়ে বাবা-মেয়েকে তাড়িয়ে দেন গ্রাম থেকে। ফলে প্রকৃত ঘটনা চাপা পড়ে যায় এবং মাতব্বরের জাত বাঁচে।

ক. 'সাপুড়েদের সবচেয়ে লাভের ব্যবসায় কী?

খ. মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিচয় দাও।

গ. উদ্দীপকের মাতব্বরের সঙ্গে 'বিলাসী' গল্পের জাত-গৌরবের মোহে অন্ধ গ্রামবাসীর সাদৃশ্য আলোচনা করো ।

ঘ. উদ্দীপকটি 'বিলাসী' গল্পের সামগ্রিকতাকে ধারণ করতে পেরেছে কি? বিচার করো ।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. সাপুড়েদের সবচেয়ে লাভের ব্যবসায় হলো শিকড় বিক্রি করা। 

খ. ‘বিলাসী' গল্পে গল্পকথক ন্যাড়ার বর্ণনায় মৃত্যুঞ্জয়ের জঙ্গলাকীর্ণ বাড়ির পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায় ।

মৃত্যুঞ্জয়ের বাস ছিল গ্রামের এক প্রান্তে, বিশ-পঁচিশ বিঘা আয়তনের প্রকাণ্ড এক আম-কাঁঠালের বাগানের মধ্যে বিশাল একটা পোড়োবাড়িতে। এ পোড়োবাড়িতে প্রাচীরের বালাই ছিল না। স্বচ্ছন্দে যে কেউ বাড়ির ভেতরে ঢুকতে বা বের হতে পারত। রাতের অন্ধকারে ঘন জঙ্গল বাড়ির পরিবেশকে ভুতুড়ে ও ভীতিজনক করে তুলত ।

গ. জাত-গৌরবের মিথ্যে অহমিকার দিক থেকে উদ্দীপকের মাতব্বরের সাথে 'বিলাসী' গল্পের গ্রামবাসীর সাদৃশ্য প্রতীয়মান হয় ।

'বিলাসী' গল্পে গল্পকার তৎকালীন বর্ণবিভক্ত সমাজের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। সে সমাজে মানবিক সম্পর্কের চেয়ে বর্ণ বা জাত পরিচয়ই প্রাধান্য পেয়েছে। 

এ কারণেই উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে নিম্নবর্ণের বিলাসীর সম্পর্ককে মেনে নিতে পারেনি তারা। শুধু তাই নয়, তাদের নিপীড়নের শিকার হয়ে গ্রামছাড়া হতে হয় বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়কে।

উদ্দীপকে উল্লিখিত মাতব্বর শ্রেণিবৈষম্যে বিশ্বাসী। নিজ স্বার্থের জন্য লম্পট পুত্র লাভলুর লালসার শিকার শিউলি ও তার বাবাকে তিনি ক্ষমতার দাপটে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেন, যাতে প্রকৃত ঘটনা চাপা পড়ে যায়। 

শিউলির সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে তার প্রতিকার না করে মাতব্বর অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছেন। আর এসবই তিনি করেছেন সমাজে তাঁর সম্মান রক্ষার্থে, জাত বাঁচাতে। 

একইভাবে, 'বিলাসী' গল্পে উল্লিখিত গ্রামবাসীও বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের অসবর্ণের সম্পর্ককে মেনে নিতে না পেরে অন্নপাপের অজুহাতে তাদেরকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়। 

অর্থাৎ উদ্দীপকের মাতব্বর এবং আলোচ্য গল্পের গ্রামবাসী অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত হয় জাত-গৌরবের মিথ্যে অহমিকার বশবর্তী হয়েই। এদিক থেকে উদ্দীপকের মাতব্বরের সাথে 'বিলাসী' গল্পের গ্রামবাসীর সাদৃশ্য পাওয়া যায় ।

ঘ. কেবল রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার স্বরূপ উন্মোচন করার সূত্রে উদ্দীপকটি 'বিলাসী' গল্পের সামগ্রিকতাকে ধারণ করতে পারেনি।

‘বিলাসী’. গল্পে সেবাব্রতী বিলাসী আপ্রাণ সেবা-যত্ন দিয়ে মৃত্যুঞ্জয়কে সুস্থ করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে তার হৃদয়ও জয় করে নেয়। কিন্তু শিক্ষার আলো বঞ্চিত এবং জাতিগত বিভেদের বেড়াজালে আবদ্ধ গ্রামবাসীর কাছে ভিন্ন বর্ণের এ দুই মানব-মানবীর ভালোবাসা ছিল মূল্যহীন। 

তাই তৎকালীন সামাজিক রীতি লঙ্ঘন করায় মৃত্যুঞ্জয়-বিলাসীকে গ্রামছাড়া করে তারা । উদ্দীপকটিতে আলোচ্য গল্পের মতো ভালোবাসার মহত্ত্ব বর্ণিত হয়নি, শুধু সামাজিক অসংগতির একটি চিত্রই ফুটে উঠেছে। লম্পট মাতব্বরপুত্র লাভলু কর্তৃক পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিউলি ও তার বাবা দ্বিতীয় দফা অন্যায়ের শিকার হয়েছে মাতব্বরের কাছে বিচার চাইতে গিয়ে।

ছেলের কুকীর্তি প্রকাশিত হলে সমাজে সম্মানহানি ঘটার আশঙ্কায় মাতব্বর তাদের গ্রাম থেকে বের করে দিয়ে নিজের জাত বাঁচিয়েছেন মনে করে তৃপ্তি লাভ করেছেন। পক্ষান্তরে, “বিলাসী' গল্পের বিষয়বস্তু আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত ।

‘বিলাসী' গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয়ের খুড়া এবং তার অনুসারী গ্রামবাসীর মধ্যে উদ্দীপকের মাতব্বরের অত্যাচারী মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়েকন্যা বিলাসীকে বিয়ে করায় সমাজে খুড়ার সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। 

গ্রামের সম্মান বাঁচানোর অজুহাতে সে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীকে অপমান এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘৃণ্য কাজ করে । শুধু তাই নয়, গল্পটিতে সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের মিলনের মধ্য দিয়ে মানবিক সম্পর্কের জয় ঘোষিত হয়েছে। 

এছাড়া গল্পটিতে তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থাসহ সমাজব্যবস্থার একটি পূর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে। এসকল বিষয় উদ্দীপকে ফুটে ওঠেনি। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটি 'বিলাসী' গল্পের সামগ্রিকতাকে ধারণ করতে পারেনি ।

৫ নম্বর প্রশ্ন

এ সংসারে জোছনার কেউ নেই। সুধীর কাকার সংসারে কাকির গলগ্রহ হয়ে সে জীবনযাপন করে। শেষে কাকার ইচ্ছায় এক শীল বংশীয় ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। অপরদিকে সুধীর মজুমদারের একমাত্র ছেলে সদানন্দ মজুমদার কলেজে পড়তে গিয়ে শীল বংশীয় পূর্ণিমার প্রেমে পড়ে। সদানন্দ পূর্ণিমাকে বিয়ে করতে চায়। তারপর শুরু হয় শীল- [-মজুমদারের অর্থাৎ শূদ্র-কায়স্থের লড়াই। সুধীর মজুমদারের জাত- কুল আর যেন বাঁচে না।

ক. মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসী কোথায় সাপ ধরতে গিয়েছিল?

খ. ‘বুক যদি কিছুতে ফাটে তো সে এই মৃত স্বামীর কাছে একলা থাকিলে’– কেন? ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকের সুধীরের সঙ্গে 'বিলাসী' গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের খুড়ার সাদৃশ্য নির্ণয় করো ।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘বিলাসী' গল্পের মূলভাবকে সম্পূর্ণ তুলে ধরতে পেরেছে কি? বিশ্লেষণ করো।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসী এক গোয়ালার বাড়িতে সাপ ধরতে গিয়েছিল ।

খ. একসঙ্গে বহুকাল বসবাস করেও শুধু ভালোবাসার অভাবে অনেক নারী মৃত্যুভয়কে জয় করতে পারে না; তাই মৃত স্বামীর কাছে একলা থাকতে ভয়ে তাদের বুক ফাটে।

বহুকাল একসঙ্গে সংসার করার পরও অনেক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা তৈরি হয় না। এ কারণে তারা স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুশোক সইতে পারলেও মৃতদেহটাকে মুহূর্তকাল সহ্য করার সাহস পায় না। স্বামীর মৃত্যুশোকে তাদের যতটা না বুক ফাটে, তার চেয়ে বেশি বুক ফাটে মৃত স্বামীর কাছে একলা থাকার ভয়ে। প্রকৃতপক্ষে, ভালোবাসার অভাবেই স্বামীর মৃতদেহ তাদের মধ্যে ভয়ের উদ্রেক করে। এ বিষয়টিকে বোঝাতেই গল্পকার প্রশ্নোক্ত উক্তিটির অবতারণা করেছেন ।

গ. স্বার্থপরতা ও হীন মনোভারের দিক থেকে উদ্দীপকের সুধীরের সঙ্গে “বিলাসী' গল্পের খুড়া চরিত্রের সাদৃশ্য প্রতীয়মান হয় ।

“বিলাসী' গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের খুড়া মৃত ভাইয়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে ভ্রাতুষ্পুত্র মৃত্যুঞ্জয়কে সরিয়ে দিতে তার নামে অপপ্রচার চালায় । এরই অংশ হিসেবে গ্রামের মুখ পোড়ানোর অজুহাত তুলে সে মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীকে গ্রামছাড়া করে। 

পরবর্তীকালে মৃত্যুঞ্জয়ের অকালমৃত্যুতে সে বিন্দুমাত্র শোক প্রকাশ তো করেইনি; বরং তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও প্রচেষ্টা সফল হওয়ায় হৃষ্টচিত্তে মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পত্তি দখল করেছে।

