গজনবী বংশের উত্থান আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো গজনবী বংশের উত্থান আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের গজনবী বংশের উত্থান আলোচনা কর।
গজনবী বংশের উত্থান আলোচনা কর |
গজনবী বংশের উত্থান আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : পারস্যের সামানিদ রাজ্য তুর্কিদের আক্রমণে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। পারস্য তুর্কিদের হস্তগত হলে ভারতের সাথে তুর্কিদের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। দুঃসাহস, কষ্টসহিষ্ণুতা ও ধর্মান্ধতা তুর্কিদের এক দুর্ধর্ষ শক্তিতে পরিণত করে এবং প্রাচ্যে তাদের সামরিক সাম্রাজ্য স্থাপনের পথ সুনিশ্চিত করে।
সামানিদ রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের ওপর গজনী নামে এক ক্ষুদ্র রাজ্যের উৎপত্তি হয়। তুর্কিদের মধ্যে গজনীর রাজবংশই সর্বপ্রথম ভারতের সংস্পর্শে আসে। এছাড়াও ইসলামি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তুর্কি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন তারা। যার মধ্যে আলপ্তগিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গজনবী বংশ ছিল অন্যতম ।
গজনবী রাজবংশের উত্থান : আব্বাসীয় খেলাফতের ইতিহাসে তুর্কিদের প্রভাব ছিল অত্যন্ত বেশি। এই তুর্কি জনগণ আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
পরবর্তীতে যখন আব্বাসীয় খলিফাদের বিলাসিতা, আরাম, প্রিয়তাসহ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাদের দুর্বলতা লক্ষ করা যায় তখনই তুর্কিরা তাদের প্রজ্ঞা ও যোগ্যতা দ্বারা আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল জয় করে নিজেদের নামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
তুর্কিদের প্রভাবে, পারস্যের সামানীয় বংশ ধ্বংস হয়ে যায় আর এই বংশের উপর প্রতিষ্ঠিত করেন তুর্কিরা গজনবী রাজবংশ। তুর্কিদের প্রভাব বৃদ্ধির ফলে তাদের রাজবংশ মিশর থেকে সমরখন্দ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।
গজনবী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা : গজনবী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আলগুগিন। তিনি ছিলেন একজন তুর্কি ক্রীতদাস । একজন ক্রীতদাস হয়েও তিনি প্রভুর প্রতি অনুগত্য এবং নিজ কর্মদক্ষতা গুণে খোরাসানের শাসনকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেন।
তিনি খোরাসানের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভ করার পর সামানিদ রাজবংশের পতন ঘটিয়ে ৯৬২ খ্রি. একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। যার নাম ছিল গজনবী রাজবংশ। এটি ছিল সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে আগত তুর্কি রাজবংশ।
এই রাজবংশের ১১৮৬ খ্রি. পর্যন্ত শাসনকাল অব্যাহত ছিল 1 আলগুগিন মাত্র চৌদ্দ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন এর পর তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ।
ইসহাকের ক্ষমতা গ্রহণ : গজনবী বংশের প্রতিষ্ঠা আলপ্তগিন-এর মৃত্যু হলে তার পুত্র ইসহাক শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি মাত্র কয়েক বছর গজনবী রাজবংশ শাসন করেন।
পীরাই এর ক্ষমতা গ্রহণ : পীরাই গজনবী বংশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করলে গজনীর জনগণ তার উপর মনপুত ছিল না । যার জন্য সবুক্তগিনকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেন।
