হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের কারণ ও ফলাফল লেখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের কারণ ও ফলাফল লেখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের কারণ ও ফলাফল লেখ ।
হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের কারণ ও ফলাফল লেখ |
হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের কারণ ও ফলাফল লেখ
উত্তর : ভূমিকা : ইলখানি বংশের প্রতিষ্ঠাতা হালাকু খান কর্তৃক বাদগাদ নগরী ধ্বংস ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক ঘটনা। বাগদাদ নগর দীর্ঘ পাঁচ শতাধিক বছর মুসলিম জগতের রাজধানী ছিল।
মুসলিম সভ্যতার লীলাভূমি বাগদাদ ছিল শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানচর্চায় তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নগরী। সুতরাং মধ্যযুগের ইতিহাসে বাগদাদ আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞ একটি ভয়াবহ দুঃসাহসিক ও জঘন্যতম ঘটনা ।
→ বাগদাদ আক্রমণের কারণ : বাগদাদ আক্রমণের পেছনে বহুবিধ কারণ নিহিত ছিল। নিম্নে তা আলোচিত হলো :
১. আব্বাসীয় খলিফার দুর্বলতা : খলিফা আল মনসুরের পর আব্বাসীয় খলিফাদের দুর্বলতার কারণে ধীরে ধীরে আব্বাসীয় সাম্রাজ্য খণ্ড-বিখণ্ড হতে থাকে। স্বৈরশাসন, দুর্নীতি, খলিফাদের ধর্মীয় বিভেদ এবং সীমাহীন ভোগবিলাস আব্বাসীয় খলিফাদের দুর্বল করে ফেলে। যার ফলে হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণে আগ্রহী হয়ে পড়েন।
২. শিয়ামন্ত্রীর আমন্ত্রণ : খলিফা মুসতাসিম বিল্লাহর আমলে শিয়া সুন্নি গোলযোগ প্রকট আকার ধারণ করে। খলিফা বাধ্য হয়ে তার পুত্র আবু বকরকে কারখ আক্রমণ করে শিয়াদের ধ্বংস করার আদেশ দেন। এতে তার শিয়া মন্ত্রী মুয়াইদ উদ্দিন মর্মাহত হয়ে খলিফাকে জব্দ করার জন্য দুর্ধর্ষ মোঙ্গল নেতা হালাকু খানকে বাগদাদ আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান।
৩. গুপ্তঘাতক ইস্যু : মোঙ্গল নেতা হালাকু খান গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্য খলিফা মুসতাসিম বিল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়ে পাঠান। কিন্তু খলিফা মুসতাসিম বিল্লাহ হালাকু খানের এই আবেদনে কর্ণপাত করেননি। ফলে হালাকু খান ক্রুদ্ধ হয়ে বাগদাদ আক্রমণ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালান ।
৪. রাজনৈতিক ও সামরিক অরাজকতা : খলিফা আল মনসুর পরবর্তী আব্বাসীয় খলিফাদের স্বৈরশাসন, দুর্নীতি, খলিফাদের ধর্মীয় বিভেদ এবং সীমাহীন ভোগবিলাসের জন্য আব্বাসীয় খলিফারা দুর্বল হয়ে পড়েন। খলিফা মুসতাসিম বিল্ল- শহর আমলে রাজনৈতিক ও সামরিক অরাজকতার সুযোগে এবং মুসতাসিম বিল্লাহর শিয়া মন্ত্রী মুয়াইদ উদ্দিনের আমন্ত্রণে হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করেন ও সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালান।
বাগদাদের ধ্বংসযজ্ঞ : মোঙ্গল নেতা হালাকু খান গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্য খলিফা মুসতাসিম বিল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়ে পাঠান। কিন্তু খলিফা মুসতাসিম বিল্লাহ হালাকু খানের এই আবেদনে কর্ণপাত করেননি।
খলিফার অবহেলায় হালাকু খান ভীষণ রাগান্বিত হন এবং এক চরম পত্রে খলিফাকে বাগদাদ নগরীর বহির্দেয়াল উৎপাটন করে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন। খলিফা এ আদেশে কর্ণপাত না করায় ক্রুদ্ধ হয়ে হালাকু খান ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে বাগদাদ আক্রমণ চালান।
দীর্ঘ চলিশ দিন অবরোধের পর হালাকু খান বিভিন্ন উঁচু স্থান থেকে বৃহৎ প্রস্তর খণ্ড এবং অগ্নিগোলক নিক্ষেপ করে প্রাচ্যের গৌরব বাগদাদ নগরীর দেয়াল বিধ্বস্ত করে নগরী অধিকার করেন। খলিফা মুসতাসিম বিল্লাহ প্রতিরোধ করেও ব্যর্থ হন।