উদ্দীপকে উল্লিখিত সুধীর মজুমদার রক্ষণশীল এবং স্বার্থান্ধ একটি চরিত্র । ভাইয়ের অনাথ মেয়ে জোছনাকে আশ্রয় দিলেও সে তাকে বোঝা মনে করেছে। জাতিভেদ প্রথার কট্টর সমর্থক সুধীরের নিচু জাতের ছেলের সঙ্গে জোছনার বিয়ে দেওয়ার ঘটনা তার স্বার্থপর' মানসিকতারই পরিচয় বহন করে। 

আর তাই নিম্নবর্ণের শীল সম্প্রদায়ের ছেলের সঙ্গে জোছনার বিয়ে দিলেও নিজের ছেলে যখন শীল বংশীয় মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছে, তা সে মেনে নিতে পারেনি।' একইভাবে, 'বিলাসী' গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের কাকাও তার সম্পত্তি দখল করতে অন্নপাপের অজুহাত দিয়ে তাকে গ্রাম ছাড়া করে। 

অর্থাৎ আলোচ্য গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের কাকা এবং উদ্দীপকের খুড়া উভয়েই স্বার্থপর ও হীনমনোভাবাপন্ন। এদিক থেকে তাদের মধ্যে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ঘ. কেবল বর্ণবৈষম্য ও স্বার্থান্বেষী মনোভাব তুলে ধরার সূত্রে উদ্দীপকটি 'বিলাসী' গল্পের মূলভাবকে সম্পূর্ণ তুলে ধরতে পারেনি ।

‘বিলাসী' গল্পে লেখক তৎকালীন বর্ণবিভক্ত সমাজের ভয়ংকর রূপটিকে উন্মোচন করেছেন। সেখানে উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয় নিম্নবর্ণের বিলাসীকে বিয়ে করার কারণে তাদের গ্রামছাড়া হতে হয়। এছাড়া মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পদলোভী কাকার হীন মনোভাব এবং বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা গল্পটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।

উদ্দীপকের স্বার্থপর সুধীর মজুমদার ভাইয়ের মেয়েকে শীল বংশীয় ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিলেও নিজের ছেলের সঙ্গে শীল বংশীয় কন্যা পূর্ণিমার বিয়েতে আপত্তি জানায়। পুত্র নিচু জাতের মেয়ে বিয়ে করলে তার জাত যাবে— এ ভয়ে সুধীর মজুমদার রীতিমতো লড়াই শুরু করে। 

অনুদার এবং রক্ষণশীল মানসিকতা সুধীর মজুমদারকে এমনই সাম্প্রদায়িক করে তুলেছে যে, তার কাছে মানুষ বা মানুষের হৃদয়গত ঐকান্তিক চাওয়ার কোনো মূল্যই নেই, বর্ণ পরিচয়টাই হয়ে উঠেছে মুখ্য। 'বিলাসী' গল্পেও এই নির্মম সমাজবাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ লক্ষণীয়

বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা একটি সামাজিক অভিশাপ। আধুনিক যুগে দাঁড়িয়েও সমাজ এর কুপ্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয় । আলোচ্য উদ্দীপক ও 'বিলাসী' গল্প বিশ্লেষণে আমরা সেই চিত্রটিই দেখতে পাই। 

তৎকালীন সামাজে জাতিগত বিভেদের সংকীর্ণতা মানুষকে এমনই অন্ধ করে - রেখেছিল যে, বিলাসীর প্রতি বর্বর আচরণের নিষ্ঠুরতা তাদের বিবেককে নাড়া দেয়নি। বরং বংশের নাম, গ্রামের মুখ রক্ষার গৌরবে তারা গভীর আত্মপ্রসাদ লাভ করেছে। 

তবে এটিই এ গল্পের একমাত্র দিক নয়। এ দিকটি ছাড়াও সেখানে সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয়ের জাতিগত পরিচয় . বিসর্জন দেওয়াসহ মৃত্যুঞ্জয়-বিলাসীর অকৃত্রিম ভালোবাসার পরিচয় ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকের স্বল্প পরিসরে এসকল বিষয় সেভাবে উঠে আসেনি । সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ ।

৬ নম্বর প্রশ্ন

রফিক সাহেব ছেলেকে নিজের গাড়িতে করে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অফিসে চলে যান। এ সময় তাঁর ছেলেবেলার কথা খুব মনে পড়ে। গ্রীষ্মের দাবদাহ, বর্ষার কাদাজল আর পথের ধুলা গায়ে মেখে দীর্ঘ পথ হেঁটে স্কুলে যেতেন। আসা-যাওয়ার পথে গ্রামের বাগানের আম, জাম, পেয়ারা, কাঁঠাল ইত্যাদি পেড়ে খাওয়ার বুদ্ধি আঁটতেন। আর এখন তাঁর ছেলে কত সহজেই স্কুলে যেতে পারে।

ক. 'কামস্কাটকা' কোথায় অবস্থিত?

খ. “মা সরস্বতী খুশি হইয়া বর দিবেন কি, তাহাদের যন্ত্রণা দেখিয়া কোথায় যে তিনি লুকাইবেন, ভাবিয়া পান না’— উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে 'বিলাসী' গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? তুলে ধরো । 

ঘ. “উদ্দীপকে ‘বিলাসী' গল্পের সমাজচিত্রের আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে মাত্র” – বিশ্লেষণ করো।

৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক কামস্কাটকা রাশিয়ার অন্তর্গত সাইবেরিয়ার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত । 

খ. তৎকালীন বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যার্জনের ক্লেশ প্রসঙ্গে প্রশ্নোক্ত উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।

ন্যাড়া, মৃত্যুঞ্জয়সহ শিক্ষার্থীদের তখন বহু কষ্টে দুই ক্রোশ পথ অতিক্রম করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হতো। প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে এ পথ যেন আরও দুর্গম হয়ে উঠত। এত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে শেষ পর্যন্ত গ্রামের ছেলেদের পরীক্ষার ফল আশানুরূপ হতো না । তৎকালীন বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালাভের এই বিড়ম্বনাকে বোঝাতেই লেখক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

গ. উদ্দীপকে ‘বিলাসী' গল্পের গল্পকথকদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতার দিকটি ফুটে উঠেছে ।

'বিলাসী' গল্পে লেখক তৎকালীন বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে গমনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। সে সময় দীর্ঘপথ হেঁটে তবেই শিক্ষার্থীদের স্কুলে পৌছুতে হতো। কখনও এই পথকে আরও দুর্গম করে তুলত বর্ষার জল ও কাদা, কখনো রোদ ও ধুলা। 

তবে এ আসা-যাওয়ার মধ্যেও আনন্দ ছিল। বিদ্যালয়ে যেতে শিক্ষার্থীরা তিনটি গ্রাম অতিক্রম করত এবং কাদের বাগানে কী ফল পেকেছে, কখন সে ফল কীভাবে খাওয়া যাবে, সে সময় তারা সে বুদ্ধিই আঁটত।

উদ্দীপকের রফিক সাহেব নিয়মিত নিজের গাড়িতে করে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দেন । ছেলেকে স্কুলে পৌঁছাতে গিয়ে তাঁর নিজের ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার কথা মনে পড়ে। 

গ্রীষ্মের দাবদাহ, বর্ষার কাদাজল আর পথের ধুলা গায়ে মেখে দীর্ঘ পথ হেঁটে স্কুলে যেতেন তিনি। ‘বিলাসী' গল্পেও লেখক শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার এমন দৃশ্যই উপস্থাপন করেছেন। 

উভয়ক্ষেত্রেই যাত্রাপথে বাগানের ফল খাওয়ার মধুর স্মৃতি রোমন্থন করা হয়েছে । সে বিবেচনায় উদ্দীপকটিতে আলোচ্য গল্পের গল্পকথকের বিদ্যালয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাই ফুটে উঠেছে ।

ঘ. কেবল অতীত ও বর্তমানের শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে আলোকপাত করায় উদ্দীপকটি 'বিলাসী' গল্পের সমাজ বাস্তবতাকে সম্পূর্ণ তুলে ধরতে পারেনি ।

'বিলাসী' গল্পে বিশ শতকের প্রথম দিকে পল্লিগ্রামের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে । সে সময়ে এদেশের পল্লিগ্রামগুলো ধর্মীয় গোঁড়ামি ও বর্ণবৈষম্যের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল। 

এর কুপ্রভাবে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে এ গল্পের প্রধান চরিত্রগুলোকে। এছাড়া গল্পটিতে তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থার ভঙ্গুর দশা ফুটে উঠেছে ।

উদ্দীপকে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সাথে প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থার তুলনার দিকটিই মুখ্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে রফিক সাহেবের ছেলে গাড়ি করে স্কুলে যায়। রফিক সাহেব রোজ নিয়ম করে তাকে স্কুলে পৌঁছে দেন। 

কিন্তু ছেলেবেলায় তিনি নিজে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতেন। গ্রীষ্মের দাবদাহ, বর্ষার কাদাজল তাদের হাঁটার কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিত। শিক্ষার পরিবেশের এই দিকটি 'বিলাসী' গল্পের সাথে প্রাসঙ্গিক হলেও এটিই গল্পের একমাত্র দিক নয় ।

“বিলাসী' গল্পের প্রথমেই লেখক তৎকালীন শিক্ষার পরিবেশের দিকটি তুলে ধরেছেন। রফিক সাহেবের স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে বিষয়টি উদ্দীপকেও প্রতিফলিত হয়েছে। 

এছাড়া গল্পটিতে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ পরিণতির মধ্যদিয়ে লেখক তৎকালীন সমাজে জেঁকে বসা বর্ণপ্রথা ও গোঁড়ামির ভয়াবহ রূপটি তুলে ধরেছেন। স্বার্থপর মানুষ কীভাবে এ বর্ণপ্রথাকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করত, তাও এ গল্পে লক্ষণীয়। 

পাশাপাশি গল্পটিতে লেখক নিম্নবর্ণের সাপুড়েদের জীবনচিত্রের কিছু বর্ণনা করেছেন। এ সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রথাবিরুদ্ধভাবে অসবর্ণের বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা। আলোচ্য গল্পে ফুটে ওঠা সমাজচিত্রের এসকল দিক .উদ্দীপকে উঠে আসেনি। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ ।

৭ নম্বর প্রশ্ন

শহরে আপনজন বলতে তেমন কেউ নেই সোহানের। সম্প্রতি কোভিড- ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার প্রতি কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় না। এমনকি বন্ধুরাও সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে তাকে পরিত্যাগ করে। এ সময় সোহানের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে নীলিমা, যার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বাবা-মায়ের নিষেধ অমান্য করে নীলিমা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সোহানের সেবা-শুশ্রুষা করে। নীলিমার নিবেদন দেখে বাবা-মায়ের ভুল ভাঙে। সোহানের বন্ধুরাও লজ্জিত হয় এবং বন্ধুর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ।

ক. কার সেবায় মৃত্যুঞ্জয় যমের মুখ থেকে ফিরে এসেছে? 

