হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা | হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ ও প্রতিকার
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা | হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা | হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ ও প্রতিকার ( hepatitis b bangla ) ।
হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা | হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ ও প্রতিকার |
হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা | হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ ও প্রতিকার
- হেপাটাইটিস বি কি? এ রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায় উল্লেখ কর।
- অথবা, হেপাটাইটিস বি বলতে কি বুঝ? এ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর ।
- অথবা, ‘হেপাটাইটিস বি একটি জীবননাশী ব্যাধি' উক্তিটি পর্যালোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রধান তিন ধরনের হেপাটাইটিস বি রয়েছে যার মধ্যে হেপাটাইটিস বি অন্যতম। ১৯৬৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার এক অধিবাসীর রক্তে প্রথমে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ধরা পড়ে।
বর্তমান বিশ্বে প্রায় কোটি কোটি মানুষ এ ভাইরাস বিতে আক্রান্ত । বাংলাদেশেও এর ভয়াবহতা দেখা দিয়েছে।
আমাদের দেশের প্রায় ২ কোটি লোক হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত এদের প্রতি ২৫ জনের ২ জন বি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। এর ভয়বহতা এতে কঠিন যে অধিকাংশ রোগী মারা যায় ।
→ হেপাটাইটিস বি কি : হেপাটাইটিস শব্দটি ইংরেজি শব্দ থেকে যার বাংলা অর্থ দ্বারায় যকৃৎ বা লিভারের প্রদাহ। অর্থাৎ ভাইরাস ঘটিত প্রদাহ।
যকৃতের বি ভাইরাস হলো (HBV) ডি এন এ ভাইরাস (DNA Virus) যকৃৎ বা লিভার যখন এ বিভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন তাকে হেপাটাইটিস বি বলে । এ রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর হার ১ থেকে ৩%।
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ / উপসর্গ : হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রকাশ পেতে ৬ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস সময় লাগে। ধীরে ধীরে বা হঠাৎ করে উপসর্গ দেখা দেয়। তবে কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করে ও শরীরে অনেকদিন ঘাপটি মেরেও থাকতে পারে।
নিম্নে কয়েকটি লক্ষণ উল্লেখ্য করা হলো :
১. শরীর ম্যাজম্যাজ করে ও ক্রান্তিভাব আসে;
২. গলা ব্যথা মাথা ব্যথা ও পেট ব্যথা করে;
৩. মাংসপেশি ও বিভিন্ন সন্ধিত ব্যথা হয়;
৪. বমি বমি লাগে এবং মাঝে মাঝে বমি হয়,
৫. শরীরে হালকা জ্বর আসে বা জ্বর জ্বর ভাব হয়;
৬. যকৃৎ আক্রান্ত হলে নালিকাগুলোতে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করে;
৭. মলের রং হালকা হয়ে যায়, পক্ষান্তরে মুত্রের রং হয় গাঢ়;
৮. চোখের সাদা অংশ, জিহ্বার তলা এবং চর্মে হলদে ভাব বা হলুদ রং দেখা যায়;
৯. আস্তে আস্তে সারা দেহ হলুদ হয়ে যায়;
১০. লিভার ব্যথা ও সংকুচিত বা ছোট হয়ে যায়;
১১. প্লীহা ও লসিকা গ্রন্থি বাড়তে পারে ও
১২. দুর্বলতা বোধ, আলস্যতা।
শতকরা ৭০ ভাগ হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীর জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো ইতিহাসে থাকে না। শতকরা ৯০ ভাগ শিশু এবং ১০ ভাগ বয়স্ক যারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাদের লিভারে স্থায়ী ইনফেকশন হয়ে থাকে।
একে বলা হয় ক্রনিক (Chronic) হেপাটাইটিস বি এ জন্ডিসগুলো HB, Ag পজিটিভ হিসেবে পরিচিত। ক্রনিক হেপাটাইটিস বি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনেক দেশের মত বাংলাদেশে ও লিভার সিরোসিম বা লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
হেপাটাইটিস বি যদিও নিরাময়যোগ্য তথাপি অ্যাডভাম লিভার সিরোসিস অথবা লিভার ক্যান্সার না হওয়া পর্যন্ত রোগীরা কোনো অসুবিধা অনুভব করে না ।
→ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের জটিলতা : হেপাটাইটিস বি আক্রান্তের ফলে যকৃৎ বাড়ে ও বেদনাদায়ক হয় । এক্ষেত্রে পীড়া এ লসিকা গ্রন্থি ও বৃদ্ধি পেতে পারে। জটিলতা দেখা দিলে বন্দরীয় শিরার উচ্চ চাপ ( Portal hypertension) হতে পারে ।
ফলে উদরে শোথ (Ascites) হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে যকৃতের কোষগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমতে থাকে।
ধীরে ধীরে সকল কোষও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় লিভার যকৃৎ সংকুচিত বা ছোট হয়ে যায় । তখন লিভার সিরোসিস বলে।
অনেকক্ষেত্রে লিভার ক্যান্সার হতে পারে। কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় কেউ উপসর্গবিহীন হয়ে গেলেও ভাইরাসের বাহক হিসেবে বেঁচে থাকে ।
→ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস যেভাবে দাঁড়ায় : হেপাটাইটিস বি বিশ্বের অন্যতম একটি ভাইরাসজনিত রোগ। উষ্ণমণ্ডলীয় আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রায় ৮-২০% লোক এ ভাইরাস আক্রান্ত । নিম্নে এ ভাইরাস সেভাবে দাঁড়ায় তা বর্ণনা করা হলো :
১. বি ভাইরাস বহন করে এমন ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ দৈহিক মিলন করলে;
২. থুথু বীর্য, মল-মূত্র ইত্যাদির মাধ্যমে;
৩. একাধিক যৌনসঙ্গি রয়েছে তাদের এ রোগ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি;
৪. হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ইনজেকশনের সুচ, ব্লেড, কাচি ও অপারেশনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে;
৫. আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহণ করলে;
৬. শিরাভ্যন্তরে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে;
৭. আক্রান্ত ব্যক্তিকে গভীরভাবে চুম্বন লেহন এর মাধ্যমে;
৮. গর্ভবর্তী মায়ের হেপাটাইটিস বি থাকলে জন্মের পর সন্তানেরও আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ও
৯. সমকামীদের এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি।
→ হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধ ব্যবস্থা :
১. সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
৩. বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যা কাপড় রক্ত ইত্যাদি নাড়াচাড়ায় হুশিয়ার থাকতে হবে ।
৪. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
৫. প্রচুর তরল খাদ্য বিশেষ করে ফলের রস, গুকোজ ও সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে।
৬. প্রতিবার ইনজেকশনের সময় নতুন সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে ।
৭. এক রোগীর সার্জারির পর যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করে অন্যের জন্য ব্যবহার করতে হবে।
৮. ভাইরাস বাহকদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জীবনযাপন সম্পর্কে পরামর্শ দিতে হবে।
৯. রক্ত গ্রহণের সময় তাতে ভাইরাস আছে কি না তা পূর্বের পরীক্ষা করে নিতে হবে।
১০. অন্যের ব্যবহৃত ব্লেড, ক্ষুর, কাঁচি ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না ।
১১. সময়মত হেপাটাইটিস বি এর টিকা নিতে হবে।
১২. অবাধ ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে ।
১৩. দৈহিক মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করতে হবে।
১৪. অন্যন্য মাল্টিপিমিন খাওয়া যেতে পারে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসটি ঘাতক হিসেবে পরিচিত। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন করে।
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারের পূর্বে এ রোগ ধরা পড়লে রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা | হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ ও প্রতিকার
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা | হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ ও প্রতিকার । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।