ফলে নিরুপায় হয়ে পরিবার-পরিজনসহ তিনি হালাকু খানের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু হালাকু খান তার পরিজনসহ প্রায় সকলকেই নিমর্মভাবে হত্যা করেন। কথিত আছে যে, সেসময় প্রায় ২০ লক্ষ লোকের মধ্যে ১৬ লক্ষ লোককে হত্যা করা হয়। ফলে বাগদাদের রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়।
→ বাগদাদ আক্রমণের ফলাফল : হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ নগরী ধ্বংসের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। নিম্নে বাগদাদ আক্রমণের ফলাফল আলোচনা করা হলো :
১. আব্বাসীয় বংশের পতন : হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ শত বছরের পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী আব্বাসীয় বংশের অবসান ঘটে এবং বাগদাদ মোঙ্গল শাসিত ইলখানী সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয়।
২. বাগদাদ নগরীর ধ্বংস : মোঙ্গলদের ধ্বংসযজ্ঞের কারণে বাগদাদ নগরী এ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। খলিফা ও তার পরিবারসহ প্রায় ১৬ লক্ষ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ।
৩. তুর্কিদের অভ্যুদয় : মোঙ্গল কর্তৃক বাগদাদ ধ্বংসের ফলে আরব সভ্যতা ও আরব শক্তির সাথে সাথে পারসিকদেরও পতন ঘটে । এদের পতনের পরপরই সেখানে তুর্কিদের উত্থান হয় ৷
৪. খলিফাহীন মুসলিম বিশ্ব : শেষ আব্বাসীয় খলিফা এই নির্মমতায় প্রাণ হারালে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব খলিফা শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে জুমার নামাজের খোতবার উল্লেখ করার মত আব্বাসীয় বংশের কেউই আর অবশিষ্ট রইল না।
৫. সুন্নি মুসলমানদের বিপর্যয় : সুন্নি মুসলমানদের সাহায্যার্থে হালাকু খান বাগদাদ ধ্বংস করলে সুন্নি মুসলমানদেরও দারুণ ক্ষতি সাধিত হয়। সুন্নি সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত বাগদাদ সেসময় বিরাণভূমিতে পরিণত হয়। ফলে সুন্নিরা ব্যাপক ক্ষয়- ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সাথে সাথে অনেকের প্রাণহানি ঘটে।
৬. জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষতি সাধন : বাগদাদ নগরী তৎকালীন জ্ঞানবিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ সূতিকাগার ছিল। শিক্ষা, সাহিত্যে, সংস্কৃতি ইত্যাদি প্রত্যেকটি শাখায় তারা বিচরণ করা শুরু করেছিল। হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ ধ্বংস হওরার ফলে জ্ঞানবিজ্ঞানের এই দিক থেকে বিশ্ব সভ্যতা বঞ্চিত হয়।
৭. ইসলাম ধর্মের বিজয় : ইসলামি সভ্যতার বাগদাদ নগরী ও অন্যান্য মুসলিম এলাকা হালাকু খানের নির্দয় ধ্বংসলীলার পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের কম সময়ের মধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসাবে তারই প্রপৌত্র সাজন খান মুসলিম কৃষ্টি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চালান। তিনি ঐ কৃষ্টি পুনরুজ্জীবিত করতে বহু সময় ও উদ্যম ব্যয় করেছিলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা হয় যে, হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদের ধ্বংস মানব ইতিহাসে এক বর্বরতম ঘটনা। এর ফলে মুসলিম সাম্রাজ্য পতনের সাথে সাথে খ্রিস্টানদের উত্থান শুরু হয়। ইবনুল আসীরের ভাষায় তাতাদের দুর্ধর্ষ আক্রমণ সমগ্র | বিশ্বের উপর বিশেষত মুসলিম জাহানের উপর খোদায়ি গজবের অমানিশা ডেকে এনেছিল ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১২৫৮ সালে হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ ধ্বংসের বিবরণ দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদের ধ্বংস সম্পর্কে লেখ । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।