খ. বিলাসী বিষপানে আত্মহত্যা করে কেন?

গ. উদ্দীপকের নীলিমা কীভাবে 'বিলাসী' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো ।

ঘ. ‘বিলাসী’ গল্পে লেখকের যে প্রত্যাশাটি সুপ্ত রয়েছে উদ্দীপকে তা বাস্তব রূপ লাভ করেছে— মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো। 

৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. বিলাসীর সেবায় মৃত্যুঞ্জয় যমের মুখ থেকে ফিরে এসেছে। 

খ. স্বামীর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে বিলাসী বিষপানে আত্মহত্যা করে । বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের মাঝে ছিল গভীর প্রেম। সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীকে আপন করে পাওয়ার জন্যই মৃত্যুঞ্জয় জাত বিসর্জন দিয়ে পুরোদস্তুর সাপুড়ে জীবন বেছে নিয়েছিল। নিয়তির নির্মম পরিহাসে তার মৃত্যু হয় সাপের কামড়েই। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে বেঁচে থাকাটা মূল্যহীন বলে মনে হয় বিলাসীর কাছে। এ কারণেই সে বিষপানে আত্মহত্যা করে মৃত্যুঞ্জয়ের অনুগামী হয় ।

গ. সেবাপরায়ণতা ও প্রেমের মহিমায় উদ্দীপকের নীলিমা 'বিলাসী' ना গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

'বিলাসী' গল্পটি আবর্তিত হয়েছে বিলাসী নামক কর্মনিপুণা ও সেবাব্রতী একজন নারীকে ঘিরে। মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়কে সে সেবা-শুশ্রুষা করে সুস্থ করে তোলে। সাপুড়ে-কন্যা হয়েও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে কায়স্থ বর্ণের মৃত্যুঞ্জয়কে ভালোবাসে সে। তার ভালোবাসার শক্তিই মৃত্যুঞ্জয়কে সাহস জোগায় নিজের জাত বিসর্জন দিয়ে সাপুড়ে-জীবন বেছে নিতে। অবশেষে সাপের কামড়ে মৃত্যুঞ্জয়ের অকালমৃত্যু হলে বিলাসী নির্দ্বিধায় বেছে নেয় স্বেচ্ছামরণের পথ।

উদ্দীপকে বর্ণিত নীলিমা ও সোহানের বিয়ের কথা ঠিক হয়ে আছে। স্বজনহীন সোহান কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রায় সবাই তাকে পরিত্যাগ করে। এ অবস্থায় অসহায় সোহান পাশে পায় নীলিমাকে। নীলিমা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখেই নিজেকে যথাসম্ভব সুরক্ষিত রেখে সোহানের সেবা-শুশ্রূষা করে। সত্যিকারের ভালোবাসার অনুভূতিই যে নীলিমাকে এমন সেবাপরায়ণ ভূমিকা গ্রহণে প্রেরণা জুগিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আলোচ্য গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র বিলাসীকেও আমরা একইভাবে সেবাব্রতী ও প্রেমময়ী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখি।

ঘ. 'বিলাসী' গল্পে মানবিক সমাজ নির্মাণের জন্য লেখকের প্রত্যাশা নিহিত রয়েছে, উদ্দীপকে যা বাস্তব রূপ লাভ করেছে ।

শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'বিলাসী' গল্পে প্রকাশিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী দুজন মানব-মানবীর অনন্যসাধারণ প্রেমের মহিমা, যা জাতিগত বিভেদের সংকীর্ণ সীমা ছাপিয়ে গিয়েছে। 

অন্ত্যজ শ্রেণির সাপুড়ে-কন্যা বিলাসীর সাথে উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয়ের প্রেম কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের দৃষ্টিতে ঘোর অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। গল্পে এ দুই নর-নারীকে কেন্দ্র করে প্রকৃত ভালোবাসার যে আখ্যান রচিত হয়েছে, তারই আলোয় ধরা পড়েছে রক্ষণশীল সমাজের অনুদারতা ও অমানবিকতার স্বরূপ।

উদ্দীপকে বর্ণিত সোহানের আপনজন বলতে তেমন কেউ নেই। সম্প্রতি সে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হলে সংক্রমণের ভয়ে বন্ধুরাও তাকে ত্যাগ করে। এসময় সে সহযোগিতা পায় কেবল নীলিমার কাছ থেকে, যার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। 

নীলিমা তার বাবা-মায়ের নিষেধ, এমনকি সংক্রমণের ঝুঁকিও উপেক্ষা করে সোহানের সেবা করে। তার ভালোবাসার শক্তিই সোহানের প্রতি অবজ্ঞাকারীদের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে এবং একপর্যায়ে সবাই তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয় । 

“বিলাসী” গল্পে উল্লিখিত সমাজব্যবস্থা উদ্দীপকের সমাজের মতো ইতিবাচক পথে চালিত হয়নি। এ গল্পে লেখক ন্যাড়া নামে কথকের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়ে মৃত্যুঞ্জয়-বিলাসীর প্রণয়কাহিনি বর্ণনার মধ্য দিয়ে গল্পের ঘটনাকে এগিয়ে নিয়েছেন। 

সেইসঙ্গে শ্লেষ ও ব্যাঙ্গর সমন্বয়ে তিনি তুলে ধরেছেন বর্ণবাদী, রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার নির্মমতা ও অসারতার স্বরূপ। উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয় নিম্নবর্ণের বিলাসীর হাতে ভাত খেয়ে অন্নপাপ করেছে বলে তাদের গ্রামছাড়া করতে কুণ্ঠিত হয়নি সে সমাজ। 

মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর পর বিলাসীর আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনাও সমাজের চোখে পরিহাসের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এসব ঘটনা-পরম্পরায় গল্পকথকের চোখে বিলাসীর প্রেমের মহিমাই অত্যুজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়েছে। 

পাশাপাশি, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি এর পরিবর্তন কামনা করেছেন । | উদ্দীপকে আমরা দেখি নীলিমার প্রেমের মহিমায় অভিভূত হয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে উজ্জীবিত হয়েছেন তার মা-বাবা। উদ্বুদ্ধ হয়েছে সোহানের বন্ধুরাও। 

‘বিলাসী’ গল্পের লেখক শরৎচন্দ্র এমন মানবিক সমাজেরই প্রত্যাশা করেছেন, যেখানে মানবপ্রেম সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবে। এ বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ বলেই আমি মনে করি।

৮ নম্বর প্রশ্ন

ছোটো ইফাত টেলিভিশনে একটি সিনেমার দৃশ্য দেখছিল। নায়িকা নায়ককে বলছে, “বিশ্বাস করো রাজা, আমি তোমাকে ভালোবাসি । প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।”

নায়ক : না, রানি না, তা হয় না। তুমি মালিক, আমি চাকর। তোমরা বড়োলোক, আর আমরা গরিব। তোমার আর আমার প্রেম হতে পারে না । ছোট্ট ইফাত কিছুতেই ভেবে পেল না যে, রাজা ও রানির মধ্যে কেন প্রেম হতে পারে না ।

ক. মৃত্যুঞ্জয় কোন জাতীয় গোখরো সাপ ধরেছিল?

খ...“এ যে মিত্তির বংশের নাম ডুবিয়া যায়। গ্রামের যে মুখ পোড়ে”- উক্তিটি কেন করা হয়েছিল?

গ. উদ্দীপকের নায়ক রাজার সঙ্গে 'বিলাসী' গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের বৈসাদৃশ্য তুলো ধরো ।

ঘ. “ইফাতের মতো উদার মানসিকতার অধিকারী হলে বিলাসী- মৃত্যুঞ্জয়কে এমন পরিণতির শিকার হতে হতো না।”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো ।

৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. মৃত্যুঞ্জয় খরিশ গোখরা জাতীয় সাপ ধরেছিল ।

খ. কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের নিষ্ঠুর জাত-কুল-ভেদের কারণে উক্তিটি করা হয়েছে। মৃতপ্রায় মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা-শুশ্রূষায় এগিয়ে আসে নিচু বংশের সাপুড়েকন্যা বিলাসী। অসুস্থতার এক পর্যায়ে মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর রান্না করা ভাত খায়। কিন্তু আচারসর্বস্ব কুসংস্কারাশ্রয়ী তৎকালীন হিন্দু সমাজে এটি ছিল অনেক বড় ধরনের পাপ, যেটিকে অন্নপাপ বলা হতো। মৃত্যুঞ্জয় অন্নপাপ করায় বংশের মান ডুবেছে— মৃত্যুঞ্জয়ের অমঙ্গলপ্রত্যাশী লোভী খুড়া এই ব্যাপারটিই ফলাও করে বলছিল। মৃত্যুঞ্জয়কে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এবং সে জন্যই আলোচ্য উক্তিটি সে করেছে।

গ. অবস্থানগত দিক থেকে উদ্দীপকের নায়ক রাজার সঙ্গে 'বিলাসী' গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