সবুক্তগিনের ক্ষমতা গ্রহণ : পীরাই ক্ষমতাচ্যুত হলে ৯৭৭ খ্রি. জামাতা সবুক্তগিনকে ক্ষমতা অধিষ্ঠিত করা হয়। সবুক্তগিন ছিল একজন ক্রীতদাস। গজনবী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলগুগিনের কন্যাকে বিবাহ করেন এবং পরবর্তীতে তিনি এই বংশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন ।
ভারত আক্রমণ : সবুক্তগীন ছিলেন একজন শক্তিশালী ও উচ্চাভিলাসী পুরুষ। তিনি মধ্য এশিয়ার রাজনীতিতে নিমগ্র থেকেও ভারত আক্রমণের পরিকল্পনা করে। তার এই পরিকল্পনার প্রধান বাধা ছিল পাঞ্জাবের শাহী রাজবংশের রাজা জয়পাল।
সবুক্তগীন যখন ভারত আক্রমণের পরিকল্পনা করে ভারতের দিকে অগ্রসর হন তখন জয়পাল তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে গজনী অভিমুখ রওয়ানা হন কিন্তু প্রবল তুষারপাতের মুখে জয়পালের পরাজয় হয়
এর ফলে তিনি বাধ্য হন সবুক্তগীনের সাথে সন্ধি করতে এবং সন্ধি করে তিনি সবুক্তগীনকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ পঞ্চাশটি হস্তী এবং প্রচুর অর্থ প্রদানসহ রাজ্যের অনেক অংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
সবুক্তগীনের দ্বিতীয়বার ভারত আক্রমণ : জয়পাল নিজ রাজ্যে ফিরে এসে সন্ধির শর্ত অনুযায়ী শর্তপালন করতে অসম্মত হলে এবং সবুক্তগীনের দূতকে কারারুদ্ধ করে যার ফলে সবুক্তগীন পুনরায় ভারত আক্রমণ করে। এবার জয়পাল তার রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের শাসকগণের সাহায্যে আক্রমণ করার চেষ্টা করলে আবারও তিনি পরাজয়বরণ করেন।
যার ফলে সবুক্তগীন পেশোয়ার অধিকার করে সেখানে একজন মুসলমান শাসক নিযুক্ত করেন। সবুক্তগীন ভারত জয় করতে পারেননি কিন্তু ভারত জয়ের পথ সুগম করেছেন। এর পর ৯৯৭ খ্রি. তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।
মাহমুদের ক্ষমতা গ্রহণ : সবুক্তগীন তার জীবনদশায় | কনিষ্ঠপুত্র ইসমাঈলকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। কিন্তু | জ্যেষ্ঠপুত্র মাহমুদ বাহুবলে ইসমাইরকে পরাজিত করে ৯৯৮ খ্রি. গজনীর সিংহাসনে বসেন।
উপাধি গ্রহণ : মাহমুদ তার সিংহাসনকে সুদৃঢ় করার জন্য খলিফা কাদির বিল্লাহকে প্রচুর উপঢৌকন প্রেরণ করেন। যার জন্য মাহমুদকে ইয়ামিন উদ-দৌলা ও আমিন উল মিল্লাত উপাধিতে ভূষিত করেন। যার জন্য তার বংশকে ইয়ামিনি বংশ বলা হয় ।
মাহমুদের ভারত আক্রমণ : মাহমুদ ১০০০-১০২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১৭ বার ভারত আক্রমণ করে প্রচুর ধনসম্পদ নিজ হস্তগত করেন ।
গজনী সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা : মাহমুদকে গজনী সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। কারণ তিনি প্রথম তুর্কি পারসিক সম্রাটদের মধ্যে এবং ক্ষুদ্র রাজবংশের শাসকদের মধ্যে সর্বশেষ। যার নৈপুণ্যতার জন্য ক্ষুদ্র রাজবংশকে একটি সুবিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তুর্কিদের রাজবংশ ছিল গজনী রাজবংশ। এই রাজবংশ সামান্য একজন ক্রীতদাস প্রতিষ্ঠা করলে ও পরবর্তীতে এটি সুবিশাল অঞ্চল জুড়ে সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করেন। এই রাজবংশেই প্রথম তুর্কি হিসেবে ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। যার ফলে তারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল হতে প্রচুর ধন-সম্পদ নিয়ে যায়। তাই এই রাজবংশের ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ গজনবী বংশের উদ্ভব বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম গজনবী বংশের উদ্ভব বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।