'বিলাসী' গল্পে আমরা অসাধারণ এক প্রেমিকপুরুষ মৃত্যুঞ্জয়ের সন্ধান পাই। বিলাসী নিচু জাতের মেয়ে হলেও তার প্রতি আকর্ষণ কমে যায়নি মৃত্যুঞ্জয়ের। বরং বিলাসীর প্রতি প্রেমের প্রাবল্যে সে তার জাত বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করেনি।

উদ্দীপকের রাজার মধ্যে হয়তো প্রেমিকার প্রতি ভালোবাসার অভাব নেই। কিন্তু অনুদার সমাজের বিভেদরেখা অতিক্রম করার সাহস তার নেই। তাই সে তার প্রেমিকার ভালোবাসার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু 'বিলাসী', গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় কোনো বাধার সামনে মাথা নত করেনি। সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সে নিম্নবর্ণের সাপুড়েকন্যা বিলাসীকে বিয়ে করে। শুধু তাই নয়, সমাজের চাপে নিজের সহায়-সম্পত্তি এমনকি বংশ- গৌরব পর্যন্ত ত্যাগ করেছে ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার জন্য । মৃত্যুঞ্জয়ের এমন দৃঢ় অবস্থান এবং মানসিকতার দিকটি উদ্দীপকের রাজা চরিত্রে পরিলক্ষিত হয় না। এদিক থেকে উদ্দীপকের নায়ক রাজার সঙ্গে আলোচ্য গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. 'বিলাসী' গল্পে উল্লিখিত সমাজের মানুষেরা উদ্দীপকের ইফাতের মতো উদার মানসিকতার অধিকারী হলে বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়কে করুণ পরিণতি বরণ করতে হতো না বলেই আমি মনে করি।

'বিলাসী' গল্পে উল্লিখিত সমাজের মানুষেরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও রক্ষণশীল। ধর্মান্ধতার অন্ধকার তাদের মনকে এমনভাবে সংকুচিত করে রেখেছে যে, তারা মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে পারেনি। জাতিগত বিভেদের সংকীর্ণতা তাদের চেতনাজুড়ে। এ কারণেই তারা বিলাসী আর মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পর্ককে মেনে নিতে পারেনি। মানসিক সংকীর্ণতা .হেতু বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি অমানবিক আচরণকেই তারা ধর্ম ও সম্মান রক্ষার মতো গৌরবের কাজ বলে মনে করেছে।

উদ্দীপকের ইফাত চিন্তাভাবনার দিক থেকে অনেক উদার। সমাজের অপ্রয়োজনীয় জটিল ভাবনা তার শিশুমনকে স্পর্শ করেনি। তাই তার কাছে মানুষের শ্রেণিভিত্তিক পরিচয় বড়ো হয়ে ওঠেনি, যে গণ্ডি থেকে অধিকাংশ মানুষই বের হতে পারে না। এ কারণেই সিনেমার ধনী নায়িকার সাথে গরিব নায়কের সম্পর্ক না হওয়ার কোনো অর্থবহ কারণ খুঁজে পায় না সে। আলোচ্য গল্পে উল্লিখিত সমাজের মানুষদের মাঝে ইফাতের বিপরীতধর্মী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

‘বিলাসী' গল্পের অনুদার সমাজের মানুষেরা বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের প্রেমকে মূল্য দিতে পারেনি। বরং তাদের কারণেই এই যুগলকে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুকে তারা অন্নপাপের ফল বলে মনে করেছে। 

বিলাসীর মৃত্যু তাদের কাছে হয়ে উঠেছে পরিহাসের বিষয়। * এককথায় গল্পে বর্ণিত সমাজের মানুষের মাঝে মানসিক সংকীর্ণতা ও অমানবিকতার দিকটিই মুখ্য হয়ে উঠেছে। পক্ষান্তরে উদ্দীপকের আফসানের চিন্তা-ভাবনা 'বিলাসী' গল্পের মানুষের তুলনায় অনেক উন্নত ও উদার। 

তার শিশুমনকে ভেদ-বৈষম্যের পঙ্কিলতা এখনো স্পর্শ করেনি। সংগত কারণেই প্রেমিক ও প্রেমিকার নিঃশর্ত ভালোবাসা কেন বিত্ত ও শ্রেণি পরিচয়ের গণ্ডিতে ঠোকর খাবে এই ব্যাপারটি ভাবিয়ে তোলে তাকে। 'বিলাসী' গল্পে উল্লিখিত সমাজ আফসানের মতো উদার হলে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের পরিণতি এমন হতো না । সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

৯ নম্বর প্রশ্ন

মুরাদপুর গ্রামে একবার খুলনা থেকে একটা বড় যাত্রার দল আসে। সেই দলে ষোলো কি সতেরো বছরের নন্দিনী নামের একটি মেয়ে ভালো নাচত, মেয়েটি সুন্দরীও ছিল বটে। ওই গ্রামের চেয়ারম্যানের একমাত্র ছেলে দুলাল নন্দিনীর প্রেমে পড়ে যায়। কথাটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রা ভেঙে যায়। কারণ সমাজপতি চেয়ারম্যানের মাথা কাটা যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। কিছুদিন পরে শোনা যায়, নন্দিনীকে বিয়ে করে দুলাল ঢাকায় একটা এনজিওতে চাকরি নিয়েছে।

ক. মৃত্যুঞ্জয়ের অমার্জনীয় অপরাধ কী ছিল?

খ. “তারা বাস করিতে থাকিলে তো পল্লির এত দুর্দশা হয় না।”— ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে ‘বিলাসী' গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? আলোচনা করো ।

ঘ. ‘দুলাল দু চোখ ভরে নন্দিনীর রূপ দেখেছে, কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় দেখেছে বিলাসীর হৃদয়'— উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. মৃত্যুঞ্জয়ের অমার্জনীয় অপরাধ ছিল বিলাসীর হাতে ভাত খাওয়া । 

খ. প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে আর্থিকভাবে সংগতিপূর্ণ ব্যক্তিরা পল্লির প্রতি মনোযোগী হলে সেখানকার দুর্দশা লাঘব হতো বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে।

পল্লি অঞ্চলে ঋতুভেদে জল, কাদা এবং প্রখর সূর্যতাপ ও ধুলোর পথ পার হয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দূর-দূরান্তের স্কুলে যেত । লেখক মনে করেন, আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা যদি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য শহরে পাড়ি না জমিয়ে পল্লি অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির চেষ্টা করতেন এবং শহরে বসবাসকারী শিক্ষিত উঁচুতলার মানুষেরা যদি পল্লির দিকে সামান্য সুনজর দিতেন, তবে পল্লির এ দুর্দশা আর থাকত না। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে লেখকের এমন মনোভাবই প্রকাশিত হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে 'বিলাসী' গল্পে ফুটে ওঠা উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে ' 'সাপুড়েকন্যা বিলাসীর প্রেমের দিকটি ফুটে উঠেছে।

মৃত্যুঞ্জয়কে দিন-রাত সেবা করে মৃত্যুর দুয়ার থেকে যখন বিলাসী ফিরিয়ে এনেছিল, তখন একটু একটু করে তার হৃদয়ও জয় করেছিল সে। নিচু জাতের সাপুড়েকন্যা বিলাসীর ভালোবাসার এ স্পর্ধা তৎকালীন সমাজ মেনে নেয়নি। 

বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী এটা জানা সত্ত্বেও সমাজপতিরা বিলাসীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে গ্রাম থেকে বের করে দেয়। শেষ পর্যন্ত সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই মৃত্যুঞ্জয়-বিলাসীর মিলন হয় ।

উদ্দীপকে উল্লিখিত যাত্রাদলের মেয়ে নন্দিনীর রূপ-গুণে মুগ্ধ হয়েছিল মুরাদপুর গ্রামের চেয়ারম্যান-পুত্র দুলাল। ধীরে ধীরে নন্দিনীর প্রতি তার সেই মুগ্ধতা ভালোবাসায় রূপ নেয়। 

নিজ পুত্রের সাথে যাত্রাদলের মেয়ের এই অসম সম্পর্ককে চেয়ারম্যান কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। আর তাই কথাটি প্রকাশ হওয়ার পর যাত্রানুষ্ঠান বন্ধ করে দেন তিনি। 

অবশেষে নন্দিনীকে নিয়ে দুলাল ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে সংসার শুরু করে। একইভাবে, আলোচ্য গল্পেও নিম্নবর্ণের সাপুড়েকন্যার প্রণয়ে আবদ্ধ হয় উচ্চবংশীয় মৃত্যুঞ্জয়। 

বিলাসীর প্রতি ভালোবাসার কারণে শেষাবধি নিজের জাত ত্যাগ করে পুরোদস্তুর সাপুড়ে হয়ে ওঠে সে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটিতে আলোচ্য গল্পের মৃত্যুঞ্জয়-বিলাসীর অসম সম্পর্কের দিকটিই ফুটে উঠেছে।

ঘ ‘বিলাসী' গল্পে বিলাসীর হৃদয়ের সৌন্দর্যকে অবলোকন করেই মৃত্যুঞ্জয় তাকে ভালোবেসেছিল, পক্ষান্তরে, উদ্দীপকের দুলাল নন্দিনীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল।

'বিলাসী' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিলাসী আহামরি সুন্দরী না হলেও হৃদয়ের ঐশ্বর্যে গরীয়ান ছিল। মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়কে যখন আত্মীয়-অনাত্মীয় সবাই ভুলে গিয়েছিল, তখন সেবাব্রতী বিলাসী সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে প্রাণপণে তার সেবা করেছে এবং মৃত্যুর দুয়ার থেকে তাকে ফিরিয়ে এনেছে। 

সেবা ও মমতা দিয়েই সে মৃত্যুঞ্জয়ের হৃদয় জয় করেছিল। উদ্দীপকে উল্লিখিত মুরাদপুর গ্রামের চেয়ারম্যান-পুত্র দুলাল যাত্রা দলের মেয়ে নন্দিনীর প্রেমে পড়েছিল। নাচ-গানে পটু নন্দিনী সৌন্দর্যেও অনন্য ছিল। তার এই রূপ ও গুণই দুলালকে আকৃষ্ট করে। 

অবশেষে পিতার অমতকে অগ্রাহ্য করে দুলাল নন্দিনীর তার হাত ধরে গ্রাম ছাড়ে । এক্ষেত্রে দুলালের প্রেমে পড়ার মূল কারণ নন্দিনীর বাহ্যিক রূপ-গুণ । তবে আলোচ্য গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের হৃদয় জয় করেছির বিলাসীর স্বভাবসৌন্দর্য ।

‘বিলাসী' গল্পটি মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে বিলাসীর প্রণয়কাহিনিকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। এ গল্পে বিলাসী মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করতে পেরেছিল মূলত ভালোবাসার শক্তিবলে। 

তার ঐকান্তিক চেষ্টায় মৃত্যুঞ্জয় যখন মৃত্যুকে জয় করে সুস্থ হয়ে উঠছিল, তখন স্বভাব-সৌন্দর্যে বিলাসী নিজেও তিলে তিলে মৃত্যুঞ্জয়ের হৃদয় জয় করেছিল। উদারতা আর সেবাব্রতী মনোভাব বিলাসী চরিত্রের অমূল্য সম্পদ। 

এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েই সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয় ঘর ছেড়েছিল। কিন্তু উদ্দীপকের দুলাল নন্দিনীকে ভালোবেসেছিল তার বাহ্যিক সৌন্দর্যের টানে। তাই বলা যায়, ‘দুলাল দু চোখ ভরে নন্দিনীর রূপ দেখেছে; আর মৃত্যুঞ্জয় দেখেছে বিলাসীর হৃদয়'— উক্তিটি যথাযথ ।

১০ নম্বর প্রশ্ন

সুভাষ চক্রবর্তী মা-বাবার অমতে শূদ্র বর্ণের মেয়ে সুলতাকে বিয়ে করায় তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। বর্ণপ্রথার শিকার সুভাষ ও সুলতা চরম অর্থকষ্টে পড়লেও সমাজের কাছে হার মানেনি। নির্মম বর্ণপ্রথাকে তারা ঘৃণা করে। তারা মনে করে, সব ধরনের জাতভেদের ওপরে মানবধর্মের স্থান।

ক. ‘বিলাসী' গল্পে কোন কোন দেবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে?

খ. ‘তাহার বয়স আঠারো কি আঠাশ ঠাহর করিতে পারিলাম মা'— উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকের সুভাষ ও সুলতার পরিণতি 'বিলাসী' গল্পের কোন দিকটির সঙ্গে সম্পর্কিত? আলোচনা করো ।

ঘ. ‘সব ধরনের জাতভেদের ওপরে মানবধর্মের স্থান'— এ উক্তির তাৎপর্য ‘বিলাসী’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো ।

১০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. 'বিলাসী' গল্পে দেবী সরস্বতী ও দেবী মনসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

খ. মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করতে গিয়ে স্বাস্থ্যহানির শিকার হওয়া বিলাসীকে দেখে গল্পকথক ন্যাড়া আলোচ্য মন্তব্যটি করেছে।

মৃত্যুঞ্জয়ের রোগাক্রান্ত হলে বিলাসী দিনরাত সেবা-যত্ন করে তাকে সুস্থ করে তুলেছে। তাকে সুস্থ করতে গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমে বিলাসীর নিজের স্বাস্থ্যহানি হয়েছে। তাই ন্যাড়া যখন তাকে দেখেছে, তখন সে বিভ্রান্তিতে পড়েছে। তার বয়স আসলে কত হবে তা সে বুঝে উঠতে পারেনি। এ অবস্থায় বিলাসীর স্বাস্থ্যহানি প্রসঙ্গেই ন্যাড়া উদ্ধৃত উক্তিটির অবতারণা করেছে।

গ. উদ্দীপকের সুভাষ ও সুলতার পরিণতি শত প্রতিকূলতা সয়ে বিলাসীর সঙ্গে মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দিকটির সঙ্গে সম্পর্কিত। 'বিলাসী' গল্পে উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয় নিচু জাতের সাপুড়েকন্যা বিলাসীকে নিয়ে ঘর করলে সমাজ তা মেনে নেয় না। মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর হাতে ভাত খেলে সম্পদলোভী মৃত্যুঞ্জয়ের খুড়া বিষয়টিকে ‘অন্নপাপ' আখ্যা দিয়ে তাদের সমাজচ্যুত করে। এমনকি বিলাসীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে গ্রাম থেকে বের করে দেয়। কিন্তু এতে মৃত্যুঞ্জয় দমে যায়নি। সে বিলাসীকে নিয়ে সমাজ থেকে বেরিয়ে এসেছে

উদ্দীপকের সুভাষ চক্রবর্তী মা-বাবার অমতে শূদ্র বর্ণের মেয়ে সুলতাকে বিয়ে করে। কিন্তু রক্ষণশীল সমাজ তাদের এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। পরিবার তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা চরমভাবে অর্থকষ্টে পড়ে। নানা প্রতিকূলতা সয়ে তারা তাদের এই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে। একইভাবে বর্ণপ্রথার কারণে আলোচ্য গল্পের বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়কেও কঠিন পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। শত কষ্ট সহ্য করেও মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে ছেড়ে যায়নি। আলোচ্য গল্পে ফুটে ওঠা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার এ দিকটিই উদ্দীপকের সুভাষ ও সুলতার পরিণতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ।

ঘ. 'বিলাসী' গল্পে গল্পকার বর্ণপ্রথা ও তার কুপ্রভাব বর্ণনার মধ্য দিয়ে একটি মানবিক সমাজের প্রত্যাশা করেছেন ।

‘বিলাসী' গল্পে মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে ভালোবেসে বিয়ে করে নিজের জাত- ধর্মকে বিসর্জন দিয়েছে। বিলাসীর হাতে ভাত খাওয়ায় সমাজের চোখে মৃত্যুঞ্জয় ‘অন্নপাপী' হলেও মনুষ্যত্বের দিক বিবেচনায় তার স্থান অনেক ওপরে। কারণ বিলাসীর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে সে তাকে ভালোবেসেছে। সেখানে জাতি-ধর্মের বাধ্যবাধকতা স্থান পায়নি। মানবিক বোধে উজ্জীবিত বলেই সে এমনটি করেছে।

উদ্দীপকের সুভাষ চক্রবর্তী মা-বাবার অমতে বিয়ে করেছে শূদ্র বর্ণের মেয়ে সুলতাকে। বিয়ের পর রক্ষণশীল সমাজের অনুশাসন তাদের ঘরছাড়া করেছে। তা সত্ত্বেও একে অপরকে ছেড়ে যায়নি তারা। 

সকল প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে ঘর বেঁধেছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জাতি-ধর্মের বৈষম্যের ঊর্ধ্বে মূলত মানবতারই জয় হয়েছে। আলোচ্য গল্পে বিলাসীকে নিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের ঘর বাঁধার মধ্য দিয়েও এ দিকটিই বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।

‘বিলাসী' গল্পে গল্পকার সমাজে জেঁকে বসা বর্ণপ্রথার বীভৎস রূপটি তুলে ধরেছেন। এ গল্পে উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে নিম্নবর্ণের সাপুড়ে কন্যা বিলাসীর প্রণয়কে কেন্দ্র করে বর্ণবিভক্ত সমাজের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন তিনি। 

শুধু তাই নয়, সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয়ের জাতি বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিভেদমুক্ত পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন তিনি। একইভাবে, উদ্দীপকের সুলতাকে বিয়ে করার ক্ষেত্রেও সুভাষ জাতি বা বর্ণের কথা ভাবেনি। 

সে সুলতাকে ভালোবাসে বলেই তাকে বিয়ে করছে। অর্থাৎ আলোচ্য গল্প ও উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রেই হৃদয়জাত ভালোবাসা ও মনুষ্যত্বের কাছে জাত-ধর্ম সবকিছু ম্লান হয়ে গিয়েছে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ ।

১১ নম্বর প্রশ্ন

আহাদ চৌধুরী উদার মানসিকতায় বিশ্বাসী হলেও সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারকে উপেক্ষা করার মতো চারিত্রিক দৃঢ়তা তার নেই। কিছুদিন পূর্বে গ্রামের এক অনাথ কিশোরীকে তার চাচা গোঁড়া গ্রামবাসীর সহায়তায় জোর করে এক প্রভাবশালী বৃদ্ধ ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে দেয়। মন থেকে কাজটিকে সমর্থন না করলেও প্রতিবাদহীন আহাদ সেদিন তাদের সাথেই ছিল।

ক. গোয়ালার বাড়িতে মৃত্যুঞ্জয় সাপ ধরে কার হাতে দিল?

খ. ‘অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকের আহাদের সাথে 'বিলাসী' গল্পের ন্যাড়ার মানসিকতার তুলনা করো ।

ঘ. উদ্দীপকটি 'বিলাসী' গল্পের মূলভাবকে কতখানি ধারণ করতে পেরেছে? বিশ্লেষণ করো।

১১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. গোয়ালার বাড়িতে মৃত্যুঞ্জয় সাপ ধরে ন্যাড়ার হাতে দিল ।

খ. হিন্দু সমাজের নানান আচারবিধি যে নানা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে টিকে আছে মাত্র, তা বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।

প্রাচীনকাল থেকে হিন্দু সমাজের আচার-নীতিগুলো মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করত। এসব রীতিনীতির কিছু সমাজের বিকাশের জন্য বাধা তৈরি করে। নানা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এসব রীতি আজ গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ের খুড়ার মতো রক্ষণশীলদের মতে, এতকিছুর পরেও হিন্দু সমাজের রীতিগুলোর কিছু তো টিকে আছে। কিন্তু গল্পকথকের মতে, এমন টিকে থাকা সমর্থনযোগ্য নয়। অতিকায় হস্তী পৃথিবী থেকে বহু আগে বিদায় নিলেও তেলাপোকা আজও টিকে আছে। এমনভাবে টিকে থাকার মাঝে গৌরবের কিছু নেই ।

গ. উদার মানসিকতার হয়েও সমাজের কুসংস্কারকে উপেক্ষা করার মতো চারিত্রিক দৃঢ়তা না থাকার সূত্রে 'বিলাসী' গল্পের ন্যাড়ার সঙ্গে উদ্দীপকের অমলের মানসিকতার সাদৃশ্য রয়েছে।

'বিলাসী' গল্পের কথক ন্যাড়ার মাঝে আমরা যুগপৎভাবে সংস্কারে বিশ্বাসী এবং প্রথাবিরোধী মানসিকতার আভাস পাই। অন্নপাপের দোহাই দিয়ে গ্রামবাসী বিলাসীকে গ্রামছাড়া করার উদ্যোগ নিলে তাকে রক্ষা করার জন্য সে কোনো উদ্যোগ নেয় না। তবে কাজটি ঠিক হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকে। আবার গ্রামের লোকেরা বিলাসীর গায়ে হাত তুললে ন্যাড়ার বিবেক তাতে সায় দেয় না।

উদ্দীপকে আহাদ চৌধুরী উদার মানসিকতায় বিশ্বাসী। কিন্তু সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে একটি কিশোরী মেয়েকে রক্ষা করার মতো দৃঢ়তা তার নেই। অন্যদিকে, 'বিলাসী' গল্পের ন্যাড়াও উদার মানসিকতার অধিকারী। কিন্তু দৃঢ়তার অভাবে সেও বিলাসীকে গ্রামের মানুষের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। অর্থাৎ উদ্দীপকের আহাদ চৌধুরী এবং 'বিলাসী' গল্পের ন্যাড়া উদারচেতা হলেও সামাজিক অচলায়তনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো সাহস তাদের নেই। আর তাই অন্যায় জেনেও ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় তারা নীরব থেকেছে। এদিক বিবেচনায় উদ্দীপকের আহাদ চৌধুরী ও আলোচ্য গল্পের ন্যাড়া চরিত্র দুটোকে পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ বলা যায় ।

ঘ. উদ্দীপকটি 'বিলাসী' গল্পের মূলভাবকে সম্পূর্ণ তুলে ধরতে পারেনি বলেই আমি মনে করি।

‘বিলাসী' গল্পে সমাজের মর্মমূলে জেঁকে বসা জাতিভেদের আগ্রাসী রূপটি মূর্ত হয়ে উঠেছে। তৎকালীন অনুদার সমাজ ব্যবস্থা কায়স্থ ঘরের ছেলে মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে নিম্নবর্ণের বিলাসীর সম্পর্ককে মেনে নিতে পারেনি। 

এজন্য মৃত্যুঞ্জয়কে ঘরছাড়া হতে হয়, লাঞ্ছিত হতে হয় বিলাসীকে। শুধু তাই নয়, শেষাবধি মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর করুণ পরিণতিকে ধর্মান্ধ গ্রামবাসী ধর্মীয় আনাচারের ফল বলেই বিশ্বাস করেছে।

উদ্দীপকে একজন বৃদ্ধের সঙ্গে এক কিশোরীর বিয়ের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এমন অসম সম্পর্ক কোনোভাবেই কিশোরীটিকে সুখী করবে না । তা সত্ত্বেও গোঁড়া গ্রামবাসীর সহায়তায় তার চাচা পিতৃমাতৃহীন মেয়েটির ইচ্ছের বিরুদ্ধেই তাকে বৃদ্ধ ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে দেয়। 

কাজটি অন্যায় জেনেও আহাদ চৌধুরী সেদিন প্রতিবাদহীন ছিল। সমাজের বিরুদ্ধাচরণের মতো দৃঢ়তার অভাবেই এমনটি ঘটেছে। আলোচ্য গল্পের গল্পকথক ন্যাড়া চরিত্রের মাঝেও এমন মনোভাব পরিলক্ষিত হয় ।

‘বিলাসী' গল্পে নিম্নবর্ণের বিলাসীর সাথে উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পর্ককে অস্বীকৃতি জানায় অনুদার সমাজ। শুধু তাই নয়, বিলাসীর হাতে অন্নগ্রহণের অজুহাতে গ্রামের লোকজন তাদেরকে লাঞ্ছিত করে গ্রামছাড়া করে। 

গল্পকথক ন্যাড়া মনে মনে বিষয়টিকে অনুচিত মনে করলেও এর প্রতিবাদ করার সাহস তার হয় না। উদ্দীপকেও অন্যায় কাজের বিপরীতে আহাদ চৌধুরীর এমন অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া গল্পটিতে সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের ঘর বাঁধার মধ্য দিয়ে মানবিক সম্পর্কের জয় ঘোষিত হয়েছে। 

সর্বোপরি মৃত্যুঞ্জয়ের কাকার সম্পদলোভী মানসিকতাসহ তৎকালীন সমাজব্যবস্থার একটি পূর্ণচিত্র উপস্থাপিত হয়েছে এ গল্পে। উদ্দীপকে এসকল বিষয় পরিলক্ষিত হয় না। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটি আলোচ্য গল্পের মূলভাবকে সম্পূর্ণ ধারণ করতে পারেনি।

১২ নম্বর প্রশ্ন

বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি, কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর

জীবে প্রেম করে যেই জন,

সেই জন সেবিছে ঈশ্বর...। - স্বামী বিবেকানন্দ ।

ক. কার শয্যা ত্যাগ করে ওঠার ক্ষমতা নেই?

খ. 'অনেকদিন মৃত্যুঞ্জয়ের দেখা নাই'- ব্যাখ্যা করো ।

গ. উদ্দীপকে 'বিলাসী' গল্পের কোন দিকটি উঠে এসেছে? আলোচনা করো।

ঘ. “উদ্দীপকের মনোভাবকে ধারণ করলে 'বিলাসী' গল্পের বিলাসী- মৃত্যুঞ্জয়কে এমন পরিণতি বরণ করতে হতো না।”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো ।

১২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের শয্যা ত্যাগ করে ওঠার ক্ষমতা নেই।

খ. মৃত্যুঞ্জয় দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী থাকার কারণে তার সঙ্গে গল্পকথক ন্যাড়ার দেখা নেই ।

মৃত্যুঞ্জয় একটি বিশাল পুরনো বাড়িতে একা থাকত। এক জ্ঞাতি খুড়া ছাড়া তার মা-বাবা বা পরিজন কেউ ছিল না। সেই খুড়াও আবার তার নামে কুৎসা রটাত । একবার তার অসুখ হলে দেখাশোনার মতো কেউ না থাকায় দীর্ঘদিন সে শয্যাশায়ী ছিল। দীর্ঘ এই অসুস্থতার কারণেই অনেক দিন মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে গল্পকথক ন্যাড়ার দেখা হয়নি।

গ. উদ্দীপকে 'বিলাসী' গল্পের অন্তরালে ফুটে ওঠা বর্ণবৈষম্যহীন সমাজ প্রত্যাশার দিকটি উঠে এসেছে।

'বিলাসী' গল্পে গল্পকার তৎকালীন সমাজে বিরাজিত বর্ণবৈষম্যের ভয়াবহ রূপটি উন্মোচন করেছেন । অসবর্ণের হওয়ায় সেই সমাজ বিলাসী-- বিয়েকে স্বীকৃতি দেয় না । উপরন্তু অন্নপাপের অজুহাতে তাদের নিপীড়ন করে -মৃত্যুঞ্জয়ের গ্রামছাড়া করে। এভাবে বর্ণপ্রথার কুফল তুলে ধরে আলোচ্য গল্পটিতে লেখক এক বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন ।

উদ্দীপকে বাঙালি মনীষী স্বামী বিবেকানন্দের একটি বিখ্যাত উক্তি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে তিনি জীবসেবাকেই ঈশ্বর সেবার উপায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি মনে করেন, জীব তথা মানুষের মাঝেই পরম স্রষ্টার অবস্থান। আর তাই জীবসেবায় রত হলে তাতে পরম স্রষ্টারই সেবা করা হবে। এর মধ্য দিয়ে উদ্দীপকের বক্তার সাম্যবাদী মানসিকতার

প্রতিফলন ঘটেছে। একইভাবে, 'বিলাসী' গল্পে বিলাসী-১ -মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ পরিণতির অন্তরালে লেখকের বৈষম্যহীন সমাজ প্রত্যাশার দিকটি ফুটে উঠেছে, যা উদ্দীপকের বক্তব্যেও প্রতীয়মান হয়। সে বিবেচনায় উদ্দীপকে 'বিলাসী' গল্পের অন্তরালে ফুটে ওঠা বর্ণবিভেদহীন সমাজ প্রত্যাশার দিকটিই উঠে এসেছে।

ঘ. উদ্দীপকের বক্তব্য অনুযায়ী বর্ণ পরিচয়ের ঊর্ধ্বে মানবিক পরিচয়কে গুরুত্ব দিলে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের পরিণতি ভিন্ন হতে পারতো ।

'বিলাসী' গল্পের মৃত্যুঞ্জয় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলে সাপুড়ের মেয়ে বিলাসী। পরবর্তীতে বিলাসীর গুণমুগ্ধ হয়ে তাকে ভালোবেসে বিয়ে করে মৃত্যুঞ্জয়। এ কারণে রক্ষণশীল সমাজের চাপে পড়ে জাত বিসর্জন দিয়ে সাপুড়ে হতে হয় মৃত্যুঞ্জয়কে। আলোচ্য গল্পটিতে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ পরিণতির অন্তরালে মূলত বৈষম্যহীন পৃথিবীর প্রত্যাশা করেছেন লেখক।

উদ্দীপকে স্বামী বিবেকানন্দের একটি বিখ্যাত উক্তি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে সামাজিক ভেদ-বৈষম্যের ঊর্ধ্বে মানবিক পরিচয়কেই সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। সে বোধ থেকেই বিবেকানন্দ জীবসেবার আদর্শকে ঈশ্বরসেবার তুল্য ঘোষণা করেছেন। তাঁর এই উপলব্ধি একটি বৈষম্যহীন ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চালিত। আলোচ্য গল্পেও বিলাসী- -মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ পরিণতির অন্তরালে লেখক এক বৈষম্যহীন ও উদার মানবসমাজের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

‘বিলাসী' গল্পে গল্পকার উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে নিম্নবর্ণের সাপুড়েকন্যা বিলাসীর প্রণয়ের সম্পর্ককে তুলে ধরেছেন। তারা উভয়েই পরস্পরকে গভীরভাবে ভালোবাসতো। কিন্তু তৎকালীন বর্ণবিভক্ত সমাজ তাদের সেই সম্পর্ককে মেনে নেয়নি। উপরন্তু অন্নপাপের অজুহাতে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়কে গ্রামছাড়া করেছে তারা। আলোচ্য গল্পটিতে বর্ণপ্রথার কুপ্রভাব তুলে ধরে মূলত এর অবসান কামনা করেছেন লেখক। একইভাবে, উদ্দীপকের বিবেকানন্দও সকল ভেদ-বৈষম্যের ঊর্ধ্বে মানুষ পরিচয়কেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। ‘বিলাসী' গল্পে উল্লিখিত সমাজব্যবস্থা উদ্দীপকের বিবেকানন্দের উদার মানসিকতাকে ধারণ করলে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়কে এভাবে মরতে হতো না। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

১৩ নম্বর প্রশ্ন

বাহিরের ছোপ আঁচড়ে সে লোপ 

ভিতরের রং পলকে ফোটে, 

বামুন, শূদ্র, বৃহৎ, ক্ষুদ্র 

কৃত্রিম ভেদ ধূলায় লোটে। 

বংশে বংশে নাহিক তফাত 

বনেদি কে আর গর-বনেদি, 

দুনিয়ার সাথে গাঁথা বুনিয়াদ 

দুনিয়া সবারি জনম-বেদী। 

ক. অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয় কাকে চিনতে পারল?

খ. ‘একটা মৃতকল্প রোগী লইয়া থাকা কত কঠিন'— ব্যাখ্যা করো। 

গ. উদ্দীপকের সাথে 'বিলাসী' গল্পে উল্লিখিত সমাজের পার্থক্য আলোচনা করো।

ঘ. উদ্দীপকটি 'বিলাসী' গল্পের লেখকের মনোভাবকে তুলে ধরতে পেরেছে কি? বিশ্লেষণ করো।

১৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয় গল্পকথক ন্যাড়াকে দেখে চিনতে পারল।

খ. অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে বিলাসীর জঙ্গল ঘেরা বাড়িতে বিনিদ্র রাত কাটানোর দুঃসহ অবস্থাকে বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।

মৃত্যুঞ্জয় একটি বিশাল পোড়োবাড়িতে একা থাকত। মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে সেখানে কারও পক্ষে একা থাকাটা সত্যিকার অর্থেই কঠিন ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মৃত্যুঞ্জয় মারা গেলে মৃতদেহ নিয়ে বিলাসীকে একা রাত জাগতে হতো। অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে বিলাসীর এমন দুঃসহ দিনযাপনের বিষয়টি চিন্তা করেই লেখক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন ।

গ. সমতার দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্দীপকের কবিতাংশের সাথে 'বিলাসী' গল্পে উল্লিখিত সমাজের পার্থক্য প্রতীয়মান হয় ।

‘বিলাসী' গল্পে বর্ণবিভক্ত সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। সে সমাজ জাতি- ধর্মের বিভেদের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল । আর তাই বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের প্রণয়ের সম্পর্ককে গ্রামবাসী মেনে নিতে পারেনি। বস্তুত, হৃদয়বৃত্তির চেয়ে বর্ণপরিচয়ই সমাজের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই তথাকথিত সমাজের চাপে পড়ে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়কে গ্রামছাড়া হতে হয়। উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির সাম্যবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তাঁর দৃষ্টিতে ধর্ম-বর্ণ বা বংশগত পরিচয় বাহ্যিক। এই কৃত্রিম পরিচয়ের নিরিখে মানুষের মাঝে বিভাজন কখনোই কাম্য হতে পারে না। “বিলাসী’ গল্পের সমাজব্যবস্থা এর বিপরীত। সেখানে মানবিকতার চেয়ে বর্ণ বিভাজনই অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। মানবিক বোধকে মূল্য দেয়নি বলেই সে সমাজ বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পর্ককে মেনে নিতে পারেনি। অর্থাৎ উদ্দীপকের কবিতাংশে ফুটে ওঠা উদারনৈতিক মনোভাবের বিপরীতে ‘বিলাসী' গল্পে উল্লিখিত সমাজ অনুদার, অসহিষ্ণু ও বর্ণবাদে বিশ্বাসী। এদিক থেকে উদ্দীপকের কবিতাংশের সাথে 'বিলাসী' গল্পে উল্লিখিত সমাজের প্রভেদ দেখা যায় ।

ঘ. উদ্দীপকটি 'বিলাসী' গল্পের লেখকের মনোভাবকে তুলে ধরতে পেরেছে বলেই আমি মনে করি।

‘বিলাসী' গল্পে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে তৎকালীন বর্ণবিভক্ত সমাজের বীভৎস রূপটি উন্মোচন করেছেন লেখক। রক্ষণশীল ও অনুদার সেই সমাজের স্বরূপ তুলে ধরে তিনি মূলত এমন অবস্থার অবসান কামনা করেছেন। 

উদ্দীপকের কবিতাংশের কবি মানুষের সমতায় বিশ্বাসী। তাঁর দৃষ্টিতে মানুষের একটাই পরিচয় আর তা হলো সে মানুষ । 

এ কারণে ব্রাহ্মণ-শূদ্র বা বড়ো-ছোটোর কৃত্রিম প্রভেদ তিনি মানেন না। তাছাড়া বাহিরের রূপ যাই হোক না কেন সকলেরই রক্ত লাল। সকল মানুষ একই পৃথিবীর অন্ন-জলে লালিত। সংগত কারণেই সাম্যবাদী কবির চোখে সকল মানুষই এক । 

আলোচ্য গল্পের অন্তরালে লেখকের মাঝেও একই মনোভাব ফুটে উঠেছে। ‘বিলাসী’গল্পে গল্পকার উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে নিম্নবর্ণের সাপুড়েকন্যা বিলাসীর প্রণয়ের সম্পর্ককে তুলে ধরেছেন। তারা উভয়েই পরস্পরকে গভীরভাবে ভালোবাসতো। 

কিন্তু তৎকালীন বর্ণবিভক্ত সমাজ তাদের সেই সম্পর্ককে মেনে নেয়নি। উপরন্তু অন্নপাপের অজুহাতে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়কে গ্রামছাড়া করেছে তারা । আলোচ্য গল্পটিতে বর্ণপ্রথার কুপ্রভাব তুলে ধরে মূলত এর অবসান কামনা করেছেন লেখক। 

একইভাবে, উদ্দীপকের কবিতাংশেও সকল মানুষের অভেদ কল্পনার মধ্যদিয়ে বৈষম্যহীন সমাজভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের কবিতাংশটি আলোচ্য গল্পের লেখকের মনোভাবকে তুলে ধরতে পেরেছে বলেই মনে করি।

১৪ নম্বর প্রশ্ন

‘আমি নারী । আমি হৃদয় দিয়ে বিশ্ব জয় করব। ইব্রাহিম কার্দিকে মুক্ত করব । তাকে এই হৃদয়ের রক্ততলে বন্দী করব। আপনি কেন আমাকে সংকল্পচ্যুত করতে চেষ্টা করছেন?' [সূত্র: 'রক্তাক্ত প্রান্তর - মুনীর চৌধুরী।

ক. কত ক্রোশ পথ হেঁটে গল্পকথকদের স্কুলে যাতায়াত করতে হয়? 

খ. “ওরে বাপরে, আমি একলা থাকতে পারব না।”— উক্তিটি ব্যাখ্যা করো ।

গ. উদ্দীপকে 'বিলাসী' গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা, করো ।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘বিলাসী' গল্পের মূলভাবকে কতখানি ধারণ করতে পেরেছে? বিশ্লেষণ করো।

১৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. কাচার ক্রোশ পথ হেঁটে গল্পকথকদের স্কুলে যাতায়াত করতে হয় ।

খ. উক্তিটির মাধ্যমে ন্যাড়া তার এক আত্মীয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তার মেকি স্বামীপ্রেমের প্রতি ইঙ্গিত করেছে।

'বিলাসী' গল্পে ন্যাড়ার এক আত্মীয় মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী শোকাহত হয়ে স্বামীর সঙ্গে সহমরণের জন্য হাহাকার করতে থাকে। কিন্তু লাশের পাশে তাকে একাকী রেখে ন্যাড়া যখন মৃতের সৎকারের জন্য লোক ডাকতে বাইরে পা বাড়ায়, তখনই সে চিৎকার করে উদ্ধৃত উক্তিটি করে। এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, বহুদিনের সাহচর্য সত্ত্বেও স্বামীর সঙ্গে তার কোনো আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। এভাবে উক্তিটির মধ্য দিয়ে তার মেকি স্বামীপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

গ. উদ্দীপকে 'বিলাসী' গল্পের বিলাসীর স্বামীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার দিকটি ফুটে উঠেছে।

'বিলাসী' গল্পের বিলাসী উদার ও সেবাপরায়ণ মনোভাবাপন্ন এক নারী। অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয় যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, তখন বিলাসী সর্বাত্মক সেবা দিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলে। বিলাসীর আন্তরিকতা ও সেবাযত্নের ফলে মৃত্যুঞ্জয় ধীরে ধীরে আরোগ্য লাভ করে। এর মধ্য দিয়ে সেবাপরায়ণতার পাশাপাশি বিলাসীর প্রেমপূর্ণ হৃদয়েরও পরিচয় মেলে ।

উদ্দীপকে বর্ণিত নারী চরিত্রটি প্রেমপূর্ণ হৃদয়ের শক্তিতে বিশ্ব জয় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। তাকে সংকল্পচ্যুত করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও বিচলিত না হয়ে সে ইব্রাহিম কার্দিকে মুক্ত করার সংকল্পে স্থিত থেকেছে। 'হৃদয়ের রক্ততলে বন্দী' করার কথা বলার মধ্য দিয়ে প্রিয়তম ইব্রাহিম কার্দির প্রতি তার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। একইভাবে, ‘বিলাসী’ গল্পেও মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি বিলাসীর প্রেমপূর্ণ মনোভাবের পরিচয় ফুটে উঠেছে। নির্জন বনের মধ্যে মরণাপন্ন মৃত্যুঞ্জয়কে সেবা করার গুরুভার মাথায় নিয়ে তাকে বাঁচাতে দিনরাত সেবা-শুশ্রূষা করেছে। শুধু তাই নয়, সাপের ছোবলে স্বামী মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হলে তা মেনে নিতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয় বিলাসী। স্বামীর প্রতি অপরিমেয় ভালোবাসার কারণেই এমনটি করেছে সে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটিতে আলোচ্য গল্পের বিলাসীর স্বামীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার দিকটিই ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকটি 'বিলাসী' গল্পের মূলভাবকে আংশিক ধারণ করতে পেরেছে বলেই আমি মনে করি ।

“বিলাসী' গল্পে সাপুড়ে কন্যা বিলাসীর সঙ্গে উচ্চবংশীয় মৃত্যুঞ্জয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসার অনন্যসাধারণ কাহিনি উঠে এসেছে। পাশাপাশি গল্পটিতে তাদের অসবর্ণ সম্পর্কের বিরুদ্ধে কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের আগ্রাসী রূপটিও ফুটে উঠেছে। গল্পটিতে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ কাহিনির মধ্যদিয়ে তৎকালীন বর্ণবাদী সমাজের ভয়ংকর রূপটি উন্মোচিত হয়েছে ।

উদ্দীপকটিতে প্রেমপূর্ণ হৃদয়ের অধিকারী এক নারীর আত্মকথন তুলে ধরা হয়েছে। উল্লিখিত এই নারী চরিত্রটি গভীর ভালোবাসার শক্তিতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে শুধু তার প্রিয় মানুষকে জয় করার সংকল্পই করেনি, বিশ্বজয়ের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে। যেকোনো মূল্যেই এই সংকল্প থেকে বিচ্যুত হতে রাজি নয় সে। আলোচ্য 'বিলাসী' গল্পের বিলাসী চরিত্রটিও গভীর ভালোবাসার শক্তিতে বলীয়ান হয়েই সমাজবাস্তবতার বিরুদ্ধে গিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেবা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে তাকে ফিরিয়ে এনেছে।

'বিলাসী' গল্পের বিলাসী শুধু মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার সারাজীবনের সমস্ত দুঃখকষ্টেরও সঙ্গী হয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়কে সেবা করার পাশাপাশি বিলাসী তার সঙ্গে হৃদয় বিনিময়ও করেছে। এমনকি মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর সাত দিনের মাথায় শোক সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে সে। বিলাসীর এ মনোভাব তার প্রেমপূর্ণ হৃদয়েরই পরিচয় বহন করে, যা উদ্দীপকের সঙ্গে এ গল্পটির সাদৃশ্য তৈরি করে। তবে এটিই এ গল্পের একমাত্র বিষয় নয়। এছাড়া গল্পটিতে তৎকালীন বর্ণবিভক্ত সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। বিলাসী-মৃতুঞ্জয়ের করুণ পরিণতির পরোক্ষ কারণ কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি। এ কারণেই পৈতৃক সহায়- সম্পদ ছেড়ে মৃত্যুঞ্জয়কে সাপুড়ে হতে হয়। উদ্দীপকে এসকল বিষয়ের উল্লেখ নেই । সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

১৫ নম্বর প্রশ্ন

আঠারো শতকের শেষ ও উনিশ শতকের শুরুর দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু সমাজ নানা কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল। ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, নানা কু-প্রথা, জাতিভেদ প্রভৃতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে তাতে পুরো সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। সামাজিক বৈষম্য, অশান্তি মানুষের উন্নতির অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমনই এক অনিশ্চয়তার মধ্যে রাজা রামমোহন রায়ের মতো বিখ্যাত সমাজ সংস্কারকের আবির্ভাব ঘটে। তিনি তৎকালীন সমাজ, ধর্ম, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন । (সূত্র: নবম-দশম শ্রেণি-সামাজিক বিজ্ঞান, দৈনিক কালের কণ্ঠা: ৩রা জুন ২০১২/ 

ক. বিলাসী ন্যাড়াকে কোন পর্যন্ত এগিয়ে দিল?

খ. “ঘন জঙ্গলের পথ, একটু দেখে পা ফেলে যেয়ো”— ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে 'বিলাসী' গল্পের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? আলোচনা করো।

ঘ. উদ্দীপকের রাজা রামমোহন রায়ের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে 'বিলাসী? গল্পের লেখকের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে কি? বিচার করো। 

১৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক.  বিলাসী ন্যাড়াকে ভাঙা প্রাচীরের শেষ অব্দি এগিয়ে দিল।

খ. আলোচ্য উক্তিটিতে ন্যাড়া জঙ্গলের পথ ধরে বাড়ি পৌঁছতে কোনো সমস্যায় পড়তে পারে বলে বিলাসীর আশঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে ।

এক সন্ধ্যায় গল্পকথক ন্যাড়া লুকিয়ে অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়কে দেখতে যায় । ততদিনে শয্যাশায়ী মৃত্যুঞ্জয়ের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কথাবার্তা শেষে বাড়ি ফেরার সময় বিলাসী ন্যাড়াকে ভাঙা প্রাচীর পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়কে একা রেখে ন্যাড়াকে এর বেশি এগিয়ে দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই দীর্ঘ জঙ্গল পথে সাপ থাকতে পারে এই আশঙ্কায় ন্যাড়াকে সাবধান থাকার জন্য সে অনুরোধ করে।

গ. উদ্দীপকে 'বিলাসী' গল্পে ফুটে ওঠা বর্ণবৈষম্যের দিকটি প্রতিকলিত হয়েছে।

'বিলাসী' গল্পের নাম চরিত্র বিলাসী সাপুড়ের মেয়ে। শিক্ষার আলোবস্থিত বিলাসী সংকীর্ণ সমাজব্যবস্থার নির্মমতার শিকার। আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবহীন অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়কে সেবা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে সুস্থ করে তোলে সে। মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় তাকে তীব্র অপমান ও শারীরিক লাঞ্ছনাও সহ্য করতে হয়। শুধু তাই নয়, পরিশেষে করুণ পরিণতির শিকার হতে হয় তাকে।

উদ্দীপকে উনিশ শতকের শুরুর দিককার হিন্দু সমাজের চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। সে সময় শিক্ষার আলো বঞ্চিত হিন্দু সমাজ নানান কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস ও বর্ণপ্রথা তৎকালীন সমাজে এভাবে জেঁকে বসে যে, তাতে সমাজব্যবস্থাই অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার উপক্রম হয়। আলোচ্য 'বিলাসী' গল্পেও লেখক বর্ণপ্রথার বেড়াজালে আবদ্ধ সংকীর্ণ সমাজব্যবস্থার চিত্র এঁকেছেন। সেখানে বর্ণপ্রথার নির্মমতার শিকার হয়ে গল্পটির মূলচরিত্র বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয় করুণ পরিণতি বরণ করে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের ঘটনাবর্তে আলোচ্য গল্পে ফুটে ওঠা বর্ণবৈষম্যের দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. রাজা রামমোহন রায়ের ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের মধ্য দিয়ে 'বিলাসী' গল্পের লেখকের বৈষম্যহীন সমাজ প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। 'বিলাসী' গল্পের বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ পরিণতির মধ্যদিয়ে লেখক জাতিভেদের বিষময় রূপটিকে উন্মোচন করেছেন। বর্ণবিভক্ত ও রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থা তাদের ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দেয়নি; উপরন্তু অন্নপাপ ও জাত বিসর্জনের অপবাদ দিয়ে তাদের গ্রামছাড়া করে। এভাবে বর্ণবৈষম্যের কুফল তুলে ধরার অন্তরালে লেখক মূলত এক বৈষম্যহীন ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছেন।

উদ্দীপকে আঠারো শতকের শেষ থেকে উনিশ শতকের শুরুর দিককার সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সে সমাজ ব্যবস্থা

নানাবিধ কুসংস্কার ও জাতিভেদের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল। সর্বত্র ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার এমনভাবে জেঁকে বসেছিল যে পুরো সমাজব্যবস্থাই ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। এমনই দুঃসময়ে আগমন ঘটে রাজা রামমোহন রায়ের মতো মহান সংস্কারকের। নিজ প্রচেষ্টায় তিনি সামাজিক ও ধর্মীয় বৈষম্য ও কুসংস্কার দূর করতে অবদান রাখেন।

বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ পরিণতিই ‘বিলাসী' গল্পের একমাত্র বিষয় নয়। এই ঘটনাটি তুলে ধরার মধ্য দিয়ে লেখক বর্ণপ্রথার কুফল সম্পর্কে অভিহিত করেছেন কেবল। এর মূলে রয়েছে এক বৈষম্যহীন সমাজ প্রত্যাশা। উদ্দীপকের রাজা রামমোহন রায় তেমনই একজন মহান সংস্কারক। তাঁর প্রচেষ্টায় অনেক কুপ্রথার বিলোপ ঘটে, যা বৈষম্যহীন সমাজ প্রত্যাশার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কেননা, এভাবে ধাপে ধাপে সংস্কারের মধ্যদিয়েই সকল কুসংস্কার ও কুপ্রথার অবসান হয়ে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। সে বিবেচনায় রাজা রামমোহন রায়ের ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের মধ্যদিয়ে ‘বিলাসী' গল্পের লেখকের বৈষম্যহীন সমাজ প্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটেছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